শাহ আলমগীর জার্নালিজম এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড পেলেন বদরুল আহসান
প্রয়াত সাংবাদিক শাহ আলমগীরের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা রেখে ‘শাহ আলমগীর জার্নালিজম এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড’ শুরু করেছে ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টার (বিজেসি)। প্রথমবার চালু হওয়া এই অ্যাওয়ার্ড পেলেন লেখক ও সাংবাদিক সৈয়দ বদরুল আহসান।
এর মধ্য দিয়ে প্রতি বছর দেশের একজন বরেণ্য ব্যক্তিকে শাহ আলমগীর জার্নালিজম এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড দিয়ে সম্মানিত করা হবে বলে জানিয়েছেন বিজেসি’র নেতারা।
শনিবার (৪ মার্চ) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে এই অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়। দেশের বাইরে থাকায় সৈয়দ বদরুল আহসানের পক্ষে এই সম্মাননা গ্রহণ করেন তার ছোট ভাই ও বোন।
অ্যাওয়ার্ডের পাশাপাশি এক লাখ টাকার চেকও দেওয়া হয়। জুরিবোর্ডের চেয়ারম্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক এই অ্যাওয়ার্ড তুলে দেন।
বিজেসি’র ট্রাস্টি রাশেদ আহমেদের সঞ্চালনায় ও চেয়ারম্যান রেজোয়ানুল হক রাজা’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিএফইউজে’র সাবেক সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি সোহেল হায়দার চৌধুরী, প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান, বিজেসি’র সদস্য সচিব শাকিল আহমেদ। উপস্থিত ছিলেন শাহ আলমগীরের সহ ধর্মিনী ফৌজিয়া মায়া সহ পরিবারের সদস্যরা।
প্রয়াত সাংবাদিক শাহ আলমগীর ১৯৫৭ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি ব্রাক্ষণবাড়িয়ার জাফরপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা আবু ইউসুফ সরকার পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগে চাকরি করতেন। সেই সুবাদে নেত্রকোনার দুর্গাপুরে কাটে তার শৈশব ও কৈশোরকাল। লেখাপড়া শুরু হয়েছিল দুর্গাপুরের মহারাজা কুমুদচন্দ্র মেমোরিয়াল স্কুলে। এরপর ময়মনসিংহের গৌরীপুরের আর কে হাইস্কুল থেকে এসএসসি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স করেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন সময়ে রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে ওঠেন শাহ আলমগীর।
ছাত্র ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির সাংস্কৃতিক সম্পাদক থাকা অবস্থায় জড়িয়ে পড়েন সাংবাদিকতায়। কিশোর বাংলা পত্রিকা দিয়ে কাজের শুরু হলেও দৈনিক জনতা, দৈনিক আজাদী, বাংলার বাণী, সংবাদ, চ্যানেল আই, একুশে টেলিভিশন, যমুনা টেলিভিশন, মাছরাঙা টেলিভিশন ও এশিয়ান টেলিভিশনে কাজ করেন তিনি।
নিয়মিত চাকরির মধ্যে নিজের বার্তাকক্ষ তো বটেই দেশের অন্যান্য সাংবাদিকদের সুরক্ষা আদায়ের কথা কখনো ভুলেননি শাহ আলমগীর। ১৯৮৭ সালে দৈনিক আজাদী পত্রিকায় কাজ করতে গিয়ে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সদস্য হোন।
নেতৃত্বের গুণাবলীর কারণে বিএফইউজের যুগ্ম মহাসচিব, ডিউইজের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ পদে নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ছিলেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সদস্যও। ২০১৩ সালের ৭ জুলাই থেকে বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিউটের মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এই প্রতিষ্ঠানে যুক্ত ছিলেন তিনি। এখানে থেকেই তিনি অবৈতনিকভাবে সারা দেশের সাংবাদিকদের জন্য সরকার গঠিত সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের প্রথম ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা নিয়ে গঠিত তহবিল থেকে সাংবাদিকদের সুরক্ষায় তার হাত ধরেই সহায়তা দেওয়া শুরু হয়। এ ছাড়া, বিজেসির প্রথম ন্যায়পাল মনোনীত হয়েছিলেন তিনি। এবার তার কর্মকাণ্ড ও স্মৃতি ধরে রাখতে প্রথমবারের মতো তার নামে আওয়ার্ড চালু করল বিজেসি। যার শুরু হলো লেখক ও সাংবাদিক সৈয়দ বদরুল আহসানের মাধ্যমে।
সৈয়দ বদরুল আহসানের জন্ম ১৯৫৪ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি। পাকিস্তানের কোয়েটার সেন্ট ফ্রান্সিস গ্রামার স্কুল থেকে পড়াশুনা শুরু করেন। এরপর নটরডেম কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে মাস্টার্স করেন তিনি। সৈয়দ বদরুল আহসান একাধারে শিক্ষক ও সাংবাদিক। লেখালেখির সঙ্গেও যুক্ত।
দ্য নিউ নেশন, বাংলাদেশ অবজারভার, দ্য মর্নিং সান, নিউজ টুডে, নিউ এজ, সাপ্তাহিক ঢাকা কুরিয়ার, দ্য ডেইলি স্টার, ডেইলি অবজারভার, এশিয়ান এজ পত্রিকার বিভিন্ন পদে চাকরি করেছেন তিনি। পড়িয়েছেন ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যে। সরকারি পদে কাজের অভিজ্ঞতাও রয়েছে তার। রয়েছে ইতিহাসভিত্তিক প্রকাশনা। বর্তমানে তিনি ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক, রাজনীতি ও কূটনীতিক ভাষ্যকার হিসেবে যুক্ত রয়েছেন। নিয়মিত লিখেছেন দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে।
এনএইচবি/এমএমএ/