‘সাংবাদিকদের মেরে ফাটিয়ে ফেলবি, পুলিশ আছে তোদের সঙ্গে’
লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলা চেয়ারম্যান ও রায়পুর উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যক্ষ মামুনুর রশীদ ভোটকেন্দ্রে ঢাকার সাংবাদিকদের মেরে ফাটিয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে। তিনি তার কর্মীদের নির্ভয়ে সাংবাদিক পেটানোর নির্দেশ দেওয়ার সময় বলেন, তাদের সঙ্গে পুলিশ আছে।
রায়পুরের চরপাতা ইউনিয়ন পরিষদে শনিবার (২৭ নভেম্বর) রাত সাড়ে ৯টায় উপস্থিত হয়ে ঢাকা থেকে যাওয়া একদল সাংবাদিককে এই হুমকি দেন অধ্যক্ষ মামুনুর রশীদ।
রাতে সাংবাদিকদের হুমকি দেওয়ার পর রবিবার (২৮ নভেম্বর) সকাল থেকে চরপাতার বিভিন্ন ইউনিয়নের ভোটকেন্দ্রে এই উপজেলা চেয়ারম্যান দাপট দেখিয়ে চলেছেন বলে জানা গেছে। নিজে বিভিন্ন কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে নেতাকর্মীদের নিজেদের পক্ষে ভোট নেওয়ার নির্দেশ দেন। এমনকি ভোটকেন্দ্রেও সাংবাদিকদের মেরে ফাটিয়ে ফেলার নির্দেশ দেন বলে অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে ওই উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে।
সাংবাদিকদের অভিযোগ থেকে জানা যায়, রবিবার সকালে একই ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী হাজী বিল্লাল হোসেন (আনারস প্রতীক), হিজবুল্লাহ গুনু (মোটরসাইকেল প্রতীক) সাংবাদিকদের কাছে এসে অধ্যক্ষ মামুনুর রশীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছিলেন। এমন সময় কয়েকজন পুলিশ এসে ঢাকার সাংবাদিকদের নানা ধরনের জেরা করতে শুরু করে। এ সময় একদল লোক নিয়ে রায়পুর উপজেলা চেয়ারম্যান মামুনুর রশীদ সেখানে পৌঁছান।
মামুনুর রশীদ সাংবাদিকদের দেখে উপস্থিত পুলিশ কর্মকর্তা অসিমকে চিৎকার করে নির্দেশ দেন, ‘এরা কারা? এদের সবাইকে থানায় নিয়ে যান।’ এ সময় সাংবাদিকরা তাদের পরিচয় দিলে তিনি আরও ক্ষেপে যান। বলেন, ‘এখানে আপনাদের কাজ কি? আপনারা কেন এসেছেন?’
তার সঙ্গে থাকা স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা পরিচয় দেওয়া একজন বলেন, ‘আপনারা তো সাংবাদিক না! আপনারা রিপোর্টার! আপনার এলাকা থেকে চলে যান।’
এ সময় নৌকা প্রতীক পাওয়া চেয়ারম্যান প্রার্থী সুলতান মামুনুর রশিদের মন্তব্য নেওয়ার জন্য দেখা করতে চাইলেও তারা হুমকি-ধামকি দিয়ে বলেন, ‘আপনাদের মতো সাংবাদিকের কোনো দরকার নেই আমাদের প্রার্থীর সঙ্গে দেখা করার। আমাদের প্রার্থী এমনিতেই জয়ী হবেন। আপনারা এলাকা ছেড়ে চলে যান।’
এ সময় উপজেলা চেয়ারম্যান তার সঙ্গে থাকা লোকজনদের নির্দেশ দিয়ে বলেন, 'সাংবাদিকদের ফাটিয়ে ফেলবি। পুলিশ আছে তোদের সঙ্গে।'
এই বিষয়ে অভিযোগ করলে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল জলিল বলেন, 'বিষয়টি আমি দেখছি। নির্বাচনের সময় সাংবাদিকদের বাধা দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই, নিয়ম অনুযায়ী তারা তাদের দায়িত্ব পালন করবেন।’
এর আগে, এলাকার একাধিক প্রার্থী-ভোটারদের অভিযোগের ভিত্তিতে সন্ধ্যায় ওই এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সর্বত্র ভীতিকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ছাড়া অন্য প্রার্থীদের পোস্টার নেই এলাকায়। বিদ্রোহী এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা এলাকায় থাকতে পারছে না বলে অভিযোগ করেছেন। ভোটারদের মধ্যেও ভয়-ভীতি বিরাজ করছে বলে অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। ভোটকেন্দ্র দখলে রীতিমতো বহিরাগতদের মহড়া চলছে।
রবিবার দেশের ১০০০ হাজার ইউপির সঙ্গে লক্ষ্মীপুরের রায়পুরের ১০টি ইউপিতে ভোট হচ্ছে। যদিও ভোটের আগেই ৩টি ইউপিতে প্রভাব খাটিয়ে তিনজন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে গেছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা হারুন মোল্লা বলেন, বহিরাগতদের ব্যাপারে অভিযান চালানো হচ্ছে।
জেলা পুলিশ সুপার ড. এ এইচ এম কামরুজ্জামান বলেন, নির্বাচন কমিশনের বৈধ অনুমতি বা পরিচয়পত্র থাকলে সাংবাদিকদের কাজে বাধা দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কেউ এ ধরনের কর্মকাণ্ড করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসক আনোয়ার হোসেন আকন্দ বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু করতে পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা মাঠে আছে।
/এএন