মিয়ানমার ইস্যুকে আন্তর্জাতিকীকরণের পরামর্শ কূটনীতিকদের
মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও আরাকান আর্মির মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা থামছেই না। বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তমব্রু, ঘুমধুম সীমান্তের পর এবার কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালি সীমান্তে শোনা যাচ্ছের গোলাগুলির শব্দ। বাংলাদেশের ভেতরে তমব্রু ও ঘুমধুম সীমান্তে মর্টার শেল পড়েছে একাধিকবার। মিয়ানমার লাগোয়া বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকা জুড়ে এলাকাবাসীর মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। ইতোমধ্যে অনেক এলাকাবাসী নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে এলাকা ছেড়েছেন।
গত কয়েক দিনের ঘটনায় ঢাকায় নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে চার দফা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করে কড়া ভাষায় প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয়নি। তবে মিয়ানমারের এই উসকানিকে বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত কূটনৈতিকভাবেই মোকাবিলা করার অবস্থানে রয়েছে।
সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার এই বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবেই দেখছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক ও সাবেক কূটনীতিকরা। তারা বলছেন, বাংলাদেশ যে কূটনৈতিকভাবে অগ্রসর হচ্ছে সেটা ঠিক আছে। তাদের পরামর্শ, মিয়ানমার ইস্যুটিকে আন্তর্জাতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে বাংলাদেশের।
মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতদের ডেকে পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেছেন ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব রিয়াল এডমিরাল (অব.) খুরশেদ আলম। বৈঠকে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনাররা বাংলাদেশকে আশ্বস্ত করেছেন যে, বাংলাদেশ এই ইস্যুতে জাতিসংঘে গেলে তাদের দেশ বাংলাদেশের পাশে থাকবে।
সীমান্তে মিয়ানমারের ‘অবন্ধুসুলভ’ আচরণ শুরুর পর থেকেই বাংলাদেশ কূটনৈতিকভাবেই অগ্রসর হচ্ছে।
মিয়ানমারও নেপিদোতে তাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মনজুরুল করিম খান চৌধুরীকে ডেকে ঘটনার ‘ব্যাখ্যা’ দিয়েছে। যদিও তারা বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন আরাকান আর্মির উপরই দায় চাপিয়েছে।
সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, কূটনৈতিক পদ্ধতিতে আগানোর বিষয়টি আমি মনে করি যথাযথ। প্রথমে দ্বিপাক্ষিকভাবে চেষ্টা করা হয়েছে। তারপর বিভিন্ন দেশকে অবহিত করা হচ্ছে। এটা ঠিক আছে। আমার ধারনা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনেও বিষয়টি উত্থাপন করবেন।
এক প্রশ্নের জবাবে সাবেক এই রাষ্ট্রদূত বলেন, মিয়ানমার যদি এই ধরনের উসকানি অব্যাহত রাখে তখন হয়তো বাংলাদেশেরও শক্তি প্রদর্শনের প্রয়োজন হতে পারে। কিন্তু আরও কিছুদিন কূটনৈতিকভাবেই অগ্রসর হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
সাবেক রাষ্ট্রদূত এ কে এম আতিকুর রহমান ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, বঙ্গবন্ধুর পররাষ্ট্রনীতি ছিল সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব কারো সঙ্গেই বৈরিতা নয়। সরকার যে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে চাইছে সেটা ঠিক আছে। এই বিষয়টি আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান হতে পারে বলে মনে করেন তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইস্ট এশিয়া স্টাডি সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, বাংলাদেশকে এক্ষেত্রে কূটনৈতিকভাবেই এগুতে হবে। কূটনৈতিক তৎপরতায় চীন ও ভারতকে গুরুত্ব দিতে হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রয়োজনে জাতিসংঘে যাওয়ার যে কথা বলেছেন সেটাও যেন কথার কথা না হয়।
মিয়ানমার নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞার মধ্যে আছে উল্লেখ করে ড. দেলোয়ার হোসেন বলেন, ইস্যুটিকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।
মঙ্গলবার বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম কোনারপাড়া নো ম্যানস ল্যান্ডে মিয়ানমার বাহিনীর মর্টারশেল ও গোলাবর্ষণের ঘটনায় চরম আতঙ্ক এবং নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটাচ্ছেন মানুষ।
এ ঘটনায় নিরাপত্তা চেয়ে জাতিসংঘের কাছে চিঠি দিয়েছেন রোহিঙ্গা নেতা দীল মোহাম্মদ। তার সই করা চিঠিটি ইমেইলের মাধ্যমে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে পাঠানো হয়েছে।
স্থানীয় বাঙালিরাও চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। ৩০০ বাঙালি পরিবারকে সীমান্ত থেকে সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বান্দরবানের জেলা প্রশাসক। আতঙ্কে স্থানীয় অধিবাসীরা কাজে যেতে না পারায় খাদ্য সঙ্কটের আশঙ্কাও করছে জেলা প্রশাসন।
এনএইচবি/এএস