শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | ৯ ফাল্গুন ১৪৩১
Dhaka Prokash

ধারাবাহিক উপন্যাস: পর্ব-৩১

নেই দেশের নাগরিক

চায়ের দোকানটায় গিজগিজে ভিড়। ফুল ভলিউমে একটা টিভি চলছে। হিন্দি ছবির একটা রংটাপ্পা গান হচ্ছে। লোকজন চোখ ঢুকিয়ে দেখছে। আজকাল রাস্তার ধারের চায়ের দোকানগুলোয় টিভি থাকা মামুলি ব্যাপার। সঙ্গে দক্ষিণ ভারতের ছ্যাবলামো সিনেমা। বাংলাদেশে ইন্ডিয়ান সিনেমার রমরমা বাজার। টিভির গানের শব্দ ফুঁড়ে মাঝে মধ্যে চাওয়ালার চা ছাঁকনি দিয়ে চা ছাঁকার ‘খট খট’ শব্দ কানে এসে ঠেকছে। তার মাঝে ঠেলা দিয়ে উঠছে ভিড়ের গুঞ্জন। চাটায়ের দেওয়াল খামচে বাদুড়ের মতো লেজ বের করে ঝুলছে অন্ধকার। রাত এখনো সরের মতো ঘন না হলেও, সর হওয়ার জন্যে উৎলাতে শুরু করেছে। ধোঁয়া দিয়ে যাচ্ছে গোধূলির শেষ টান। আর ঘণ্টাখানেক গেলেই আলখাল্লার মতো পা অবদি ঝুঁকে নামবে অন্ধকার। গেঁড়ে বসবে রাত। চায়ে একটা ‘সুড়ুৎ’ করে চুমুক দিয়ে নবী বলল, “আমার কিন্তু তোর সঙ্গে যাওয়া হবে না।“
“যাওয়া হবে না, মানে!” ভ্রূ টান করল আতিফ। ফিসফিস করে নবী বলল, “আমি বালুখালি চৌকি আক্রমণে যাব।“
“কেন? তুই যে বললি, তুই বালুখালি চৌকি আক্রমণে যাবি না। ওতে জুনাইদ মোল্লার স্বার্থ জড়িয়ে আছে। হিতে ভালোর থেকে খারাপই বেশি হবে।“
“হ্যাঁ, তা বলেছিলাম, কিন্তু পরে ভেবে দেখলাম, বালুখালি চৌকি ধ্বংস না করলে, মিয়ানমার সেনার কাছে আমাদের আর জে এফ’এর শক্তির ঝাঁঝ দেওয়া যাবে না। ওদের বুঝিয়ে দিতে হবে যে, আর জে এফ, রাখাইন দখল করেই ছাড়বে। আরে, আর জে এফ তো জুনাইদ মোল্লার বাপের সম্পত্তি নয়? আর জে এফ রোহিঙ্গাদের সংগঠন, রাখাইনকে স্বাধীন করার লক্ষ্যে জীবন বাজি রেখেছে। সুতরাং, আর জে এফ তো আর দোষ করেনি। যিনি দোষ করেছিলেন, বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলেন, তলে তলে কু-ফন্দি এঁটেছিলেন, তাকে তো এ দুনিয়া থেকে আউট করে দিয়েইছি। সুতরাং ওই ষড়যন্ত্রের চ্যাপ্টার এখন বাসি। তা ছাড়া, বালুখালি চৌকির উপর আমার ব্যক্তিগত রাগ জড়িয়ে আছে, সেটা তো তুই ভালো করেই জানিস। যেকোনো মূল্যে এই চৌকিটাকে দুনিয়া থেকে নিশ্চিহ্ন করতেই হবে।“
“শুধু কি তোর একা, আমারও বংশের রক্ত লেগে আছে ওখানে।“
“সুতরাং তোকে একাই, নয়াপাড়া যেতে হবে। আল্লাহ যদি বাঁচিয়ে রাখেন, তবে নিশ্চয় আবার দেখা হবে, ইনশাল্লাহ।“ চায়ের শেষ চুমুকটা দিল নবী। চা’টা পান করার পর শরীরটা বেশ ফুরফুরে লাগছে। আতিফও গ্লাসটায় শেষ চুমুক দিল। চায়ের বিল মিটিয়ে দিয়ে, বেঞ্চ ছাড়ল দুজনে। ট্রাকটার দিকে যেতে যেতে আতিফ বলল, “ট্রাকটার কী করবি?”
“থানচির কাছে লোক অপেক্ষা করছে। ট্রাকটা ওদের হাতে হস্তান্তর করে দেব। তারপর আমরা সাঙ্গু নদী ডিঙিতে করে পেরিয়ে ওপারে অটোরিকশা ধরে চলে যাব বান্দারবান।“

আতিফ একবার ভাবল, জিজ্ঞেস করি, থানচির কাছে যারা ট্রাকটার জন্যে অপেক্ষা করছে, তারা কারা? তাদের পরিচয় কী? আবার পরক্ষণেই ভাবল, কী দরকার অত ঘাঁটাঘাঁটি করার। যেটা চেয়েছিলাম, সেটা হয়েছে, ব্যস, এই ঢের। থপ থপ করে হেঁটে তারা দুজনে ট্রাকটার কাছে এল। চালকের আসনে নবী আর খালাসির আসনে আতিফ। ভুউভুউ করতে করতে একবার জোরে গ-অ করে উঠল ট্রাকটা। এক লাদা কালো ধোঁয়া ছেড়ে গড়াতে শুরু করল গেরুয়া রঙের দশ চাকা মালবাহী গাড়িটা। ধোঁয়ায় আবছা হয়ে উঠল পেছনের নম্বরপ্লেট। বডিতে আঁকা সবুজ রঙের বাংলাদেশের জাতীয় পতাকাটার গায়েও বয়ে যাচ্চে কালো ধোঁয়ার হাওয়া-ঢেউ। ধীরে ধীরে ট্রাকটাকে গিলে খেয়ে নিল, চট্টগ্রাম-বান্দরবান মহাসড়কের ওপর বিছানা পেড়ে শুয়ে থাকা রাতের অন্ধকার। ব্যাকলাইটের লাল আলোটা সূর্য থেকে চাঁদ, চাঁদ থেকে তারা, তারপর তারা থেকে ধীরে ধীরে বিন্দু হয়ে অন্ধকারে মিলিয়ে গেল।

আট
একেবারে কাক ভোরে বিছানা ছাড়ল আতিফ। পাশের ঘরে নবীকে ডাকতে গিয়ে দেখল, সে আগেই ঘুম থেকে উঠে রেডি হয়ে বসে আছে। ফজরের আযান আসন্ন।
“কী রে কখন উঠলি?” চোখ দল্লাতে দল্লাতে জিজ্ঞেস করল আতিফ। তার চোখে তখনও ঘুমের আবেশ লেগে আছে।
“ঘুম থেকে উঠব কী রে! ঘুমই তো আসেনি। মানুষ যদি জেনে যায় যে, তুমি আগামীকাল মরবে, আজ ভালো করে ঘুমিয়ে নাও, তার চোখে ঘুম কি আসবে?”
“নবী!” চোখ পাখির ডিমের মতো থির হয়ে যায় আতিফের।
“হ্যাঁ, আমি ঠিকই তো বলছি। কে আর স্বেচ্ছায় মরতে চায়? যে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করে, সেও গলায় দড়ি দিয়ে যখন ঝুলে পড়ে, তখন বাঁচার জন্যে ছটফট করে। পায়ের নিচে একটা সাপোর্ট পাওয়ার জন্যে ধড়ফড় ধড়ফড় করে তড়পায়।“
আতিফ কিচ্ছু বলে না। নবীর কথাবার্তায় তার চোখমুখ গাবফলের মতো হয়ে উঠছে! অতি ধীরে পা তুলে তুলে নবীর পাশে গিয়ে বসল আতিফ। নবীর পিঠে হাত রাখল। বন্ধুর শরীরের ছোঁয়া পেয়ে নবীর অন্তরটা ডুকরে উঠল। নবী চোখ ছলছল চোখে বলল, “আয়, একবার কোলাকুলি করে নিই। এটাই হয়ত এজীবনের শেষ কোলাকুলি।“ হাউমাউ করে কেঁদে উঠল নবী। আতিফ নবীকে দুহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে ডুকরে উঠল। দুজনের কান্নার স্বর যখন ভোরের ঝুঝকি ভেদ করে চার দেওয়ালে ধাক্কা খেতে লাগল, তখনই দূরের পাহাড়ি গ্রামটা থেকে মুয়াজ্জিনের গলায় ফজরের আজান ভেসে এল। কান্নার স্বরের সঙ্গে আযানের ধ্বনি মিশে ভোরটাকেই যেন কাঁদিয়ে দিচ্ছে। জানালার কাঁচ ঝাপসা। মিহি কুয়াশা পড়ে ভিজে গেছে। আসলে ভোর কাঁদছে। কেঁদেছে রাতের আকাশ। মানুষের কাঁদনে প্রকৃতিও যে কাঁদে। প্রকৃতির চোখেও কষ্টের অশ্রু ছলছল করে। দুজন দুজনকে ধরে ফোঁপাতেই থাকল। প্রথম মাথা তুলল নবী। বলল, “চল, ওজু করে নিই। আযান দিয়ে দিল।“
আতিফ কোনমতেই ছাড়ে না। হুকের মতো দৃঢ়ভাবে জাপটে ধরে থাকে। “ছাড়, ওজু করতে হবে।“ ঝাঁকানি দেয় নবী। আতিফ কথা কান’ই করে না। তার গাল চুইয়ে থুতনি বেয়ে নবীর ঘাড়ে এসে টসটস করে পড়ছে অশ্রু। নবী বুঝতে পারে, আতিফ একেবারে ভেঙে পড়েছে। সে আতিফের পিঠে হাত চাপড়ে শান্তনা দেয়। ভেজা গলায় শান্ত করে বলে, “কী আর করা যাবে বল, আমরা যে মুজাহিদ। আমাদের ভেঙে পড়লে তো হবে না। মৃত্যুই যে আমাদের অলংকার।“
“মৃত্যু ছাড়া কি কোন সমাধানই নেই? মৃত্যু ছাড়া কেন কোনও স্বাধীন দেশ পাওয়া যায় না?” মুখ তোলে আতিফ। তার গাল চুইয়ে পড়ছে অশ্রু।
“’দেশ’ তো দূরের কথা মৃত্যু ছাড়া এক কাঠা জমিও পাওয়া যায় না। এ তুইও জানিস, আমিও জানি। চল চল, এখন আবেগ সংবরণ কর। তোরও লেট হয়ে যাবে। তোকেও তো সূর্য ওঠার আগেই বের হতে হবে।“ বিছানা ছেড়ে উঠে পড়ে নবী। আতিফ হাত দিয়ে চোখের জল মোছে। চোখ মুছতে মুছতে নবীর মাথার বালিশটার দিকে চোখ পড়ে যায় আতিফের। ভেতরটা ‘থক’ করে ওঠে। বালিশটা ভিজে জুবুথুবু। বোঝায় যাচ্ছে, নবী সারারাত কেঁদেছে। কেঁদে কেঁদে সাদা রঙের বালিশটাকে ভিজিয়ে কাদা করে ফেলেছে। তার শরীরের সমস্ত জল ‘অশ্রু’ হয়ে বেরিয়ে গেছে। মানুষের শরীরের জল যখন চোখের জল হয়ে যায়, তখন সে মানুষের হৃদয় ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায়। ভেতরের কলকব্জা ঢিলেঢালা হয়ে পড়ে। মানুষ তখন বাইরে লোহালক্কড় হলেও ভেতরে গলা মোম হয়ে যায়। বাইরে পাথর কঠিন হলেও ভেতরে ঠুনকো কাঁচ হয়ে যায়, যাতে আলতো করে একটু ঠোকা দিলেই মর্মর করে ভেঙে পড়ে। নবীর এখন সেই দশা। বাইরে যতই মুজাহিদ, জেহাদ, ইহকাল পরকাল করুক না কেন, ভেতরে আসলে ওই গলা মোম। পলিমাটির মানুষ। দুজনে ওজু করে, ঘরের আয়তাকার ডাইনিং’এ জায়নামাজ পেতে নামাজে দাঁড়িয়ে গেল। জানালার কপাটে উঁকি দিচ্ছে আশ্বিনের ভোর। গা সিড়সিড় করা ফিনফিনে কুয়াশার আলো-ছায়া। দুই রাকাত ফরজ ও দুই রাকাত সুন্নত নিয়ে মোট চার রাকাতের নামাজ, সালাতুল ফজর। ফরজ নামাজ শেষে একবার মোনাজাত ধরল নবী। আতিফও মোনাজাতের জন্যে আল্লাহর দরবারে হাত তুলল। মোনাজাত ধরে কেঁদে ফেলল নবী। চোখের জল টসটস করে ঝরে পড়তে লাগল হাতের তালুতে। কথা বের হচ্ছে না। শুধু ফুঁপিয়ে যাচ্ছে। আতিফও গুঙিয়ে উঠছে। তারা এমনভাবে কাঁদছে, যেন তাদের কান্না সহ্য করতে না পেরে বাইরের আকাশও কুয়াশা হয়ে কাঁদছে।

নামাজ শেষ হওয়ার পরেও কিছুক্ষণ জায়নামাজের ওপর হাঁটু পেড়ে চোখ বুঁজে বসে থাকল নবী। আতিফ জায়নামাজটা গুটিয়ে কাঠের আলমারিতে রেখে বলল, “আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যেই করেন।“ চোখ খুলল নবী। মিনমিন করে বলল, “আল্লাহ তো আমাদেরকে অন্য কোনো কাজের জন্যেও পৃথিবীতে পাঠাতে পারতেন? এই ‘মারা আর মরা’ কাজ ছাড়া।“ কোমর তুলে হুকের মতো বেঁকে ছাপড়িয়ে জায়নামাজটা গোটাতে গোটাতে আরও বলল, “আল্লাহ যদি সব ভালোর জন্যেই করেন, তবে দুনিয়াই পাপ কাজ কেন হয়? সবকিছুর সঙ্গে আল্লাহকে জড়িয়ে দিলে হবে না। আল্লাহ তো হায়াত-মহুত আর রুজি ছাড়া প্রায় সবই মানুষের হাতে ছেড়ে দিয়েছেন। মরণের ষড়যন্ত্র পাকায়ও মানুষ আবার সে ষড়যন্ত্রের গোড়ায় ধোঁয়াও দেয় মানুষ। ফন্দিফেউর মানুষ করে আর দোষ হয় আল্লাহর। আমরা হয়ত ভুলে যায়, আল্লাহ নিজে কোনো কিছুর দোষ নেবেন না। পৃথিবীর সব ‘কারণ’এর সঙ্গে জড়িয়ে থাকবে হয় প্রকৃতি না হয় মানুষ।“ জায়নামাজটা আলমারিতে রেখে ‘কচ’ করে আলমারির পাল্লাটা লাগিয়ে দিল। গুটি গুটি পায়ে আতিফের দিকে এগিয়ে এল। আতিফের ঘাড়ে হাত রেখে বলল, “আমি তোর জন্যে আল্লাহর কাছে অনেক দোয়া করলাম। তুই যেন তোর আব্বা-মা-ভাইয়েদের খুঁজে পাস। তোর আব্বা যেন সুস্থ থাকেন।“ কাটা গাছের গুঁড়ির মতো ধসমসিয়ে ভেঙে পড়ল আতিফ। নবীকে জড়িয়ে ধরল। হাউমাউ করে ডুকরে উঠল, “আমি আল্লাহর কাছে তোর জন্যে সারারাত কেঁদেছি। তোর ‘মিশন’ যেন সফল হয়। তুই যেন সুস্থ সবল বেঁচে ফিরে আসতে পারিস। আল্লাহ যেন এত তাড়াতাড়ি আমাদের চিরদিনের মতো বিচ্ছিন্ন না করে দেন।“

“জানে বেঁচে ফিরে আসি আর না আসি, আমাদের এই আত্মবলিদান কখনো বিফল হবে না। আমাদের স্বপ্ন সফল হবেই। আমরা স্বাধীন ‘রাখাইন রাষ্ট্র’ পাবই।“ কণ্ঠ ইস্পাতের মতো দঢ় হয়ে ওঠে নবীর। বুকের সিনা ফুলে উঠছে। চোখের জল আগুনের ফুলকিতে বদলে যাচ্ছে। এতক্ষণের ভেজা ভুষভুষে কণ্ঠ কামারশালার হাপরের মতো গনগন করছে। সেই আগুনে ‘জেহাদের’ ঘি পড়ে ছ্যান করে উঠল, “আমার মৃত্যু যেন শয়তান মিয়ানমার সেনাদের ধ্বংসের কারণ হয়ে ওঠে। মায়ানমার সরকারের মাথার ওপর যেন জাহান্নাম নেমে আসে। তাদের দশা যেন ‘বনী ইসরাইল’দের মতো হয়। আল্লাহর গজব নেমে আসে। তাদের বংশ নির্বংশ হয়ে যায়। বংশে প্রদীপ জ্বালানোরও যেন কেউ না থাকে। পৃথিবীর মানচিত্র থেকে যেন এই নরখাদক জাতি চিরতরে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়।“

চলবে...

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৩০

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-২৯

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-২৮

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-২৭

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-২৬

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-২৫

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-২৪

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-২৩

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-২২

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-২১

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-১৯

 

Header Ad
Header Ad

খিলগাঁওয়ের আগুনে পুড়ে ছাই ২০টি দোকান ও দুটি স’মিল

ছবিঃ সংগৃহীত

রাজধানীর খিলগাঁওয়ের তালতলা মার্কেটের পাশের একটি স’মিলে শুক্রবার রাত ৭টা ৩০ মিনিটে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। পরে ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিট ৯টা ৩৫ মিনিটে এই আগুন নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হয়। আগুনে প্রায় ২০টি দোকান ও দুটি স’মিল পুড়ে গেছে।

আগুন নিয়ন্ত্রণের পর ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশনস) লে. কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী সাংবাদিকদের জানান, কেমিক্যাল ড্রাম বিস্ফোরণে স’মিলে লাগা আগুন চারদিক ছড়িয়ে পড়ে।

তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘খিলগাঁওয়ের আগুনে আনুমানিক ২০টি দোকান এবং দুটি স মিল পুড়েছে। আগুনে হয়তো কেমিক্যাল ড্রাম বিস্ফোরিত হয়েছে; যার ফলে আগুন চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। আমাদের নয়টি ইউনিট কাজ করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ঘটনাস্থলে আরো চারটি ইউনিট ছিল, তবে সেগুলোকে কাজ করতে হয়নি।

লে. কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘আগুনে কেউ নিখোঁজ রয়েছে এমন কোনো সংবাদ আমাদের কাছে এখন পর্যন্ত আসেনি। এ ছাড়া আমরা এখন পর্যন্ত আহত ও নিহতের কোনো সংবাদ পাইনি।’

আগুনের উৎসটি কি ছিল প্রাথমিকভাবে জানা গেছে কিনা প্রশ্ন করা হলে ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘এই মুহূর্তে এ বিষয়ে বলা যাবে না তদন্ত ছাড়া। সিগারেটের মাধ্যমে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে নাকি স্যাবোটেজ হয়েছে— এই প্রত্যেকটা বিষয়ে আমাদের তদন্ত করে দেখতে হবে।

অনেকগুলো সোর্স থেকে আগুনের সৃষ্টি হতে পারে। বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকেও আগুনের সূত্রপাত হতে পারে। তাই তদন্ত ছাড়া এ বিষয়ে কিছু বলা যাবে না।’
এদিকে, দুই ঘণ্টা ধরে ফায়ার সার্ভিসের ৯টি ইউনিটের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ডিউটি অফিসার রাশেদ বিন খালিদ জানান, ‘শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে সেখানে আগুন লাগার খবর পাই।

প্রথমে আমাদের দুটি ইউনিট কাজ শুরু করে। পরে আরো সাতটি ইউনিট যোগ দেয়। এরপর রাত ৯টা ৩৫ মিনিটের দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। আগুন লাগার পরে ফায়ার সার্ভিসকে সহযোগিতা করতে ছুটে আসেন সেনাবাহিনী, পুলিশ ও র‍্যাবের সদস্যরা।’

তবে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, স মিল থেকে আগুন গাড়ির গ্যারেজে ছড়িয়ে পড়ে। পরে গ্যারেজে থাকা বিভিন্ন গাড়িতে আগুন লেগে সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়। এ সময় আশপাশের মানুষ ছোটাছুটি করতে থাকে। উৎসুক জনতার ভিড়ে ফায়ার সার্ভিসকে আগুন নিয়ন্ত্রণে বেশ বেগ পেতে হয়।

ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা জানান, ওই এলাকায় একটি গাড়ির গ্যারেজ ও রাবারের কাঁচামালের গোডাউন রয়েছে। কিছু গাড়ি বের করা সম্ভব হলেও অনেক গাড়ি পুড়ে গেছে।

খিলগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. দাউদ হোসেন বলেন, ‘ওই স মিল খিলগাঁও থানার কাছেই। পাশের একটি গাড়ির গ্যারেজেও আগুন ছড়িয়েছে। ক্রাউডের কারণে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের কাজ করতে সমস্যা হচ্ছিল।

 

Header Ad
Header Ad

পদ্মাপাড়ে মুখে স্কচটেপ প্যাঁচানো ব্যবসায়ীর লাশ উদ্ধার  

ব্যবসায়ী আবুল বাসার ওরফে মিন্টু। ছবিঃ সংগৃহীত

রাজশাহী নগরীর পদ্মাপাড়ে মুখে স্কচটেপ প্যাঁচানো একটি লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শুক্রবার বিকালে নগরীর লালন শাহ মুক্তমঞ্চ সংলগ্ন এলাকার কাশবন থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। পুলিশের ধারণা, হত্যা করে কাশবনে ফেলে দেওয়া হয়েছে লাশটি।

নিহত ব্যক্তির নাম আবুল বাসার ওরফে মিন্টু (৩৫)। পেশায় ব্যবসায়ী মিন্টু নগরীর মির্জাপুর পূর্বপাড়া মহল্লার বাসিন্দা। বিনোদপুর বাজারে তার ইলেকট্রিক ব্যবসার দোকান আছে।

নগরীর রাজপাড়া থানার ওসি আশরাফুল ইসলাম জানান, কাশবনে ঘুরতে আসা কয়েকজন লাশটি দেখে পুলিশে খবর দেয়। ঘুরতে আসা অনেকে লাশের ছবিটি সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মগুলোতে শেয়ার করে। জানাজানির পর নিহতের পরিবার ঘটনাস্থলে এসে লাশটি শনাক্ত করে।

আশরাফুল ইসলাম বলেন, বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে মিন্টুর খোঁজ পাচ্ছিল না পরিবার। কাশবনে তার মুখ পলিথিন দিয়ে ঢাকা ছিল। পলিথিনের ওপর স্কচটেপ প্যাঁচানো ছিল।

ওসি আরও বলেন, ‘আলামত দেখে মনে হয়েছে এটি হত্যাকাণ্ড। লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ব্যাপারে হত্যা মামলা হবে।’

Header Ad
Header Ad

সার্ক পুনরুজ্জীবনের প্রশ্নে বাংলাদেশকে যে বার্তা দিলো ভারত

ওমানের মাসকটে অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের বৈঠক। ছবি: সংগৃহীত

সম্প্রতি ওমানের রাজধানী মাস্কাটে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।

শুক্রবার ( ২১ ফেব্রুয়ারি) নয়াদিল্লিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ভারত- বাংলাদেশের মধ্যকার উক্ত বৈঠকের আলোচ্য বিষয়ে কিছু তথ্য তুলে ধরেছেন মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সোয়াল।

তিনি বলেন, মাস্কাটে ওই বৈঠকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা সার্ক পুনরুজ্জীবনের প্রসঙ্গটি তুলেছিলেন। দক্ষিণ এশিয়ার সবাই জানে কোন দেশ ও তার কী ধরনের কর্মকাণ্ড সার্ককে কোণঠাসা করে রেখেছে। তৌহিদ হোসেনকে জয়শঙ্কর এ কথাও বলেছেন, সন্ত্রাসবাদের স্বাভাবিকীকরণ করাটা বাংলাদেশের উচিত নয়।

ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশের কোনো কোনো উপদেষ্টার কিছু কিছু মন্তব্য নিয়েও প্রশ্ন করা হয়। জবাবে রণধীর জয়সোয়াল বলেন, ভারত এসব মন্তব্য নজরে রেখেছে। ওই ধরনের মন্তব্য ও বাংলাদেশের সঙ্গে কাজকর্মে তার প্রভাব–প্রতিক্রিয়ার বিষয়ও ভারতের গোচরে রয়েছে।

তিনি বলেন, এ ধরনের মন্তব্য অবশ্যই সহায়ক নয়। এর প্রতিক্রিয়া কী, তা তাদেরই ভেবে দেখা দরকার।

নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি ও বিএসএফের মহাপরিচালকদের বৈঠক সদ্য শেষ হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বিজিবি মহাপরিচালক এক প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, বাংলাদেশে ৫ আগস্টের পালাবদলের পর সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগগুলো অতিরঞ্জিত, মিডিয়ার সৃষ্টি।

এ প্রসঙ্গে প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হলে জয়সোয়াল বলেন, গত কয়েক মাসে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর কী হয়েছে, সে বিষয়ে সবাই অবগত। সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে ভারতের উদ্বেগ বারবার প্রকাশ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, সম্প্রতি ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকেও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ওই প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন। যুক্তরাষ্ট্রকেও এ বিষয়ে ভারতের উদ্বেগের কথা জানানো হয়েছে।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

খিলগাঁওয়ের আগুনে পুড়ে ছাই ২০টি দোকান ও দুটি স’মিল
পদ্মাপাড়ে মুখে স্কচটেপ প্যাঁচানো ব্যবসায়ীর লাশ উদ্ধার  
সার্ক পুনরুজ্জীবনের প্রশ্নে বাংলাদেশকে যে বার্তা দিলো ভারত
জামায়াতের আমিরকে যানজট মুক্ত করতে গিয়ে প্রাণ দিলেন কর্মী
সুনামগঞ্জের মধ্যনগরে অনির্দিষ্টকালের জন্য ১৪৪ ধারা  
একুশে টিভির জিডি, কর্মচারির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে জামায়াত  
আফ্রিকার রানের চাপে বড় ব্যবধানে হারলো আফগানিস্তান
আগামীকাল দুই বিভাগে বৃষ্টি হতে পারে
অপারেশন ডেভিল হান্ট: ২৪ ঘণ্টায় গ্রেপ্তার ৪৬১
খিলগাঁওয়ে স-মিলে ভয়াবহ আগুন, নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ১০ ইউনিট
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার
পশ্চিম তীরে নতুন করে হামলার নির্দেশ দিলেন নেতানিয়াহু
মেসির অটোগ্রাফ চেয়ে শাস্তি পেলেন রেফারি
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে বেনাপোলে হয়নি দুই বাংলার মিলন মেলা
মাতৃভাষার গুরুত্ব ও ভবিষ্যৎ প্রসঙ্গে যা বললেন ড. ইউনূস
চলন্ত বাসে ডাকাতি ও শ্লীলতাহানি: তিন দিন পর মামলা, আতঙ্কে যাত্রীরা
বিপ্লবের আত্মত্যাগ উন্নত বাংলাদেশের পথে নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে : পররাষ্ট্রসচিব
জাতিসংঘের প্রতিবেদনে ২০২৪ সালে আওয়ামী সরকারের পতনের কারণ উদঘাটন
চ্যাম্পিয়নশিপের দল শেফিল্ডে মাসে ৪০ কোটি টাকা বেতন পাবেন হামজা চৌধুরী
পবিপ্রবিতে আবাসিক হলগুলোর নাম পরিবর্তন, মুছে ফেলা হলো শেখ পরিবারের নাম