দুর্ঘটনায় পা হারানো মনোরঞ্জন হাজংয়ের বিরুদ্ধে জিডি
গাড়িচাপায় এক পা হারানো মনোরঞ্জন হাজংয়ের বিরুদ্ধে বনানী থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন তাকে ধাক্কা দেওয়া গাড়ির চালক। তিনি ঢাকার পুলিশ সার্জেন্ট মহুয়া হাজংয়ের বাবা।
অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে ওই সার্জেন্টের মামলা নথিভুক্ত করার দুইদিন আগেই এই জিডি নেয় বনানী থানা পুলিশ। তবে তাদের দাবি, তদন্তে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে প্রকৃত দায়ী ব্যাক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বনানী থানায় গত ১৪ ডিসেম্বর ওই জিডিটি করেন সাঈদ হাসান। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, তার গাড়িটি মোটরসাইকেলকে চাপা দেয়নি বা পেছন থেকে ধাক্কা দেয়নি। বরং বেআইনিভাবে উল্টো দিক থেকে মোটরসাইকেলটি ইউলুপে প্রবেশ করে। সেই মোটরসাইকেল আরোহী তার গাড়ির বাঁ-পাশের হেডলাইটে ধাক্কা দেয় এবং এর ফলে দুর্ঘটনাটি ঘটে। প্রাণে বেঁচে গেলেও তার স্ত্রীর ডান হাতের তিনটি আঙুলের হাড়ে চিড় ধরেছে এবং তিনি ঘাড়ে ব্যথা পান। তিনি স্ত্রীকে ৩ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ইউনাইটেড হাসপাতালে নিয়ে যান। তার হাতের প্লাস্টার এখনো খোলা হয়নি। সম্পূর্ণ ঘটনা সড়কের সিসি ক্যামেরায় রেকর্ড হয়েছে এবং স্থিরচিত্রও আছে বলেও তিনি দাবি করেন।
তিনি আরও দাবি করেন, পরে জেনেছেন–মোটরসাইকেল চালকের নাম মনোরঞ্জন হাজং। তার চিকিৎসার বিষয়ে ৩ ডিসেম্বর ভোর পাঁচটার দিকে একবার আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়। পরে রাজধানীর গ্রিন রোডের গ্রিন লাইফ হাসপাতালের এক অধ্যাপকের অধীনে চিকিৎসার পরামর্শ দিলে ওই দিন বিকালে তাকে আরেকবার পর্যাপ্ত আর্থিক সহযোগিতা দেওয়া হয়। তবে পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসার সিদ্ধান্ত নেয় মনোরঞ্জন হাজংয়ের পরিবার।
এ ঘটনা নিয়ে যদি মামলা হয়ে থাকে তাহলে সম্পূর্ণ দায় মনোরঞ্জন হাজংয়ের ওপর বর্তায় উল্লখ করে জিডিতে আরও বলা হয়, মনোরঞ্জন হাজং জানেন না, উল্টো দিক দিয়ে ইউলুপে প্রবেশ বেআইনি ও নিষিদ্ধ। তিনি এ দুর্ঘটনার জন্য প্রস্তুত ছিলেন না। এ ঘটনা নিয়ে যদি মামলা হয়ে থাকে তাহলে সম্পূর্ণ দায় মনোরঞ্জন হাজংয়ের ওপর বর্তায়। তাকে আসামি করেই মামলা করতে হয়। তাই তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয়নি, তার গাড়িও আটক রাখা হয়নি। তিনি ও তার স্ত্রী এই ঘটনার ভুক্তভোগী। কেবল প্রাণে বেঁচে যাওয়ার কারণে এর দায় তার নয়।
আরও পড়ুন >> সার্জেন্ট মহুয়ার মামলা অবশেষে নিল পুলিশ
তবে জিডি বা মামলাতে যে তথ্যই থাকুক না কেন তদন্তে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে দাবি করেন বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূরে আযম মিয়া। তিনি জানান, ধাক্কা দেওয়া গাড়িটির (ঢাকা মেট্রো ঘ-১৫-৪৯০৬) মালিকানা জানতে বিআরটিএ কার্যালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে তথ্য পাওয়ার পর তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, গত ২ ডিসেম্বর রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কের চেয়ারম্যানবাড়ী এলাকায় ইউটার্নে একটি দ্রুতগতির বিএমডব্লিউ গাড়ির ধাক্কায় আহত হন মনোরঞ্জন হাজং। পরে তাকে প্রথমে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) নেওয়া হয়। সেখানে অস্ত্রোপচার করে তার ডান পা বাদ দেওয়া হয়। এরপর তাকে বারডেম হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
বাবার এ দুর্ঘটনার জন্য সার্জেন্ট মহুয়া থানায় মামলা করতে গেলে তাকে ফিরিয়ে দিয়েছিল পুলিশ। এ নিয়ে সমালোচনার মুখে দুই সপ্তাহ পর ১৬ ডিসেম্বর মামলা নেয় বনানী থানা পুলিশ। মামলায় অজ্ঞাতনামা তিনজনকে আসামি করা হয়।
এনএইচ/এসএ/