ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র ছায়া সংসদ
জালানি স্বনির্ভরতা অর্জনে নেতৃত্বের ব্যর্থতা রয়েছে: ড. ম. তামিম
জ্বালানি মূল্য বৃদ্ধির যৌক্তিকতা নিয়ে আয়োজিত ছায়া সংসদে বিজয়ী দলের বিতার্কিকদের ট্রফি প্রদান করছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. ম. তামিম ও ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির অভাব রয়েছে। জ্বালানি স্বনির্ভরতা অর্জনে নেতৃত্বের ব্যর্থতা রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. ম. তামিম। শুক্রবার (৮ এপ্রিল) ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির আয়োজনে জ্বালানি মূল্য বৃদ্ধির যৌক্তিকতা নিয়ে এক ছায়া সংসদ এফডিসি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ড. ম. তামিম এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
ড. ম. তামিম বলেন, ‘বিপিসি ভর্তুকি প্রদান ও মুনাফা অর্জনের বিষয়টি কখনো সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ করে না। তাদের কার্যক্রমের তথ্য প্রাপ্তিতে জনগণের অধিকার সুরক্ষিত করতে হবে। জ্বালানি স্বনির্ভরতা অর্জনে নেতৃত্বের ব্যর্থতা রয়েছে। আমরা এখনো কয়লা ও গ্যাস ক্ষেত্র অনুসন্ধানে অনেক পিছিয়ে আছি। জ্বালানি স্বনির্ভরতা অর্জনের জন্য অভ্যন্তরীন সম্পদের সুষ্ঠু ও সাশ্রয়ী ব্যবহার করতে হবে। একই সঙ্গে অপচয়রোধ করে জ্বালানি ব্যবস্থাপনায় সুশাসন নিশ্চিত করা জরুরি।’
তিনি আরও বলেন, ‘জ্বালানি খাতে বর্তমানে যে ইনডেমনিটি রয়েছে তা সমর্থনযোগ্য নয়। জরুরী সংকটকালে ইনডেমনিটি দেয়া যেতে পারে। জ্বালানির জন্য অতীতে যে ইনডেমনিটি দেয়া হয়েছিল বর্তমানে তার প্রয়োজন নেই। বাংলাদেশে প্রতিদিন ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস চুরি হচ্ছে। এই চুরি বন্ধ করতে পারলে স্পট মার্কেট থেকে সোনার দামে যে গ্যাস কেনা হচ্ছে তা কিনতে হতো না। বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি নবায়নের ক্যাপাসিটি কস্টও এখন তুলে দেওয়া উচিত।’
এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখতে কিছু মূল্য বৃদ্ধি করে জ্বালানি খাতে ভর্তুকি দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে বলেও মন্তব্য করেন এই জ্বালানি বিশেষজ্ঞ।
সভাপতির বক্তব্যে হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, ‘জ্বালানি তেল, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর পূর্বে বিদেশে অর্থপাচাররোধ, ব্যাংক ঋণের নামে ব্যাংক ডাকাতি বন্ধ, মেগা প্রজেক্টের দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ, বিদ্যুতের ক্যাপাসিটি লস বন্ধ করাসহ জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে ইনডেমনিটি তুলে দেওয়া উচিত। গত ১২ বছরে সরকার পানির দাম ১৪ বার, বিদ্যুতের দাম ১২ বার এবং গ্যাসের দাম ৯ বার বাড়িয়েছে। একদিকে সরকারের ভর্তুকি দেওয়ার চালেঞ্জ, অন্যদিকে জনস্বার্থ বিবেচনা করে মূল্যবৃদ্ধি, এ দুইয়ের সমন্বয় করা জরুরি।’
তিনি আরও বলেন, ‘একটি জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থা প্রয়োজন, যেখানে সরকার সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে নাগরিকদের সম্পৃক্ত করে জ্বালানি তেল, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম নির্ধারণ করবে। বর্তমানে প্রচলিত গনশুনানীতে ভোক্তাদের পক্ষে যে বক্তব্য দেয়া হয়, তা অনেক ক্ষেত্রে আমলে নেয়া হয় না। যা নাগরিকদের হতাশ করে।’
প্রতিযোগিতায় স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশকে হারিয়ে ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বিতার্কিকরা বিজয়ী হন। ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র আয়োজনে ছায়া সংসদের বিষয় ছিল ‘আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি বিবেচনায় দেশে মূল্য বৃদ্ধি যৌক্তিক’। ইউসিবি পাবলিক পার্লামেন্ট শিরোনামে প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মোহাম্মদ রইস, ড. এস এম মোর্শেদ, সাংবাদিক সবুজ ইউনুস ও কৃষিবিদ ফালগুনী মজুমদার। প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী দলকে ট্রফি ও সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়।
এসএ/