আহমেদ বাসার
একগুচ্ছ কবিতা
সিদ্ধিসূত্র
আমি তো ধোঁয়া, আকাশমঞ্জিলগামী
আমাকে চাঁদমারি করে ছুঁড়ছো বিষতির
উৎস খুঁজে খুঁজে নিয়নের আলো হাতে
দেশলাই মুখে গুঁজে দিচ্ছো আঁধার
সলতে উসকে দিয়ে যারা অগ্নিকুণ্ডে
নিয়ত জাগিয়ে রাখে দাউ দাউ শিখা
তাদের কাঁধে বন্দুক রেখে আমাকেই
করছো নিশানা
মুকুটকামী হে মূর্তমান তীরন্দাজ
অভিজ্ঞতার বীজগণিতে পারদর্শী হতে হতে
জেনেছো জাগতিক সিদ্ধিসূত্রাবলি
রতিদক্ষ তোমার ধনুক কোনোদিন যদি
বিদ্ধ করে মেঘের শরীর, মুহ্যমান বৃষ্টির জলে
নিভতে পারে জাগতিক চুল্লি, অথচ বহু আগে তুমি
ফুঁ দিয়েই নেভাতে পারতে!
অহমপাহাড়
নিজের চোখে আঙুল ঠেকিয়ে যারা প্রবল
লাল সূর্যকে অস্বীকারে মত্ত, তাদের জন্য
অনাগত রাতের উদরে জমছে বরফ
প্রকট সূর্যের ওমে যখন গলে পড়বে
অহমপাহাড়, হিমবাহ হতে আততায়ী নদী
জনন জনম মাড়িয়ে খোঁড়াতে খোঁড়াতে
চলে যাবে প্রবীণ কাকের আধিপত্যময়
এক ঈগলের পৃথিবীতে
তখন নদী শুকায়, উদ্ধত শিকারির দল
ধনুকের ছিলায় টঙ্কার তুলে অঘোরে লাফায়
সূর্যকে নিশানা করে ছুঁড়তে থাকে তির
বিরাট সূর্য মুচকি হেসে একবার মাটির দিকে তাকায়
আর উদ্ধতদের ভষ্ম ওড়ে জাগতিক হাওয়ায়!
এই জন্মের আঁতুড়ঘরে
আলোহীন বন্ধ্যাবনে মুক বধির বহুদিন
আমাকে ফোটাও রুদ্ধ গর্ভ হতে ফুল
জন্মের কান্নায় ভেজে অমলিন মৃত্যুকাঁথা
একবার জন্মালে উপড়ে নেবো জীবনের অন্তঃমূল
নিষিক্ত পরাগে বাজে বর্ণিল গতজন্মের দ্বিধা
কোন নদী কবে শুকিয়েছে খরায় পড়ে না মনে
তুষারে ঢাকা বরফে আগুন জ্বলেছিলো বিভায়
লবণে সজল মিশেছিলো জল সঙ্গোপনে
এই জন্মের আঁতুড়ঘরে ডেকেছে ডাহুক
রাত্রি পাহাড় ডিঙিয়ে কবে জাগবে সকাল
প্রতীক্ষারা জীবনে শুকায় দারুণ খরায়
সুপ্তজীবন ডিঙিয়ে জাগো ঋদ্ধ ফুলে
পাতার আড়াল!
ধুলোর মুখোমুখি
নুয়ে পড়া মাথা তুলে একবার তাকাই, আবার
নতমুখে পড়ে থাকি ধুলোর মুখোমুখি
পিঠের ওপর মেদবহুল এক জাগতিক ব্যাঙ
লাফাচ্ছে নিয়ত, যতদূর হাত পাতি উঠে আসে
রক্ত আর ঘামের আরক, ছড়ানো-ছিটানো চেতনার
স্মারক হয়ে মাছিরা খুঁজে ফেরে জন্মক্ষত
যতবার হাঁটু মুড়ে বাড়িয়েছি পা, পড়েছি
ততবার শূন্যতার অনন্ত কুয়ায়
উবু হয়ে কতকাল শুকে যাবো মাটির সুবাস
হামাগুড়ি দিতে দিতে জেগে ওঠে আগুনের বন
তুলোওড়া যত মৎস্যীনী ভোর ধূলোয় লুটায়
প্রার্থিত ফুলের দেশ শৃঙ্খলিত কাঁটার কারায়।