জনগণের ভোট কেড়ে নিয়ে ক্ষমতায় থাকতে চাই না: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘যেন তেনো ভাবে প্রধানমন্ত্রী হওয়াটা আমার লক্ষ্য না। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ অনেক থাকে। কিন্তু ওরকম সুযোগ নিয়ে তো প্রধানমন্ত্রী হইনি কখনও। ১৯৯১ সালে হতে পারতাম। আমি যাবো তখনই যখন আমার কাছে অ্যাপসুলেট পাওয়ার থাকবে। অর্থাৎ আমার ক্ষমতার ইচ্ছে হলো আমার দেশের উন্নতি করা। আর সেটা আমি প্রমাণ করিনি?
বাংলাদেশের চেহারাটা চিন্তা করেন। আর একটা কথা জনগণের ভোট কেড়ে নিয়ে ক্ষমতায় থাকতে চাই না। সেটা থাকবো না। মিলিটারি ডিকটেটররা যা করেছেন তার বিরুদ্ধে আমিই সংগ্রাম করেছি, আমিই আন্দোলন করেছি, জেল জুলুম, বোমা, গ্রেনেড, গুলির সন্মুখিন আমিই হয়েছি। গণতন্ত্রটা করতে পেরেছি বলেই এই ধারাবাহিকতা রয়েছে, দেশের উন্নয়ন হয়েছে।’
বুধবার (২২ জুন) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পদ্মা সেতু ইস্যু ও সমসমায়িক ইস্যু নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সরকার প্রধান একথা বলেন।
একজন সাংবাদিক প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশে করে বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে না আওয়ামী লীগ সভাপতির কাছে জানতে চাই গত দুইটি নির্বাচন নানা কারণে পুরোপুরি অংশগ্রহণমূলক হতে পারেনি। আশা করছি আগামী নির্বাচনে সবাই আসবে। গত দুই নির্বাচন সহজ হওয়াতে আওয়ামী লীগ নেতারা জয় পাওয়াতে আত্মতুষ্টিভাবে চলে আসছে কি-না? এ থেকে বের হওয়ার উপায় কি?
জবাবে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ হচ্ছে এই উপমহাদেশে সব থেকে প্রাচীন পার্টির মধ্যে একটি। যে দলটা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল একেবারে গণমানুষের মাধ্যমে। সেই সময় পাকিস্তানি সরকারের বিরুদ্ধে তাদের অনিয়মের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রতিবাদ করতে যেয়ে আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা লাভ করে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন। আমাদের প্রতিপক্ষ যে কয়টা দল আছে তাদের জন্মস্থানটা কোথায়? যদি ধরেণ মূল একটি দল আছে বিএনপি। বিএনপির প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে একজন মিলিটারি ডিকটেটরের হাতে, যে মিলিটারি ডিকটেটর ১৫ আগস্ট জাতির পিতার হত্যার সঙ্গে জড়িত, খুনি মোস্তাকের সঙ্গে হাত মেলানো ছিল। মোস্তাক যাকে সেনাপ্রধান হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিল জাতির পিতাকে হত্যার পর। সে যখন নিজেকেই নিজে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করে ক্ষমতা দখল করে তখন প্রেসিডেন্ট সায়েম সাহেবকে সরিয়ে দিয়ে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দিয়ে ক্ষমতা দখল করে। সংবিধান লঙ্ঘন করে মার্শাল ‘ল’ জারি করে, সংবিধান লঙ্ঘন করে মার্শাল ‘ল’ জারি করে যে ক্ষমতা দখল করে মিলিটারি উর্দি পরে একাধারে সেনাপ্রধান একাধারে রাষ্ট্রপতি। ঠিক আয়ুব খান যেটা করেছিল সেই পদাঙ্ক অনুসরণ করলো। দেশে ১৯ টা ক্যু, প্রতি রাতে কারফিউ। আমাদের অনেকেই ঝাঁপিয়ে পড়ল যে তিনি গণতন্ত্র দিয়েছেন। আমি বলেছিলাম এটা কারফিউ গণতন্ত্র। তার হাতে তৈরি করা হলো বিএনপি। অর্থাৎ ক্ষমতায় থেকে প্রথমে হ্যাঁ না ভোট। সেই ভোট কেমন হয়েছিল? না ভোটের বাক্স ছিল না সব হ্যাঁ। এরপর রাষ্ট্রপতি নির্বাচন। সেটাও একটা নির্বাচনের খেলা। তারপ ১৯৭৯ সালের সংসদ নির্বাচন। সেখানে দল ভাঙা গড়া আওয়ামী লীগ থেকে একে ওকে নিয়ে এগাছের তাল ওগাছের বাকল নিয়ে জোরা দেওয়া অর্থাৎ ক্ষমতায় বসে দল তৈরি করা। সেই দলটাই হয়েগেছে মূল দল।
‘তার পরবর্তী জাতীয় পার্টি সেটাও ওইভাবেই তৈরি। আর এক মিলিটারি ডিকটেটর সেও ক্ষমতায় বসে জাতীয় পার্টি করেছে। যে দলগুলো তৃণমূল থেকে উঠে আসেনি সেই দলগুলোর কাছে কী আশা করেন? তারপর ওই দলের নেতৃত্বটা কার হাতে, কে নেতা। এতিমের অর্থ আত্মসাৎ এবং দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত একজন আসামি। আর একজন দশ ট্রাক অস্ত্র মামলা একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলাসহ দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি একজন ফিউজিটিভ। আর একজনকে আমি আমার এক্সিকিউটিভ ক্ষমতায় সাজা স্থগিত করে বাসায় থাকার সুযোগটা দিয়েছি চিকিৎসার জন্য বয়সের কথা বিবেচনা করে।’
তিনি বলেন, এখন এই দলটা যে নির্বাচন করবে। আপনারা বললেন কোনো দল অংশগ্রহণ করেনি। কিভাবে বলেন অংশগ্রহণ করেনি। ২০১৮ সালের নির্বাচন বিএনপি এক একটা সিটে কতজনকে নোমিনেশন দিয়েছিল? এক আসনে একজনকে সকালে দেয় দুপরে সেটা পরিবর্তন হয়ে আর একজন দেয়। তারপর তৃতীয়ত আর একজনের নাম দেয়। অর্থাৎ যে যত বেশি টাকা দিচ্ছে তাকে নমিনেশন দিয়ে দিচ্ছে। এই অবস্থায় যখন একটা দল নির্বাচনে তাদের প্রার্থী দেয়। ঢাকা থেকে তাদের এক নেতা একজনকে দিচ্ছে তো আর এক নেতা লন্ডন থেকে আর একজনকে দিচ্ছে বা অমুক নেত্রীর কাছে টাকা চাচ্ছেন, টাকা না দিলে ননিনেশন পাবে না। দিনে যদি তিন বেলা নমিনেশন বদলান তারপর দেখা গেল এক সময় মাঝখানে মাঠ ছেড়ে চলে গেল। এটা কি অস্বীকার করতে পারবে বিএনপি? তাহলে এটা পার্টিসিপেটরি ইলেকশন হয়নি একথা কিভাবে বলেন। যখন নির্বাচনি মাঠ ছেড়ে মাঝপথে চলে যান, তখন তো মাঠ ফাঁকা। তখন পাবলিকের যা খুশি তাই করতে পারে। সেই দোষটা কাকে দেবেন? এটা তো আওয়ামী লীগকে দিতে পারেন না। এই বাস্তবতা সবাই ভুলে যায়। একটা মিথ্যা বার বার বলতে পারেন আর সত্য একবার একবারই বলতে পারেন।
অনেকেই প্রচার করে দেশের নির্বাচন পার্টিসিপেটরি না, একটা দল অংশগ্রহণ করবে তখনই যখন মানুষের আস্থা বিশ্বাস অর্জন করবে। সেই দলকে দেখাতে হবে যে নির্বাচন করে জয়ী হয়ে কে হবে সরকার প্রধান। এটা তো মানুষ আগে বিবেচনা করে, করে না? এটা শুধু আমাদের দেশে না পৃথিবীর সব দেশেই। তারা যে নির্বাচন করবে তারা কাকে দেখাবে। সাজাপ্রাপ্ত ফিউজিটিভকে সে তো এদেশের নাগরিকত্ব বাতিল করে ব্রিটিশ নাগরিক হয়ে বসে আছে। কত টাকা বিনিয়োগ করলে সহজে ব্রিটিশ নাগরিকত্ব পাওয়া যায় প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রীর। একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামী হয়ে কিভাবে ব্রিটিশ নাগরিক হলো। এই নিয়ে তারা কি নির্বাচন করবে, সেটাই তো বড় কথা। এখানে গণতন্ত্রের দোষটা কোথায়? আর একটা দল তাদেরও একই অবস্থা। তাদের সাংগঠনিক তৎপরতা নেই। বাকি ছিল বাম দলগুলো তার ক্ষুদ্রাতিক ক্ষুদ্র হতে হতে দাড়ি, কমা, সেমিকলন, দাড়ি বসবে না কমা বসবে এই করতে করতে ভাঙতে ভাঙতে তাদের এমন অবস্থা তারা এখন বাম হয়ে কখনও ডানে কাত হয়, কখনও বামে কাত হয়, তাদের তো এই অবস্থা। আছে কে সেটা বলেন না? একটা ভালো শক্তিশালী দল করে দেন, মাঠে দেখা হবে মাঠে দেখব জনগণ কাকে চায়।
সরকার প্রধান বলেন, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ অনেক থাকে। কিন্তু ওরকম সুযোগ নিয়ে তো প্রধানমন্ত্রী হইনি কখনও। ১৯৯১ সালে হতে পারতাম। সাহাবুদ্দিন সাহেব তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান তিনি যখন আমাদের ডেকে বলেছিলেন জামায়াত, জাতীয় পার্টি, আওয়ামী লীগ মেজরিটি। আপনি সরকার গঠন করেন। আমি ক্ষমা চেয়ে চলে এসেছিলাম যে আমি এভাবে ক্ষমতায় যাবো না। আমি যখন সিট পাইনি আমি যাবো না। আমি যাবো তখনই যখন আমার কাছে অ্যাপসুলেট পাওয়ার থাকবে। অর্থাৎ আমার ক্ষমতার ইচ্ছে হলো আমাদের উন্নত করা। আর সেটা আমি প্রমাণ করিনি? বাংলাদেশের চেহারাটা চিন্তা করেন।
তিনি বলেন, এরপর দেশে ইমার্জেন্সি এলো। ৮ বছর জাতির জীবন থেকে নষ্ট হলো। আমাকে আসতে দেওয়া হলো না। আমি আসতে পারতাম ক্ষমতায়। আমাকে যখন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বিলক্লিটন ধরেছিল এবং আমি তাদের এনার্জি মিনিস্টার সে এসছিল এখানে, আমাকে একটি প্রস্তাব দিয়েছিল ভারতেরও প্রস্তাব ছিল আমাদের এখানে যে গ্যাস এক্সপোলারেশন হচ্ছে সব বিক্রি করতে হবে। আমেরিকার কোম্পানি গ্যাস উত্তোলন করবে আর ভারতের কাছে গ্যাস বিক্রি করতে হবে। আমার কথা ছিল স্পষ্ট গ্যাসের মালিক দেশের জনগণ আমরা দেশের চাহিদা পূরণ হবে দেশের উন্নতি হবে দেশের চাহিদা পূরণ হওয়ার পর ৫০ বছরের রিজার্ভ থাকবে তারপর যদি অতিরিক্ত হয় আমি বেচবো। এটাই তো আমার অপরাধ ছিল যে আমার দেশের সম্পদ রক্ষা করতে চেয়েছিলাম? সেই কারণে ২০০১ সালে আমাকে ক্ষমতায় আসতে দেওয়া হয়নি।
তিনি বলেন, যেন তেনো ভাবে প্রধানমন্ত্রী হওয়াটা আমার লক্ষ্য না। আমার কাছে একটাই ছিল নির্বাচন। কেয়ারটেকারের সময় যখন আমাকে গ্রেপ্তার করা হয় তখনও আমাকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল যে আপনি নির্বাচন করবেন না, আপনাকে প্রাইম মিনিস্টারের মর্যাদা দেওয়া হবে। আমি বলেছিলাম এই মর্যাদা তো আমি চাই না। আমার উত্তর কি ছিলো? যে ব্রিগেডিয়ার প্রস্তাব নিয়ে গিয়েছিল তাকে বলেছিলাম আপনার আর্মি চিফকে বলে দিয়েন ৫৪ সালে তাঁর জন্ম। আমার বাপ ৫৪ সালে মন্ত্রী ছিলেন। আমরা প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে ছিলাম। আমরা মিন্টু রোড থাকতাম। কাজেই ক্ষমতার লোভ আমাকে দেখিয়ে লাভ নাই। আমরা ইলেকশন চাই আর ক্ষমতায় যেত চাই দেশের উন্নয়নের জন্য, সোজা কথা।
বিএনপিকে উদ্দেশে করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওরা ইলেকশনটা করবে কাকে নিয়ে? আপনার পারেন দল করেন। আসেন পার্টিসিপেটরি করে দেবো অসুবিধে নাই। একটা কথা মনে রাখবেন জনগণের ভোট কেড়ে ক্ষমতায় থাকতে চাই না। থাকবো না। ওদের জন্য কান্না কাটি করে লাভ নাই। ওরা নির্বাচনটা করবে কি নিয়ে? পূজিটা কি? বাংলাদেশে বিএনপির কি একটাও যোগ্য নেতা নাই যাকে তারা দলের চেয়ারম্যান করতে পারে। করলে তো তাদের এই অবস্থাটা হয় না।
এসএম/