৩০২ কলেজ নামেই জাতীয়করণ!
শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সারাদেশে উপজেলা পর্যায়ে ৩০২টি কলেজ জাতীয়করণ করা হয়েছে প্রায় চার বছর আগে। তবে জাতীয়করণ হলেও এসব কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা সরকারি কোনো সুযোগ-সুবিধাই পাচ্ছেন না। এই চার বছরে যেসব শিক্ষক-কর্মচারী অবসরে গিয়েছেন ও যাচ্ছেন তারাও কোনোরকম সরকারি সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন না। আদৌও পাবেন কি না সেটাও জানেন না।
শুধু তাই নয়, শিক্ষকরা অবসরে যাওয়ার ফলে জাতীয়করণ হওয়া এসব কলেজে শূন্যপদে নতুন করে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া যাচ্ছে না। ফলে দেখা দিয়েছে শিক্ষক সংকট। এ কারণে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে কলেজগুলোর শিক্ষা কার্যক্রম।
সরকারিকরণ হওয়া বিভিন্ন কলেজের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা এখন একটা চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন। কবে কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা সুযোগ-সুবিধা পাবেন সে নিয়েও তাদের মধ্যে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ।
তারা বলেছেন, মন্ত্রণালয়ে কাজের গতি ধীর হওয়ার কারণে জাতীয়করণ হওয়া কলেজগুলোর কাজ সম্পন্ন করতে বিলম্ব হচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে, এসব কলেজ সরকারি হোক সেটা শিক্ষা ক্যাডারের অনেক কর্মকর্তা চান না। যার ফলে তারা ইচ্ছে করে ডিলে করছেন। এমন অভিযোগও উঠেছে যে, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত উপজেলা পর্যায়ে কলেজ জাতীয়করণ প্রক্রিয়াকে প্রলম্বিত করার জন্য এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত ঘাপটি মেরে থাকা সরকারবিরোধী কর্মকর্তারা ইচ্ছে করে দেরি করাচ্ছেন। যাতে সরকারের এবং প্রধানমন্ত্রীর ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ হয়।
অনাকাঙ্ক্ষিত এ বিলম্বের কারণে জাতীয়করণ হওয়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষা কার্যক্রম চালাতে গিয়ে এখন নানারকম সংকটে পড়তে হচ্ছে কলেজ কর্তৃপক্ষকে। বিশেষ করে শিক্ষক সংকট এখন প্রকট আকার ধারণ করেছে।
প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী এবং ২০১৬ সালের জুন মাসে দেওয়া ঘোষণা অনুযায়ী সারাদেশে ৩০২টি কলেজ জাতীয়করণ করে ২০১৮ সালের ৮ আগস্ট গেজেট প্রকাশ করে।
জাতীয়করণ হওয়া কলেজগুলোর সমস্ত স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি সরকারের নামে রেজিস্ট্রি হয়।
কিন্তু এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়ে যাওয়ার প্রায় চার বছর পরও জাতীয়করণ হওয়া কলেজগুলোতে সরকারি সুযোগ-সুবিধা এখন পর্যন্ত পৌঁছেনি।
মৌলভীবাজারের রাজনগর সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক রজত কান্তি গোস্বামী বলেন, কলেজ সরকারি হওয়ায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অনেক খুশি হয়েছিল। কিন্তু চার বছর ধরে বিষয়টি ঝুলে আছে। সুযোগ-সুবিধা এখনও মিলছে না।
তিনি বলেন, জাতীয়করণ হওয়া কলেজগুলোর জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আটটি সাব-কমিটি করে দিয়েছিল। এখানেই সব ডিলে হচ্ছে।
তিনি বলেন, বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের লোকজন বরাবরই আমাদের বিরোধিতা করে আসছে। এখন মনে হচ্ছে ইচ্ছে করে ডিলে হচ্ছে।
এই সহকারী অধ্যাপক আরও বলেন, অনেকেই অবসরে যাচ্ছেন। তারা কোনোরকম সুযোগ-সুবিধা ছাড়াই অনেকটা শূন্য হাতে যাচ্ছেন। শূন্য পদ পূরণ করা যাচ্ছে না। কারণ জাতীয়করণ হওয়ার পর কলেজের শিক্ষক নিয়োগ করার কোনো সুযোগ নেই।
বড়লেখা সরকারি কলেজের শিক্ষক ঋষিকেশ দাশ পিন্টু বলছিলেন, আমরা এখন অপেক্ষা করছি। কবে এই অপেক্ষা শেষ হয় জানি না।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি মঙ্গলবার (১২ এপ্রিল) সচিবালয়ে তার দপ্তরে বসে ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, 'প্রত্যেক শিক্ষকের নথি, যখন তিনি নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছেন তখন পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছিল কি না, ডিজির প্রতিনিধি ছিলেন কি না- এরকম প্রত্যেকের ডিটেইল ডকুমেন্ট লাগে। কলেজের জমির দলিল-দস্তাবেজ…। এসব কিছু মিলিয়ে যাচাই-বাছাই করতে অনেক সময় লাগে। এরপর আমরা পাঠাই অধিদপ্তরে। সেখান থেকে আবার মন্ত্রণালয়ে আসে। আমরা আবার যাচাই-বাছাই করে পাঠাই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে জনপ্রশাসন অনেক কিছু জানতে চায়। সেগুলো দেখে দিতে হয়। তারপর আবার যায় অর্থমন্ত্রণালয়ে।'
তিনি বলেন, এই পুরো প্রক্রিয়া শেষ করতে আসলেই অনেক সময় লাগে। আমি ও উপমন্ত্রী যখন দায়িত্ব নেই তখন আমরা দেখি যে, এই প্রক্রিয়াটা একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। তখন আমাদের মনে হয়, শুধু একটা টিম কাজ করলে অনেক লম্বা সময় লাগবে। এ জন্য আমরা অনেকগুলো টিম বাড়িয়ে দেই।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, 'আমরা আরেকটা কাজ করলাম যে, যত ডকুমেন্ট লাগবে সেই তালিকাটা আমরা আরেকবার রিভিউ করি। তালিকা রিভিউ করে আমাদের কাছে মনে হয়েছে দু’একটা জিনিস ওভারলেপ আছে। যেমন একটা থাকলে আরেকটার দরকার নেই। যেটা একদম না হলেই নয়, সেগুলো রেখেছি। সেই তালিকাও খুব ছোট না। একেকজনের ১৮/১৯টা ডকুমেন্ট।'
দীপু মনি বলেন, আমাদের উপর নির্দেশনা আছে, একটা প্রতিষ্ঠানের সমস্ত তথ্য কমপ্লিট করে পাঠাতে হবে। একটা তথ্য বাদ রেখে পাঠালে হবে না। সে কারণেই একটু সময় লাগছে।
তিনি বলেন, যখন থেকে এটি জাতীয়করণ হয়েছে তখন থেকেই সে কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা সুযোগ-সুবিধা পাবে। এটা আমরা চাই। যারা অবসরে যাচ্ছেন তারাও যেন এই সুযোগ পান। কিন্তু সরকারের সিদ্ধান্ত কী আসে সেটা আমরা এখনই বলতে পারছি না।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, শুধু যে কলেজগুলোতে অধ্যক্ষের পদ শূন্য তা নয়, কলেজগুলোকে যখন জাতীয়করণের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে তখন থেকে ম্যানেজিং কমিটিগুলো কাজ করছে না। এসমস্ত সমস্যা নিরসনের জন্য আমরা দ্রুত কাজ করার চেষ্টা করছি।
আমার ধারণা এই বছরের মধ্যে সবগুলো শেষ হয়ে যাবে। আমরা আরও বেশি জোর দিচ্ছি। এই সপ্তাহেও এ বিষয় নিয়ে বৈঠক আছে বলে যোগ করেন শিক্ষামন্ত্রী।
এক প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, কেউ ইচ্ছে করে ডিলে করছে কি না বলতে পারছি না।
এনএইচবি/টিটি