বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘর উদ্বোধন
‘জাতির পিতার অবদান মানুষ আরও ভালোভাবে জানতে পারবে’
’বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘর’ বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য বা বাঙালি জাতির মুক্তির জন্য জাতির পিতার যে অবদান সেটা দেশের মানুষ আরও ভালোভাবে জানতে পারবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘর’ নামে যেটা করা হয়েছে, আমি মনে করি জাতির পিতার যে অবদান বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য বা বাঙালি জাতির মুক্তির জন্য সেটা আমাদের দেশের মানুষ আরও ভালোভাবে জানতে পারবে।’
বুধবার (২৭্ এপ্রিল) সকালে প্রধানমন্ত্রী মুজিববর্ষ উপলক্ষে একটি ব্রডগেজ ও একটি মিটারগেজ কোচে নির্মিত ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘর’ এবং উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় সংগৃহীত ৩০টি মিটারগেজ ও ১৬টি ব্রডগেজ লোকামেটিভের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন।
১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে হত্যার পরের ঘটনাপ্রবাহ মনে করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাস থেকেই জাতির পিতার নামটা সম্পূর্ণ মুছে ফেলা হয়েছিল।
৭ মার্চের ভাষণ নিষিদ্ধ ছিল, বাজানো যেত না। জয় বাংলা স্লোগান নিষিদ্ধ ছিল। বঙ্গবন্ধুর নাম নেওয়া যেত না। তার ছবিটাও দেখানো যেত না। এমনই একটা পরিবেশ ছিল। কিন্তু ইতিহাস আপন গতিতে ফিরে আসে। ইতিহাসকে কেউ মুছে ফেলতে পারে না। সেটা আজ প্রমাণিত, যোগ করেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, আজকে শুধু বাংলাদেশে নয়, সমগ্র বিশ্বব্যাপী জাতির পিতার অবদান স্বীকৃতি পেয়েছে এবং একই সঙ্গে ৭ মার্চের ভাষণও বিশ্ব প্রামাণ্য দলিলে স্থান করে নিয়েছে।
ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘরটিতে ১৯২০ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক জীবন, স্বাধীকার আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধসহ বিভিন্ন সংগ্রামী ঘটনা প্রবাহ তুলে ধরা হয়েছে। ব্রডগেজ কোচের জাদুঘরটি পশ্চিমাঞ্চল ও মিটার গেজের জাদুঘরটি পূর্বাঞ্চলে ঈদের পরে প্রদর্শন করা হবে। শিক্ষার্থীসহ সর্বস্তরের মানুষের জন্য এটি উন্মুক্ত থাকবে।
আরও পড়ুন: বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে রেলওয়ের ‘ভ্রাম্যমাণ জাদুঘর’, উদ্বোধন ২৭ এপ্রিল
বাঁশি বাজিয়ে ও পতাকা উড়িয়ে নতুন ৩০ টি মিটারগেজ ও ১৬ টি ব্রডগেজ লোকোমেটিভের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব মো. তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া, বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসসহ বিভিন্ন দূতাবাস-মিশন এবং উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এ জাদুঘর প্রতিষ্ঠার সঙ্গে জড়িত বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (আরএস) মঞ্জুর-উল-আলম চৌধুরী। তিনি ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে যেসব কাজ হয়েছে সেগুলোর সবই ক্ষণস্থায়ী, মুজিববর্ষ শেষ হয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সবই শেষ হয়ে যাবে। তখনই আমার মাথায় একটা চিন্তা এলো বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে দীর্ঘস্থায়ী কোনো কাজ করা যায় কি না। এরই অংশ হিসেবে আমাদের রেলওয়ের এই ব্যতিক্রমী চিন্তা।
তিনি বলেন, ’বাংলাদেশ রেলওয়ের ৮০ শতাংশ স্টেশন হচ্ছে প্রত্যন্ত অঞ্চলে। আমরা যদি এই জাদুঘর সেই স্টেশনগুলোতে নিয়ে যেতে পারি তাহলে প্রান্তিক মানুষের কাছে বঙ্গবন্ধুর জীবনাদর্শ অনেক সুন্দর ও সহজভাবে উপস্থাপন করা। সাধারণত আমরা শহরকেন্দ্রিক আলোচনা বেশি করে থাকি। আয়োজনও সেরকমই হয়ে থাকে।’
রেলওয়ের এই কর্মকর্তা বলেন, এসব চিন্তা থেকেই রেলমন্ত্রীর সক্রিয় সহযোগিতা এবং নির্দেশনায় আমরা রেলপথ জাদুঘর গড়ে তোলার কাজ শুরু করি। প্রায় এক বছর সময় নিয়ে করোনাকালীন আমরা এই জাদুঘর তৈরির কাজ করি রেলওয়ের দুটি কোচে।
মঞ্জুর-উল-আলম চৌধুরী জানান, জাদুঘর দেখতে আসা দর্শকরা যেমন স্থির চিত্র দেখতে পাবেন, তেমনি কানে হেডফোন লাগিয়ে অডিও-ভিজ্যুয়াল শুনতে পারবেন।
এমএমএ/