রমজানে বৈশাখের বালাই নেই ইলিশে
‘পয়লা বৈশাখের বালাই নেই। দ্যাহেন না কাস্টমার নেই। রমজান মাসে খাওয়োন দাওয়োন নেই। তাই এবার বিক্রিও নেই বৈশাখে। আগের মতোই স্বাভাবিক বেচা-বিক্রি।’ এভাবেই বলছিলেন কারওয়ান বাজারের মাছ বিক্রেতা আবদুল মান্নান। শুধু মান্নানই নন, অন্য ইলিশ মাছ বিক্রেতাদেরও একই অভিমত–এবারে রমজান মাসে বৈশাখ পড়ায় ইলিশ কেনায় সাড়া নেই মানুষের। বুধবার (১৩ এপ্রিল) কারওয়ান বাজার ঘুরে এমনই চিত্র পাওয়া গেছে। ক্রেতারাও বলছেন, রোজার কারণে সকালে খাওয়ার সুযোগ নেই। তাই বাড়তি আয়োজনও নেই।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনার আগে রাজধানীতে বৈশাখ পালনের হিড়িক লেগে যেত। এরই অংশ বিশেষ বর্ষবরণে পান্তা-ইলিশ ছিল অন্যতম অনুষঙ্গ। তাই আগের দিন বাজারে ইলিশ কেনার এক ধরনের হিড়িক লেগে যেত। ব্যবসায়ীরাও বাড়তি ইলিশের জোগান দিতে দেড়-দুই মাস আগে থেকে মাছ মজুত করেন। তারপরও মাছের চাহিদা বেশি থাকায় দাম বেড়ে যেত। শেষ সময়ে অনেকটা কাড়াকাড়ি পড়ে যেত।
করোনার জন্য গত দুই বছর একেবারে সব বন্ধ ছিল। বর্ষবরণও ছিল না; কিন্তু এবার করোনার প্রভাব কমে যাওয়ায় সরকার সব কিছু খুলে দিয়েছে। দুপুর দুইটা পর্যন্ত রমনা বটমূলে বর্ষবরণের অনুমতিও দিয়েছে; কিন্তু রমজানের কারণে সকালে খাবারের পথ না থাকায় পান্তা ভাতে ইলিশও থাকছে না। এ জন্য বাজারে ইলিশ কেনারও কোনো ভিড় নেই। জাটকা নিধন বন্ধ। তারপরও এ বছর বাজারে ইলিশ আছে। দামে বৈশাখী উত্তাপ; কিন্তু ক্রেতা নেই বললেই চলে।
বাজারে বৈশাখে বেচাবিক্রি কেমন? এমন প্রশ্নের উত্তরে কারওয়ান বাজারের মাছ বিক্রেতা কুদ্দুস মিয়া এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘মনে হয় মানুষ এখন ইলিশ মাছ খাওয়া ছাইড়া দিছে। না হইলে তো এ সময় আগে ভরপুর বেচাকেনা থাকত।’
বিক্রেতা সিয়াম জানান, কেজির উপরে নিলে ১৮০০ টাকা কেজি অর্থাৎ দেড় কেজি হলে ২৭০০ টাকা লাগবে। এক কেজির ইলিশ ১৪০০ টাকা ও কেজির নিচে নিলে ১১০০ কোজি। ক্রেতা কেমন আসছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দ্যাহেন না। তেমন কাস্টমার তো নাই। স্বাভাবিক অবস্থার মতনই। বৈশাখের তেমন বিক্রি নেই। বৈশাখে ইলিশের বেচাকেনা খুব খারাপ অবস্থা।’
গত দুই বছর করোনায় পহেলা বৈশাখই হয়নি। পান্তা ইলিশের দিনও ছিল না। এবার রমজানের কারণে ক্রেতা নেই। যেখানে আগে বৈশাখ এলে পাড়া-মহল্লার বাজারগুলোও ভরা থাকত ইলিশ মাছে। এমনকি ফেরি করে ইলিশ বিক্রি করত মাছ বিক্রেতারা; কিন্তু এবার তেমনটিও দেখা যাচ্ছে না। তারা আরও বলছেন, রোজার প্রভাবে বৈশাখের আমেজ নেই। তাই বাজারেও তার প্রভাব নেই।
জেডএ/এসএ/