বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরকার প্রস্তুত: কৃষিমন্ত্রী
দেশে এবারের বন্যায় ফসলের তেমন ক্ষতি হয়নি। ক্ষতি যেটুকু হয়েছে, সেটা পুষিয়ে নিতে সরকারের যথেষ্ট ‘প্রস্তুতি’ আছে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক।
তিনি বলেন, ‘আমাদের ১১ লক্ষ হেক্টর (জমিতে) আউশ আছে। সেখানে ৫০ হাজার হেক্টরের মতো আক্রান্ত হয়েছে। কাজেই এখনো ওইরকম কোনো ক্ষতি হয়নি।’
বুধবার (২২ জুন) হোটেল সোনারগাঁওয়ে আঞ্চলিক আন্তঃসরকার সংস্থা সাউথ এশিয়া কো অপারেটিভ এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রাম আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর নাইট্রোজেন দূষণ নীতি ও ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত এক প্রতিবেদন প্রকাশের সময় বন্যা নিয়ে এসব কথা বলেন কৃষিমন্ত্রী।
আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বন্যার ক্ষয়ক্ষতি দেখে সরকার পুনর্বাসন কর্মসূচি নেবে। এখন কোনো মেজর ফসল নাই। তবে বাংলাদেশে এই সময়ে তো বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হয়। তাহলে আমনের একটা সম্ভাবনা রয়েছে ক্ষতি হওয়ার। তারপর আউশও ক্ষতি হচ্ছে। এগুলো দেখে আমরা পুনর্বাসন কর্মসূচি নেব।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘এ পর্যন্ত যতটুকু ক্ষতি হয়েছে তা পুষিয়ে নেওয়ার জন্য সরকার খুবই তৎপর এবং এ ব্যাপারে তাদের যথেষ্ট প্রস্তুতি আছে। আমাদের পর্যাপ্ত বীজ আছে…যদি বীজতলা নষ্ট হয়ে যায়, নতুন করে আবার বীজতলা আমরা কর।’
আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত সবজি চাষিদের পরবর্তী সময় রবি শষ্য আবাদে সরকার বিনামূলে বীজ ও সার দেবে।’
কৃষিমন্ত্রী বলেন, পরিবেশের সঙ্গে অ্যাডাপ্ট করতে হবে। সেটি আমাদের জন্য খুবই ইম্পর্ট্যান্ট। আমরা স্ট্রেসড পরিবেশে গেলে কী হবে? ধান পানির নিচে চলে যাবে, লবণাক্ততা বাড়বে, খরা বাড়বে। এগুলোর জন্য স্ট্রেস রেসিস্ট্যান্ট ধানের জাত, বিভিন্ন ফসলের জাত আমাদের বিজ্ঞানীদের আবিষ্কার করতে হবে।
তিনি বলেন , নাইট্রোজেন ৬০-৭০ শতাংশ লস হয়ে যাচ্ছে। এটা কিন্তু তাড়াতাড়ি উড়ে যায় বাতাসে। এটাকে কমিয়ে আনতে হবে। এফিসিয়েন্সি লেভেল বাংলাদেশে খুব-ই কম। মাত্র ৩০-৩৫ শতাংশ। আমরা চাচ্ছি যে এটাকে কীভাবে বাড়ানো যায় এবং এর জন্য রিজিওনাল কো-অপারেশন খুবই ইম্পর্ট্যান্ট এবং আমি মনে করি সাসেপের সদস্য মেম্বার কান্ট্রিরা সবাই মিলে একটা ভালো পলিসি নেবে। যাতে করে নাইট্রোজেন ইফিশিয়েন্সি আমরা বাড়াতে পারি।
আব্দুর রাজ্জাক বলেন,বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, ভারত এবং অন্যান্য দেশ পরিবেশের প্রতি কমিটেড। বাংলাদেশ তো এক্সট্রিমলি ভালনারেবল টু ক্লাইমেট চেইঞ্জ। কাজেই আমাদেরকে সঠিক পথ গ্রহণ করতে হবে।
তিনি বলেন, ‘ফসল উৎপাদন এবং পরিবেশ দূষণ রোধে নাইট্রোজেন ব্যবস্থাপনা খুবই চ্যালেঞ্জিং। এ অঞ্চলের খাদ্য নিরাপত্তা এবং পরিবেশগত স্থায়িত্ব নিশ্চিতে টেকসই নাইট্রোজেন ব্যবস্থাপনার বিকাশে পারস্পরিক সহযোগিতা ও সুসংহতভাবে কাজ করার এখনই সময়।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর বিজ্ঞানীরা এ অঞ্চলে নাইট্রোজেন দূষণের উপর বিদ্যমান নীতির ওপর একটি আঞ্চলিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ এবং নেপালও তাদের জাতীয় প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ।
অনুষ্ঠানে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার বাংলাদেশের প্রতিবেদন তুলে ধরেন। এ সময় তিনি পরিবেশ দূষণ, খাদ্য নিরাপত্তা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে নাইট্রোজ দূষণের বাস্তবসম্মত সমাধান খুঁজে পেতে বিজ্ঞানী এবং নীতি নির্ধারকদের সম্মিলিত কাজের উপর গুরুত্ব দেন।
সাউথ এশিয়া কো-অপারেটিভ এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রামের মহাপরিচালক ড. মাসুমুর রহমানের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন যুক্তরাজ্যের এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রজার জেফারি হানান, ইউকে সেন্টার ফর ইকোলজি অ্যান্ড হাইড্রোলজির অধ্যাপক মার্ক সুটন এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মো. মিজানুর রহমান।
এনএইচচিবি/এমএমএ/