অ্যামনেস্টি ও টিআইবি বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে: তথ্যমন্ত্রী
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল যখন পক্ষপাতদুষ্ট হয়, ক্রেডিবিলিটি হারায় সেটি আমাদেরকে পীড়া দেয়। একইভাবে টিআইবি ও তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে। আর রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার এর প্রতিবেদনও পক্ষপাতদুষ্ট।
বুধবার (১১ মে) জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে বিদেশি সংবাদ মাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠন ওকাব এর মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তথ্যমন্ত্রী।
মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে ওকাব আহ্বায়ক বিবিসি বাংলার প্রতিনিধি কাদির কল্লোলের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব জার্মান প্রেস এজেন্সির প্রতিনিধি নজরুল ইসলাম মিঠুর পরিচালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ইউএনবি’র উপদেষ্টা সম্পাদক ফরিদ হোসেন।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, আরএসএফ, হিউম্যান রাইটস ও টিআইবি সম্পর্কে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে হাছান মাহমুদ এক এক করে ওই সংগঠনগুলো সম্পর্কে জবাব দেন।
প্রথমে তিনি বলেন, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মত এই ধরনের সংগঠনের প্রয়োজন রয়েছে। কারণ, দেশে দেশে যদি মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয় তাহলে ইন্টারন্যাশনাল ভয়েস এর প্রয়োজন রয়েছে। দেশে এবং বিদেশে সব জায়গায় প্রয়োজন রয়েছে। তো সেই সংগঠন যখন পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে যায়, সেই সংগঠন যখন ক্রেডিবিলিটি হারায় সেটি আমাদেরকে পীড়া দেয়। যেটি অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ক্ষেত্রে ঘটেছে।
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আমাদের দেশে যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছিল, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করার জন্য অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বিবৃতি দিয়েছে। আবার আমাদের দেশে যখন নির্বিচারে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে শত শত মানুষকে হত্যা করা হল, ঘুমন্ত মানুষকে হত্যা করা হল , জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে দেওয়া হল, দাঁড়ানো ট্রাকে ড্রাইভার যখন গাড়ির ড্রাইভিং সিটে বসে ঘুমাচ্ছে সেখানে পেট্রোল বোমা মেরে সেই চালককে অঙ্গার করে দেওয়া হল এগুলোর বিরুদ্ধে তো অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বিবৃতি দেয় না। যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করার জন্য বিবৃতি দেয় , আবার পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে শত শত মানুষকে একই দেশে হত্যা করার পরও বিবৃতি দেয় না, তাহলে সেই সংগঠন কি পক্ষপাত দুষ্ট নয়? প্রশ্ন তুলেন তথ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেন, যখন ইজরাইলে ফিলিস্তিনি শিশুরা ইজরাইলি বাহিনীর উপর ছোঁড়ার প্রতিউত্তরে ইজরাইলি বাহিনী যখন ব্রাশ ফায়ার করে শিশুদের হত্যা করে সেটির বিরুদ্ধে তো অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বিবৃতি দেয় না।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালকে আমরা অন্য দেশে পান থেকে চুন খসলে বিবৃতি দিতে দেখি, বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও সেটি প্রযোজ্য। কিন্তু এই ক্ষেত্রে (ফিলিস্তিন) অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল নিশ্চুপ। অনেকে ক্ষেত্রে তারা পক্ষপাতদুষ্ট বিবৃতি দেয়।
রিপোটার্স উইদাউট বর্ডার (আরএসএফ) এর কথা উল্লেখ করে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী বলেন, তারা যে রিপোর্টটি কদিন আগে প্রকাশ করেছে, আফগানিস্তানে যেখানে নারী সাংবাদিক টেলিভিশনে খবর পড়েছে সে জন্য তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। আফগানিস্তানে টেলিভিশন থেকে সমস্ত নারী সাংবাদিকদের বিদায় দিয়ে দেওয়া হলো, যে দেশে সাংবাদিকতাই নাই, যেই দেশে সাংবাদিকরা কোনোভাবেই কাজ করতে পারে না, সেটির নিচে বাংলাদেশকে অবস্থান দিয়ে তারাই তো প্রমাণ করেছে তাদের এই রিপোর্ট পক্ষপাতদুষ্টু। আমার প্রমাণ করার দরকার নাই। আমি সেটিই বলতে চেয়েছি।
টিআইবি প্রসঙ্গে হাছান মাহমুদ বলেন, টিআইবি’র মত প্রতিষ্ঠান থাকা প্রয়োজন। কারণ এ ধরনের সিভিল সোসাইটি অর্গানাইজেশনগুলো আমি মনে করি যে, তারা যখন ভুল ধরে দেয়, তারা যখন দায়িত্বশীলদের ভূমিকা নিয়ে পরামর্শ দেয় বা প্রশ্ন তুলে সেটি ভালো। সেই কাজকে আমরা সাধুবাদ জানাই। কিন্তু সেই সংগঠন যখন রাজনৈতিক দলের মত বিবৃতি দেওয়া শুরু করে তখন তো সেই সংঠনের আর ক্রেডিবিলিটি থাকে না। কোথায় কোন টিটিই একজন বরখাস্ত হল, সকাল বেলা বিবৃতি দিয়ে দিল। এই বিবৃতি...রাজনৈতিক দলের বিবৃতি আর টিআইবি’র বিবৃতির মধ্যে তো পার্থক্য খুঁজে পাচ্ছি না।
তিনি বলেন, পুরো বিশ্বে ইন্টারন্যাশনাল চ্যাপ্টার (টিআই) ক্রেডিবিলিটি লস করেছে সেটা আমি বলব না, বাংলাদেশ চ্যাপ্টার ‘টিআইবি হ্যাজ লসট ইটস ক্রেডিবিলিটি’। আপনারা জানেন যে, টিআইবি যে সমস্ত রিপোর্ট প্রকাশ করে...কদিন আগে করোনার টিকা নিয়ে একটা রিপোর্ট প্রকাশ করল। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছিলেন যে, আমরা ৪০ হাজার কোটি টাকার টিকা দিয়েছি। আর ইতিপূর্বে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বিভিন্ন সময় বলেছেন যে, আমরা ১৭ হাজার কোটি টাকা টিকা খাতে খরচ করেছি। টিআইবি নাকি গবেষণা করেছে এটি নিয়ে। তো গবেষণা করে তারা বের করল যে,এইখাতে ২৩ হাজার কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে। তারা গবেষণা করেছে।
পরে আমরা যেটা দেখতে পেলাম যে, স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, আমরা ৪০ হাজার কোটি টাকার টিকা দিয়েছি। এর মধ্যে ২০ হাজার কোটি টাকার টিকা আমরা বিনামূল্যে পেয়েছি। ১৭ হাজার কোটি টাকার টিকা আমরা কিনেছি। আর এই ১৭ হাজার কোটি টাকার টিকা পরিবহন, প্রিজার্ভেশন, ডিস্ট্রিবিউশন ও পুশ-এই খাতে তিন হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে। অর্থাৎ ২০ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে। আর বিনামূল্যে ২০ হাজার কোটি টাকার টিকা পেয়েছি। অথচ টিআইবি গবেষণা করল, এত ভালো গবেষণা যে, গবেষণা করে বের করল ২৩ হাজার কোটি টাকা দুর্নীতি হয়েছে। এটা যে কোনো গবেষণা নয়, এটা যে চটজলদি একটা বক্তব্য দেওয়া এটি তো এই প্রতিষ্ঠানকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। আমি এটিই বলেছি।’
জামালপুরে জেলা প্রশাসক কর্তৃক সরকারি অনুদানের ছবি ‘গলুই’ এর প্রদর্শনী বন্ধ করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রথমত বিষয়টি আমাদের নজরে আসার পর আমরা ডিসিকে নির্দেশ দিয়েছি ছবিটি চালু করে দিতে। চালু করে দিয়েছে। আর আমার মনে হয় এই কাজটি করার আগে আরেকটু ভাবা প্রয়োজন ছিল।
এর আগে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ওকাবের মিট দ্যা প্রেস-এ যোগ দিয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, গণমাধ্যম কর্মী আইন ২০২২, প্রেস কাউন্সিল কর্তৃক সাংবাদিকদের ডাটাবেজ তৈরি, সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন, করোনকালে দেশের বিভিন্ন পর্যায়ে সাংবাদিকদের সহায়তাসহ বিভিন্ন ইস্যুতে তার বক্তব্য তুলে ধরেন। পরে তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন।
এনএইচবি/এমএমএ/