জাতীয় কর্মসংস্থান নীতি ও অস্থাবর সম্পত্তি আইনের খসড়া অনুমোদন
অস্থাবর সম্পত্তি বন্ধক রেখে ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার সুযোগ করে দিতে ‘সুরক্ষিত লেনদেন (অস্থাবর সম্পত্তি) আইন ২০২২’ এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
একই সঙ্গে প্রস্তাবিত ‘জাতীয় কর্মসংস্থান নীতি ২০২২’ এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
বুধবার (৬ এপ্রিল) জাতীয় সংসদ ভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই আইন ও নীতি অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সচিবালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে এসব কথা জানান।
পরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এটি একটি নতুন আইন। ‘আমরা ব্যাংক থেকে যেসব লোন দিই, তার বিপরীতে একটা ইক্যুইটি দিতে হয়। স্থাবর সম্পত্তি বা ক্যাপিটাল ইকুইপমেন্ট থেকে সেগুলো দেওয়া হয়। নতুন আইনে অস্থাবর সম্পত্তিকে ইক্যুইটি হিসেবে নেওয়ার জন্য ব্যাংকিং ডিভিশন থেকে একটি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সেই খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। অর্থাৎ এখন থেকে অস্থাবর সম্পত্তিও ইক্যুইটি (বন্ধক) হিসেবে গ্রহণ করা যাবে।’
তিনি বলেন, ‘এ আইন পাস হলে অস্থাবর সম্পত্তির বিপরীতেও ঋণ নেওয়া যাবে। অর্থাৎ ব্যাংকে রাখা স্থায়ী আমানত, বন্ড, দামি গাড়ি, সোনা-রুপা এমনকি মেধাস্বত্ব বন্ধক রেখেও মিলবে ঋণ। এ ছাড়া খনিজ সম্পদ, কৃষিজাতপণ্য, প্রক্রিয়াজাত মাছ ও জলজ প্রাণী, গবাদি পশু, রপ্তানি আদেশ অনুযায়ী পণ্য প্রস্তুতের কাঁচামাল, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আমানত, নিবন্ধিত কোম্পানির শেয়ার সার্টিফিকেট, কোনো সেবার প্রতিশ্রুতির বিপরীতে সেবা গ্রহীতার মূল্য পরিশোধের স্বীকৃতিও ঋণের জন্য বন্ধক হিসেবে নিতে পারবে ব্যাংক।
অস্থাবর সম্পদ বন্ধক রাখার সুযোগ দেওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘মধ্যম ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের বন্ধক দেওয়ার মত স্থাবর সম্পত্তি নেই। তারা যেন তাদের অস্থাবর সম্পত্তি জমা দিয়ে ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করতে পারে সেজন্যই এই আইন। এটা বিনিয়োগের ভিত্তিটাকে অনেক বড় করবে।’
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, আগামী ৩-৪ বছরের মধ্যে ৫৬ লাখ মানুষকে দক্ষ করে গড়ে তোলতে জাতীয় কর্মসংস্থান নীতি চূড়ান্ত করেছে সরকার। এই নীতিমালা চূড়ান্ত করার আগে দীর্ঘসময় আলোচনা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘এখন যে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব আসছে, আধুনিক বিশ্বের প্রযুক্তি পরিবর্তন হচ্ছে, ফলে আমাদের উৎপান, প্রযুক্তি ও শ্রমিকের যে দক্ষতা, সেটার ব্যাপক পরিবর্তন দরকার। সেই পরিপ্রেক্ষিতে এই নীতিমালা নিয়ে আসা হয়েছে।’
আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, এ নীতিমালার মূল উদ্দেশ্য হলো দেশের শ্রমজীবী মানুষের কল্যাণ এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির জন্য আধুনিক ও যুগোপযোগী নীতি পরিবেশ তৈরি করা। বর্তমান যে শিক্ষা ব্যবস্থা বা দক্ষতা, তা দিয়ে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবকে মোকাবিলা করতে পারবে না। এজন্য জাতীয় কর্মসংস্থান নীতিতে এসব বিষয় ঢোকানো হয়েছে, যে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে আমাদের ৫৬ লাখ লোককে পুনরায় দক্ষ করে তুলতে হবে। দ্রুত না করলেতো ম্যাচ করতে পারবে না।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের পথ ধরে আগামী দিনে ১০টি প্রযুক্তি বিশ্ব শাসন করবে। সেসব নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে মানিয়ে নিতে না পারলে, দক্ষতা অর্জন করতে না পারলে বিপুল সংখ্যক মানুষ কাজ হারাবে। তখন দেখা যাবে ওই প্রযুক্তিও অ্যাডভান্সড হয়ে যাবে। ইতোমধ্যে পঞ্চম শিল্প বিপ্লবের আলোচনা শুরু হয়ে গেছে। ২০৫০ সালের পরে পঞ্চম শিল্প বিপ্লব আসার সম্ভাবনা রয়েছে। সেক্ষেত্রে থিম হবে পার্সোনালাইজেশন। বিশেষ করে কম কর্মসংস্থানপ্রত্যাশী মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, অকর্মনীয়দের উপায় নির্ধারণ, জনশক্তিকে কর্মশক্তি উপযোগী ও দক্ষ করে তোলার মাধ্যমে বেকারত্বহীন দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত সমাজ প্রতিষ্ঠাই এই নীতির লক্ষ্য।
তিনি বলেন, এই নীতিমালার কথা বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারেও ছিল৷ মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে জাতীর পিতার উন্নত স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ, ২০৩০ সালের মধ্যে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে মর্যাদা লাভ এবং ২১০০ সালের মধ্যে নিরাপদ বদ্বীপ গঠনের যে পরিকল্পনা বা লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, সেগুলোর জন্য এ মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা খুবই প্রয়োজন।
এনএইচবি/এমএমএ/