আমাদের সিস্টেমে কেউ ইচ্ছে করলেই গুলি করতে পারে না: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে বাংলাদেশের র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘কি কারণে তারা এই নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সেই প্রতিদেবনটা আমার টেবিলে এখনও আসেনি। প্রতিবেদন পেলে আমরা আমাদের অবস্থান জানাব। তবে আমাদের সিস্টেম কিন্তু অনেক সুন্দর। আমাদের এখানে কেউ ইচ্ছে করলেই ক্রসফায়ার বা গুলি করতে পারে না।’
শনিবার (১১ ডিসেম্বর) রাজধানীর ওয়াসা ভবনে এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
এদিকে বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত আর্ল মিলারকে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনকে তলব করেছন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমেরিকা যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। সেই প্রতিবেদনটা আমার টেবিলে এখনও আসেনি। সেটা আমাকে দেখতে হবে তারা কেন, কিভাবে, কি কারণে এই নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। সেটা না দেখে পুরো মন্তব্য করতে পারব না।’
তবে তিনি বলেন, ‘আমি যতটুক শুনেছি, এই নিষেধাজ্ঞা যে কারণে দিয়েছে, সেসব কারণে আমাদের দেশে যতগুলো ঘটনাই ঘটেছে, সবগুলোর একটা জুডিশিয়াল তদন্ত হয়। একজন ম্যাজিস্ট্রেট সেটা চেক করেন, যে অ্যাকসিডেন্টটা হলো এই অ্যাকসিডেন্টের পেছনের কারণগুলো যথাযথ ছিল, নাকি গাফিলতি ছিল। আমরা যেখানে কোনো গাফিলতি পাই সেখানে কিন্তু তার বিরুদ্ধে মামলা চালু হয়ে থাকে। গাফিলতি না থাকলে সেখানেই ক্লোজড হয়ে যায়।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সিস্টেম কিন্তু সুন্দর। এই সিস্টেমে কেউ ইচ্ছা করে ক্রসফায়ার বা ইচ্ছে করে গুলি করতে পারে না। ওইসব ঘটনার পেছনে যেসব যথাযথ কারণ ছিল বলে আমার কাছে প্রতীয়মান হয়েছে, সেসব ঘটনা শুধু আমাদের দেশে না, পৃথিবীর সব দেশেই চলছে।’
‘গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন’ অভিযোগে র্যাবের সাবেক প্রধান, বর্তমান পুলিশ মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদসহ সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে বাংলাদেশের শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তা বেনজীর আহমেদ যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অনুমতি পাবেন না।
এই তালিকায় বেনজীর আহমদের সঙ্গে কক্সবাজারে র্যাব-৭ এর সাবেক অধিনায়ক মিফতা উদ্দিন আহমেদের নাম এসেছে। নিষেধাজ্ঞার তালিকায় যুক্ত হওয়ায় বেনজীর আহমদ ও মিফতা উদ্দিন আহমেদ এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশাধিকার পাবেন না বলে বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।
২০১৮ সালে মাদকবিরোধী অভিযানের সময় টেকনাফের পৌর কাউন্সিলর ও উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি একরামুল হককে ‘বিচার বহির্ভূতভাবে হত্যার মতো গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় সম্পৃক্ততরার জন্য’ তাদের বিরুদ্ধে এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর।
শুক্রবার আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ দপ্তর গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে বিভিন্ন দেশের ১৫ ব্যক্তি ও ১০ প্রতিষ্ঠানের সম্পদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দিয়েছে। সেখানে আলাদাভাবে বিভিন্ন দেশের ১২ কর্মকর্তার নাম যুক্তরাষ্ট্রের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার তালিকায় যুক্ত করার কথা জানানো হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ দপ্তর ম্যাগনিটস্কি অ্যাক্টের আওতায় যে ১৫ ব্যক্তি ও ১০ প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দিয়েছে, সেখানে বাংলাদেশের এলিট ফোর্স র্যাব এর সাবেক মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ ছাড়াও সাবেক ও বর্তমান আরও পাঁচ কর্মকর্তার নাম রয়েছে।
ওই পাঁচ কর্মকর্তা হলেন–র্যাবের বর্তমান মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, অতিরিক্ত মহাপরিচালক-অপারেশন্স খান মোহাম্মদ আজাদ, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক-অপারেশন্স তোফায়েল মুস্তাফা সরওয়ার, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক-অপারেশন্স মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম এবং সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক-অপারেশন্স মোহাম্মদ আনোয়ার লতিফ খান।
এসএম/এসএ/