ক্ষুব্ধ জাফর ইকবাল বললেন
হৃদয় মন্ডল যা বলেছেন তা শুধু আমি না, পৃথিবীর সমস্ত বিজ্ঞানমনস্ক মানুষ বলে
মুন্সীগঞ্জের বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় মন্ডলকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল। তিনি বলেছেন, ‘আমি হতাশ হতে পারতাম। যেহেতু প্রতিজ্ঞা করেছি জীবনে হতাশ হব না। এ জন্য হতাশ শব্দটা ব্যবহার করলাম না। তবে আমি ক্ষুব্ধ, অত্যন্ত ক্ষুব্ধ। কারণটা আপনারা সবাই জানেন।’
তিনি শনিবার বিকালে রাজধানীর শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনে ‘নিপীড়নের বিরুদ্ধে শাহবাগ’ ব্যানারে আয়োজিত এক প্রতিবাদ সমাবেশে এ ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
জাফর ইকবাল বলেন, ‘আমরা সব সময় শুনে এসেছি, আমাদের দেশকে জ্ঞানভিত্তিক একটি দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। এর প্রথম কাজটি হলো আমরা যেন স্কুল-কলেজে আমাদের ছেলেমেয়েদের সঠিকভাবে বিজ্ঞান শেখাতে পারি। সেই দায়িত্বটি পালন করতে গিয়েছিলেন শিক্ষক হৃদয় মণ্ডল এবং শুধুমাত্র এ কারণে তাকে এখন হাজতে বসে থাকতে হচ্ছে।’
ক্ষুব্ধ এই শিক্ষক বলেন, ‘এটি আমাদের দেশ, আমার বিশ্বাস হতে চায় না। এটা কীভাবে সম্ভব! একজন শিক্ষক তার দায়িত্ব পালন করছেন। একজন ছাত্র একটি প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেছে, তিনি সেই প্রশ্নের সবচেয়ে যৌক্তিক উত্তর দিয়েছেন এবং সে জন্য তাকে গ্রেপ্তার করে হাজতে নেওয়া হয়েছে।’
জাফর ইকবাল বলেন, ‘আমার দুঃখটা হলো যে বিজ্ঞান পড়াতে গিয়ে তিনি এভাবে নিগৃহীত হচ্ছেন, সেই বিজ্ঞান বইগুলি আমরা কয়েকজন মিলে লিখেছিলাম। আমি পদার্থ বিজ্ঞানের বইটি লিখেছিলাম এবং আমরা কয়েকজন বইগুলি সম্পাদনা করেছিলাম। সেই বই পড়াতে গিয়ে হৃদয় মণ্ডলের এই কষ্ট সহ্য করতে হচ্ছে।’
হৃদয় মন্ডল বিজ্ঞানের মৌলিক কথাগুলিই বলেছেন উল্লেখ করে জাফর ইকবাল বলেন, ‘যে কথাগুলি বলার জন্য, উচ্চারণ করার জন্য হৃদয় মন্ডলকে হাজতে রাখা হয়েছে এবং জামিন দেওয়া হচ্ছে না। সেই কথাগুলি শুধু আমি না, পৃথিবীর সমস্ত বিজ্ঞানমনস্ক মানুষ বলে থাকেন, উচ্চারণ করে থাকেন। তাহলে এটা কেমন করে সম্ভব যে আমরা বাইরে ঘুরাফিরা করছি আর হৃদয় মণ্ডল জেলখানায় আছেন। আমরা কেন জেলাখানায় নাই? আমাদের কেন গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না?’
হৃদয় মন্ডলের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানিয়ে জাফর ইকবাল বলেন, ‘আমাদের দেশের মানুষ এখন বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদ করতে শুরু করেছে। এটা আশার কথা। হৃদয় মন্ডলের যে সম্মানহানি হয়েছে, আমি আশা করব তাকে আর যেন একটি দিনও জেলহাজতে না থাকতে হয়। তাকে সসম্মানে মুক্তি দেওয়া হোক।’
শাহবাগের সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন মানবাধিকার কর্মী খুশি কবীর, সাবেক ছাত্রনেতা আকরামুল হক, প্রকাশক রবীন আহসান, যুবনেতা খান আসাদুজ্জামান মাসুম প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, গত ২২ মার্চ সকালে মুন্সীগঞ্জের বিনোদপুর রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ে ক্লাস চলাকালে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ ওঠে বিজ্ঞান ও গণিতের শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় বিচারের দাবিতে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে আনতে না পেরে প্রধান শিক্ষক পুলিশকে খবর দেন। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয় এবং শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে। পরে বিদ্যালয়ের ইলেকট্রিশিয়ান আসাদ বাদী হয়ে শিক্ষকের বিরুদ্ধে ধর্মানুভূতিতে আঘাত হানার অভিযোগে মামলা করেন। এরপর থেকে ওই শিক্ষক কারাগারে রয়েছেন। এর মধ্যে দুই বার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে ওই শিক্ষকের জামিন আবেদন করা হয়। তবে আদালত জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে ১০ এপ্রিল শুনানির দিন ধার্য করেছে।
এপি/