গ্রহণযোগ্য ইসি গঠনে সকলের সহযোগিতা কামনা রাষ্ট্রপতির
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠনে সকল রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের সহযোগিতা কামনা করেছেন।
সোমবার (২০ ডিসেম্বর) রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের অংশ হিসেবে প্রথম দিনেই জাতীয় পার্টির সঙ্গে বৈঠকে এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত ও পরামর্শের ভিত্তিতে নতুন নির্বাচন গঠিত হলে জাতীয় নির্বাচনসহ সকল নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে সম্পাদন করা সম্ভব হবে।
সংলাপের পরে রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন বাসসকে জানান, রাষ্ট্রপতি একটি স্বাধীন, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য, শক্তিশালী ও কার্যকর নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে বঙ্গভবনে জাতীয় পার্টির সঙ্গে আলোচনায় বসেন।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের-এর নেতৃত্বে আট সদস্যের একটি জাপা প্রতিনিধি দল এ আলোচনায় অংশ নেন।
জাপার প্রতিনিধি দলে ছিলেন জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, এমপি, মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু, এমপি, কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ, এমপি, কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, এমপি, কো-চেয়ারম্যান সালমা ইসলাম, এমপি, সংসদে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ ও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য মশিউর রহমান রাঙ্গা, এমপি। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনে তাদের প্রস্তাবনাসমূহ তুলে ধরেন।
তিনি আলোচনার এই উদ্যোগ নেওয়ার জন্য রাষ্ট্রপতিকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। জাতীয় পার্টির প্রতিনিধি দল সংবিধানের ১১৮(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন প্রণয়নের প্রস্তাব করেন এবং সংবিধানের ১২৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নির্বাহী বিভাগ কর্তৃক নির্বাচন কমিশনের সার্বিক কার্যক্রমে সহযোগিতা নিশ্চিত করতে আরেকটি আইন প্রণয়নের প্রস্তাব করেন।
তারা আরও বলেন, যদি এই সময়ের মধ্যে আইন প্রণয়ন সম্ভব না হয় তাহলে অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে এটি করা যেতে পারে।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, 'যদি আইন প্রণয়ন ও অধ্যাদেশ জারি সম্ভব না হয় সেক্ষেত্রে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রস্তাব করেন।'
তার দল রাষ্টপতির এই উদ্যোগে সার্বিক সহযোগিতা প্রদানের ও প্রতিশ্রুতি দেন।
আবেদীন জানান, নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গেই রাষ্ট্রপতি আলোচনার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই সংলাপ শেষ করার প্রস্তুতি রয়েছে। রাষ্ট্রপতি শুধুমাত্র নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেই ইসি গঠনে জন্য আলোচনায় বসবেন।
প্রেস সচিব জানান, ২৬ ডিসেম্বর রবিবার সংলাপ হবে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির সঙ্গে বিকাল ৪টায়, ওই দিন সন্ধ্যায় ৬টায় আলোচনা হবে বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের সঙ্গে
আগামী সোমবার ২৭ ডিসেম্বর বিকাল ৪টায় বৈঠক হবে বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন এবং সন্ধ্যা ৬টায় খেলাফত মজলিসের সঙ্গে, ২৮ ডিসেম্বর মঙ্গলবার বিকাল ৪টায় বৈঠক হবে বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সঙ্গে, ২৯ ডিসেম্বর বুধবার বিকেল চারটায় বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ সঙ্গে এবং ইসলামী ঐক্যজোট সঙ্গে আলোচনা হবে ২৯ ডিসেম্বর রোজ বুধবার সন্ধ্যা ৬টায়। অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার তারিখ এখনো নির্ধারিত হয়নি।
তিনি বলেন, সংলাপের মাঝামাঝি পর্যায়ে অনুষ্ঠিত হতে পারে সরকারি দল আওয়ামী লীগের সাথে সংলাপ। সংলাপের সময় রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সচিব সম্পদ বড়ুয়া, সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এস এম সালাহ উদ্দিন ইসলাম, রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন এবং সচিব (সংযুক্ত) মো. ওয়াহিদুল ইসলাম খান উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে নবম, দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণে সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
রাষ্ট্রপতিকে সিইসি এবং অনধিক চারজন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। গত কয়েকটি মেয়াদে রাষ্ট্রপতি 'সার্চ কমিটি'র সুপারিশের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন গঠন করেছেন।
বর্তমান ইসির পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি। এ সময়ের মধ্যেই রাষ্ট্রপতি নতুন কমিশন গঠন করবেন, যাদের অধীনে অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন।
এমএমএ/