বৃহস্পতিবার, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | ২২ মাঘ ১৪৩১
Dhaka Prokash

স্বকৃত নোমান  

লেখকের দায়বদ্ধতা  

একজন লেখক একজন স্রষ্টা। একইসঙ্গে একজন ব্যক্তিও। ব্যক্তিমানুষ ও স্রষ্টামানুষ কি আলাদা? ব্যক্তি মানুষটি যদি চোর, ডাকাত, গুন্ডা, বদমাশ, লম্পট, ধর্ষক হয়, তাতে কি তার সৃষ্টিকে প্রশ্নবিদ্ধ করা যায়? আমি বলি, হ্যাঁ, করা যায়। কিন্তু আপনি বলবেন, না করা যায় না। কারণ ব্যক্তিমানুষ ও স্রষ্টামানুষ সম্পূর্ণ আলাদা। মহাকবি হোমার অন্ধ ছিলেন, সুরগুরু বিঠোফেন বধির ছিলেন, শেক্সপীয়র মদ্যপ ও উচ্ছৃঙ্খল ছিলেন, বাল্মীকি দস্যু ছিলেন, আর কালিদাস ছিলেন মহামূর্খ। তাই বলে তাঁদের সৃষ্টি তো প্রশ্নবিদ্ধ নয়। তাঁদের সৃষ্টিকে তো আমরা খারিজ করে দিতে পারি না। রবীন্দ্রনাথ যেমন বলেছেন, ‘কবিরে পাবে না তাহার জীবনচরিতে।’ কার্ল গুস্তাভ ইয়ুং বলেছেন, ‘শিল্পী-স্বভাবকে পুরোপুরি প্রকাশ পেতে গেলে শিল্পীর নিজের ব্যক্তিস্বভাবকে আগে নির্বাসিত করতে হবে।’ ওদিকে টি.এস.এলিয়টও স্রষ্টার মধ্যে দুজনের অস্তিত্বের কথা বলেছেন, একজন the man who suffers এবং অপরজন the mind which creates. সুতরাং ব্যক্তি মানুষ ও স্রষ্টামানুষ যে সম্পূর্ণ আলাদা―এর পক্ষে মহান মনীষীদের ভারী ভারী সব উক্তি পাওয়া যাচ্ছে। অতএব, আপনার পাল্লা ভারী।

কিন্তু জনাব, বাটখারার পাল্লা একটি হয় না। বাটখারার জন্য দুটি পাল্লা লাগে। আপনার পাল্লাটি ভারী হলেও বিপরীত পাল্লাটি কি শূন্য? মোটেই তা নয়। আপনি নিশ্চয়ই সাহিত্যত্তাকে স্বীকার করেন? করতেই হবে। একটা জায়গায় স্বীকার না করে কিন্তু উপায় নেই। যেমন ধরুন, সাহিত্যতত্ত্ব কবিতাকে কবিতা বলেছে, গল্পকে গল্প বলেছে, উপন্যাসকে উপন্যাস বলেছে। এখন আপনি যদি বলেন, না, কবিতাকে আমি গল্প বলবো, গল্পকে নাটক বলবো, উপন্যাসকে কবিতা বলবো, আর নাটককে অংক বলবো―তাহলে আপনার সঙ্গে তর্ক বৃথা। আপনি শিল্পী নন, নৈরাজ্যবাদী। শিল্পরাজ্যে আপনার প্রবেশ নিষেধ। আপনি নিশ্চয়ই তা নন। সাহিত্যতত্ত্বকে আপনি স্বীকার করেন। আপনি জানেন যে, সাহিত্যের বহু তত্ত্বের মধ্যে মার্কসীয় সাহিত্যত্ত্ব অনেক প্রভাবশালী, অনেক বেশি বিখ্যাত। পৃথিবীর বহু প্রভাবশালী সাহিত্যিক এই তত্ত্বকে মেনেছেন, মানেন।

মার্কসীয় সাহিত্যতত্ত্বে আপনার ব্যক্তিমানুষ ও স্রষ্টামানুষের বিভাজনকে ‘অবস্তুতান্ত্রিক’ বা ‘ভাববাদী’ বলেছে। প্রাচীনকালের রচনাগুলো দেখুন না। যেমন ধর্মগ্রন্থ। ওগুলোকে তো মানব-রচিত বলেই স্বীকার করা হয় না। ওগুলোর উপর দৈবত্ব আরোপ করা হয়। অর্থাৎ এগুলো মানব-রচিত নয়। সেসব রচনায় দুটো সত্তার অস্তিত্বকে স্বীকার করা হচ্ছে। হতেই পারে। প্রাচীনকালে এমন দৈব ঘটনা হামেশাই ঘটতো। কারণ মানুষ তখনো তার চিন্তাকে শৃঙ্খলিত করতে পারেনি, তার ক্ষমতাকে সুসংহত করতে পারেনি, পৃথিবীতে তার অস্তিত্বের জয় ঘোষণা করতে পারেনি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কার্ল গুস্তাভ ইয়ুং বা টি.এস.এলিয়টও কার্ল মার্কস-কথিত সেই অবস্তুতান্ত্রিক বা ভাববাদী বা সেই দৈবযুগের মতবাদের সমর্থক। হতেই পারেন। দোষের কিছু নেই।

কিন্তু পৃথিবীটা এখন বদলে গেছে। এখন অন্ধকবি হোমারের যুগ নয়, এখন বধির বিঠোফেনের যুগ নয়, এখন মদ্যপ ও উচ্ছৃঙ্খল শেক্সপীয়রের যুগ নয়, এখন দস্যু বাল্মীকির যুগ নয়, এখন ‘মহামূর্খ’ কালিদাসের যুগ নয়। তাদের মৃত্যুপরবর্তীকালে পৃথিবীর সমস্ত নদ-নদীর অনেক জল গড়িয়েছে। অনেক নদী শুকিয়ে গেছে। এন্টার্টিকা-হিমালয়ের অনেক বরফ গলে গেছে। অনেক অরণ্য মরুভূমিতে রূপান্তরিত হয়েছে। ঘটে গেছে ফরাসি বিপ্লব, অক্টোবর বিপ্লব, ঘটে গেছে হাইতি, কিউবা, চাইনিজ বিপ্লব। দু-দুটি বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে। হিরোশিমা-নাগাসাকি ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। মানুষ এখন কল্পিত স্বর্গকে পৃথিবীতে নামিয়ে এনেছে, একটি বাটনের মধ্য দিয়ে মানুষ এখন পৃথিবীকে শাসন করছে। একটি বাটনের চাপে গোটা স্থলভাগকে উড়িয়ে দিতে পারে মানুষ। মানুষের বুদ্ধির উৎকর্ষ এখন শিখরকে স্পর্শ করেছে।

পৃথিবীটা এখন পণ্যায়নের পৃথিবী। আপনি যে গল্পটি লিখছেন সেটা একটি পণ্য। আপনি যে কবিতাটি লিখছেন সেটি একটি পণ্য। আপনি যে উপন্যাসটি লিখছেন সেটি একটি পণ্য। আপনার কবিতার, গল্পের, উপন্যাসের বইটি একজন পাঠকও না কিনলে, আপনার বইটি কোনো প্রকাশক প্রকাশ না করলে, আপনি স্বীকার করুন বা না-ই করুন, আমি নিশ্চিত, আপনি লেখালেখি ছেড়ে দেবেন। ছেড়ে দেবেন, কারণ, আপনার মধ্যে হতাশা তৈরি হবে, নিরর্থকতা তৈরি হবে। আপনি কোনো অনুপ্রেরণা পাবেন না। লেখাবাহুল্য, শিল্পসৃষ্টির জন্য অনুপ্রেরণা জরুরি। সেই অনুপ্রেরণা আকাশ থেকে আসে না। রবীন্দ্রনাথের ‘অলৌকিক আনন্দের ভার বিধাতা যাহারে দেন’ এই উক্তিকে অচল ঘোষণা করেছে পণ্যসভ্যতা। অর্থাৎ আপনি একটি পণ্যসভ্যতায় বসবাস করছেন। গায়ের জোরে আপনি এই সভ্যতাকে অস্বীকার করতে পারবেন না।

এই পণ্যায়নের যুগে হোমার, বাল্মীকি আর কালিদাসরা জন্মগ্রহণ করেন না। কারণ এই পণ্যায়নের যুগের চাহিদা আলাদা। সামাজিক সম্পর্ক, শ্রমবিভাগ এবং সাংস্কৃতিক জীবনও আর সেই কালে দাঁড়িয়ে নেই। সমাজের এখন মূল লক্ষণ প্রগতি, অর্থাৎ সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া। অতএব শেষ হয়ে যাওয়া, বিগত হয়ে যাওয়া সামাজিক অবস্থাকে ফিরিয়ে আনা এখন আর সম্ভব নয়। পুরনো সেই মহাকাব্য রচনার যুগ বা এলিজাবেথ-বিক্রমাদিত্যের যুগ বা জীবন আর ফিরে আসবে না। ফিরে আসবে না সেই সময়কার সাহিত্যকর্মও। এখনকার যুগটা সম্পূর্ণই আলাদা। এই আলাদা যুগে প্রত্যেক মানুষই এক বিশেষ সমাজে বাস করে। সেই সমাজ থেকে সে বন্ধনমুক্ত হতে পারে না। কবি, সাহিত্যিক, শিল্পীও বন্ধনমুক্ত হতে পারে না। পেটে একবেলা ভাত না থাকলে এখন আর কলম চলে না। তাই মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় বা নজরুলরা এখন আর জন্মগ্রহণ করেন না।

আপনি যদি এই বাস্তবতাকে অস্বীকার করতে চান, তবে আপনার উদ্দেশে ভি.আই লেনিন বলছেন, ‘হে বুর্জোয়া লেখকগণ! আপনারা যে অবাধ স্বাধীনতার কথা বলেন, তা নিছক ভণ্ডামি মাত্র। যে সমাজে অর্থই শক্তি, যে সমাজে অসংখ্য শ্রমজীবী মানুষ দুঃসহ দারিদ্র্যে কষ্ট সহ্য করেন, আর মুষ্টিমেয় ধনী পরগাছার মতো জীবন-যাপন করে, সে সমাজে সত্য এবং সক্রিয় স্বাধীনতা বলতে কিছু থাকে না।’ সুতরাং এই পণ্যায়নের যুগে আপনি যে ব্যক্তিমানুষ ও স্রষ্টামানুষকে আলাদা করে আপনার পাল্লাটি ভারী করতে চাইলেন, বিপরীত পাল্লার ওজনের কাছে আপনার পাল্লাটি হালকা হয়ে গেল, আপনার পাল্লাটি উপরের দিকে উঠে গেল। অর্থাৎ আপনার পাল্লাটি হালকা, বিপরীত পাল্লাটি ভারী।

আপনি বলতে পারেন, এটি তো মার্কসীয় সাহিত্যতত্ত্ব। আমি এই তত্ত্ব মানি না। তাহলে আপনার তত্ত্বটি কী? ওই অবস্তুতান্ত্রিকতা? ওই ভাববাদীতা? ওই দৈবত্ব? ওই প্রাচীনতা? জনাব, সবিনয়ে আপনাকে বলছি, আপনি গায়ের জোরে বাস্তবকে অস্বীকার করছেন। আপনার চারদিকে যে জাজ্বল্যমান বাস্তব, তা আপনি দেখেও না দেখার ভান করছেন। আপনি কপটতা করছেন। কপটতা দিয়ে শিল্প-সাহিত্য হয় না। শিল্প-সাহিত্যের জন্য সততা আবশ্যক। তবু যদি আপনি গায়ের জোরে অস্বীকার করতে চান, করুন। আপনার সঙ্গে বিতর্কে না যাই। বিতর্কে যাই সেই লোকটির সঙ্গে, যিনি এই পণ্যায়নকে স্বীকার করছেন, নিজেকে মার্কসবাদী বলে দাবি করছেন, আবার একই সঙ্গে ব্যক্তিমানুষ ও স্রষ্টামানুষকে আলাদা করছেন। এই লেখা পড়ার পর, সেই মানুষটি, আশা করছি, হয়ত আর আলাদা করবেন না।

আসলেই কি তাই? আলাদা কি করা যায় না? যায়। কল্যাণরাষ্ট্রে করা যায়। যে রাষ্ট্রে মানুষে মানুষে সমতা এসেছে, জাতি গঠন হয়েছে, সেই কল্যাণ রাষ্ট্রে ব্যক্তিমানুষের দিকে আমাদের নজর না দিলেও চলে। যেমন ধরুন সুইডেন, নেদারল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, লুক্সেমবুর্গ, লিশটেনস্টাইন। এসব রাষ্ট্রকে কল্যাণ রাষ্ট্র বলা যায়। অপরাধীদের অভাবে এসব দেশের কারাগারগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, এটি কল্যাণ রাষ্ট্রের প্রধান লক্ষণ। এসব দেশের একজন কবি-সাহিত্যিক ব্যক্তিজীবনে যদি চোর, ডাকাত, গুন্ডা, বদমাশ, লম্পট, ধর্ষক হন―তার ব্যক্তিজীবনের দিকে আমাদের না তাকলেও চলে। কারণ তার রাষ্ট্রের কোনো সংকট নেই, জাতির কোনো সংকট নেই। তার জাতি ‘কল্যাণ’-এর যে মহাসমুদ্র রচনা করেছে, সেই সমুদ্রে তার সমস্ত অপরাধ সিন্ধুর মাঝে বিন্দুর মতো বিলীন হয়ে যাবে।

কিন্তু বাংলাদেশের মতো রাষ্ট্রে ব্যক্তিমানুষের কি এই অবাধ স্বাধীনতার সুযোগ আছে? অর্থাৎ একজন কবি বা ঔপন্যাসিক বা নাট্যকারের কি সেই সুযোগ আছে? তাকে কি দুই সত্তায় বিভাজন করা যায়? এই রাষ্ট্র তিরিশ লক্ষ শহিদের হাড়-কঙ্কালের উপর দাঁড়িয়ে আছে। এই রাষ্ট্রের নাগরিকরা এখনো তার পরিচয় নিয়ে সংশয়ী। সে বাঙালি না মুসলামান, এখনো এই সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি। অর্থাৎ এখনো জাতিটাকে গঠন করতে পারেনি। এই রাষ্ট্রের অসংখ্য নাগরিক এখনো শত্রæরাষ্ট্র পাকিস্তানকে বন্ধু মনে করে, মুক্তিযুদ্ধকে বলে ‘গণ্ডগোল’। এই রাষ্ট্রের অসংখ্য তরুণ স্বাধীনতা-বিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করে। এই রাষ্ট্রের মুসলমানরা হিন্দুদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়, ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ করে। এই রাষ্ট্রের সংখ্যাগুরু নাগরিকরা ক্ষুদ্রনৃগোষ্ঠী নাগরিকদের মানুষ বলে স্বীকার করতে নারাজ। এই রাষ্ট্রের পরতে পরতে দুর্নীতির মহোৎসব। এই রাষ্ট্রের অসংখ্য প্রাচীনপন্থী নাগরিক শিল্প-সাহিত্যকে ‘অধর্মের কাজ’ বা ‘অকাজ’ বলে গণ্য করে। এমন একটি রাষ্ট্রের একজন কবি বা ঔপন্যাসিকে দুই সত্তায় বিভাজন করা যায় কিনা? এমন একটি রাষ্ট্রে একজন কবি-লেখক ব্যক্তিজীবনে চোর, ডাকাত, গুন্ডা, বদমাশ, লম্পট, ধর্ষক হতে পারেন কিনা? যুদ্ধাপরাধীদের কোনো রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করতে পারেন কিনা? প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীর কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিতে পারেন কিনা?

আপনি বলতে পারেন, কবি-লেখকের কোনো রাষ্ট্র নেই, কোনো দেশ নেই; কবি-লেখক বিশ্বনাগরিক। সুতরাং এই রাষ্ট্রের প্রতি তার দায় না থাকলেও চলে। আপনার উদ্দেশ্যে হোর্হে লুইস বোর্হেস বলছেন, ‘আমি সব ধরনের জাতীয়তাবাদকে ঘৃণা করি, আমি বিশ্বনাগরিক হতে চাই। সমগ্র বিশ্বের নাগরিক এবং আমি আর্হেন্তিনারও একজন ভালো নাগরিক। আর্হেন্তিনীয় প্রজাতন্ত্র পৃথিবীরই একটি অংশ।’

সুতরাং, আপনার সেই কবি-লেখকটিও বিশ্বনাগরিক হতে পারেন, কোনো সমস্যা নেই। শুধু এটুকু মনে রাখলে চলবে, এই গণপ্রজাতন্ত্রের বাংলাদেশ এই বিশ্বেরই অন্তর্ভুক্ত একটি দেশ।

 

লেখক : কথাসাহিত্যিক

 

Header Ad
Header Ad

খুলনায় ছাত্র-জনতার উচ্ছ্বাস, বুলডোজারের আঘাতে মাটিতে মিশে গেল ‘শেখ বাড়ি’

ছবি: সংগৃহীত

খুলনার ময়লাপোতা এলাকায় ‘শেখ বাড়ি’ নামে পরিচিত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণকেন্দ্র আজ (বুধবার) রাতে বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের আহ্বানে বিপুলসংখ্যক ছাত্র-জনতা সেখানে জড়ো হয়ে বাড়িটির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন এবং সিটি করপোরেশনের দুটি বুলডোজার দিয়ে বাড়িটি ভেঙে ফেলার কাজ শুরু করেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আন্দোলনকারীরা শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। এর আগে গত ৪ আগস্ট ‘শেখ বাড়ি’তে প্রথম দফায় আগুন লাগানো হয়। সেদিন বাড়িটি খালি থাকায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। তবে ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের পর আবারও ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালানো হয়। একসময় যেখান থেকে খুলনা অঞ্চলের আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিয়ন্ত্রিত হতো, আজ সেটির অস্তিত্ব ধ্বংসস্তূপে পরিণত হলো।

প্রসঙ্গত, ‘শেখ বাড়ি’ ছিল সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচার মালিকানাধীন। এ বাড়িতে তাঁর চাচাতো ভাই, সাবেক সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দিন, শেখ সোহেল উদ্দিনসহ আরও কয়েকজন পরিবারের সদস্য বসবাস করতেন। তবে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতার পরিপ্রেক্ষিতে এ বাড়ি দীর্ঘদিন ধরে ফাঁকা ছিল।

বুলডোজার চালানোর সময় ছাত্র-জনতার বিপুল উচ্ছ্বাস লক্ষ করা যায়। তাঁদের দাবি, বৈষম্যমূলক রাজনৈতিক শাসনের প্রতীক হয়ে উঠেছিল এই বাড়ি, তাই এটিকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করাই ছিল তাঁদের লক্ষ্য।

Header Ad
Header Ad

ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে ছাত্র-জনতার ঢল, বুলডোজার ছাড়াই গুঁড়িয়ে দেওয়ার ঘোষণা

ছবি: সংগৃহীত

ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে ছাত্র-জনতার ঢল নেমেছে। আজ বুধবার, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখে, সন্ধ্যা ৮টার দিকে রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি জাদুঘরের সামনে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা জড়ো হয়। তারা স্লোগান দিতে দিতে জাদুঘরের গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে এবং ভাঙচুর শুরু করে। বিক্ষোভকারীরা বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালসহ জাদুঘরের বিভিন্ন স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত করে।

নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষণ দেওয়ার ঘোষণার প্রতিবাদে এই বিক্ষোভের আয়োজন করা হয়। বিক্ষোভকারীরা শেখ হাসিনার ভার্চুয়াল ভাষণের বিরোধিতা করে এবং তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দেয়।

বিক্ষোভের আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে 'লং মার্চ টু ধানমন্ডি-৩২' নামে একটি কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়, যেখানে বিক্ষোভকারীরা ধানমন্ডি ৩২ নম্বর বাড়ি বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানায়। তবে, বুলডোজার ছাড়াই তারা নিজ হাতে ভাঙচুর চালায়।

এ ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত থাকলেও বিক্ষোভকারীদের থামাতে ব্যর্থ হয়। বিক্ষোভ ও ভাঙচুরের পর এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।

উল্লেখ্য, ধানমন্ডি ৩২ নম্বর বাড়িটি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি জাদুঘর হিসেবে পরিচিত, যেখানে তিনি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নিহত হওয়ার আগে বসবাস করতেন।

Header Ad
Header Ad

আমরা কী করলাম, সেটি ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বিচার করবে : প্রধান উপদেষ্টা

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: সংগৃহীত

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আমরা কী করলাম বা করলাম না- ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সেটি দিয়ে আমাদের বিচার করবে।

বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে নিজ কার্যালয়ে জনপ্রশাসন ও বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন গ্রহণ অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।

ড. ইউনূস বলেন, দেশের রাজনৈতিক দল ও অংশীজনদের ঐকমত্যে পৌঁছানোর জন্য এসব প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে এবং এর ভিত্তিতেই সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়িত হবে। তিনি আরও বলেন, "এটি জাতির জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ। আমি জাতির পক্ষ থেকে কমিশনের দুই চেয়ারম্যানসহ সকল সদস্যকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।"

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, "এই দুটি প্রতিবেদন দেশের প্রতিটি মানুষের জীবনে প্রভাব ফেলবে। আপনি দরিদ্র, মধ্যবিত্ত বা ধনী যেই হোন না কেন, এই সংস্কারের প্রভাব থেকে কেউই বাদ যাবেন না।"

তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, "কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়িত হলে নাগরিকরা তাদের প্রকৃত অধিকার ফিরে পাবেন। আমরা যেন সত্যিকারের নাগরিক হিসেবে মর্যাদা পাই, সেটিই আমাদের প্রত্যাশা।"

সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন জনগণ, রাজনৈতিক দল ও সিভিল সোসাইটি অর্গানাইজেশনের হাতে তুলে দেওয়া হবে বলে জানান ড. ইউনূস। তিনি বলেন, "যাতে সবাই মনে করতে পারে, এখানে প্রকৃত সত্য বলা হয়েছে, ভুক্তভোগীদের বাস্তব চিত্র উঠে এসেছে। আমাদের তো পণ্ডিত হতে হবে না এটি বোঝার জন্য, কারণ প্রতিদিনই আমরা নানা অবিচারের শিকার হই।"

প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, "সংস্কার কমিশনের কাজ শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, এটি বিশ্বব্যাপী গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। বিশ্বের দরবারে এটি তুলে ধরতে হলে এর ইংরেজি অনুবাদ করা প্রয়োজন।"

কমিশনের সদস্যদের প্রশংসা করে তিনি বলেন, "আপনাদের প্রজ্ঞা, অভিজ্ঞতা ও গবেষণার সংমিশ্রণে এই প্রতিবেদন তৈরি হয়েছে, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে এক স্মরণীয় দলিল হয়ে থাকবে।"

তিনি আরও বলেন, "আমরা কী করলাম বা করলাম না, ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আমাদের সেই কাজের জন্যই বিচার করবে। তারা প্রশ্ন করতে পারে, আপনারা তো পেয়েছিলেন, তাহলে বাস্তবায়ন করেননি কেন? কারণ, সবকিছু তো বইয়ের পাতায় লেখা আছে। এই কাজ জাতির জন্য এক মূল্যবান স্মারক হয়ে থাকবে।"

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

খুলনায় ছাত্র-জনতার উচ্ছ্বাস, বুলডোজারের আঘাতে মাটিতে মিশে গেল ‘শেখ বাড়ি’
ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে ছাত্র-জনতার ঢল, বুলডোজার ছাড়াই গুঁড়িয়ে দেওয়ার ঘোষণা
আমরা কী করলাম, সেটি ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বিচার করবে : প্রধান উপদেষ্টা
হাসিনার বিচারের স্বার্থে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে: তারেক রহমান
মুক্তিপনের প্রতিবাদ করায় ছাত্রদল নেতাকে কুড়াল দিয়ে কোপালেন আ'লীগের কর্মিরা
খুব দ্রুতই জবি ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠিত হবে: ছাত্রদল সভাপতি
বগুড়ায় ৫০ টাকা অফারে টি-শার্ট কিনতে গিয়ে হুলস্থুল কান্ড, নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী
নওগাঁ সীমান্তে বাংলাদেশি যুবককে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ
মোহাম্মদপুরে বিড়াল হত্যার অভিযোগে আদালতে মামলা, তদন্তের নির্দেশ
চুয়াডাঙ্গায় সার কাণ্ডে বিএনপি ও যুবদলের ৫ নেতা বহিষ্কার
আজ বন্ধুর সাথে গোসল করার দিন
২ আলাদা বিভাগসহ দেশকে ৪ প্রদেশে ভাগ করার সুপারিশ
শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা মামলায় হাইকোর্টের রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ৯ আসামিসহ সবাই খালাস
হাসিনার লাইভ প্রচারের আগেই নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের ফেসবুক পেজ উধাও
হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের ওপর বিএনপি নেতাকর্মীদের হামলা
বিচারবিভাগ ও জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন হস্তান্তর
গাজীপুরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সবজিবাহী পিকআপ খাদে, চালকসহ নিহত ৩
নতুন রাজনৈতিক দল গঠনে জনগনের মতামত চাইলো হাসনাত  
এই ফটো তোলোস কেন? আদালত চত্বরে শাহজাহান ওমর  
মনে হচ্ছে বিবিসি বাংলা গণহত্যাকারী শেখ হাসিনার ভক্ত : প্রেস সচিব