বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ | ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
Dhaka Prokash
Header Ad

ধারাবাহিক উপন্যাস: পর্ব-২৪

নেই দেশের নাগরিক

সম্মতিটা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে একেবারে লাফিয়ে পড়ল আবুল। আসলে এত সূক্ষ্ম ফন্দি আবুলের মতো মোটা মাথার লোকের পক্ষে ভাবা সম্ভব নয়। ফন্দিটা ইয়াসিন মাস্টারের বউ নাসরিন বানুর মাথা থেকে আসা। তিনিই আবুলের কানে ফুঁসটা দিয়েছিলেন। নৌকোদুটো আলাদা হয়ে গেল। নৌকোর গা লাগালাগি খোল দুটোও সে কথা বলছে। হাঁড়ির কালির মতো কালো রঙের খোল দুটো যেখানে গা ঠেসে লেগেছিল, সে জায়গাটায় জলের ছাট না লেগে কিছুটা ফ্যাকাসে কালো হয়ে গেছে। ইট দিয়ে ঘাস চাপা দিয়ে রাখলে ঘাসগুলো যেমন ফ্যাকাসে হলুদ হয়ে যায়, এখানেও সে রঙের কিছুটা আভা আছে। দুই নৌকোর দুই খোলে মুখ ভাড় করে জুবুথুবু হয়ে পড়ে আছে গোটানো রশি। রশির গা চুঁইয়ে পড়ছে চোবড়ানো জল। যেন রশি কাঁদছে! হাউমাউ করে কাঁদছে! রশি তো বাঁধনে থাকলেই সে রশি, তা নাহলে তো সে নারকেলের ছোবড়া। বাঁধনে না থাকলে, তার না থাকে জাত, না থাকে ধর্ম। বাঁধন খোলা রশি যেন রুহু ছাড়া শরীর। নড়ে উঠল ভিন্ন হওয়া নৌকোটি। দুই নৌকোর মধ্যবর্তী ফাঁকটা একটু একটু করে সিঁথি হতে হতে ফাড়ি হয়ে উঠছে। আবুল গা ঘামিয়ে ঘুঁত ঘুঁত করে বৈঠা টানছে। তাদের নৌকোর ঠেলা জল নদী হাতড়ে হাতড়ে দূরে ঠেলে দিচ্ছে নুহুদের নৌকোটাকে। ধীরে ধীরে ছোট হয়ে আসছে আবুলদের নৌকো। মতি আচমকা হাঁক দিয়ে উঠল, “আপনারা কোন দিকে যাবেন?”

ভোরের ফিনফিনে হাওয়াই গড়া খেতে খেতে মিহি করে উড়ে এল, “দেখি, কোন দিকে আল্লাহ নিয়ে যায়।“ রহস্য মাখিয়ে কথাটা শূন্যে ভাসিয়ে দিলেন ইয়াসিন মাস্টার। নৌকোটা কিছুটা এগোতেই ছই থেকে বেরিয়ে বাইরের পাটাতনে কেবলই দাঁড়িয়েছেন। গলাকাটা সাদা রঙের সুতির গেঞ্জিটা গায়ে দাঁত কামড়ে লেগে আছে। পৌনে ছ-ফুট চেহারাটা নদীর বুকে আসমান ঠেকে এমনভাবে দাঁড়িয়ে আছে যেন মনে হচ্ছে, একটা সাদা জিন খাড়া হয়ে ভেসে যাচ্ছে! মতির মুখটা আরও ফ্যাকাসে হয়ে গেল। ইয়াসিন মাস্টারের হেঁয়ালিমাখা কথাটা তার ল্যাপ্টো মাটির কোমল হৃদয়টাতে একটা পেটে সূঁচ হাঙল!

“ছাড়ো তো লোকের কথা। অত গা পড়ে মেশার কী আছে? পর পরই হয়।“ গা ঝাড়া দিয়ে উঠল নুহু। বৈঠাকে শক্তিভর পাক মেরে নৌকোটাকে উল্টো দিকে ঘুরিয়ে নিচ্ছে সে। ইয়াসিন মাস্টারদের নৌকোটা পিছনে ঘুরে আবার উচিপুরং’এর দিকে যাচ্ছে। নুহু তাদের নৌকোটাকে সেদিকে না গিয়ে নাক সোজা টান মারল। মতি জিজ্ঞেস করল, “কোন দিকে যাচ্ছিস?”
“মরণের দিকে।“ হেস মারল নুহু। আরিফা চ্যাটাং করে উঠে বলল, “দেওরজি, তুমি হেঁয়ালি করতে পারও বটে! এখন কি হেঁয়ালি করার সময়? তোমার মুখে কি কিছুই আটকায় না!”
“ওর খুব রস জমেছে। থাম, চাল কটা ফুরোক, তখন সব রস বিষ হয়ে যাবে! তখন ওর এই চ্যাটাং চ্যাটাং কথা বলা বেরোবে।“ দাঁত খিটিমিটি করে মতি। দুঃখ আর রাগ, তেল আর বেগুনের মতো মিশে, ছ্যান ছ্যান করে উঠছে। প্রথমে সেভাবে খেয়াল করেনি মতি। একটা ঘোরের মধ্যে ছিল। ইয়াসিন মাস্টারদের সাথে এই ঘণ্টা কয়েকের মিলমিশ তাকে বড় দায়েদি করে তুলেছিল। লোকগুলোকে তার বড্ড ভালো লেগে গেছিল। এত কাছের হয়ে গেছিল যে হুট করে বিচ্ছেদটা মতি মন থেকে মেনে নিতে পারছে না। তার মন বলছে, ওদের নৌকোটা নিশ্চয় ফিরে আসবে। ফিরে এসে আবুল নুহুকে একটা বিড়ি দিয়ে বলবে, নুহুভাই বিড়িটা ধরাও তো, একটা সুখটান দিই। ইয়াসিন মাস্টার বলবেন, জীবনের শেষ কটা ঘণ্টা আর একা থেকে কী করব, তার চেয়ে বরং কুটুম-দায়েদিদের সঙ্গে কাটানোই ভালো। আল্লাহ কষ্ট সহ্য করার সকুন দেবেন। ‘কুটুম’ ‘দায়েদি’ বলাই মতির মনটা খোলামকুচির মতো ড্যাং করে নেচে উঠবে। মনে মনে বলবে, হ্যাঁ, হ্যাঁ, কুটুমই তো, আমরা তো কুটুমই। এক ঘাটে জড় হওয়া সব দেশ ছাড়া মানুষগুলোই একে অপরের কুটুম, দায়েদি, আত্মীয়পরিজন। ইয়াসিন মাস্টারদের নৌকোটা বিন্দুর মতো হয়ে এলে, আচমকা মতির টনক নড়ল, আবারও জিজ্ঞেস করল, “আরে তুই নৌকো কোথায় নিয়ে যাচ্ছিস!”
“কেন? বঙ্গোপসাগরের দিকে। তুমি তো দেখতেই পাচ্ছ!” থুথনি নিচে নামিয়ে কণ্ঠে হাতুড় পিটিয়ে বলল নুহু।
“বঙ্গোপসাগরের দিকে! বঙ্গোপসাগরের দিকে কেন! সমুদ্রে কি ডুবে মরতে যাব নাকি!” চোখ বাটির মতো বড় হয়ে উঠছে মতির। মরতে আর কী বা বাকি আছে! না মরে বেঁচে আছি এই যা। শুধু কয়েকটা শ্বাস নেওয়াই কি বাঁচা? খড়গের মাথায় জানটা কোনোমতে ঝুলে আছে, একে কি আর বাঁচা বলে? বিড়বিড় করে নুহু। মতি তার দিকে চোখ ফেড়ে তাকালে নুহু গড়গড় করে বলল, “শাহপরীর দ্বীপ যাব। শাহপরীর দ্বীপের নাম শোনোনি?”
“হ্যাঁ, শুনেছি, সে তো অনেক দূর!“ ভ্রূ টান করল মতি। তারপর জুলপির কাঁচাপাকা চুলগুলো নাচিয়ে বলল, “তাইই চল। কী আর করা যাবে! কপালে যা আছে হোক।“
দূর! দূর বলে ঘাবড়ে গেলে হবে? শাহপরীর দ্বীপ তাও তো আমাদের জানাশোনা জায়গা। কিন্তু আমাদের ‘দেশ’? সে যে কোন ডাঙা, কোন দ্বীপ তার তো আমরা কিছুই জানি না। আদৌ এ জন্মে আর কোনো ‘দেশ’ পাব কি না সন্দেহ! কথাগুলো নুহুর বিড়বিড়ানি মন থেকে বেরিয়ে বৈঠার গা দিয়ে নদীতে নেমে জলকেলি খেলছে। মতির মনমরা শরীরটা থপথপ করে হেঁটে ছইয়ের দিকে এগিয়ে গেল। তার গা বেয়ে নেমে আসছে বিহেন বেলা। প্রথম ফোটা আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে নৌকোর খোলে। “বুঁ” করে বেজে উঠল মোবাইলটা। একই সঙ্গে ভিমরুলের ডানার মতো কাঁপছে আবার একটা ক্যাঁচরম্যাচর শব্দও ক্যাচম্যাচ করে উঠছে। বোঝাই যাচ্ছে মোবাইলটা ‘ভাইব্রেট উইথ রিং’ মোডে আছে। সকালের শান্ত নদীর ওপরে হলুদরঙা রোদ চুলের বিনুনির মতো নৌকোর পাটাতনের ওপরে ছড়িয়ে পড়ছে। হাঁটু-মাথা করে বসে থাকা ইয়াসিন মাস্টারের ভেতরটা ‘থক’ করে উঠল! কার ফোন! থড়বড় করে মোবাইলটা পকেট থেকে বের করলেন। স্ক্রিনটা ঢলঢলে চোখের সামনে ভাসতেই, ইয়াসিন মাস্টারের চক্ষু ছানাবড়া! তিনি একবার মোবাইলের স্ক্রিনের দিকে তাকাচ্ছেন, একবার দূরে মিলিয়ে যাওয়া মতিদের নৌকোর দিকে তাকাচ্ছেন! ‘আগত’ নম্বরটার প্রত্যেক ডিজিট বারবার চোখ দিয়ে মিলিয়ে নিচ্ছেন। ঠোঁটের পাতাজোড়া ফড়িং’এর ডানার মতো কাঁপছে। থুথনি আরও সরু হয়ে আছে। ঘাড়ের শিরদাঁড়া দিয়ে বয়ে যাচ্ছে একটা ঠান্ডা স্রোত। ‘এ তো সেই নম্বর!’ মনে মনে বলে উঠলেন ইয়াসিন মাস্টার। ছইয়ের ভেতর থেকে ঠিলিতে আটা চিপে বানানো সিমাইয়ের মতো সরু কণ্ঠটা বেরিয়ে এল, “কে ফোন করেছে গ?”
ছেলেটাকে তো গতকাল ফোন করেছিলাম। পুরো একটা রাত কাবার। আর এখন, এত ঘণ্টা পর ফোন ব্যাক করছে! তবে মনে হয়, ছেলেটার মোবাইলে ‘মিসডকল অ্যালারট’ করা আছে। ফোন ‘অন’ করে ‘মিসডকল’ দেখেই, সঙ্গে সঙ্গে কলব্যাক করেছে। কিন্তু এখন আর কল রিসিভ করে কী হবে, ওরা তো অনেক দূরে চলে গেছে। এখন তো আর ডেকে বলা যাবে না, ওগো, মতিভাই, নুহুভাই, তোমাদের ছোটভাই ফোন করছে। গলার আওয়াজ অতদূর পৌঁছবে না। এসব ভাবতে ভাবতে রিংটা কেটে গেল!
“কার ফোন ছিল মাস্টারভাই?” আবুলের মুখ থেকে কথাটা বের হতে না হতেই, আবারও ফোনটা ‘বুঁ’ করে গেয়ে উঠল। ইয়াসিন মাস্টার দুনুমুনু করতে লাগলেন, রিসিভ করব না করব না। বলতে বলতে থতমত করে সবুজ বোতামটায় আঙুলের চাপ পড়ে গেল তার। “হ্যালো, হ্যাঁ, হ্যাঁ, এই নম্বর থেকে মিসডকল গেছিল। না, আমাকে চিনতে পারবেন না। আসলে আপনার ভাই মতি আর নুহু’রা ফোনটা করেছিলেন। ওরা? ওরা কিছুক্ষণ আগেই আমাদের সঙ্গে ছিলেন। এই মিনিট পনের হলো, ওরা অন্য দিকে চলে গেলেন। আমরা? আমরা এখন, নাফ নদীতে নৌকোর ওপর। মতিরা? ওরাও এই নদীর ওপরেই আছেন। ওরা এই নয়াপাড়ার উপকূল থেকে বঙ্গোপসাগরের দিকে চলে গেলেন, আর আমরা উচিপুরং’এর দিকে যাচ্ছি। কে? ওহ, আপনার আব্বা, নাহ, এখনও মারা যাননি, তবে অবস্থা খুউব খারাপ, কখন কী হয়ে যায়, বলা মুশকিল, ধুকধুক করছেন। ওরা? হ্যাঁ, ওরা শাহপরীর দ্বীপের দিকেই যাচ্ছে মনে হয়। হ্যালো, হ্যালো, যাহঃ লাইনটা কেটে গেল!”
ছয়
‘ধুর! ফোনই লাগছে না!” বিরক্ত হয়ে উঠল আতিফ। বার কয়েক চেষ্টা করে নেটওয়ার্কের সমস্যার জন্যে আর ফোনটা লাগাতেই পারল না । “ফোনটা কে ধরেছিল? লোকটা কি তোদের চেনাজানা?” কালো রঙের শার্টের ওপর জলপাই রঙের খাকিটা চড়াতে চড়াতে জিজ্ঞেস করল নবী। আতিফ বারবার চেষ্টা করে একটি বারের জন্যেও ফোনটা না লাগাতে পেরে হতাশ হয়ে নেতানো দড়ির মতো বাদামি রঙের সোফার ওপর গা এলিয়ে দিয়েছে। সোফাটার গায়ে ইতস্তত সবুজ রঙের ঝাউপাতা। মাঝে মধ্যে হলুদ সূর্যমুখী ফুল আঁকানো। একটু দূরে কালো রঙের অ্যান্ড্রয়েড মোবাইলটা মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। আসলে এতবার চেষ্টা করেই বা কী হবে, ইয়াসিন মাস্টারের মোবাইলটা যে চার্জ ফুরিয়ে বন্ধ হয়ে গেছে।
“তোর আব্বারা কোথায় আছে বলছে?” খাকিটার ভেতরে দুই হাত গলিয়ে দিল নবী।
“নাফ নদীতে, নৌকোর ওপর।“
“লোকেশন?”
“নয়াপাড়া ছেড়ে বঙ্গোপসাগরের দিকে যাচ্ছে।“
“তাহলে গন্তব্য হয় শাহপরীর দ্বীপ আর না হয় সেন্টমারটিন্স দ্বীপ।“
“তা ছাড়া তো ওদিকে আর অন্য কোনো দ্বীপ নেই। আচ্ছা, ওরা নয়াপাড়া ক্যাম্প ছেড়ে সমুদ্রের মাঝে শাহপরীর দ্বীপে যাবে কেন? ব্যাপারটা ঠিক বুঝলাম না।”
“কেন, তুই খবর শুনিসনি?”
“কী খবর?”
“বাংলাদেশ সরকার আর নতুন করে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে ঢুকতে দিচ্ছে না।“
“সে তো কুতুপালং আর থাংখালীতে ঢুকতে দিচ্ছে না।“
“এখন সব জায়গাতেই একই অবস্থা। ওরা নাকি আর শরণার্থীদের চাপ নিতে পারছে না। ওদের নাকি নাভিশ্বাস ওঠার দশা। খাদ্যের জোগান দেওয়া নাকি অসম্ভব হয়ে উঠছে।“
“কিন্তু, রাষ্ট্রসংঘ তো সাফ বলে দিয়েছে, কোনো শরণার্থীকেই ফেরানো যাবে না।“
“ওসব কথার কথা। কথার সঙ্গে কাজের বিস্তর ফারাক। রাষ্ট্রসংঘের কথা কান করলেই তো। রাষ্ট্রসংঘ তার বুলি বলে যাচ্ছে, আর এদিকে বিজিবি তার কাজ করে করে যাচ্ছে।“
“তাহলে কি সীমান্ত সব সিল করে দিয়েছে বাংলাদেশ!”
“হ্যাঁ।“ কোমরের বেল্টটা টাইট দিতে দিতে ঘাড় নড়াল নবী। আতিফ আঁতকে উঠল, “সর্বনাশ!” সোফা থেকে তড়বড় করে উঠে বলল, “তাহলে আব্বাদের কী হবে! ওরা তো কোনো ক্যাম্পেই উঠতে পারবে না! না খেতে পেয়ে নদীতে ডুবে মরবে!”
“মাথা ঠান্ডা কর, আতিফ।“ আতিফের পিঠে হাত রাখে নবী। বলে, “ঠান্ডা মাথায় ভেবে কোনো বুদ্ধি বের করতে হবে।“
“কী করা যায় বলতো?” অসহায়ের মতো বলে আতিফ। তার চোখ ছলছল করে আসছে।
“কাজটা তো খুব কঠিন। খুবই দুরহ।“
“যত কঠিনই হোক, পথ খুঁজে বের করতেই হবে।“
“প্রথমে খোঁজ নিতে হবে, নাফ নদীর তীরবর্তী বাংলাদেশের কোনো বর্ডার খোলা রয়েছে কিনা। তারপর……… ।“ নবীকে কথা শেষ করতে না দিয়েই, আতিফ বলল, “বর্ডার খোলা থাক বা না থাক চোরাবর্ডার দিয়ে কাজ হাসিল করতে হবে।“
“সে তো পরের কথা। দরকার হলে সেটাও করতে হবে। সব আগে নদীতে নেমে চাচাদের খুঁজে বের করতে হবে। সেটা চাট্টেখানি কাজ নয়? হাজার হাজার নৌকোর মধ্যে বেছে বেছে তোর আব্বাদের নৌকোটা খুঁজে বের করা মানে, খড়ের গাদায় সূঁচ খোঁজার সামিল।“

চলবে…

আগের পর্বগুলো পড়ুন>>>

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-২৩

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-২২

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-২১

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-১৯

Header Ad

‘দেশের মানুষ এখনো কোনো রাজনৈতিক দলকেই বিশ্বাস করতে পারে না’

ছবি: সংগৃহীত

দেশের জনপ্রিয় নির্মাতা আশফাক নিপুন। কাজের পাশাপাশি সামাজিক মাধ্যমেও বেশ সরব তিনি। কথা বলেন নানা ইস্যু নিয়ে। সেই ধারাবাহিকতায় সরকার পতনের পর অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠনেও বিভিন্ন সময় নিজের আকাঙ্ক্ষা, প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন। পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশ্যেও বিভিন্ন বার্তা দিয়েছেন। এবার এমনি একটি বার্তায় দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি জনগনের আস্থার বিষয়ে আক্ষেপ জানালেন এই নির্মাতা।

বুধবার (২০ নভেম্বর) আশফাক নিপুন তার ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে লেখেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সর্বস্তরের ছাত্র এবং সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছিল, বাসায় বসে বসে দোয়া করেছিল, যার যা সামর্থ্য দিয়ে সহায়তা করেছিল। কারণ, তারা দেখেছিল লড়াইটা আওয়ামী ফ্যাসিস্ট শাসক বনাম সাধারণ ছাত্র-জনতার। এটাও অস্বীকার করার কোনো উপায় নাই যে এই আন্দোলন বেগবান করতে বিরোধী সকল দলের কর্মীদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। তাদের সংগ্রামও গত দেড় দশকের। কিন্তু এটা যদি শুধুমাত্র রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যকার লড়াই হতো তাহলে সাধারণ মানুষ এই লড়াই থেকে দূরে থাকত। সেই প্রমাণ বিগত ১৫ বছরে আছে।

‘দেশের মানুষ এখনো কোনো রাজনৈতিক দলকেই বিশ্বাস করতে পারে না’

কারণ হিসেবে তিনি বলেন, দেশের সাধারণ মানুষ এখনো দেশের কোনো রাজনৈতিক দলকেই পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারে না। এটাই বাস্তবতা। এই বাস্তবতা মেনে সকল রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত কীভাবে সাধারণ জনগণের ভেতর নিজের দলের প্রতি আস্থা তৈরি করা যায় সেই বিষয়ে নিরলস কাজ করা। এই আস্থা ক্ষমতায় গিয়ে অর্জন করা সম্ভব না। কারণ, সাধারণ মানুষ আজীবন এস্টাবলিশমেন্টের বিপক্ষে। এই আস্থা অর্জন করতে হয় ক্ষমতা বলয়ের বাইরে থেকেই।

নিপুন আরও লিখেন, অরাজনৈতিক সরকার দিয়ে দীর্ঘদিন দেশ চালানো যেমন কাজের কথা না ঠিক তেমনি রাজনৈতিক সরকার হতে চাওয়া সকল রাজনৈতিক দলগুলোর বোঝা উচিত মুক্তিযুদ্ধের পরে বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় গণঅভ্যুত্থান সংগঠিত হয়েছে সকল প্রকার পূর্বানুমান (যেমন- বর্ষাকালে আন্দোলন হয় না, নির্বাচনের আগেই কেবল জোরেশোরে আন্দোলন হয়, ঘোষণা দিয়ে বিরোধী সকল পক্ষ আন্দোলনে শামিল না হলে সফল হয় না) অগ্রাহ্য করেই। সেটা সম্ভব হয়েছে সাধারণ মানুষের ন্যায্যতার আকাঙ্ক্ষা থেকেই।

সবশেষ এই নির্মাতা লিখেছেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সাধারণ মানুষের এই আকাঙ্ক্ষার দুই পয়সার দাম দেন নাই। সাধারণ মানুষের এই আকাঙ্ক্ষা, ইচ্ছা আর দেশপ্রেমকে পুঁজি করে অরাজনৈতিক এবং রাজনৈতিক যারাই রাজনীতি রাজনীতি খেলতে চাইবে, তাদের দশাও কোন একসময় যেন পলাতক শেখ হাসিনার মতো না হয়, সেই বিষয় নিশ্চিত করতে হবে তাদেরকেই।

Header Ad

‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সশস্ত্র বাহিনীর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে’: প্রধান উপদেষ্টা

ফাইল ছবি

জুলাই-আগস্টের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সশস্ত্র বাহিনীর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) বিকেলে ঢাকা সেনানিবাসের সেনাকুঞ্জে সশস্ত্র বাহিনী দিবস ২০২৪ উপলক্ষে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, জুলাই-আগস্ট ছাত্র জনতার বিপ্লবের মধ্যে দিয়ে আমরা নতুন বাংলাদেশের সূচনা করেছি। এ নতুন দেশে আমাদের দায়িত্ব সকল মানুষকে এক বৃহত্তর পরিবারের বন্ধনে আবদ্ধ করা। কেউ কারো উপরে না, আবার কেউ কারো নিচেও না, এই ধারণা আমরা আমাদের জাতীয় জীবনে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই।

তিনি বলেন, নতুন বাংলাদেশ গড়ার যে সুযোগ ছাত্র-জনতার সাহস ও আত্মত্যাগের বিনিময়ে সম্প্রতি আমরা অর্জন করেছি, সেটাকে কাজে লাগিয়ে আমাদের সুন্দর ও সমৃদ্ধশালী ভবিষ্যৎ গড়তে হবে। বীর মুক্তিযোদ্ধা, শহিদ, আহত এবং জীবিত ছাত্র-জনতার কাছে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকতে চাই। যে সুযোগ তারা আমাদের দিয়েছে, তার মাধ্যমে আমাদের দেশকে পৃথিবীর সামনে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী দেশে পরিণত করতে আমরা শপথ নিয়েছি।

তিনি আরও বলেন, ছাত্র আন্দোলনে জীবন উৎসর্গ করে যারা দেশ গঠনের সুযোগ করে দিয়েছে জাতি তাদের সারা জীবন শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে।

বক্তব্য শেষে সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন প্রধান উপদেষ্টা। পরে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

Header Ad

নওগাঁ শহরে শৃঙ্খলা ফেরাতে বিশেষ অভিযান শুরু

ছবি: সংগৃহীত

নওগাঁ শহরে যানযট নিরসন ও শৃঙ্খলা ফেরাতে জেলা প্রশাসন, পুলিশ, পৌর কর্তৃপক্ষ ও রিকশা মালিক-শ্রমিকদের যৌথ উদ্যোগে বিশেষ অভিযান শুরু হয়েছে। এতে শহরে শৃঙ্খলা ফিরবে বলে আশাবাদ ব্যাক্ত করেছেন স্থানীয় কর্মকর্তারা।

বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) অভিযানের উদ্বোধন করেন নওগাঁ পৌরসভার প্রশাসক ও স্থানীয় সরকারের উপ পরিচালক টি.এম.এ মমিন। এ সময় নওগাঁ জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট জিয়া উদ্দিন, নওগাঁ পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেন, নওগাঁ জেলা ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক আফজাল হোসেন ও অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।

অভিযান শুরুর পর থেকেই শহরের বরুনকান্দি, মশরপুর, তাজের মোড় ও কালীতলাসহ মোট ৮ টি প্রবেশদ্বারে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। চেক পোষ্টগুলোতে ২ জন পুলিশ সদস্য, ২ জন ছাত্র সমন্বয়ক, ৪ জন রোভার স্কাউট সদস্য ও ২ জন রিকশা মালিক শ্রমিক প্রতিনিধিসহ মোট ১২ জন করে কাজ করছেন।

পৌর প্রশাসক জানান, নওগাঁ শহরে বৈধ যানবাহনের সংখ্যা ৪ হাজার। কিন্তু প্রতিদিন পার্শবতী বিভিন্ন এলাকা থেকে অন্তত ১০ হাজার রিকশা, ব্যাটারী চালিত অটো রিকশা ও ইজিবাইক শহরে প্রবেশ করে। এতে তীব্র যানযট ও জন মানুষের ভোগান্তি তৈরী হয়। এই দূর্ভোগ লাঘোবে জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল আউয়াল ও পুলিশ সুপার কুতুব উদ্দিনের দিক নির্দেশনায় যানবাহন নিয়ন্ত্রনসহ বিশেষ অভিযানের সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়। বৈধ চালকদের চিহ্নিত করতে তাদের মাঝে পরিধেয় বিশেষ ধরনের জ্যাকেট প্রদান করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

নওগাঁর পুলিশ সুপার কুতুব উদ্দিন বলেন, নওগাঁ শহরের যানযট দীর্ঘদিনের সমস্যা। পরিকল্পিত ভাবে এই সমস্যা দূর করতে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগের উদ্যোগে পৌর কর্তৃপক্ষ ও রিকশা মালিক শ্রমিক নেতৃবৃন্দদের সমন্বয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে স্থানীয় বাসিন্দা ও বিভিন্ন ষ্টেক হোল্ডারদের পরামর্শ নিয়ে একটি কর্ম পরিকল্পনা গ্রহক করা হয়েছে।

এ বিষয়ে নওগাঁর জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল আউয়াল বলেন, অভিযান সফল ভাবে বাস্তবায়ন হলে শহরে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। জনগন এর সুফল পাবেন। সকলকে এই কার্যক্রমে সহযোগিতা প্রদানের আহবান জানান তিনি।

Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

‘দেশের মানুষ এখনো কোনো রাজনৈতিক দলকেই বিশ্বাস করতে পারে না’
‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সশস্ত্র বাহিনীর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে’: প্রধান উপদেষ্টা
নওগাঁ শহরে শৃঙ্খলা ফেরাতে বিশেষ অভিযান শুরু
২০২৬ সালের মাঝামাঝিতে নির্বাচন হতে পারে: উপদেষ্টা সাখাওয়াত
সেনাকুঞ্জে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে খালেদা জিয়ার শুভেচ্ছা বিনিময়
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহত ৫ জনকে রোবটিক হাত উপহার
সেনাকুঞ্জের পথে খালেদা জিয়া
সুযোগ পেলে শেখ হাসিনার পক্ষে মামলায় লড়ব: জেড আই খান পান্না
নির্বাচন কমিশন গঠন, সিইসি হলেন অবসরপ্রাপ্ত সচিব নাসির উদ্দীন
ডিএনএ টেস্টের ফলাফল: ভিনিসিয়ুসের পূর্বপুরুষ ছিলেন ক্যামেরুনের
জামিন পেলেন সাংবাদিক শফিক রেহমান
বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে আসা সেই শাহজাহান ওমর গ্রেপ্তার
মিরপুর ও মহাখালীতে অটোরিকশা চালকদের সেনাবাহিনীর ধাওয়া
‘শেখ হাসিনা এখনও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী’, এমন কথা বলেননি ট্রাম্প
লেবাননে ৮ শতাধিক ইসরায়েলি সেনা নিহত
ভারতে সাজাভোগ শেষে দেশে ফিরল ২৪ বাংলাদেশি কিশোর-কিশোরী
ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্টে অবরোধ করে ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের বিক্ষোভ
গাজায় ইসরায়েলের হামলায় আরও ৮৮ ফিলিস্তিনি নিহত
সাবেক এমপি শাহজাহান ওমরের বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর
১২ বছর পর সেনাকুঞ্জে যাচ্ছেন খালেদা জিয়া