পুলিশের জঙ্গি আশঙ্কার ছাপ বর্ষবরণে
বৈশাখ মানে বাঙালির বাঁধভাঙা উল্লাস। শহরের অলি-গলিতে বসবে মেলা। চারুকলা থেকে বিশাল মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হবে এটাই ছিল গত কয়েক বছরের চিরায়ত রীতি। কিন্তু এবার পহেলা বৈশাখ রমজানের মধ্যে পড়ায় এবং আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে জঙ্গি হামলার আশঙ্কার কথা বলায় মানুষের মধ্যে ভীতি সঞ্চার করেছে। যার প্রভাব পড়েছে বর্ষবরণের সব আয়োজনে।
পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (১৪ এপ্রিল) সকাল ৯টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) এলাকার সড়কদ্বীপের সামনে থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা শুরু হয়।
শোভযাত্রা শুরু আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান বলেন, একটি মানবিক ও অসাম্প্রদায়িক সমাজ বিনির্মাণের জন্য আমাদের যে দৃঢ় প্রত্যয়, সেটি আমরা ব্যক্ত করছি। মানুষের মধ্যে সম্প্রীতির সম্পর্ক সুদৃঢ় হোক। যে কোনো ধরনের অপশক্তি বা অশুভ শক্তি দূরীভূত হোক, সেটাও ১৪২৯ বঙ্গাব্দে আমাদের প্রত্যাশা। একই সঙ্গে আমাদের যে জাতীয় উন্নয়ন, সব উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় সেই উন্নয়ন কার্যক্রম আরও গতি পাক। সমৃদ্ধ, উন্নত, অসাম্প্রদায়িক মানবিক দেশ নির্মাণের জন্য চলমান উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকুক, জোরদার হোক, সেটি এই বাংলা নববর্ষ ১৪২৯ এ আমাদের প্রত্যাশা।
আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর কড়া প্রহরায় শোভাযাত্রা শুরুর ১০ মিনিট আগে বেজে উঠে ঢাক। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবন–সংলগ্ন স্মৃতি চিরন্তন চত্বর ঘুরে আবার টিএসসিতে এসে শোভাযাত্রা শেষ হয় সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে। এরপর শোভাযাত্রায় প্রদর্শিত শিল্পবস্তু নিয়ে যাওয়া হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে। সেখানে যাওয়ার পর ঢাকের তালে উচ্ছ্বাসে মাতেন শিক্ষার্থীরা।
যেহেতু করোনার কারণে দুই বছর পর এই শোভাযাত্রা, তাই মানুষের প্রত্যাশা ছিল আরও বেশি মানুষের সমাগম হবে। তবে রমজান ও পুলিশের আগাম জঙ্গি আশঙ্কার বার্তা মানুষের মধ্যে কিছুটা ভীতি সৃষ্টি করেছে। যে কারণে অনেকে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও আসেননি। আবার যারা অংশ নিয়েছেন তারাও দ্রুত টিএসসি এলাকা থেকে বের হয়ে যেতে উদগ্রীব দেখা গেছে।
মঙ্গল শোভাযাত্রা দেখতে আসা রফিকুল ইসলাম ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, করোনা শুরুর আগে দেখেছি শাহবাগ থেকে হেঁটে টিএসসি পর্যন্ত আসতে মানুষের ভিড়। কোথাও তিল ধারণের জায়গা হতো না। এবার দেখেন একেবারে ফাঁকা ফাঁকা, যারা আসছে তারা দ্রুত চলে যাওয়ার জন্য ছটফট করছেন। মানুষের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে। যেহেতু পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে জঙ্গি হামলা হতে পারে, তাই আমার পরিচিত বন্ধুদের মধ্যে অন্তত ৫ জন আসেনি। আমি এসেছি কারণ এই উৎসবটা আমার খুব ভালো লাগে। যেহেতু দুই বছর উদযাপন করতে পারিনি তাই এবার ঝুঁকি থাকলেও এসেছি।
তার কথার সঙ্গে অনেকটা মিল খুঁজে পাওয়া গেছে। শোভাযাত্রা বের হওয়ার আগে শাহবাগ থেকে টিএসসি, শিশু একাডেমি, নীলক্ষেত পুরো এলাকায় পুলিশের কড়া নিরাপত্তা। এমনকি শোভাযাত্রাটির আগে পরে বিভিন্ন স্তরে পুলিশ র্যাবের টহল দল। শোভাযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে ছিল পাঁচ স্তরের কঠোর নিরাপত্তাবলয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকেও নিরাপত্তার নানা ব্যবস্থা ছিল। এবারের শোভাযাত্রার প্রতিপাদ্য ছিল ‘নির্মল করো, মঙ্গল করে মলিন মর্ম মুছায়ে’।
এসএম/আরএ/