৪ দিনের ভারত সফরে ঢাকা ছাড়লেন প্রধানমন্ত্রী
চার দিনের ভারত সফরে আজ সোমবার (৫ সেপ্টেম্বর) ঢাকা ছাড়লেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের নিয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ভিভিআইপি ফ্লাইট সকাল ১০টা ১৫ মিনিটে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ছেড়ে যায়। ভারতীয় সময় দুপুর ১২টায় নয়াদিল্লির পালাম এয়ারফোর্স স্টেশনে অবতরণ করার কথা রয়েছে।
সফরকালে সাতটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার কথা রয়েছে। এসব চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক পানি ব্যবস্থাপনা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, রেলওয়ে, আইন, তথ্য ও সম্প্রচার ক্ষেত্রে সহযোগিতা সম্পর্কিত।
মঙ্গলবার (৬ সেপ্টেম্বর) দু’দেশের প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ের দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন হায়দ্রাবাদ হাউজে। ওই বৈঠকে বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। বৈঠকে দু'দেশের পারস্পরিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি যেমন- দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্প্রসারণ, বিনিয়োগ বৃদ্ধি, বিদ্যুৎ জ্বালানি খাতে সহযোগিতা, জনযোগাযোগ, অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন, নদীর অববাহিকাভিত্তিক পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা, সীমান্ত সুরক্ষা, নিরাপত্তা সহযোগিতা, মাদক চোরাচালান ও মানবপাচার রোধ প্রভৃতি অধিক গুরুত্ব পাবে।
দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক শেষে একটি যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করা হবে। সফরকালে প্রধানমন্ত্রী ভারতের প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী রাষ্ট্রীয় আনুষ্ঠানিকতায় অংশ নেবেন। সফরের শুরুর দিনই (৫ সেপ্টেম্বর) নিজামুদ্দিন আউলিয়ার দরবারে যাবেন প্রধানমন্ত্রী।
৬ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপতি ভবনে গার্ড অব অনারের মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর আনুষ্ঠানিক অভ্যর্থনা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর তিনি রাজঘাট গান্ধী সমাধিস্থলে শ্রদ্ধা অর্পণ করবেন।
প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলে পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রী, রেলপথমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথাপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তা, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব ও ঊর্ধ্বতন পর্যায়ের কর্মকর্তারা এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিরা প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে এ সফরে যোগ দেবেন।
দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতি, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও বৈঠক করবেন।
আগামী ৭ সেপ্টেম্বর ভারত ও বাংলাদেশের ব্যবসায়ীক প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে বিজনেস ইভেন্ট অনুষ্ঠিত হবে। প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে বাংলাদেশের একটি উচ্চপর্যায়ের ব্যবসায়ী প্রতিনিধি ভারত সফর করবেন।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভারত ও বাংলাদেশের মন্ত্রী ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা এই ইভেন্টে অংশ নেবেন। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের চিত্র ভারতীয় ব্যবসায়ীদের সামনে তুলে ধরা হবে যাতে তাদের বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা যায়।
প্রধানমন্ত্রী ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে সর্বশেষ ভারত সফর করেন। পরবর্তীতে কোভিড মহামারির ফলে বিগত ২০২০ সালে বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী এক ভার্চুয়াল সামিটে অংশ নেন। ২০২১ সালের মার্চ মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী এবং ডিসেম্বর মাসে রাষ্ট্রপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০০তম জন্মবার্ষিকী, বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের সুবর্ণ জয়ন্তী এবং ভারত-বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সফর করেন।
এমতাবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন সফরে বাংলাদেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন অনিষ্পন্ন বিষয়ে সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা অর্জন করা যাবে বলে প্রতীয়মান হয়। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিদ্যমান সুসম্পর্ক গভীরতর হওয়াসহ সার্বিকভাবে এই সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবার লক্ষ্যে নতুন নতুন উদ্যোগ গৃহীত হবে। এই সফর বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যকার পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি ও বিদ্যমান গতিশীল সম্পর্ককে আরও সুসংহত করবে বলে আশা করা যায়।
প্রধানমন্ত্রী এ সফর শেষে আগামী ৮ সেপ্টেম্বর ঢাকায় ফিরবেন।
আরইউ/এসএন