করোনা মোকাবিলায় টিআইবির ১০ সুপারিশ
করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সরকারের কাছে ১০টি সুপারিশ দিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
মঙ্গলবার (১২ এপ্রিল) ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনে গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশের সময় এ সুপারিশগুলো তুলে ধরা হয়। পাশাপাশি করোনা মোকাবিলায় সরকারের কার্যক্রম সম্পর্কে পর্যবেক্ষণও তুলে ধরে টিআইবি।
সংবাদ সম্মেলনে টিআইবি'র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামানসহ অন্য কর্মকর্তারা অংশ যুক্ত ছিলেন।
টিআইবি'র পর্যবেক্ষণ
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ, আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ব্যবস্থা ও টিকা কার্যক্রম, এবং করোনার প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে গৃহীত প্রণোদনা কার্যক্রমে অনিয়ম-দুর্নীতিসহ সুশাসনের চ্যালেঞ্জ অব্যাহত রয়েছে।
করোনাভাইরাস সংকট মোকাবিলায় সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ, সম্পদের যথাযথ ব্যবহার, পরিস্থিতি অনুযায়ী দ্রুত সাড়া দেওয়া এবং সেবা সম্প্রসারণ করা হয়নি, যা বারবার সংক্রমণ বৃদ্ধির সঙ মানুষের মৃত্যুসহ নানা ধরনের দুর্ভোগ বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান কারণ।
কোভিড-১৯ টিকাসহ চিকিৎসা ব্যবস্থা ও প্রণোদনা কার্যক্রমে সবার জন্য সমপ্রবেশগম্যতা ও সবার অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত না করায় সেবা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে এলাকা, শ্রেণি, লিঙ্গ ও জনগোষ্ঠীভেদে বৈষম্য বিরাজমান।
এটি সাধারণ মানুষ বিশেষত দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সেবা থেকে বঞ্চিত করছে এবং হয়রানি ও আর্থিক বোঝা তৈরি করছে।
কোভিড-১৯ মোকাবিলা কার্যক্রমে স্বচ্ছতার ঘাটতি একদিকে অনিয়ম-দুর্নীতির ঝুঁকি তৈরি করছে ও অন্যদিকে সংঘটিত দুর্নীতিকে আড়াল করার সুযোগ তৈরি করছে।
প্রণোদনা কর্মসূচি বাস্তবায়নেও সুশাসনের চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান থাকায় করোনাভাইরাসের প্রভাবে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের কাছে প্রণোদনার সুফল প্রত্যাশিতভাবে পৌঁছায়নি। বিদ্যমান কোভিড-১৯ সেবা কার্যক্রমে অভিযোগ নিরসন ব্যবস্থা না থাকায় সমস্যা নিরসনে বা অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না, যা সুশাসনের সমস্যাগুলোকে টিকিয়ে থাকার অন্যতম একটি কারণ।
যে ১০টি সুপারিশ করা হয়েছে:
চিকিৎসা ব্যবস্থা সম্পর্কিত
১. কোভিড-১৯ চিকিৎসা ব্যবস্থা উন্নয়নে সরকারি ও প্রকল্পের বরাদ্দ যথাযথভাবে দ্রুততার সঙ্গে কাজে লাগিয়ে প্রতিটি জেলায় আইসিইউ শয্যা, আরটি-পিসিআর পরীক্ষাগারসহ অন্যান্য অবকাঠামোগত উন্নয়ন শেষ করতে হবে।
২. সরকারি পরীক্ষাগারে বিনামূল্যে নমুনা পরীক্ষার ব্যবস্থা ও বেসরকারি পরীক্ষাগারে নমুনা পরীক্ষার ফি হ্রাস করতে হবে।
কোভিড-১৯ টিকা সম্পর্কিত
৩. বেসরকারি পর্যায়ের অংশীজনদের সম্পৃক্ত করে টিকার আওতার বাইরে রয়ে যাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ মানুষদের চিহ্নিত করতে হবে এবং টিকার আওতায় নিয়ে আসতে হবে।
৪. মাঠ পর্যায়ের সরকারি প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার মাঠকর্মীদের ব্যবহার করে প্রত্যন্ত এলাকা ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিনামূল্যে নিবন্ধন ও টিকা প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে।
৫. প্রথম ডোজ পাওয়া বিশেষত নিবন্ধন ব্যতীত টিকাগ্রহীতার দ্বিতীয় ডোজ নিশ্চিত করতে প্রচারণা বৃদ্ধি করতে হবে; এক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, উন্নয়ন সংস্থার সহায়তা নিতে হবে।
প্রণোদনা বাস্তবায়ন সম্পর্কিত
৬. মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তর, প্রতিষ্ঠান, গবেষক, উদ্যোক্তা সমিতির সহায়তায় প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের চিহ্নিত করতে হবে, এবং তাদের মধ্যে প্রণোদনা ঋণ আবেদন প্রক্রিয়া সম্পর্কিত তথ্য প্রচার করতে হবে।
৭. মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প উদ্যোক্তাদের প্রণোদনা ঋণ প্রক্রিয়া সহজ করতে হবে, বিভিন্ন শর্ত শিথিল করতে হবে এবং ঋণ পরিশোধের সময়সীমা বৃদ্ধি করতে হবে।
৮. ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বাইরে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বেশি ঋণ বিতরণ করতে হবে।
স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি সম্পর্কিত
৯. টিকা প্রাপ্তির উৎস, ক্রয়মূল্য, বিতরণ ব্যয়, মজুদ ও বিতরণ সম্পর্কিত তথ্য সবার জন্য উন্মুক্ত করতে হবে।
১০. কোভিড-১৯ চিকিৎসা ও টিকা সম্পর্কিত সব প্রতিষ্ঠানে অভিযোগ নিরসন ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে এবং অনিয়ম-দুর্নীতির সাথে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
আরইউ/কেএফ/