‘মোশতাকসহ দলীয় বেঈমানদের ষড়যন্ত্রে জাতির পিতাকে হারাই’
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডের পেছনে আবারও দলের কিছু নেতাদের ষড়যন্ত্রের কথা তুলে ধরলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘সামরিক বাহিনীর কিছু বিপথগামী লোক ও খন্দকার মোশতাকসহ কিছু বেঈমানের ষড়যন্ত্রেই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট আমরা জাতির পিতাকে হারালাম।’
বৃহস্পতিবার (২৪ মার্চ) সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা হলে স্বাধীনতা পুরস্কার-২০২২ প্রদান অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন সরকার প্রধান।
জাতির পিতার স্মৃতি চারণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন ঘুনে ধরা সমাজ ব্যবস্থা ভেঙে একটা নতুন সমাজ গড়তে। উপনিবেশিক শাসকদের তৈরি করা প্রশাসনিক কাঠামো এবং উপনিবেশিক শাসন, শোষণ বঞ্চনার হাত থেকে দেশকে মুক্তি দিয়ে তৃণমূল পর্যায়ে মানুষকে ক্ষমতায়ন করা। তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার, তাদের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করাই ছিল তার লক্ষ্য। স্বাধীনতার পর মাত্র ৯ মাসের মধ্যে তিনি আমাদের যে সংবিধান দিয়েছিলেন, সেই সংবিধানে গণমানুষের প্রতিটি মৌলিক চাহিদার কথা উল্লেখ রয়েছে। একটি সুনির্দিষ্ট দিক-নির্দেশনা দিয়েছিলেন তিনি। সব থেকে বড় লক্ষ্য ছিল তিনি ক্ষমতাকে বিকেন্দ্রীকরণ করতে চেয়েছিলেন। দেশে যতগুলো মহাকুমা ছিল প্রত্যেকটা মহকুমাকে জেলায় উন্নীত করেন।
‘উপনিবেশিক শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তন করে গণমানুষের শাসন ব্যবস্থা তৃণমূল পর্যায়ে যাতে পৌঁছাতে পারে সেই পদক্ষেপ তিনি নেন। এটার বাস্তবায়ন দুর্ভাগ্যবশত তিনি করে যেতে পারেননি। এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে তার জন্য সবুজ বিপ্লবের ডাক দিয়েছিলেন।
তিনি বলেন, সেদিন শুধু জাতির পিতাকেই হারায়নি, এরপর আমাদের সামরিক বাহিনীতে প্রায় ১৯-২০টার মতো সামরিক অভ্যুত্থান হয়েছে। প্রতিটি ক্যুর পর হাজার হাজার সৈনিক এবং অফিসারদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। বিমানবাহিনী ও সেনাবাহিনী সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় সেই সময়। এ দেশ এগিয়ে যাচ্ছিল সেটা একেবারে অন্ধকারে নিয়ে যায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি জাতি বা প্রজন্মের সামনে যদি আমাদের ইতিহাস তুলে ধরা না হয়। সে জাতির সামনে এগিয়ে যাবে কীভাবে? তাদের ভেতর আত্মবিশ্বাস আসবে কীভাবে, তারা ভবিষ্যতে উন্নত জীবনের স্বপ্ন দেখবে কীভাবে? আমরা যে বিজয়ী জাতি সেই কথাটাই ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এটাই ছিল একুশ বছরের অন্ধকারের যুগ। ১৯৯৬ সালে আমরা সরকার' গঠন করার পর ইতিহাসটাকে আবার ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করি। ৭ মার্চের ভাষণ, যে ভাষণ সমগ্র জাতিকে উজ্জীবিত করেছিল। সে ভাষণ আমরা আবার জাতির সামনে তুলে ধরি। আজকে সে ভাষণ আন্তর্জাতিক প্রামাণ্য দলিল স্বীকৃতি পেয়েছে।
তিনি বলেন, এখানে আসতে অনেক ঝড়-ঝঞ্ঝা পার হয়ে আসতে হয়েছে। আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। আমার কাজ একটাই বাংলাদেশের মানুষকে সেবা করা। মানুষকে একটা সুন্দর ভবিষ্যৎ দিয়ে যাওয়া।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, করোনাভাইরাস শুধু আমাদের না, সারা বিশ্বব্যাপী সমস্যা। তারপরও আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত। অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে সক্ষম হয়েছি। আমরা আমাদের প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছি। আমাদের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেকে মনে করে এটা খুব অস্বাভাবিক ব্যাপার, আসলে তা নয় পরিকল্পিতভাবে যদি কাজ করা যায়। সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য স্থির করে যদি প্রতিটি প্রকল্প প্রণয়ন এবং বাস্তবায়ন করা যায় তাহলে যেকোনো অর্জন করা সম্ভব বলে আমি বিশ্বাস করি। আমরা সেভাবেই কাজ করেছি। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে এগিয়ে যাবে। বাংলাদেশকে আর কেউ দাবায়া রাখতে পারবে না। উন্নত মর্যাদাশীল জাতি হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে চলবে।
এসএম/এসএন