জেসিসি বৈঠকের এজেন্ডা
ওয়াটার কানেকটিভিটি, রোহিঙ্গা, পি কে হালদার ও গম
আগামী ৩০ মে নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত হবে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ পরামর্শক কমিশনের (জেসিসি) বৈঠক। বৈঠকে ওয়াটার কানেকটিভিটি, ভারত থেকে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ, পিকে হালদার এবং গম আমদানির মতো বিষয়গুলো প্রাধান্য পাবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টরা জানান, জেসিসির বৈঠক ছাড়াও আসামের গুয়াহাটিতে যৌথ নদী বিষয়ক একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন। এই অনুষ্ঠানের সাইডলাইনেও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ড. এস জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠক করবেন ড. মোমেন। এই বৈঠকেই মূলত ওয়াটার কানেকটিভিটি নিয়ে আলোচনা করবেন দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
আজ শুক্রবার (২৭ মে) পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ভারতের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়েছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রথমে যাবেন গুয়াহাটিতে। তারপর যাবেন নয়াদিল্লিতে। দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে আরও থাকছে বাণিজ্য সহযোগিতা, আইসিটি, নবায়নগযোগ্য জ্বালানি, জলবায়ু পরিবর্তনেরমতো ইস্যুগুলো। এছাড়া এই সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সূচি চূড়ান্ত হবে বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ-ভারত ওয়াটার কানেকটিভিটি:
গুয়াহাটির বৈঠকে তিস্তা নদীর পানি বণ্টন নিয়ে আলোচনা হবে। এর পাশাপাাশি মনু, ধরলা, দুধকুমার, গোমতি, খোয়াই, মুহুরি ও কুশিয়ারা নদীর পানির বণ্টনের বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হবে। তবে সফরকালে কোনো চুক্তি বা কোনো সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নাই। তিস্তা নিয়েও কোনো সুখবর পাওয়া যাবে না। সম্প্রতি এক ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, গুয়াহাটির বৈঠকে ওয়াটার কানেকটিভিটি নিয়ে আলোচনা হতে পারে। ওয়াটার কানেকটিভিটি কীভাবে বাড়ানো যায় সেটাই চাইব আমরা।
ভারত থেকে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ:
মিয়ানমারের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত যেসব রোহিঙ্গা ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল তারা এখন বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করছে। এ বিষয়ে নয়াদিল্লির দৃষ্টি আকর্ষণ করবে ঢাকা। যদিও ইতিমধ্যে ভারতকে বাংলাদেশ একটি চিঠি দিয়েছে। এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গারা জেনেছে বাংলাদেশে এলে ভাল খাবার পাওয়া যায়। তারা ভারত থেকে এসব রোহিঙ্গা দলে দলে বাংলাদেশে আসছে। আমরা এ ব্যপারে দিল্লিকে ব্যবস্থা নিতে বলব। দুই দেশের দালাল ধরে রোহিঙ্গারা ভারত থেকে আসছে জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ইতিমধ্যে আমরা ভারত থেকে অনুপ্রবেশকালে ১৮ জন রোহিঙ্গাকে গ্রেপ্তার করেছি। আর যাতে বাংলাদেশে তারা না ঢুকতে পারে তাই নয়াদিল্লির সহযোগিতা চাইব।
পি কে হালদারকে ফেরত চাইবে ঢাকা:
ব্যাংক ও বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে জালিয়াতি করে ১০ হাজার ২০০ কোটি টাকা আত্মসাতকারী ৩৫ মামলার আসামী পি কে হালদারকে সম্প্রতি গ্রেপ্তার করেছে ভারতের এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। গ্রেপ্তারের পর থেকেই তাকে বাংলাদেশে ফেরানো নিয়ে নানা কথাবার্তা হচ্ছে দুই দেশের মধ্যে। জেসিসি বৈঠকে নয়াদিল্লির কাছে পিকে হালদারকে ফেরত চাইবে ঢাকা।
পি কে হালদারকে ফেরত চাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পূর্ব) মাশফি বিনতে শামস বলেন, আমরা অবশ্যই চেষ্টা করব তাকে ফেরাতে এবং দেশটিতে পাচার করা টাকাও ফেরাতে আলোচনা করব। যদিও পি কে হালদারকে ফেরত পাওয়ার বিষয়টি দ্রুত হবে না বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেনও বিভিন্ন সময় বক্তৃতায় দীর্ঘসূত্রতার বিষয়টি ইঙ্গিত দিয়েছেন। ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামীও দ্রুত পি কে হালদারকে ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা যে নাই সেই ইঙ্গিত দিয়েছেন।
পিকে হালদারকে গ্রেপ্তারের ৩ দিন পর পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে বৈঠক করেন বিক্রম দোরাইস্বামী। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ভারতীয় হাইকমিশনার বলেন, পররাষ্ট্রসচিবের সঙ্গে কথা হয়েছে। এটি উভয়পক্ষের নিয়মিত সহযোগিতার একটি অংশ। তবে আপনাদের বুঝতে হবে, এটি কিন্তু কোনো বড়দিনের কার্ড বিনিময় নয়। ধীরে ধীরে হতে দিন।
গম আমদানি:
বাংলাদেশ ভারত থেকে গম আমদানি করতে চায়। এতদিন বাংলাদেশের আমদানি করা গমের বড় অংশ আসতো ইউক্রেন ও রাশিয়া থেকে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে দুটি দেশই গম রপ্তানি বন্ধ রেখেছে। এ অবস্থায় নিজেদের খাদ্যনিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে ভারতও সরকারিভাবে গম রপ্তানি বন্ধ রেখেছে। যদিও ভারত সরকার বারবার বলছে, গম রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্ত হলেও প্রতিবেশি দেশগুলো গম পাবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টরা জানান, জেসিসি বৈঠকে বাংলাদেশ যাতে গম পায় সেই বিষয়টি তোলা হবে। এক্ষেত্রে সুখবর মিলবে বলে আশা করছেন তারা। সম্প্রতি ভারতীয় গণমাধ্যম দ্যা ইকোনমিক টাইমসের খবরেও বলা হয়েছে, নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ভারত শিগগিরই ১০ লাখ টন গম রপ্তানি করতে পারে। এর মধ্যে ৫ থেকে ৬ লাখ টন গম পাবে বাংলাদেশ।
আরইউ/এএজেড