যতদিন বাংলা ও বাঙালি থাকবে ততদিন গাফ্ফার চৌধুরীও থাকবেন
আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি কালজয়ী এই গানের রচয়িতা বরেণ্যে সাংবাদিক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা ভালোবাসা প্রমাণ দেয় তিনি কতটা জনপ্রিয় ব্যক্তি ছিলেন। রাজনীতি, পেশাজীবী, সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের মানুষের ভালোবাসায় শেষ বিদায় নিলেন শ্রদ্ধেয় আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী। শেষ বিদায়েও তাঁর সেই অমর গান গেয়ে শোনানো হয় আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি। এই গানের সঙ্গে সুর মিলিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে আসা মানুষগুলো বলছিলেন গাফ্ফার চৌধুরী আপনাকে আমরাও ভুলতে চাই না। তাই তো সকলের কণ্ঠে ধ্বনিত হলো যতদিন বাংলা থাকবে, যতদিন বাঙালি থাকবে ততদিন সেই গান বাজবে বেঁচে থাকবেন গাফ্ফার চৌধুরী।
শনিবার (২৮ মে) দুপুরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য রাখা হয় গাফ্ফার চৌধুরীর কফিন। দুপুর ২ টার সময় শহীদ মিনারে আনা হলে প্রথমে তাকে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। এরপর রাষ্ট্রপতির পক্ষে তাঁর সামরিক সচিব এবং প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে তাঁর সামরিক সচিব শ্রদ্ধা জানান। এরপর জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী শ্রদ্ধা জানান। এরপর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ কেন্দ্রীয় নেতারা শ্রদ্ধা জানান। তাছাড়া শ্রদ্ধা জানান, খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। এছাড়া শ্রদ্ধা জানান বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ও দলের নেতারা। শ্রদ্ধা জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্য মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শারফুদ্দিন আহমেদ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ, সাধারণ সম্পাদক আবৃত্তিশিল্পী আহকাম উল্লাহ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, শিক্ষাবিদ জাফর ইকবাল, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরী, সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নুরসহ সর্বস্তরের মানুষ।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘গাফফার চৌধুরীর চির বিদায়ের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের সংস্কৃতির সমকালের সবচেয়ে বড় বটবৃক্ষটির পতন ঘটল। দেশ বরেন্য লেখক, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, কলমিষ্ট আব্দুল গাফফার চৌধুরীর তুলনা তিনি নিজেই। তিনি মরে গেলেও একুশের অমর সেই গান আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারির মাঝে তিনি বেঁচে থাকবেন।’
আসাদুজ্জামান নুর বলেন, জাতির পিতার কনিষ্ঠ অনুসারি হিসেবে সারাজীবন মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্নগুলোকে লালন করেছেন, প্রচার করেছেন। স্বাধীনতার প্রশ্নে তিনি কখনও আপোষ করেননি। তিনি যে সময় পার করেছেন সেই সময়টি একদিকে গৌরবের অন্য দিকে বিষাদের, সংকটের। একদিকে আন্দোলন সংগ্রাম মুক্তিযুদ্ধ অন্য দিকে ৭৫ এর নিষ্ঠুরতম হত্যাকাণ্ড। এই সমগ্র ইতিহাসের সাক্ষী আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী। তিনি বাংলা, বাঙালির বাংলাদেশের মানুষে হৃদয়ের গান লিখেছেন। বাঙালির চেতনাকে ধারণ করেছেন। বাঙালি যতদিন থাকবে, ততদিন এই গান আমাদের পাথেয় হয়ে থাকবে। তিনি ছিলেন জাতির বিবেক। সংকটে পথ দেখানো লোক খুব বেশি পাওয়া যায় না। সেই জায়গায় বিশাল শুন্যতা সৃষ্টি হলো। তবে যারা গাফ্ফার ভাইকে ভালোবাসেন শ্রদ্ধা নিবেদন করলেন, বিশ্বাস করেন তারাই গাফ্ফার ভাইয়ের চিন্তা চেতনাকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন।
জাফর ইকবাল বলেন, “গাফ্ফার চৌধুরীর মরদেহ পাওয়ার পর থেকে মনে হয়েছে মানুষ হিসেবে নি:সঙ্গ হয়ে গেছি। মানুষ হিসেবে তার ভাবনা রাজনীতি সংস্কৃতি যে কোনো জায়গায় যে কোন ঘটনা ঘটলে পৃথিবীর যে কোনো জায়গায় যে কোনো ঘটনা ঘটলে সামগ্রিক ভাবে বিবেচনা করে বিশ্লেষণ করতে পারতেন। সব জায়গায় অত্যান্ত সুন্দরভাবে বিশ্লেষণ করে কথা বলতে পারতেন। তাই আমরা অপেক্ষা করে থাকতাম তার লেখার জন্য। তিনি চলে গেছেন। হয়তো বয়স হয়ে গেছে। এক সময় যেতেই হবে। তারপরও আমার কাছে মনে হয়েছে আমি মানুষ হিসেবে নি:সঙ্গ হয়ে গেছি। কথা বলার একজন অভিভাবক হারিয়ে ফেললাম। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে, গফ্ফার ভাই তার কথা যদি কেউ নাও মনে রাখে তবে তার গানের কথা প্রত্যেকটা মানুষ জানবে।”
ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, গাফ্ফার চৌধুরী আমাদের অগ্রগতিতে অবদান রেখেছেন। তাকে সম্মান না দেখানো ক্ষুদ্রতা প্রকাশ পেল।’ সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বলেন, যতদিন পর্যন্ত পৃথিবীতে একজন বাঙালি বেঁচে থাকবে ততদিন পর্যন্ত আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি, এই গানটি বেঁচে থাকবে। এই গানের মাধ্যমে বেঁচে থাকবেন গাফ্ফার চৌধুরী।
এসএম/এএজেড