সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫ | ১৫ বৈশাখ ১৪৩২
Dhaka Prokash

ধারাবাহিক উপন্যাস: পর্ব-২৪

নেই দেশের নাগরিক

সম্মতিটা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে একেবারে লাফিয়ে পড়ল আবুল। আসলে এত সূক্ষ্ম ফন্দি আবুলের মতো মোটা মাথার লোকের পক্ষে ভাবা সম্ভব নয়। ফন্দিটা ইয়াসিন মাস্টারের বউ নাসরিন বানুর মাথা থেকে আসা। তিনিই আবুলের কানে ফুঁসটা দিয়েছিলেন। নৌকোদুটো আলাদা হয়ে গেল। নৌকোর গা লাগালাগি খোল দুটোও সে কথা বলছে। হাঁড়ির কালির মতো কালো রঙের খোল দুটো যেখানে গা ঠেসে লেগেছিল, সে জায়গাটায় জলের ছাট না লেগে কিছুটা ফ্যাকাসে কালো হয়ে গেছে। ইট দিয়ে ঘাস চাপা দিয়ে রাখলে ঘাসগুলো যেমন ফ্যাকাসে হলুদ হয়ে যায়, এখানেও সে রঙের কিছুটা আভা আছে। দুই নৌকোর দুই খোলে মুখ ভাড় করে জুবুথুবু হয়ে পড়ে আছে গোটানো রশি। রশির গা চুঁইয়ে পড়ছে চোবড়ানো জল। যেন রশি কাঁদছে! হাউমাউ করে কাঁদছে! রশি তো বাঁধনে থাকলেই সে রশি, তা নাহলে তো সে নারকেলের ছোবড়া। বাঁধনে না থাকলে, তার না থাকে জাত, না থাকে ধর্ম। বাঁধন খোলা রশি যেন রুহু ছাড়া শরীর। নড়ে উঠল ভিন্ন হওয়া নৌকোটি। দুই নৌকোর মধ্যবর্তী ফাঁকটা একটু একটু করে সিঁথি হতে হতে ফাড়ি হয়ে উঠছে। আবুল গা ঘামিয়ে ঘুঁত ঘুঁত করে বৈঠা টানছে। তাদের নৌকোর ঠেলা জল নদী হাতড়ে হাতড়ে দূরে ঠেলে দিচ্ছে নুহুদের নৌকোটাকে। ধীরে ধীরে ছোট হয়ে আসছে আবুলদের নৌকো। মতি আচমকা হাঁক দিয়ে উঠল, “আপনারা কোন দিকে যাবেন?”

ভোরের ফিনফিনে হাওয়াই গড়া খেতে খেতে মিহি করে উড়ে এল, “দেখি, কোন দিকে আল্লাহ নিয়ে যায়।“ রহস্য মাখিয়ে কথাটা শূন্যে ভাসিয়ে দিলেন ইয়াসিন মাস্টার। নৌকোটা কিছুটা এগোতেই ছই থেকে বেরিয়ে বাইরের পাটাতনে কেবলই দাঁড়িয়েছেন। গলাকাটা সাদা রঙের সুতির গেঞ্জিটা গায়ে দাঁত কামড়ে লেগে আছে। পৌনে ছ-ফুট চেহারাটা নদীর বুকে আসমান ঠেকে এমনভাবে দাঁড়িয়ে আছে যেন মনে হচ্ছে, একটা সাদা জিন খাড়া হয়ে ভেসে যাচ্ছে! মতির মুখটা আরও ফ্যাকাসে হয়ে গেল। ইয়াসিন মাস্টারের হেঁয়ালিমাখা কথাটা তার ল্যাপ্টো মাটির কোমল হৃদয়টাতে একটা পেটে সূঁচ হাঙল!

“ছাড়ো তো লোকের কথা। অত গা পড়ে মেশার কী আছে? পর পরই হয়।“ গা ঝাড়া দিয়ে উঠল নুহু। বৈঠাকে শক্তিভর পাক মেরে নৌকোটাকে উল্টো দিকে ঘুরিয়ে নিচ্ছে সে। ইয়াসিন মাস্টারদের নৌকোটা পিছনে ঘুরে আবার উচিপুরং’এর দিকে যাচ্ছে। নুহু তাদের নৌকোটাকে সেদিকে না গিয়ে নাক সোজা টান মারল। মতি জিজ্ঞেস করল, “কোন দিকে যাচ্ছিস?”
“মরণের দিকে।“ হেস মারল নুহু। আরিফা চ্যাটাং করে উঠে বলল, “দেওরজি, তুমি হেঁয়ালি করতে পারও বটে! এখন কি হেঁয়ালি করার সময়? তোমার মুখে কি কিছুই আটকায় না!”
“ওর খুব রস জমেছে। থাম, চাল কটা ফুরোক, তখন সব রস বিষ হয়ে যাবে! তখন ওর এই চ্যাটাং চ্যাটাং কথা বলা বেরোবে।“ দাঁত খিটিমিটি করে মতি। দুঃখ আর রাগ, তেল আর বেগুনের মতো মিশে, ছ্যান ছ্যান করে উঠছে। প্রথমে সেভাবে খেয়াল করেনি মতি। একটা ঘোরের মধ্যে ছিল। ইয়াসিন মাস্টারদের সাথে এই ঘণ্টা কয়েকের মিলমিশ তাকে বড় দায়েদি করে তুলেছিল। লোকগুলোকে তার বড্ড ভালো লেগে গেছিল। এত কাছের হয়ে গেছিল যে হুট করে বিচ্ছেদটা মতি মন থেকে মেনে নিতে পারছে না। তার মন বলছে, ওদের নৌকোটা নিশ্চয় ফিরে আসবে। ফিরে এসে আবুল নুহুকে একটা বিড়ি দিয়ে বলবে, নুহুভাই বিড়িটা ধরাও তো, একটা সুখটান দিই। ইয়াসিন মাস্টার বলবেন, জীবনের শেষ কটা ঘণ্টা আর একা থেকে কী করব, তার চেয়ে বরং কুটুম-দায়েদিদের সঙ্গে কাটানোই ভালো। আল্লাহ কষ্ট সহ্য করার সকুন দেবেন। ‘কুটুম’ ‘দায়েদি’ বলাই মতির মনটা খোলামকুচির মতো ড্যাং করে নেচে উঠবে। মনে মনে বলবে, হ্যাঁ, হ্যাঁ, কুটুমই তো, আমরা তো কুটুমই। এক ঘাটে জড় হওয়া সব দেশ ছাড়া মানুষগুলোই একে অপরের কুটুম, দায়েদি, আত্মীয়পরিজন। ইয়াসিন মাস্টারদের নৌকোটা বিন্দুর মতো হয়ে এলে, আচমকা মতির টনক নড়ল, আবারও জিজ্ঞেস করল, “আরে তুই নৌকো কোথায় নিয়ে যাচ্ছিস!”
“কেন? বঙ্গোপসাগরের দিকে। তুমি তো দেখতেই পাচ্ছ!” থুথনি নিচে নামিয়ে কণ্ঠে হাতুড় পিটিয়ে বলল নুহু।
“বঙ্গোপসাগরের দিকে! বঙ্গোপসাগরের দিকে কেন! সমুদ্রে কি ডুবে মরতে যাব নাকি!” চোখ বাটির মতো বড় হয়ে উঠছে মতির। মরতে আর কী বা বাকি আছে! না মরে বেঁচে আছি এই যা। শুধু কয়েকটা শ্বাস নেওয়াই কি বাঁচা? খড়গের মাথায় জানটা কোনোমতে ঝুলে আছে, একে কি আর বাঁচা বলে? বিড়বিড় করে নুহু। মতি তার দিকে চোখ ফেড়ে তাকালে নুহু গড়গড় করে বলল, “শাহপরীর দ্বীপ যাব। শাহপরীর দ্বীপের নাম শোনোনি?”
“হ্যাঁ, শুনেছি, সে তো অনেক দূর!“ ভ্রূ টান করল মতি। তারপর জুলপির কাঁচাপাকা চুলগুলো নাচিয়ে বলল, “তাইই চল। কী আর করা যাবে! কপালে যা আছে হোক।“
দূর! দূর বলে ঘাবড়ে গেলে হবে? শাহপরীর দ্বীপ তাও তো আমাদের জানাশোনা জায়গা। কিন্তু আমাদের ‘দেশ’? সে যে কোন ডাঙা, কোন দ্বীপ তার তো আমরা কিছুই জানি না। আদৌ এ জন্মে আর কোনো ‘দেশ’ পাব কি না সন্দেহ! কথাগুলো নুহুর বিড়বিড়ানি মন থেকে বেরিয়ে বৈঠার গা দিয়ে নদীতে নেমে জলকেলি খেলছে। মতির মনমরা শরীরটা থপথপ করে হেঁটে ছইয়ের দিকে এগিয়ে গেল। তার গা বেয়ে নেমে আসছে বিহেন বেলা। প্রথম ফোটা আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে নৌকোর খোলে। “বুঁ” করে বেজে উঠল মোবাইলটা। একই সঙ্গে ভিমরুলের ডানার মতো কাঁপছে আবার একটা ক্যাঁচরম্যাচর শব্দও ক্যাচম্যাচ করে উঠছে। বোঝাই যাচ্ছে মোবাইলটা ‘ভাইব্রেট উইথ রিং’ মোডে আছে। সকালের শান্ত নদীর ওপরে হলুদরঙা রোদ চুলের বিনুনির মতো নৌকোর পাটাতনের ওপরে ছড়িয়ে পড়ছে। হাঁটু-মাথা করে বসে থাকা ইয়াসিন মাস্টারের ভেতরটা ‘থক’ করে উঠল! কার ফোন! থড়বড় করে মোবাইলটা পকেট থেকে বের করলেন। স্ক্রিনটা ঢলঢলে চোখের সামনে ভাসতেই, ইয়াসিন মাস্টারের চক্ষু ছানাবড়া! তিনি একবার মোবাইলের স্ক্রিনের দিকে তাকাচ্ছেন, একবার দূরে মিলিয়ে যাওয়া মতিদের নৌকোর দিকে তাকাচ্ছেন! ‘আগত’ নম্বরটার প্রত্যেক ডিজিট বারবার চোখ দিয়ে মিলিয়ে নিচ্ছেন। ঠোঁটের পাতাজোড়া ফড়িং’এর ডানার মতো কাঁপছে। থুথনি আরও সরু হয়ে আছে। ঘাড়ের শিরদাঁড়া দিয়ে বয়ে যাচ্ছে একটা ঠান্ডা স্রোত। ‘এ তো সেই নম্বর!’ মনে মনে বলে উঠলেন ইয়াসিন মাস্টার। ছইয়ের ভেতর থেকে ঠিলিতে আটা চিপে বানানো সিমাইয়ের মতো সরু কণ্ঠটা বেরিয়ে এল, “কে ফোন করেছে গ?”
ছেলেটাকে তো গতকাল ফোন করেছিলাম। পুরো একটা রাত কাবার। আর এখন, এত ঘণ্টা পর ফোন ব্যাক করছে! তবে মনে হয়, ছেলেটার মোবাইলে ‘মিসডকল অ্যালারট’ করা আছে। ফোন ‘অন’ করে ‘মিসডকল’ দেখেই, সঙ্গে সঙ্গে কলব্যাক করেছে। কিন্তু এখন আর কল রিসিভ করে কী হবে, ওরা তো অনেক দূরে চলে গেছে। এখন তো আর ডেকে বলা যাবে না, ওগো, মতিভাই, নুহুভাই, তোমাদের ছোটভাই ফোন করছে। গলার আওয়াজ অতদূর পৌঁছবে না। এসব ভাবতে ভাবতে রিংটা কেটে গেল!
“কার ফোন ছিল মাস্টারভাই?” আবুলের মুখ থেকে কথাটা বের হতে না হতেই, আবারও ফোনটা ‘বুঁ’ করে গেয়ে উঠল। ইয়াসিন মাস্টার দুনুমুনু করতে লাগলেন, রিসিভ করব না করব না। বলতে বলতে থতমত করে সবুজ বোতামটায় আঙুলের চাপ পড়ে গেল তার। “হ্যালো, হ্যাঁ, হ্যাঁ, এই নম্বর থেকে মিসডকল গেছিল। না, আমাকে চিনতে পারবেন না। আসলে আপনার ভাই মতি আর নুহু’রা ফোনটা করেছিলেন। ওরা? ওরা কিছুক্ষণ আগেই আমাদের সঙ্গে ছিলেন। এই মিনিট পনের হলো, ওরা অন্য দিকে চলে গেলেন। আমরা? আমরা এখন, নাফ নদীতে নৌকোর ওপর। মতিরা? ওরাও এই নদীর ওপরেই আছেন। ওরা এই নয়াপাড়ার উপকূল থেকে বঙ্গোপসাগরের দিকে চলে গেলেন, আর আমরা উচিপুরং’এর দিকে যাচ্ছি। কে? ওহ, আপনার আব্বা, নাহ, এখনও মারা যাননি, তবে অবস্থা খুউব খারাপ, কখন কী হয়ে যায়, বলা মুশকিল, ধুকধুক করছেন। ওরা? হ্যাঁ, ওরা শাহপরীর দ্বীপের দিকেই যাচ্ছে মনে হয়। হ্যালো, হ্যালো, যাহঃ লাইনটা কেটে গেল!”
ছয়
‘ধুর! ফোনই লাগছে না!” বিরক্ত হয়ে উঠল আতিফ। বার কয়েক চেষ্টা করে নেটওয়ার্কের সমস্যার জন্যে আর ফোনটা লাগাতেই পারল না । “ফোনটা কে ধরেছিল? লোকটা কি তোদের চেনাজানা?” কালো রঙের শার্টের ওপর জলপাই রঙের খাকিটা চড়াতে চড়াতে জিজ্ঞেস করল নবী। আতিফ বারবার চেষ্টা করে একটি বারের জন্যেও ফোনটা না লাগাতে পেরে হতাশ হয়ে নেতানো দড়ির মতো বাদামি রঙের সোফার ওপর গা এলিয়ে দিয়েছে। সোফাটার গায়ে ইতস্তত সবুজ রঙের ঝাউপাতা। মাঝে মধ্যে হলুদ সূর্যমুখী ফুল আঁকানো। একটু দূরে কালো রঙের অ্যান্ড্রয়েড মোবাইলটা মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। আসলে এতবার চেষ্টা করেই বা কী হবে, ইয়াসিন মাস্টারের মোবাইলটা যে চার্জ ফুরিয়ে বন্ধ হয়ে গেছে।
“তোর আব্বারা কোথায় আছে বলছে?” খাকিটার ভেতরে দুই হাত গলিয়ে দিল নবী।
“নাফ নদীতে, নৌকোর ওপর।“
“লোকেশন?”
“নয়াপাড়া ছেড়ে বঙ্গোপসাগরের দিকে যাচ্ছে।“
“তাহলে গন্তব্য হয় শাহপরীর দ্বীপ আর না হয় সেন্টমারটিন্স দ্বীপ।“
“তা ছাড়া তো ওদিকে আর অন্য কোনো দ্বীপ নেই। আচ্ছা, ওরা নয়াপাড়া ক্যাম্প ছেড়ে সমুদ্রের মাঝে শাহপরীর দ্বীপে যাবে কেন? ব্যাপারটা ঠিক বুঝলাম না।”
“কেন, তুই খবর শুনিসনি?”
“কী খবর?”
“বাংলাদেশ সরকার আর নতুন করে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে ঢুকতে দিচ্ছে না।“
“সে তো কুতুপালং আর থাংখালীতে ঢুকতে দিচ্ছে না।“
“এখন সব জায়গাতেই একই অবস্থা। ওরা নাকি আর শরণার্থীদের চাপ নিতে পারছে না। ওদের নাকি নাভিশ্বাস ওঠার দশা। খাদ্যের জোগান দেওয়া নাকি অসম্ভব হয়ে উঠছে।“
“কিন্তু, রাষ্ট্রসংঘ তো সাফ বলে দিয়েছে, কোনো শরণার্থীকেই ফেরানো যাবে না।“
“ওসব কথার কথা। কথার সঙ্গে কাজের বিস্তর ফারাক। রাষ্ট্রসংঘের কথা কান করলেই তো। রাষ্ট্রসংঘ তার বুলি বলে যাচ্ছে, আর এদিকে বিজিবি তার কাজ করে করে যাচ্ছে।“
“তাহলে কি সীমান্ত সব সিল করে দিয়েছে বাংলাদেশ!”
“হ্যাঁ।“ কোমরের বেল্টটা টাইট দিতে দিতে ঘাড় নড়াল নবী। আতিফ আঁতকে উঠল, “সর্বনাশ!” সোফা থেকে তড়বড় করে উঠে বলল, “তাহলে আব্বাদের কী হবে! ওরা তো কোনো ক্যাম্পেই উঠতে পারবে না! না খেতে পেয়ে নদীতে ডুবে মরবে!”
“মাথা ঠান্ডা কর, আতিফ।“ আতিফের পিঠে হাত রাখে নবী। বলে, “ঠান্ডা মাথায় ভেবে কোনো বুদ্ধি বের করতে হবে।“
“কী করা যায় বলতো?” অসহায়ের মতো বলে আতিফ। তার চোখ ছলছল করে আসছে।
“কাজটা তো খুব কঠিন। খুবই দুরহ।“
“যত কঠিনই হোক, পথ খুঁজে বের করতেই হবে।“
“প্রথমে খোঁজ নিতে হবে, নাফ নদীর তীরবর্তী বাংলাদেশের কোনো বর্ডার খোলা রয়েছে কিনা। তারপর……… ।“ নবীকে কথা শেষ করতে না দিয়েই, আতিফ বলল, “বর্ডার খোলা থাক বা না থাক চোরাবর্ডার দিয়ে কাজ হাসিল করতে হবে।“
“সে তো পরের কথা। দরকার হলে সেটাও করতে হবে। সব আগে নদীতে নেমে চাচাদের খুঁজে বের করতে হবে। সেটা চাট্টেখানি কাজ নয়? হাজার হাজার নৌকোর মধ্যে বেছে বেছে তোর আব্বাদের নৌকোটা খুঁজে বের করা মানে, খড়ের গাদায় সূঁচ খোঁজার সামিল।“

চলবে…

আগের পর্বগুলো পড়ুন>>>

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-২৩

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-২২

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-২১

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-১৯

Header Ad
Header Ad

বিএনপির ৩ সংগঠনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা

ছবি: সংগৃহীত

বিএনপির তিন সহযোগী সংগঠন—জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল—আগামী ৯ মে থেকে ২৮ মে পর্যন্ত দেশজুড়ে বিভাগীয় পর্যায়ে সেমিনার ও সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সোমবার (২৮ এপ্রিল) এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কর্মসূচি ঘোষণা করেন যুবদলের সভাপতি আব্দুল মোনায়েম মুন্না।

তিনি জানান, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনায় তিন সংগঠন সম্মিলিতভাবে ১০টি সাংগঠনিক বিভাগকে ৪টি বৃহত্তর অঞ্চলে ভাগ করে এ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। উদ্দেশ্য হলো—তরুণদের ক্ষমতায়ন, রাষ্ট্রীয় নীতিনির্ধারণে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা এবং একটি আধুনিক, মানবিক বাংলাদেশ নির্মাণে তরুণ প্রজন্মের মতামত ও চিন্তা সংগ্রহ করা।

প্রথম দিন: "তারুণ্যের ভবিষ্যৎ ভাবনা, ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ" শীর্ষক সেমিনার।
দ্বিতীয় দিন: "তারুণ্যের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সমাবেশ"।

সেমিনারে তরুণ প্রতিনিধি, শিক্ষার্থী, চিন্তাবিদ ও উদ্যোক্তারা কর্মসংস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, প্রযুক্তি, পরিবেশ ও রাজনৈতিক অধিকারসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করবেন। এ কর্মসূচি বিএনপি ঘোষিত ৩১ দফা রূপরেখা ও তারেক রহমানের রাজনৈতিক দর্শনের আলোকে পরিচালিত হবে।

চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা বিভাগ:
▪ ৯ মে — কর্মসংস্থান ও শিল্পায়ন নিয়ে সেমিনার
▪ ১০ মে — তারুণ্যের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সমাবেশ

খুলনা ও বরিশাল বিভাগ:
▪ ১৬ মে — শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও মৌলিক অধিকার নিয়ে সেমিনার
▪ ১৭ মে — তারুণ্যের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সমাবেশ

রাজশাহী ও রংপুর বিভাগ:
▪ ২৩ মে — কৃষি উন্নয়ন, পরিবেশ রক্ষা ও নাগরিক সমস্যা নিয়ে সেমিনার
▪ ২৪ মে — তারুণ্যের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সমাবেশ

ঢাকা, ফরিদপুর, সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগ:
▪ ২৭ মে — তরুণদের অর্থনৈতিক মুক্তি ও রাজনৈতিক ভাবনা নিয়ে সেমিনার
▪ ২৮ মে — তারুণ্যের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সমাবেশ

মোনায়েম মুন্না বলেন, এই কর্মসূচিগুলোর মাধ্যমে তরুণদের প্রত্যাশা, মতামত ও ভাবনাকে রাজনৈতিক নীতিতে যুক্ত করে একটি জনমুখী, অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্র গঠনের পথ তৈরি করবে বিএনপি।

Header Ad
Header Ad

পাঁচ জেলায় বজ্রপাতে ১১ জনের মৃত্যু

ছবি: সংগৃহীত

দেশের পাঁচটি জেলায় বজ্রপাতে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। রোববার ও সোমবার (২৭ ও ২৮ এপ্রিল) দেশের বিভিন্ন স্থানে এসব মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। কুমিল্লার মুরাদনগর ও বরুড়া উপজেলায় চারজন, কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম ও মিঠামইনে তিনজন, নেত্রকোনার কলমাকান্দা ও মদনে দুজন, সুনামগঞ্জের শাল্লায় একজন এবং চাঁদপুরের কচুয়ায় একজন প্রাণ হারিয়েছেন।

কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার পূর্বধইর পূর্ব ইউনিয়নের কোরবানপুর পূর্বপাড়া এলাকায় ধান কাটতে গিয়ে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বজ্রপাতে দুজন কৃষক নিহত হন। নিহতরা হলেন নিখিল দেবনাথ (৫৮) ও জুয়েল ভূঁইয়া (৩০)।

একই জেলার বরুড়া উপজেলার খোসবাস উত্তর ইউনিয়নের পয়েলগচ্ছ গ্রামে দুপুর ১২টার দিকে ঘুড়ি ওড়ানোর সময় বজ্রপাতে মারা যায় দুই কিশোর—মোহাম্মদ জিহাদ (১৪) ও মো. ফাহাদ (১৩)। এ সময় আবু সুফিয়ান (সাড়ে ৭) নামের একটি শিশু আহত হয় এবং তাকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রামে খয়েরপুর আব্দুল্লাহপুর ইউনিয়নের হাওরে ধান কাটার সময় সকালে বজ্রপাতে প্রাণ হারান দুই কৃষক—ইন্দ্রজিৎ দাস (৩০) ও স্বাধীন মিয়া (১৫)। একই সময়ে মিঠামইন উপজেলার শান্তিগঞ্জ হাওরে ধানের খড় শুকাতে গিয়ে বজ্রপাতে নিহত হন ফুলেছা বেগম (৬৫) নামের এক নারী।

নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের ধনুন্দ গ্রামে রবিবার রাত ১০টার দিকে বজ্রপাতে আহত হয়ে পরে হাসপাতালে মারা যান দিদারুল ইসলাম (২৮)। তিনি একটি ইফতেদায়ি মাদ্রাসার শিক্ষক ছিলেন।
আজ সকাল ৭টার দিকে মদন উপজেলার তিয়োশ্রী গ্রামে মাদ্রাসাগামী শিশু মো. আরাফাত (১০) বজ্রপাতে মারা যায়।

সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার আটগাঁও গ্রামের বুড়িগাঙ্গাল হাওরে গরু চরাতে গিয়ে বজ্রপাতে মারা যান রিমন তালুকদার। তিনি শাল্লা ডিগ্রি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।

চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার নাহারা গ্রামে সকালে বজ্রপাতের বিকট শব্দে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান বিশাখা রানী (৩৫)। তিনি কৃষক হরিপদ সরকারের স্ত্রী। চিকিৎসক জানান, বজ্রপাতের সরাসরি আঘাতের কোনো চিহ্ন ছিল না, শব্দের প্রভাবে তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

 

Header Ad
Header Ad

জামিন পেলেন মডেল মেঘনা আলম

মডেল মেঘনা আলম। ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর ধানমন্ডি থানায় প্রতারণা ও চাঁদাবাজির অভিযোগে দায়ের করা মামলায় জামিন পেয়েছেন মডেল মেঘনা আলম।

সোমবার (২৮ এপ্রিল) ঢাকার অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. ছানাউল্ল্যাহ শুনানি শেষে তার জামিন মঞ্জুরের আদেশ দেন। আদালত সূত্রে জানা গেছে, মামলার অভিযোগপত্র পর্যালোচনা এবং মেঘনা আলমের আইনজীবীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়।

এর আগে গত ১০ এপ্রিল মডেল মেঘনা আলমকে ডিটেনশন আইনে ৩০ দিনের জন্য কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। সেদিন রাত সাড়ে ১০টার দিকে তাকে আটক করে আদালতে হাজির করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এরপর আদালতে তাকে আটক রাখার আবেদন করলে সেটি মঞ্জুর হয়।

মামলার এজাহারে বলা হয়, মেঘনা আলম ও দেওয়ান সমিরসহ অজ্ঞাতনামা আরও ২-৩ জন মিলে একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সক্রিয় সদস্য। এই চক্রটি বিভিন্ন সুন্দরী মেয়েদের ব্যবহার করে বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশি কূটনীতিক ও দেশীয় ধনাঢ্য ব্যবসায়ীদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে অবৈধ সম্পর্ক স্থাপনে উৎসাহিত করত। এরপর এসব সম্পর্কের দুর্বলতা কাজে লাগিয়ে ভিকটিমদের সম্মানহানির ভয় দেখিয়ে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেওয়া হতো।

 

মডেল মেঘনা আলম। ছবি: সংগৃহীত

এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, আসামি দেওয়ান সমির 'কাওয়ালি গ্রুপ' নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সিইও এবং 'সানজানা ইন্টারন্যাশনাল' নামে একটি ম্যানপাওয়ার প্রতিষ্ঠানের মালিক। এর আগে তার 'মিরআই ইন্টারন্যাশনাল ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড' নামের একটি প্রতিষ্ঠান ছিল।

চক্রটি 'ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর' নিয়োগের নামে সুন্দরী ও আকর্ষণীয় মেয়েদের ব্যবহার করে সহজে বিদেশি কূটনীতিক ও ধনাঢ্য ব্যবসায়ীদের কাছে যাতায়াতের সুযোগ তৈরি করত। উদ্দেশ্য ছিল ব্ল্যাকমেইলের মাধ্যমে বড় অঙ্কের চাঁদা আদায় এবং দেওয়ান সমিরের ব্যক্তিগত ব্যবসাকে লাভজনক করা।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

বিএনপির ৩ সংগঠনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা
পাঁচ জেলায় বজ্রপাতে ১১ জনের মৃত্যু
জামিন পেলেন মডেল মেঘনা আলম
জুলাই গণ-অভ্যুত্থান অধিদপ্তর গঠন করলো সরকার
নিরীহ কাউকে মামলা দিয়ে হয়রানি করা যাবে না: আইজিপি
পাকিস্তানে সামরিক হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে ভারত: নিউইয়র্ক টাইমস
ঢাকায় অটোরিকশা ও চার্জিং স্টেশন বন্ধে ডিএনসিসির অভিযান শুরু হতে যাচ্ছে
চাঁদা না দিলে রেলের কমান্ড্যান্টকে বদলির হুমকির অভিযোগ দুই ছাত্র প্রতিনিধির বিরুদ্ধে (ভিডিও)
বলিউডে সেনারা হিরো, বাস্তবে কেন জিরো ভারতীয় বাহিনী!
কুমিল্লায় বজ্রপাতে স্কুলছাত্রসহ নিহত ৪
মে মাসে শেখ হাসিনার বিচার শুরু হচ্ছে: প্রধান উপদেষ্টা
ঢাকাসহ সারাদেশে বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে
সবাই মিলে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করাই লক্ষ্য: আলী রীয়াজ
ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ
কাশ্মীর সীমান্তে ভারত-পাকিস্তানের ফের গোলাগুলি
টস হেরে ফিল্ডিংয়ে বাংলাদেশ, একাদশে ৩ পরিবর্তন
দেশে ফিরেছেন প্রধান উপদেষ্টা
টটেনহামকে উড়িয়ে প্রিমিয়ার লিগের চ্যাম্পিয়ন লিভারপুল
শেখ হাসিনাকে ‘চুপ’ রাখতে পারবেন না মোদি
রেফারির কাছে ক্ষমা চাইলেন মাদ্রিদের ডিফেন্ডার আন্তনিও রুদিগার