ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ক
অমীমাংসিত বিষয়গুলো আটকে আছে আলোচনাতেই
আলোচনাতেই আটকে আছে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার কিছু অমীমাংসিত বিষয়। অভিন্ন নদীর পানিবণ্টন, সীমান্ত সমস্যা ও দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের কিছু বাধা নিয়ে প্রতিটি বৈঠকেই শুধু আলোচনা হয়। কিন্তু জট আর খুলে না।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সদ্য সমাপ্ত যৌথ পরামর্শ কমিটির (জেসিসি) বৈঠকেও শুধু আলোচনাই হয়েছে। সীমান্তে বাংলাদেশের কিছু কাজ ভারতের বাধার কারণে আটকে আছে। সেই বিষয়গুলোর কোনো সুরাহা হচ্ছে না। তিস্তা নিয়েও কোনো অগ্রগতি হয়নি। বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে অন্যতম অমীমাংসিত ইস্যু হলো তিস্তাসহ ৫৪টি অভিন্ন নদীর পানিবণ্টন। সেই বিষয়টি শুধু বিভিন্ন ফোরামে দুই দেশের মধ্যে আলোচনাই হয়। কোনো সুরাহা হয় না।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, যৌথ নদী কমিশনের (জেআরসি) বৈঠক হয় না দীর্ঘদিন। সর্বশেষ ২০১০ সালে নয়াদিল্লিতে জেআরসি বৈঠক হয়েছিল। তার পরের বছর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরকালে তিস্তা চুক্তি সই হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের আপত্তির কারণে শেষ মুহূর্তে সেই চুক্তি আর হয়নি। তারপর থেকে তিস্তা চুক্তি নিয়ে বারবার দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার বাংলাদেশ সরকারকে আশ্বস্ত করলেও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর আগের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয়নি।
গত ১১ বছর ধরে বাংলাদেশ বারবার জেআরসি বৈঠকের তাগিদ দিলেও ভারতের কাছ থেকে এ ব্যাপারে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না।
সদ্য সমাপ্ত জেসিসি বৈঠকের আগেও ঢাকা জেআরসি বৈঠক আয়োজনের জন্য নয়াদিল্লিকে অনুরোধ করেছিল। কিন্তু জেআরসি বৈঠক ছাড়াই জেসিসি বৈঠক শেষ হলো।
এ ব্যাপারে জেসিসি বৈঠকের আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন বলেন, জেআরসি বৈঠকের জন্য ভারত প্রস্তুত নয়। তবে জেআরসি বৈঠক না হলেও জেসিসি বৈঠকে পানিবণ্টন নিয়ে আলোচনা হবে।
সোমবার (২০ জুন) জেসিসি বৈঠক শেষে দেশে ফিরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বলেন, জেআরসি বৈঠক আয়োজনের জন্য তো আমরা বারবার তাদের তাগিদ দেই। কিন্তু তারা তো দেয় না। তারা শুধু বলে যে হবে। কিন্তু তারিখ পাইনি।
সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ হওয়ার পরও তিস্তা চুক্তি হলো না। ভারতের সঙ্গে যেকোনো বৈঠকেই বাংলাদেশ এ বিষয় উত্থাপন করে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এটা এক রকম রুটিন আলোচনার মতো হয়ে গেছে।
জেসিসি বৈঠকে যোগ দিতে নয়াদিল্লি যাওয়ার আগ মুহূর্তে ড. মোমেন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, তিস্তা চুক্তি না হওয়া বাংলাদেশের জন্য দুঃখজনক, ভারতের জন্য লজ্জাজনক। এবারের বৈঠকে তিস্তা চুক্তির বিষয়ে জোর দেব। বলব, এটা হওয়া উচিত।
যদিও বৈঠকে তিস্তা চুক্তি নিয়ে কোনো ফলপ্রসূ অগ্রগতি হয়নি। গত মেয়াদেই নরেন্দ্র মোদি চুক্তি করার কথা বললেও নিকট ভবিষ্যতে যে তা হচ্ছে না সেটা নিশ্চিত। একই অবস্থা ৫৪ অভিন্ন নদীর পানিবণ্টন নিয়েও।
নেপালে পণ্য পরিবহণের জন্য ভারতের কাছে ট্রানজিট চেয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু সেই বিষয়েটিও আলোচনার পর্যায়েই রয়ে গেছে। এবারের জেসিসি বৈঠকেও এ বিষয় কোনো অগ্রগতি হয়নি বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন।
জেসিসি বৈঠক শেষে দেশে ফিরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, বৈঠকে ট্রানজিট নিয়ে কথা হয়েছে। বিবিআইএন কাঠামোতে ট্রানজিটের ব্যাপারে আমরা সম্মত হয়েছি।
বিবিআইএন হলো ‘বাংলাদেশ-ভুটান-ভারত-নেপাল কানেকটিভিটি’। এটি সার্কভুক্ত চারটি দেশ নেপাল, ভুটান, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে একটি পরিকাঠামো, যেটির উদ্দেশ্য পানির উৎসের সঠিক ব্যবহার এবং বিদ্যুৎ ও সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলা।
ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে আরেকটি বড় প্রতিবন্ধকতা হলো দেশটির অ্যান্টি ডাম্পিং আইন। এ আইনের কারণে অনেক পণ্য ভারত নিচ্ছে না। এ বিষয় নিয়েও নিয়মিত আলোচনা হয় দুদেশের মধ্যে।
এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বৈঠকে আমরা তাদের বলেছি অ্যান্টি ডাম্পিং আইন করে কিছু জিনিস নেন। যেমন হাইড্রোজেনপার অক্সাইড, জুট, ফ্লোট গ্লাস। তারা বলেছে, এগুলোর জন্য সাবসিডি দেন। আমরা বলেছি সাবসিডি নয়, আমরা ইনসেনটিভ দিই। আপনারা যেটাকে সাবসিডি বলেন। তারা বলেছেন তারা এটা বিবেচনা করবেন।
আরইউ/এনএইচবি/এসএন