কুমিল্লায় বনফুলসহ ৩ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ৪ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকির মামলা
ফাইল ফটো
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তর কুমিল্লা শহরের তিনটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে তদন্ত করে প্রায় ২৬ কোটি ৬৭ লাখ টাকার গোপন বিক্রির হিসাব খোঁজে পেয়েছে। প্রতিষ্ঠান তিনটি হচ্ছে- কিষোয়ান স্নাকস্ লিমিটেড, বনফুল অ্যান্ড কোং এবং ফরিদ ফাইভার অ্যান্ড উইভিং লিমিটেড। এ ঘটনায় প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে ৪ কোটি ১৫ লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকির মামলা দায়ের করা হয়।
দীর্ঘ ৩ মাস তদন্তের পর মঙ্গলবার (১২ এপ্রিল) প্রতিষ্ঠান তিনটির বিরুদ্ধে ভ্যাট আইনে এ মামলা করা হয়েছে।
কিষোয়ান স্নাকস্ লিমিটেড ও বনফুল অ্যান্ড কোং প্রতিষ্ঠান দুটি মিষ্টি ও বেকারি পণ্য উৎপাদন করে সারা দেশে সরবরাহ করে। এ ছাড়া ফরিদ ফাইভার অ্যান্ড উইভিং প্রতিষ্ঠানটি সামুদ্রিক জাল ও রশ্মি উৎপাদন করে।
জানা গেছে, ভ্যাট ফাঁকির সুনির্দিষ্ট অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৭ জানুয়ারি ভ্যাট গোয়েন্দার উপ-পরিচালক মুনাওয়ার মুরসালীনের নেতৃত্বে একটি দল তিনটি প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালায়। অভিযানকালে গোয়েন্দারা ব্যাপক ভ্যাট ফাঁকির আলামত সংগ্রহ করেন।
অভিযানের শুরুতে কর্মকর্তা প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট সংক্রান্ত ও বাণিজ্যিক দলিলাদি দেখানোর অনুরোধ করা হলে প্রতিষ্ঠান কর্তপক্ষ মূসক সংক্রান্ত নথিপত্র প্রদর্শন করে। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানে ব্যবহৃত কম্পিউটাসহ অন্যান্য বাণিজ্যিক দলিলাদি তল্লাশি করে বিক্রির চালান এবং বিক্রির রেজিস্টার জব্দ করা হয়।
ভ্যাট গোয়েন্দার তদন্তে কিষোয়ান স্নাকস্ লিমিটেড প্রতিষ্ঠানটির ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের ডিসেম্বর মেয়াদে ৫ শতাংশ হারে পণ্যের অপ্রদর্শিত বিক্রয়ের ভ্যাট মূল্য ছিল ১৪ কোটি ৭৬ লাখ ১ হাজার ২৯ টাকা। যার উপর প্রযোজ্য ভ্যাট ৭৩ লাখ ৮০ হাজার ৫২ টাকা।
এ ছাড়া ১৫ শতাংশ হারে পণ্যের অপ্রদর্শিত বিক্রয়ের ভ্যাট আরোপযোগ্য মূল্য ৫ কোটি ৮২ লাখ ৮৮ হাজার ৮৩৪ টাকা। যার উপর প্রযোজ্য ভ্যাট ৮৭ লাখ ৪৩ হাজার ৩২৫ টাকা। তদন্ত মেয়াদে সর্বমোট অপ্রদর্শিত ভ্যাট ১ কোটি ৬১ লাখ ২৩ হাজার ৩৭৬ টাকা। এই ভ্যাট যথাসময়ে পরিশোধ না করায় আইন অনুযায়ী মাসিক ২ শতাংশ হারে ৯৭ লাখ ২৯ হাজার ৩৩৭ সুদ টাকা প্রযোজ্য হয়।
তাছাড়া বনফুল অ্যান্ড কোং প্রতিষ্ঠানটির ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর মেয়াদে জব্দকৃত দলিল অনুযায়ী বিক্রি পাওয়া যায় ৬ কোটি ৫০ লাখ ৯০ হাজার ৬৫৪ টাকা। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি দাখিলপত্রে ৩ কোটি ৩১ লাখ ২৮ হাজার ৬২৫ টাকা বিক্রয়মূল্য প্রদর্শন করে। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটি দাখিলপত্রে ৩ কোটি ১৯ লাখ ৬২ হাজার ২৯ টাকা কম বিক্রয়মূল্য প্রদর্শন করে। যার উপর প্রযোজ্য ভ্যাট ৪১ লাখ ৬৮ হাজার ৯৬০ টাকা। এই ভ্যাট যথাসময়ে পরিশোধ না করায় ভ্যাট আইন অনুযায়ী মাসিক ২ শতাংশ হারে ২ লাখ ৮৩ হাজার ৭১৬ সুদ টাকা প্রযোজ্য হয়।
এ ছাড়া ফরিদ ফাইভার অ্যান্ড উইভিং লিমিটেড প্রতিষ্ঠানটির ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের ডিসেম্বর মেয়াদে জব্দকৃত দলিল অনুযায়ী বিক্রি পাওয়া যায় ৩৯ কোটি ৭০ লাখ ৬৭ হাজার ৬২১ টাকা। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি দাখিলপত্রে ৩১ কোটি ৮৭ লাখ ২৭ হাজার ৩৪৬ টাকা বিক্রয়মূল্য প্রদর্শন করেছে। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটি দাখিলপত্রে ৭ কোটি ৮৩ লাখ ৪০ হাজার ২৭৫ টাকা কম বিক্রয়মূল্য প্রদর্শন করে। যার উপর প্রযোজ্য ভ্যাট ১ কোটি ২ লাখ ১৮ হাজার ২৯৭ টাকা। এই ভ্যাট যথাসময়ে পরিশোধ না করায় ভ্যাট আইন অনুযায়ী মাসিক ২ শতাংশ হারে ৯ লাখ ৭৯ হাজার ৯৫৩ সুদ টাকা প্রযোজ্য হয়।
এ তিনটি প্রতিষ্ঠানে মোট ভ্যাট ৩ কোটি ৫ লাখ ১০ হাজার ৬৩৩ টাকা এবং সুদ ১ কেটি ৯ লাখ ৯৩ হাজার ৬ টাকাসহ সর্বমোট ৪ কোটি ১৫ লাখ ৩ হাজার ৬৩৯ টাকার ভ্যাট ফাঁকি হয়েছে।
অভিযানে প্রাপ্ত কাগজপত্র ও তথ্য যাচাই করে ভ্যাট ফাঁকির সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়। দীর্ঘ ৩ মাস তদন্ত করে প্রতিষ্ঠান তিনটির বিরুদ্ধে মঙ্গলবার (১২ এপ্রিল) ভ্যাট আইনে মামলা করা হয়েছে।
তদন্তে ফাঁকি দেওয়া ভ্যাট আদায়ের পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য মামলা তিনটি কুমিল্লা ভ্যাট কমিশনারেট পাঠানো হয়েছে। একইসঙ্গে প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম আরো মনিটরিং করার জন্যও সংশ্লিষ্ট ভ্যাট কমিশনারকে অনুরোধ করা হয়েছে।
এমএসপি