মঙ্গল শোভাযাত্রায় থাকবে অতিরিক্ত নিরাপত্তা বলয়
বাংলা নববর্ষ-১৪২৯ উদযাপন উপলক্ষে সারাদেশে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। তবে, এবার মঙ্গল শোভাযাত্রায় নাশকতার কথা মাথায় রেখে অতিরিক্ত নিরাপত্তা বলয় থাকবে বলে জানিয়েছেন র্যাব-পুলিশ।
এই দুই বাহিনী জানিয়েছে, বাংলা নববর্ষ-১৪২৯ উদযাপন উপলক্ষে জঙ্গি হামলার সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগ নেই তার পরও সব কিছু মাথায় রেখে সারাদেশে নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
বৃহস্পতিবার (১৪ এপ্রিল) অনুষ্ঠিত হবে মঙ্গল শোভাযাত্রা। নতুন বছরকে নিরাপদে বরণ করতে এবং যেকোনও ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে রাজধানীসহ সারাদেশে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) মো. কামরুজ্জামান বলেন, যে কোনও বিশেষ অনুষ্ঠান বা দিবস উপলক্ষে পুলিশের পক্ষ থেকে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। সেই ধারাবাহিকতায় এবারও মঙ্গল শোভাযাত্রায় তার ব্যতিক্রম হবে না। আগের মতো জঙ্গি নাশকতাসহ সব বিষয় মাথায় রেখে সারাদেশে অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে পুলিশ। রাজধানীসহ সারাদেশের মানুষকে একটি শান্তিপূর্ণ বর্ষবরণ উপহার দিতে পুলিশবাহিনীর বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা চলমান রাখবে।
পুলিশের পাশাপাশি র্যাব, আনসারসহ অন্যান্য গোয়েন্দা বাহিনীর সদস্যরা কঠোরভাবে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে। যেকোনো পরিস্থিতির মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে একাধিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য। গুরুত্বপূর্ণ সবকিছু সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে নজরদারিতে থাকবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেন, বর্ষবরণ ও পহেলা বৈশাখ উদযাপনকে কেন্দ্র করে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। রমনা, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, টিএসসি ও মঙ্গল শোভাযাত্রা কেন্দ্রিক সকল এলাকায় থাকবে সিসি ক্যামেরা। রমনার বটমূল ও আশপাশ এলাকায় ডিএমপির ডগ স্কোয়াড ও বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট দিয়ে সুইপিং করানো হচ্ছে এবং অনুষ্ঠানের পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত এ কার্যক্রম চলবে। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি প্রতিরোধে থাকবে ডিএমপি ও সোয়াটের সমন্বিত ওয়াচ টাওয়ার, যারা সবকিছু উপর থেকে পর্যবেক্ষণ করবেন।
তিনি বলেন, ইভটিজিং প্রতিরোধে সাদা পোশাকে পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে থাকবে। মঙ্গল শোভাযাত্রায় কেউ বাইরে থেকে ঢুকতে পারবে না। কেউ ঢুকতে চাইলে তাকে কঠোর পুলিশের বাধার সম্মুখীন হতে হবে। আর মঙ্গল শোভাযাত্রায় কেউ মুখোশ পড়তে পারবেন না।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, পুলিশের সোয়াট, ডগ স্কোয়াড, বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট ও ডিবি পুলিশ থাকবে। যদি কোনও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে তাহলে কোন রাস্তায়, কীভাবে জনসাধারণকে সরিয়ে নেওয়া হবে তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে আলাদা পুলিশ ফোর্স। সারা ঢাকা আমাদের পুলিশের নজরে থাকবে।
এ বিষয়ে র্যাব মহাপরিচালক (ডিজি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেছেন, পহেলা বৈশাখ-১৪২৯ কে কেন্দ্র করে এ বছরে র্যাব ফোর্সের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সকল ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি মোকাবিলায় পর্যাপ্ত সংখ্যক র্যাব সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। নববর্ষে সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে র্যাব সারাদেশব্যাপী গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করেছে। নববর্ষের অনুষ্ঠান শেষ না হওয়া পর্যন্ত নিরাপত্তা জোরদার করতে দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় পর্যাপ্ত সংখ্যক র্যাব সদস্য মোতায়েন থাকবে।
র্যাব মহাপরিচালক বলেন, শোভাযাত্রায় নিরাপত্তা বলয় থাকবে। তাছাড়া, ঢাকা মহানগরীর রমনার বটমূল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রবীন্দ্র সরোবর, শিল্পকলা একাডেমি, বিআইসিসি ভবন, নজরুল একাডেমিসহ বিভিন্নস্থানে যে সব বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে সেই এলাকাসমূহে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে র্যাবের বিশেষ নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা থাকবে।
তিনি আরও বলেন, সারাদেশব্যাপী নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে অনুষ্ঠান চলাকালে সার্বিক নিরাপত্তার জন্য থাকবে র্যাবের কন্ট্রোল রুম, স্ট্রাইকিং রিজার্ভ, পেট্রোল, মোটরসাইকেল পেট্রোল, ফুট পেট্রোল, বোট পেট্রোলিং, স্ক্যানার, অবজার্ভেশন পোস্ট, চেক পোস্ট এবং সিসিটিভি মনিটরিং। বিভিন্ন অনুষ্ঠানস্থল ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সু্ইপিং পরিচালনার পাশাপাশি র্যাবের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট যে কোনো পরিস্থিতির জন্য সার্বক্ষণিকভাবে প্রস্তুত রয়েছে।
তিনি বলেন, সকল মেট্রোপলিটন শহর, জেলা শহর ও উপজেলা পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় চেকপোস্ট স্থাপন করা হবে। মেট্রোপলিটন শহর ও গুরুত্বপূর্ণ জেলা শহরসমূহে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় সার্বক্ষণিক প্রয়োজনীয় সংখ্যক ফোর্স রিজার্ভ থাকবে।
পাশাপাশি, যে কোনো পরিস্থিতিতে র্যাব এয়ার উইং-এর হেলিকপ্টার সার্বক্ষণিক প্রস্তুত থাকবে বলে জানান র্যাবের এই কর্মকর্তা।
কেএম/এএস