শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪ | ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
Dhaka Prokash
Header Ad

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ১১

মোস্তফা রাতেই বলে রেখেছিল এদফু টেম্পল দেখতে যাবার জন্যে বেরোতে হবে সকাল ছয়টায়। রানা ভাইয়ের ধারণা মোস্তফা কিছুটা সময় হাতে রেখেই বলে। কাজেই খুব ভোরে উঠে পড়লেও আমরা নিচের লবিতে এলাম সোয়া ছয়টার দিকে। তখনও দুবাই মরক্কো বাহরাইনের যাত্রীদের দেখা নেই। সাড়ে ছয়টার দিকে সবাই এসে গেলে জলযান ছেড়ে আমরা ডাঙায় নেমে গেলাম। অন্যদিনের মতো কোথাও কোনো গাড়ি অপেক্ষা করে নেই, কিংবা সরাসরি পায়ে হেঁটে মন্দিরে ঢুকে পড়ারও কোনো ব্যবস্থা নেই। তার পরিবর্তে পথের উপরে দাঁড়িয়ে আছে অসংখ্য অশ্বচালিত শকট! সোজা বাংলায় টমটম বা ঘোড়ার গাড়ি।

মিশরে এসে রাজশাহী শহরের প্রধান বাহন দেখে রাজশাহী দুহিতার খুশি হবার কথা! কিন্তু তাঁর মনোভাব বোঝার আগেই মোস্তফার নির্দেশনা অনুসারে আমরা দুজন একটা টাঙ্গায় উঠে বসলাম। তৃতীয় ব্যক্তিটি নিশ্চয়ই রানাভাই হবেন যখন ভাবছি তখনই অপরিচিত আরো একজন আমাদের সাথে এসে জুটলেন এবং মোস্তফার সাথে কিশোর চালকের কী কথপোকথন হলো জানি না, আমাদের অশ্ব শকট একটা আকস্মিক ঝাঁকুনি দিয়ে ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটতে শুরু করলো।

এদফু মন্দিরের পথে

খ্রিস্টপূর্ব ৫৭ অব্দে ক্লিওপেট্রার বাবা দশম টলেমি আউলেটাসের আমলে এদফুর মন্দিরের নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হলেও আমরা দেখতে যাচ্ছি দুই হাজার ঊনআশি বছর পরে। আলেক্সান্ডার দ্য গ্রেট-এর মেসোডেনিয়ান জেনারেল এবং বিশ্বস্ত সঙ্গী প্রথম টলেমি দ্য সেভিয়ার খ্রিস্টপূর্ব ৩০৫ অব্দে নিজেকেই ফারাও প্রথম টলেমি হিসাবে ঘোষণা দিয়ে রাজবংশ প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। ততোদিনে আলেক্সান্ডারের ভবলীলা সাঙ্গ হয়েছে এবং প্রকৃত ফারাও সম্রাটগণ তখন বিলুপ্ত প্রাণী। যিশু খ্রিস্টের জন্মের ৩৪১ বছর আগেই শেষ মিশরীয় ফারাওয়ের রাজত্ব শেষ হলে সূচনা হয়েছিল পারস্য রোমান গ্রিকদের রাজত্ব। এদের মধ্যে মিশরের ইতিহাসে টলেমি রাজবংশ সর্বশেষ এবং দীর্ঘতম শাসক রাজবংশ হিসাবে খ্রিস্টপূর্ব ৩০ অব্দে ক্লিওপেট্রার মৃত্যু পর্যন্ত টিকে গিয়েছিল। এদফুর বর্তমান মন্দিরটি প্রাচীন ফারাওদের বাজপাখির মাথাওয়ালা হোরাসের পুরোনো মন্দিরের জায়গাতেই নির্মিত হয়েছিল বলে মনে করা হয়। দেশ ও জাতির রক্ষাকর্তা হিসাবে প্রাচীন মিশরে দেবতাদের সর্দার হোরাসের গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। সেই কারণে নতুন ফারাও রাজত্বেও তাঁর গুরুত্ব এতটুকু কমেনি। তৃতীয় টলেমির নির্দেশে এদফু মন্দিরের কাজ শুরু হলেও শেষ করতে সময় লেগেছে দেড়শ বছরের বেশি।

নদীর ঘাট থেকে এদফু মন্দিরের দূরত্ব তিন কিলোমিটারের কিছু বেশি। পথের দুপাশ দিয়ে ঘোড়ার পাড়ি চলাচলের বিরাম নেই। ডানদিক দিয়ে যাত্রী বোঝাই এবং বাঁ দিকেরগুলো খালি। খালি টাঙ্গাগুলো নদীর ঘাট থেকে যাত্রী নিয়ে এদফু মন্দির চত্বরে নামিয়ে দিয়েই আবার ছুটছে। এদের ঘোড়ার গাড়ির চাকা চারটি, সামনের দিকের দুটো আকারে ছোট। নগরীর বাহনের মতো এখানকার পথঘাটও চল্লিশ বছর আগের রাজশাহী শহরের মতো। দীর্ঘ জীর্ণ দেয়াল, কিছু বাসভবনে রঙের ছোঁয়া লাগলেও বেশিরভাগই সস্তা চুনকাম করা অথবা পলেস্তারাখসা বসত বাড়ি। পথে কিছু বন্ধ দোকান চোখে পড়ে, দুই একটা কেবল খুলতে শুরু করেছে। একটা বস্তিও কেবল জেগে উঠছে। ঘোড়ার গাড়ির চাকার শব্দ, খুরের খটখট এবং চালকের মুখে ঢাকা বা রাজশাহীর চালকদের মতো সেই একই ধরনের ‘টিক-টক’ শব্দ! নিশ্চয়ই জাতি গোষ্ঠী নির্বিশেষে ঘোড়াদের জন্যে বোধগম্য করেই সহিসদের মুখে এই ভাষা সৃষ্টি হয়েছে।

মন্দিরে ঘোড়াগাড়ি পার্কিং

আমাদের শকট-সঙ্গী, যাকে আমি এতোক্ষণ নেহায়েতই মিশরের কোনো গ্রামাঞ্চল থেকে আসা সাদামাটা আরবি জানা পর্যটক ভাবছিলাম, হঠাৎ করেই তিনি বিশুদ্ধ ইংরেজিতে জানতে চান, ‘হোয়ার আর ইউ ফ্রম স্যার? আই মিন হুইচ কান্ট্রি?’ বললাম, ‘বাংলাদেশ।’ আমি নিশ্চিত ছিলাম, তিনি বাংলাদেশের নাম কখনো শোনেননি। তাই সঙ্গে সঙ্গেই আবার বললাম, ‘হ্যাভ ইউ এভার হার্ড দ্য নেম অফ আওয়ার কান্ট্রি?’ আমাকে অবাক করে দিয়ে তিনি বললেন, ‘ওহ ইয়া। দেয়ার আর লটস অফ পিপল ফ্রম বাংলাদেশ ইন কানাডা?’ ‘সো... ইউ লিভ ইন কানাডা?’ এরপর তিনি তাঁর কানাডাবাসের বিবরণ দিতে শুরু করলেন। বয়সে আমার চেয়েও কিছুটা বড়ো, এলোমেলো পোশাকের ভদ্রলোকের আদি নিবাস মিশরেই। বহু বছর ধরে কানাডা প্রবাসী হলেও প্রতিবছর নভেম্বর ডিসেম্বরে দুতিন মাসের জন্য দেশে আসেন। তার এই ফিরে ফিরে দেশে আসা যতোটা না দেশপ্রেমের জন্য তারচেয়ে বেশি ঠাণ্ডার কারণে। শীত একেবারেই সহ্য করতে পারেন না বলে এ সময় দেশে চলে আসেন। বললেন, স্ত্রী এবং পুত্র কন্যারা আসতে চায় না বলে তিনি একাই ফিরে আসেন, আসবেন যতোদিন বেঁচে আছেন!

বিশাল অভ্যন্তরীণ চত্বর

এদফু মন্দিরের বাইরে যেখানে আমরা ঘোড়ার গাড়ি থেকে নেমে এলাম সেই জায়গাটাকে কী বলবো, পার্কিংজোন, গ্যারেজ নাকি আস্তাবল বুঝতে পারলাম না। দীর্ঘ কয়েকটি সারিতে শতাধিক টাঙ্গার স্থান সংকুলান হতে পারে। সকালে অবশ্য ঘোড়া এবং সহিস করোরই বিশ্রাম নেবার সময় নেই। প্রবেশ পথের বাইরে আমাদের কিছুক্ষণ দাঁড়াতে হলো। দর্শণার্থী ভক্তগণ সমবেত হলেও সম্ভবত মন্দির দ্বার খোলার সময় তখনো হয়নি। করিৎকর্মা মোস্তফা অবশ্য বুকিং কাউন্টার খোলার প্রায় সাথে সাথেই আমাদের প্রবেশ পত্র সংগ্রহ করে নিয়ে এলো এবং অনতি বিলম্বে আমরা তার পদাঙ্ক অনুসরণ করে মন্দিরের বাইরের চত্বরে ঢুকে পড়লাম। কিছুটা হেঁটে মূল মন্দির পর্যন্ত পৌছাবার আগেই কয়েকটি ভগ্নদশা প্রাচীর, ধ্বসে পড়া তোরণ এবং প্রকাণ্ড পাথরের স্তূপ পেরিয়ে এগোতে থাকি। এ সব ভেঙে পড়া প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের নির্মাণ কৌশল এবং স্থাপত্যকলার বিন্যাস দেখে মুগ্ধ হতে হয়। অনেক দেয়ালেই প্রাচীন মিশরের চিত্রকলায় এখনো ফুটে আছে সমকালের সমাজের দৃশ্যাবলী। কিছু দৃশ্য এখনো রঙিন। হায়রোগ্লিফিক লিপিতে কোথাও কোথাও লেখা রয়েছে সেকালের কথা ও কাহিনি। আমাদের ঠিক পেছনে বিশুদ্ধ বঙ্গ ভাষায় উচ্চস্বরে কথপোকথন শুনে ফিরে দেখলাম পশ্চিম বাংলার জনাকয়েক দাদা বৌদি ঠিক আমাদের পেছনেই আছেন।

এদফু মন্দিরের দেয়াল চিত্র

মূল মন্দিরের প্রবেশ পথের বাইরে দুটি বিশাল সুদৃশ্য তোরণের দুপাশে বাজ পাখির রূপ ধারণ করে গ্রানাইট পাথরে নির্মিত দেবতা হোরাস বসে আছেন। গেটের দেয়ালে করা রিলিফের কাজে দশম টলেমি আউলেটাসকে চিত্রিত করা হয়েছে। তিনি তাঁর শত্রুদের আঘাত করছেন আর দেবতা হোরাস তাকিয়ে দেখছেন। সিনিয়ার দাদাদের একজন বলে উঠলেন, ‘দেখেছিস পেঁচার নাকটা কে যেনো ভেঙে দিয়েছে!’ কমবয়েসী দাদা বললেন, ‘ওটা পেঁচা নয় বাজপাখি, দেবতা হোরাস!’

এই নাক-মুখ-মুণ্ডু ভাঙাভাঙির ব্যাপারটা হাজার বছর ধরেই চলছে। তবে নাক ভাঙার পরেও হোরস মহোদয় যে দুই হাজার বছর টিকে আছে, সেই তো অনেক!

স্তম্ভের উপরে অক্ষত সিলিং 

তোরণ পেরিয়ে ভেতরে আমরা একটা বিস্তৃত খোলা চত্বরে ঢুকে পড়ি। তিনদিকে বত্রিশটি স্তম্ভ দিয়ে ঘেরা এই উন্মুক্ত প্রাঙ্গণেই এক সময় ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হতো। কেমন ছিল সেই উপাসনা পদ্ধতি! উঠানের তিন পাশের দেয়ালগুলোতে দেখা যায় হোরাস এবং তাঁর স্ত্রী দেবী হাথোরের রিলিফের কাজ। মূল প্রবেশ পথের বিপরীতে আরো একটি ছোট আকারের পথ দিয়ে ভেতরের হল ঘরে ঢুকে পড়া যায়। ভেতরে পা রাখার পরেই অবাক হয়ে লক্ষ করি মিশরের অন্যসব মন্দিরের ছাদ খুলে পড়লেও দীর্ঘ পিলারের উপরে এখানে সিলিংগুলো অক্ষত অবস্থায় এখনো টিকে আছে। বাইরের হলঘরটির বারোটি স্তম্ভের দুপাশে দুটি লম্বা কক্ষ, যার একটি ছিল ধর্মগ্রন্থের পাণ্ডুলিপি সংরক্ষণের লাইব্রেরি আর অন্যটি ছিল পবিত্র উৎসর্গের জন্য সংরক্ষিত। ভেতরের দিকের তুলনামূলক ছোট কক্ষটি ছিল ধুপধুনা বা ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের সুগন্ধি তৈরির ল্যাবরোটারি। দেবতা হোরাসের উদ্দেশ্যে নিবেদিত নৈবেদ্য উপহার রাখার জন্যেও বরাদ্দ ছিল একটি কক্ষ। এসব নৈবেদ্যের কতোটা পাথরের বাজপাখি আর কতোটা পুরোহিতকূলের ভোগে লেগেছে তা এখন বলা কঠিন। এইসব হলঘর এবং পবিত্র কক্ষগুলোর ভেতর দিয়ে সবশেষে যেখানে পৌঁছালাম সেটিই হচ্ছে এদফু মন্দিরের পবিত্রতম স্থান। ঘষেমেজে পালিশ করা গ্রানাইট পাথরের বেদীতে এখানেই ছিল হোরাসের পবিত্র স্বর্ণমূর্তি।

বাইরের হল পেরিয়ে অভ্যন্তরের কক্ষ আবার কক্ষ পেরিয়ে আরো ভেতরের পবিত্র প্রকোষ্ঠ। এখানে খোলা ছাদ নেই, ফলে অন্ধকার কক্ষের ভেতরে বৈদ্যুতিক আলোর ব্যবস্থা আছে। তারপরেও কালো পাথরের দেয়াল চিত্র খুব ভালো করে দেখা যায় না। পবিত্রতম মন্দিরে ছবি তুলতে মানা নেই, কিন্তু কৃত্রিম আলো জ্বালাতে মানা। আধো অন্ধকারে বাজপাখি দেবতার মন্দির দর্শন শেষ করে আমরা উল্টো পথে ফিরতে শুরু করি। এই সময় দেখা হয়ে গেল কানাডা প্রবাসীর সাথে। প্রায় তাঁর সমবয়েসী এক ভদ্রমহিলার হাত ধরে অন্ধকার মন্দির থেকে বাইরে আলোর চত্বরে বেরিয়ে আসছেন। মিশরীয় কানাডিয়ান আমাদের দেখে একটা মৃদু হাসি দিলেন। দেখলাম তাঁর সঙ্গিনীর বয়স হয়েছে, কিন্তু এক সময় যে তিনি অসাধারণ সুন্দরী ছিলেন তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

হোরাসের পবিত্র কক্ষ

রানা ভাই আমাদের কিছু আগেই বেরিয়ে এসে প্রধান ফটকের সামনে সান্ধ্যকালীন ‘সাইট এ্যান্ড সাউন্ড’ শোর দর্শকদরে জন্যে পেতে রাখা চেয়ারে বসে তাঁর হাতে থাকা ‘ঈজিপ্ট’ বইটির পাতা ওল্টাচ্ছিলেন। অনেকটা সময় হেঁটে একটু ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম বলে আমরাও বসে পড়লে রানা ভাই ইতিহাসের পাতা থেকে কিছুটা উদ্ধৃতি দিলেন।

‘পরিত্যক্ত মন্দিরটি এক সময় নীল নদের পলি এবং মরুভূমি ঝড়ো হাওয়ায় উড়ে আসা বালিতে সম্পূর্ণ দৃষ্টির আড়ালে চলে গিয়েছিল। অষ্টদশ শতকের শেষ দিকে মন্দির তোরণের উপরের অংশ মানুষের চোখে পড়ে। তবে তারও অনেক পরে ফরাসি মিশরবিদ অগাস্ত মেরিয়েট ধুলো মাটি সরিয়ে এদফুর মন্দির বের করে আনার উদ্যোগ নিয়েছিলেন।’

রোমের সম্রাট প্রথম থিওডিয়াসের রাজদকীয় আদেশ জারি করে ৩৯১ খ্রিস্টাব্দে রোমানদের সাম্রাজ্যে খ্রিস্টধর্ম ছাড়া অন্য সকল ধর্মের পূজা-অর্চনা, ভক্তি ভাবনা এবং প্রচার প্রচারণা নিষিদ্ধ ঘোষণা করলে ফারাও আমলের আরো অনেক মন্দিরের মতো এদফুর মন্দিরও অবহেলায় অব্যবহারে জীর্ণ হতে থাকে। ধর্মাবতারদের অতি উৎসাহের ফলে অনেক মূর্তির নাক মুখ ভেঙে বা আঁচড়ে দিয়ে বিকৃত করে ফেলা হয়। দেয়ালের সুদৃশ্য রিলিফের কাজগুও এসব ধর্মান্ধ খ্রিস্টান পুরোহিতদের আক্রমণ থেকে রক্ষা পায়নি। এদফুর হাইপোস্টাইল হলের অভ্যন্তীর ছাদটি কালো রঙের। ধারণা করা হয়, অখ্রিস্টান পৌত্তলিকদের দেব দেবীর সব ধরনের চিহ্ন মুছে ফেলতে মন্দিরের ভেতের আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়েছিল।

এদিক থেকে আফগানিস্তানের মোল্লা এবং রোমান যাজকদের মধ্যে তেমন কোনো পার্থক্য নেই। তবে প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় খ্রিস্টানরা পরবর্তী সময়ে সভ্য হয়ে উঠলেও মুসলমানরা দুই হাজার বছর পরেও সভ্যতার আলোক বঞ্চিতই থেকে গেছে।

মন্দির গেটের সামনে 

প্রত্ন এলাকা থেকে বেরিয়ে যাবার আগে মোস্তফা আমাদের নয়জনকে আবার একত্রিত করে কিছুটা আরবি এবং কিছুটা অ্যারাবিশ ইংরেজিতে একটি সংক্ষিপ্ত ভাষণ দিয়ে দিল। সব কথা শোনা বা বোঝার দরকার মনে হলো না, তবে শেষে সে অভ্যাস মতো জোরে একটা হাঁক দিয়ে বললো, ‘তামাম!’ ছোটবেলায় পড়া আরব্য রজনী বা বাদশাহী গল্পের বইয়ের শেষে লেখা থাকতো ‘তামাম শোধ’, যার অর্থ সম্ভবত সমাপ্ত। এখানে মোস্তফার ‘তামাম’ অর্থ ইংরেজিতে ‘ওকে’ অথবা বাংলায় ‘ঠিক আছে?’ ধরনের কিছু একটা হবে। বুঝলাম এদফুর মন্দির দর্শন শেষ, এখন যে যার টাঙ্গায় উঠে ফিরে যেতে হবে জাহাজে।

বাইরে বেরিয়ে দেখলাম অসংখ্য অশ্বশকটে পরিপূর্ণ পার্কিং এলাকা থেকে নিজেদের ঘোড়ার গাড়ি খুঁজে বের করাই কঠিন। সহিসদের চিৎকার চেঁচামেচি, ফেরিওয়ালাদের হাঁক ডাক, চলমান টাঙ্গার খটখট এবং গাইডদের দিক নির্দেশনার মতো হুলস্থুলের ভেতরেও মোস্তফা ঠিকই আমাদের গাড়ি খুঁজে বের করে তুলে দিল। এখন অপেক্ষা শুধু কানাডিয়ান ভদ্রলোকের জন্য! দেখা গেল কিছু দূরে তিনি সেই সাবেক সুন্দরীকে বেশ সাবধনাতার সাথে একটি টাঙ্গায় তুলে দিচ্ছেন। এরপর তাঁর উদ্দেশ্যে সম্ভবত কিছু সাবধান বাণী উচ্চারণ করে তিনি আমাদের গাড়িতে এসে উঠলেন। কে জানে, তিনি হয়তো কানাডার শৈত্য প্রবাহের কারণে নয়, তাঁর বোন, বান্ধবী কিংবা প্রাক্তন প্রেমিকার ঊষ্ণতার কারণেই ফিরে ফিরে মিশরে আসেন।

চলবে...

এসএ/

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ১০

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ৯

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ৮

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ৭

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ৬

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ৫

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ৪

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ৩

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ২

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ১

 

Header Ad

খালেদা জিয়ার সঙ্গে কুশল বিনিময় করলেন মাহফুজ-আসিফ-নাহিদ

ছবি: সংগৃহীত

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে কুশল বিনিময় করেছেন উপদেষ্টা মাহফুজ আলম, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম।

বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) বিকেলে সেনাকুঞ্জে সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানে তাদের এ কুশল বিনিময় হয়।

সেনাকুঞ্জে খালেদা জিয়া পৌঁছালে উপস্থিত সবাই তাকে স্বাগত জানান। অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৩ সমন্বয়ক ও সরকারের উপদেষ্টা তার পাশে এসে দাঁড়ান এবং শারীরিক খোঁজখবর নেন। এ সময় খালেদা জিয়া তাদের অভিনন্দন জানান এবং দেশকে এগিয়ে নিতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার পরামর্শ দেন।

এ সময় এই ৩ উপদেষ্টা বিএনপি চেয়ারপারসনের কাছে দোয়া চান এবং সরকারের সংস্কার কাজে তার সর্বাত্মক সহযোগিতা চান।

এদিকে সেনাকুঞ্জে গেলে খালেদা জিয়ার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের স্ত্রী খালেদা জিয়া এখানে এসেছেন। একযুগ তিনি আসার সুযোগ পাননি। আমরা গর্বিত এই সুযোগ দিতে পেরে। দীর্ঘদিনের অসুস্থতা সত্ত্বেও বিশেষ দিনে সবার সঙ্গে শরিক হওয়ার জন্য আপনাকে আবারও ধন্যবাদ। আপনার আশু রোগমুক্তি কামনা করছি।

Header Ad

দেশের বাজারে আবারও বাড়ল স্বর্ণের দাম

ছবি: সংগৃহীত

আবারও স্বর্ণের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)। এবার ভরিতে ১ হাজার ৯৯৪ টাকা বাড়িয়ে ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ১ লাখ ৩৯ হাজার ৪৪৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা আজকেও ছিল এক লাখ ৩৭ হাজার ৪৪৯ টাকা।

বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) সন্ধ্যায় এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে বাজুস। শুক্রবার (২২ নভেম্বর) থেকেই নতুন এ দাম কার্যকর হবে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, স্থানীয় বাজারে তেজাবি স্বর্ণের (পিওর গোল্ড) মূল্য বেড়েছে। ফলে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় স্বর্ণের নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।

নতুন দাম অনুযায়ী, প্রতি ভরি ২২ ক্যারেটের স্বর্ণের দাম পড়বে ১ লাখ ৩৯ হাজার ৪৪৩ টাকা। এ ছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ৩৩ হাজার ৯৮ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ১৪ হাজার ৮৬ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ৯৩ হাজার ৬৭৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বাজুস আরও জানায়, স্বর্ণের বিক্রয়মূল্যের সঙ্গে আবশ্যিকভাবে সরকার-নির্ধারিত ৫ শতাংশ ভ্যাট ও বাজুস-নির্ধারিত ন্যূনতম মজুরি ৬ শতাংশ যুক্ত করতে হবে। তবে গয়নার ডিজাইন ও মানভেদে মজুরির তারতম্য হতে পারে।

স্বর্ণের দাম কমানো হলেও দেশের বাজারে অপরিবর্তিত রয়েছে রুপার দাম। দেশে ২২ ক্যারেটের এক ভরি রুপা বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৫৭৮ টাকায়। এ ছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি ২ হাজার ৪৪৯ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি ২ হাজার ১১১ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি রুপা বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫৮৬ টাকায়।

এর আগে, সবশেষ গত ১৯ নভেম্বর দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম সমন্বয় করেছিল বাজুস। সে সময় টানা চার দফা কমার পর ভরিতে ২ হাজার ৯৪০ টাকা বাড়িয়ে ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ১ লাখ ৩৭ হাজার ৪৪৯ টাকা নির্ধারণ করেছিল সংগঠনটি।

এ ছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ৩১ হাজার ১৯৭ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ১২ হাজার ৪৫৩ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ৯২ হাজার ২৮৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। যা কার্যকর হয়েছে গত ২০ নভেম্বর থেকে।

এ নিয়ে চলতি বছরে এখন পর্যন্ত দেশের বাজারে ৫১ বার স্বর্ণের দাম সমন্বয় করা হয়েছে। যেখানে ৩০ বার দাম বাড়ানো হয়েছে, আর কমানো হয়েছে ২১ বার।

Header Ad

‘দেশের মানুষ এখনো কোনো রাজনৈতিক দলকেই বিশ্বাস করতে পারে না’

ছবি: সংগৃহীত

দেশের জনপ্রিয় নির্মাতা আশফাক নিপুন। কাজের পাশাপাশি সামাজিক মাধ্যমেও বেশ সরব তিনি। কথা বলেন নানা ইস্যু নিয়ে। সেই ধারাবাহিকতায় সরকার পতনের পর অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠনেও বিভিন্ন সময় নিজের আকাঙ্ক্ষা, প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন। পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশ্যেও বিভিন্ন বার্তা দিয়েছেন। এবার এমনি একটি বার্তায় দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি জনগনের আস্থার বিষয়ে আক্ষেপ জানালেন এই নির্মাতা।

বুধবার (২০ নভেম্বর) আশফাক নিপুন তার ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে লেখেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সর্বস্তরের ছাত্র এবং সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছিল, বাসায় বসে বসে দোয়া করেছিল, যার যা সামর্থ্য দিয়ে সহায়তা করেছিল। কারণ, তারা দেখেছিল লড়াইটা আওয়ামী ফ্যাসিস্ট শাসক বনাম সাধারণ ছাত্র-জনতার। এটাও অস্বীকার করার কোনো উপায় নাই যে এই আন্দোলন বেগবান করতে বিরোধী সকল দলের কর্মীদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। তাদের সংগ্রামও গত দেড় দশকের। কিন্তু এটা যদি শুধুমাত্র রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যকার লড়াই হতো তাহলে সাধারণ মানুষ এই লড়াই থেকে দূরে থাকত। সেই প্রমাণ বিগত ১৫ বছরে আছে।

‘দেশের মানুষ এখনো কোনো রাজনৈতিক দলকেই বিশ্বাস করতে পারে না’

কারণ হিসেবে তিনি বলেন, দেশের সাধারণ মানুষ এখনো দেশের কোনো রাজনৈতিক দলকেই পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারে না। এটাই বাস্তবতা। এই বাস্তবতা মেনে সকল রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত কীভাবে সাধারণ জনগণের ভেতর নিজের দলের প্রতি আস্থা তৈরি করা যায় সেই বিষয়ে নিরলস কাজ করা। এই আস্থা ক্ষমতায় গিয়ে অর্জন করা সম্ভব না। কারণ, সাধারণ মানুষ আজীবন এস্টাবলিশমেন্টের বিপক্ষে। এই আস্থা অর্জন করতে হয় ক্ষমতা বলয়ের বাইরে থেকেই।

নিপুন আরও লিখেন, অরাজনৈতিক সরকার দিয়ে দীর্ঘদিন দেশ চালানো যেমন কাজের কথা না ঠিক তেমনি রাজনৈতিক সরকার হতে চাওয়া সকল রাজনৈতিক দলগুলোর বোঝা উচিত মুক্তিযুদ্ধের পরে বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় গণঅভ্যুত্থান সংগঠিত হয়েছে সকল প্রকার পূর্বানুমান (যেমন- বর্ষাকালে আন্দোলন হয় না, নির্বাচনের আগেই কেবল জোরেশোরে আন্দোলন হয়, ঘোষণা দিয়ে বিরোধী সকল পক্ষ আন্দোলনে শামিল না হলে সফল হয় না) অগ্রাহ্য করেই। সেটা সম্ভব হয়েছে সাধারণ মানুষের ন্যায্যতার আকাঙ্ক্ষা থেকেই।

সবশেষ এই নির্মাতা লিখেছেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সাধারণ মানুষের এই আকাঙ্ক্ষার দুই পয়সার দাম দেন নাই। সাধারণ মানুষের এই আকাঙ্ক্ষা, ইচ্ছা আর দেশপ্রেমকে পুঁজি করে অরাজনৈতিক এবং রাজনৈতিক যারাই রাজনীতি রাজনীতি খেলতে চাইবে, তাদের দশাও কোন একসময় যেন পলাতক শেখ হাসিনার মতো না হয়, সেই বিষয় নিশ্চিত করতে হবে তাদেরকেই।

Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

খালেদা জিয়ার সঙ্গে কুশল বিনিময় করলেন মাহফুজ-আসিফ-নাহিদ
দেশের বাজারে আবারও বাড়ল স্বর্ণের দাম
‘দেশের মানুষ এখনো কোনো রাজনৈতিক দলকেই বিশ্বাস করতে পারে না’
‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সশস্ত্র বাহিনীর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে’: প্রধান উপদেষ্টা
নওগাঁ শহরে শৃঙ্খলা ফেরাতে বিশেষ অভিযান শুরু
২০২৬ সালের মাঝামাঝিতে নির্বাচন হতে পারে: উপদেষ্টা সাখাওয়াত
সেনাকুঞ্জে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে খালেদা জিয়ার শুভেচ্ছা বিনিময়
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহত ৫ জনকে রোবটিক হাত উপহার
সেনাকুঞ্জের পথে খালেদা জিয়া
সুযোগ পেলে শেখ হাসিনার পক্ষে মামলায় লড়ব: জেড আই খান পান্না
নির্বাচন কমিশন গঠন, সিইসি হলেন অবসরপ্রাপ্ত সচিব নাসির উদ্দীন
ডিএনএ টেস্টের ফলাফল: ভিনিসিয়ুসের পূর্বপুরুষ ছিলেন ক্যামেরুনের
জামিন পেলেন সাংবাদিক শফিক রেহমান
বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে আসা সেই শাহজাহান ওমর গ্রেপ্তার
মিরপুর ও মহাখালীতে অটোরিকশা চালকদের সেনাবাহিনীর ধাওয়া
‘শেখ হাসিনা এখনও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী’, এমন কথা বলেননি ট্রাম্প
লেবাননে ৮ শতাধিক ইসরায়েলি সেনা নিহত
ভারতে সাজাভোগ শেষে দেশে ফিরল ২৪ বাংলাদেশি কিশোর-কিশোরী
ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্টে অবরোধ করে ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের বিক্ষোভ
গাজায় ইসরায়েলের হামলায় আরও ৮৮ ফিলিস্তিনি নিহত