বাংলাদেশে সন্ত্রাসবাদ কমেছে: মার্কিন প্রতিবেদন
বাংলাদেশে ২০২০ সালে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড হ্রাস পেয়েছে এবং সন্ত্রাস-সম্পর্কিত তদন্ত ও গ্রেপ্তার বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২০ সালে মৃত্যু বিহীন তিনটি সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসবাদবিষয়ক বার্ষিক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের গত বছরের সন্ত্রাসবাদের চিত্র বিশ্লেষণ করে এ মন্তব্য করা হয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে গতকাল বৃহস্পতিবার ‘২০২০ কান্ট্রি রিপোর্টস অন টেররিজম’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে।
প্রতিবারের মত বাংলাদেশ সরকার অস্বীকার করেছে যে বাংলাদেশ-ভিত্তিক সন্ত্রাসীদের আইএসআইএস বা একিউআইএসসহ আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সাথে সম্পর্ক রয়েছে।
২০১৬ হলি আর্টিজান বেকারি হামলায় সমর্থনের জন্য কাউন্টার টেররিজম স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল ২০১৯ সালে সাত জনের মৃত্যুদণ্ড দেয়। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টে মামলাটি বিচারাধীন। হামলাকারীরা আইএসের প্রতি আনুগত্য দাবি করেছিল। ওই হামলায় একজন আমেরিকানসহ ২০ জনকে হত্যা করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সরকার আগের বছরগুলোর মতোই বাংলাদেশভিত্তিক সন্ত্রাসবাদীদের সঙ্গে ইসলামিক স্টেট (আইএস) বা আল-কায়েদার ভারতীয় উপমহাদেশ শাখা (একিউআইএস) কিংবা আঞ্চলিক বা আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীর সম্পর্কের বিষয়টি অস্বীকার করেছে। ২০১৬ সালে ঢাকায় হোলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার মামলা সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন। এর আগে এ মামলায় ২০১৯ সালে সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল সাতজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন। হোলি আর্টিজানে হামলাকারীরা আইএসের প্রতি আনুগত্য দাবি করেছিল। ওই হামলায় একজন আমেরিকানসহ ২০ জনকে হত্যা করা হয়।
সন্ত্রাসবাদবিষয়ক বার্ষিক প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থায় চলমান ঘাটতি, বৈশ্বিক করোনাভাইরাস মহামারি চলাকালে আদালত চালানোর সীমাবদ্ধতা বেড়ে যাওয়া ও সন্ত্রাসবাদের মামলার এক দশক-দীর্ঘসূত্রতার কারণে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার হার ১৫ শতাংশের কম হয়েছে।
বাংলাদেশ সরকার সন্ত্রাসবাদের প্রতি শূন্য সহনশীলতার নীতি এবং সন্ত্রাসবাদীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে এর ভূখণ্ড ব্যবহার করতে না দেওয়ার বিষয়ে অব্যাহতভাবে কথা বলেছে। জানুয়ারি মাসে সরকারের নতুন জাতীয় সন্ত্রাসবাদ দমন ইউনিট কাজ শুরু করে, শেষ পর্যন্ত একটি প্রধান সন্ত্রাসবাদ দমন সংস্থা হিসেবে ভূমিকা পালন করতে শুরু করে।
মার্কিন প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, গত বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামে পুলিশ বক্সের কাছে বিস্ফোরণের একটি ঘটনা ঘটে। ৩১ জুলাই নওগাঁয় মন্দিরে হামলার ঘটনা ঘটে। দুটি ঘটনাতেই আইএস দায় স্বীকার করে। চট্টগ্রামের হামলায় দুই পুলিশ সদস্য ও একজন সাধারণ নাগরিক আহত হন। নওগাঁর আক্রমণে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। ২৪ জুলাই ঢাকার গুলশানে পুলিশের মোটরসাইকেলে আইএস অনুপ্রাণিতদের হামলার ঘটনা ঘটে বলে দাবি করা হয়। পরে অবশ্য তা ভুয়া বলে প্রমাণিত হয়।
এই প্রতিবেদনের বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্র প্রতিবছর এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে আগের বছরের সন্ত্রাসবাদের পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়। বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে ওয়াশিংটনের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে এটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
প্রতিবেদনে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, আফগানিস্তান, ইরাক, ইরান, সৌদি আরব, বাহরাইন, মিসর, রাশিয়া, সিরিয়া, ইয়েমেনসহ আরও কিছু দেশ সম্পর্কে বলা হয়েছে, উল্লেখযোগ্য মানবাধিকার ইস্যু এই দেশগুলোর সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের অবস্থাকে প্রভাবিত করেছে। এই বিষয়টির কারণে কার্যকর সন্ত্রাসবাদ দমননীতি ও কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়ে থাকতে পারে। এটি আরও সহিংসতার কারণ ও শর্তকে সমর্থন করেছে।
এ ধরনের মানবাধিকার ইস্যুগুলোর মধ্যে রয়েছে—বেআইনি ও বিচারবহির্ভূত হত্যা, জোরপূর্বক গুম, নির্যাতন, নির্বিচারে আটক, নিষ্ঠুর ও জীবন হুমকির কারাবস্থা, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতা ও অযৌক্তিক গ্রেপ্তার, শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার ও সংগঠন করার স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ, ব্যাপক দুর্নীতি, ধর্মীয় স্বাধীনতা দমন, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা, জোরপূর্বক ও শ্রম দাস ইত্যাদি।
/এএস