মার্কিন নিষেধাজ্ঞা: স্বরাষ্ট্রের গাফিলতি দেখছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
র্যাবের সাবেক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার ক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গাফিলতি দেখছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে আমেরিকা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বেশকিছু উন্নয়ন সহযোগী দেশের আইন প্রণেতারা বাংলাদেশের কাছে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সাংবাদিকদের গ্রেপ্তার ইত্যাদি বিষয়ে তথ্য চেয়ে চিঠি দিয়েছিল, কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তথ্য না পাওয়ায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে যথাসময়ে চিঠির জবাব দেওয়া সম্ভব হয়নি। যথা সময়ে তথ্যগুলো পেলে এবং সেগুলো সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর কাছে উপস্থাপন করতে পারলে বাংলাদেশকে এ ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হতো না।
কেউ কেউ দূতাবাসগুলোর কর্মকর্তাদের গাফিলতির কথা উল্লেখ করলেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মনে করছে তাদের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তাই চাইলেও এসব বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। আবার অনেকে দুষছেন দেশ বিরোধী চক্রদের। তাদের মতে দেশ বিরোধী একটি চক্র বাংলাদেশের বিষয়গুলো বিভিন্ন দূতাবাসে ও সংস্থায় পাঠানোর কারণেই এমনটি হয়েছে।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, আমেরিকা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বেশকিছু উন্নয়ন সহযোগীদের দেশের আইন প্রণেতারা বাংলাদেশের কাছে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সাংবাদিকদের গ্রেপ্তার ইত্যাদি বিষয়ে তথ্য চেয়ে চিঠি দিয়েছিল, কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তথ্য না পাওয়ায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে যথাসময়ে চিঠির জবাব দেওয়া সম্ভব হয়নি। সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে কিছু তথ্য পাওয়া গেছে।
তিনি আরও বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে কিডন্যাপ ‘এনফোর্স ডিসঅ্যাপারেন্স’ বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সাংবাদিকদের গ্রেপ্তার মানবাধিকার লঙ্ঘন ইত্যাদি বিষয় নিরবিচ্ছিন্নভাবে মনিটর করার জন্য পররাষ্ট্র সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর ফলে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হবে বলে মনে করেন মন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনগুলো লবিস্ট হিসেবে কাজ করে কিন্তু দূতাবাসে কর্মরত কর্মকর্তাদের সঙ্গে সেই দেশের আইন প্রণেতাদের সম্পর্কটা তেমন ঘনিস্ট না হওয়ার কারণে অর্থের বিনিময়ে নিয়োজিত লবিস্ট ফার্ম গুলো বেশি প্রভাব বিস্তার করে থাকে। পক্ষান্তরে সরকারি অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে জবাবদিহিতার প্রশ্ন রয়েছে বিধায় বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে বিদেশে লবিস্ট নিয়োগে কিছুটা সীমাবদ্ধতা রয়েছে, তবে বর্তমান পেক্ষাপটে বিদেশে অবস্থিত স্বাধীনতার স্বপক্ষের প্রবাসী বাঙালিদের কাজে লাগানোর পাশাপাশি লবিস্ট নিয়োগের বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘ইতিপূর্বে তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো কিছুটা অনীহা থাকলেও বর্তমানে এটা অনেকাংশ কেটে গেছে। আমেরিকা স্যাংশন আরোপ করার পর থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং তার অধীনস্থ দপ্তরগুলোর প্রধানদের নিয়ে নিয়মিত বৈঠক করা হচ্ছে। র্যাবের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা বিষয়টি আইনগতভাবে মোকাবিলার সুযোগ রয়েছে বিধায় সেখানকার চারটি ল ফার্মের সঙ্গে আলোচনা চলছে। খুব শীঘ্রই এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। নিষেধাজ্ঞা আরোপের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র যে সকল বিষয় বিবেচনায় নিয়েছে সে ব্যাপারে তথ্য চেয়ে বাংলাদেশের পক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
অপ্রীতিকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হতো না।তবে তাদের এই বক্তব্যের সঙ্গে কিছুটা দ্বিমত প্রকাশ করেছেন সংসদীয় কমিটির সভাপতি কর্ণেল (অব.) ফারুক খান।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা জারির বিষয়ে ওয়াশিংটনস্থ দূতাবাস পূর্ব থেকে অবহিত না হওয়ার বিষয়টিকে বড় ব্যর্থতা। একই সঙ্গে মালয়েশিয়া এবং লেবানন দূতাবাস সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছে না। পাশাপাশি আমেরিকা ও ইউরোপসহ পৃথিবীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দেশে অবস্থিত দূতাবাসগুলোকে আরও সক্রিয় ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের জন্য তিনি পরামর্শ দেন। বাংলাদেশের প্রতি আমেরিকার অবস্থান পরিবর্তনের লক্ষ্যে ভারত-জাপান সৌদি আরবসহ বন্ধুপ্রতীম দেশগুলোকে কাজে লাগানোর পাশাপাশি লবিস্ট নিয়োগের লক্ষে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দের উদ্যোগ গ্রহণের জন্য পরামর্শ দেন।
কমিটির সদস্য নাহিম রাজ্জাক বলেন, ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্র্যাট পার্টির পক্ষ থেকে বাংলাদেশ মিশন প্রদত্ত পত্রের জবাব যথাসময়ে দেওয়া হয়নি । আওয়ামী লীগ সরকারকে বিশ্ববাসীর কাছে বিতর্কিত করার জন্য দেশবিরোধী একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় বিভিন্ন দেশের লবিস্ট নিয়োগ করে অপপ্রচার চালিয়ে আসছে। সেই অপপ্রচার মোকাবিলায় বিদেশে অবস্থিত বিভিন্ন মিশন তথা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ব্যর্থ হয়েছে। তাই দেশের বিরুদ্ধে এ ধরনের প্রচার বন্ধের সরকারের পাশাপাশি সিভিল সোসাইটি ও রাজনীতিবিদদের কাজে লাগানোর পরামর্শ দেন।
এসএম/এমএমএ/