দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়ন চান পররাষ্ট্রমন্ত্রী
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন বলেছেন, আমরা দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় উন্নীত করতে চাই। দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিকোণসহ অভিন্ন অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে একটি গভীর ব্যাপক অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে চাই।
রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বৃহস্পতিবার (১২ মে) বাংলাদেশ-দক্ষিণ কোরিয়া কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তিতে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী একথা বলেন।
ঢাকায় দক্ষিণ কোরিয়ার দূতাবাস ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইস্ট এশিয়া স্টাডি সেন্টার যৌথভাবে এ সেমিনারের আয়োজন করে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমি বিশ্বাস করি যে উভয় দেশের অটল রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি এবং নিয়মিত উচ্চ-পর্যায়ের পরামর্শ এ লক্ষ্যে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। আমরা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করছি কোরিয়া প্রজাতন্ত্রের ১৯৭২ সালের ১২ মে আমাদের স্বাধীনতার খুব প্রাথমিক পর্যায়ে, বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া।
বাংলাদেশ ও কোরিয়া প্রজাতন্ত্র ১৯৭৩ সালে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা কোরিয়া প্রজাতন্ত্রের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে অত্যন্ত গুরুত্ব দিই। আমাদের পরীক্ষিত ও বিশ্বস্ত বন্ধু এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন অংশীদার দক্ষিণ কোরিয়া। কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার পর থেকে দুই দেশের যৌথ মূল্যবোধ, পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও অভিন্ন আকাঙ্ক্ষার ভিত্তিতে চমৎকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উপভোগ করে আসছে।
ড. মোমেন বলেন, গত পাঁচ দশকে আমাদের দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ, উন্নয়ন সহযোগিতা, শিক্ষা ও মানবসম্পদ উন্নয়ন, আইসিটি, প্রতিরক্ষা এবং সাংস্কৃতিক বিনিময়সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিস্তৃত হয়েছে। বর্তমানে, আরএমজি সেক্টর আমাদের গর্ব এবং এটি ১৯৭৯ সালে কোরিয়ার সহায়তায় শুরু হয়েছিল।
তিনি বলেন, ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১০ সালের মে মাসে কোরিয়া প্রজাতন্ত্রে একটি সরকারি সফর করেন এবং উভয় পক্ষ আমাদের দুই বন্ধুত্বপূর্ণ দেশের মধ্যে ব্যাপক অংশীদারিত্বকে আরও জোরদার করার জন্য দৃঢ় প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে। কোরিয়ার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী লি নাক-ইয়নের ২০১৯ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশে সফর আমাদের দুই দেশের মধ্যে একটি ব্যাপক অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বের জন্য একটি গতি তৈরি করেছে।
কোরিয়া প্রজাতন্ত্র দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের একটি প্রধান উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে রয়ে গেছে জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কোরিয়া ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (কোইকা) এবং ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন ফান্ডের (ইডিসিএফ) মাধ্যমে বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য, বিশেষ করে স্বাস্থ্য, আইসিটি, শিক্ষা, পানি, চিকিৎসা, জ্বালানি, পরিবহন ইত্যাদি অগ্রাধিকারমূলক ক্ষেত্রের জন্য আমরা কোরিয়া সরকারের কাছে কৃতজ্ঞ।
দক্ষিণ কোরিয়ার উন্নয়ন সহায়তা অবশ্যই আমাদের দর্শনীয় আর্থ-সামাজিক অগ্রগতিতে অবদান রেখেছে মন্তব্য করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে লক্ষ্য করি যে বাংলাদেশ দক্ষিণ কোরিয়ার সফ্ট লোনের সবচেয়ে বড় গ্রহীতাদের মধ্যে একটি। এ ছাড়া ২০২৬ সালে একটি উন্নয়নশীল দেশে আমাদের আনুষ্ঠানিকভাবে উন্নীত হওয়ার পরেও অগ্রাধিকার অংশীদার দেশ হিসেবে থাকার আশা করি।
দক্ষিণ কোরিয়াকে বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদার হিসেবে অভিহিত করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রায় ১০ বছরের স্থবিরতার পরে আমাদের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ২০২১ সালে রেকর্ড উচ্চতায় দেড় বিলিয়ন মার্কিন ডলার অতিক্রম করেছে। শুল্ক লাইনের ৯৫ শতাংশ কাভার করে বাংলাদেশি পণ্যগুলিতে অগ্রাধিকারমূলক বাজার প্রবেশাধিকারের জন্য আমরা দক্ষিণ কোরিয়া সরকারের প্রশংসা করি। আমরা আশা করি যে দক্ষিণ কোরিয়ার সরকার ২০২৬ সালের পরেও আমাদের পণ্যগুলিতে অগ্রাধিকারমূলক বাজার প্রবেশাধিকার প্রসারিত করবে যাতে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য অনুকূলভাবে বৃদ্ধি পেতে পারে।
ড. মোমেন বলেন, কোরিয়া প্রজাতন্ত্র বাংলাদেশের জন্য পঞ্চম বৃহত্তম এফডিআই উৎস দেশ যেখানে ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি এফডিআই স্টক রয়েছে। যদিও কোরিয়ান কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে মূলত টেক্সটাইল ও পোশাক খাতে বিনিয়োগ শুরু করে। কোরিয়ান বিনিয়োগকারীরা এখন চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, কনজ্যুমার ইলেকট্রনিক্স, মোবাইল ফোন, হোম অ্যাপ্লায়েন্স, অটোমোবাইল, আইসিটি, অবকাঠামোসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ শুরু করেছে। বর্তমানে বাংলাদেশে ১৫০টিরও বেশি কোরিয়ান কোম্পানির উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি রয়েছে।
রোহিঙ্গাদের জন্য দক্ষিণ কোরিয়া সরকারের মানবিক সহায়তা এবং জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে এই বিষয়ে সমর্থনের জন্য আমরা কৃতজ্ঞ। দক্ষিণ কোরিয়ার সরকারসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে রোহিঙ্গাদের দুর্দশার সমাধান এবং এ অঞ্চলের নিরাপত্তা ও উন্নয়নের জন্য দীর্ঘস্থায়ী সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য মিয়ানমারের ওপর চাপ বজায় রাখার আহ্বান জানাচ্ছি।
সেমিনারে বাংলাদেশে নিযুক্ত কোরিয়া প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রদূত লি জাং-কেউন, কোরিয়া প্রজাতন্ত্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতএম দেলোয়ার হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইস্ট এশিয়া স্টাডি সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন প্রমুখ বক্তব্য দেন।
আরইউ/এসএন