বৃহস্পতিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | ১৪ ফাল্গুন ১৪৩১
Dhaka Prokash

শানজানা আলম

কাজলা দিদির গল্প

‘আম টুকাইয়া আমারে আইনা দিও, আমচূড় দিব, বুঝছো?’

আমাদের চারজনের দলের উদ্দেশ্যে কথাটা বলল সোনা আপু। ১৯৯৩ কি ৯৪ সাল হবে, আমাদের বয়স তিন চার বছরের আশেপাশে। থাকি আব্বুর কলেজ কোয়ার্টারে।

সোনা আপুর আব্বা কলেজের প্রফেসর। আমাদের আব্বারাও সবাই প্রভাষক।

আমরা সারাদিন আমগাছ, জামগাছের নিচে ঘোরাঘুরি করি, পাকা জাম পেলে গিলে ফেলি। আম টুকিয়ে জমা করি। সুযোগ পেলে মেখে খাই। সে সুযোগ কমই আসে, আমাদের হাতে ছুড়ি, বটি দেওয়া হয় না। তাই সোনা আপুর কাছে গিয়েছি, আম কেটে দিবে।

আম কেটে, শুকিয়ে সর্ষে তেলে রেখে আমচূড় হয়, আমাদের দুয়েক টুকরো বের করে দেয়। আমরা চাবাই আর গল্প শুনি।
সোনাআপু সেবারে সম্ভবত ডিগ্রি থার্ড ইয়ারে ভর্তি হয়েছেন, খুব ভালো মনে নেই। তার ভক্ত আমরা বাচ্চাদের দল। মুড়ির মোয়া কি নারকেলের ফোপড়া কাটা হলেই আমাদের ডাক পড়ে। একটা কাঁচের বয়ামে গুড়ে শুকনো বরই ভেজানো। চিপে গুড় বের করে আমাদের মুখে একে একে পুড়ে দেয় সোনা আপু।

বাসার সামনে একটা কাঁঠাল চাপার গাছ। গাছের ফুল কাঁচা অবস্থায় সবুজ থাকে, পাকলে হলুদ হয়ে যায়। সে গাছে একটা ডাম্বেল শেপের ফলও ধরে। সোনা আপু বলল, ‘এই ফল খাইলে পাগল হয়া যায় বুঝলা!’
আমরা মাথা নাড়ি, এই ফল খাওয়া যাবে না কিছুতেই। শুধু হলুদ ফুল পারতে ইচ্ছে করে।

দুপুরে মিষ্টি রোদে বসে আমাদের গল্প শোনায় সোনা আপু। একেক দিন একেক গল্প!
“পুকুর ধারে লেবুর তলে,
থোকায় থোকায় জোনাক জ্বলে,
ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না, একলা জেগে রই,
মাগো আমার কোলের কাছে কাজলা দিদি কই?”

‘কাজলা দিদি কে ছিল, জানো?’ -আমাদের প্রশ্ন করে সোনা আপু।
‘একটা বাচ্চা মেয়ের একজন দিদি ছিল, সে গল্প শুনাইতো।
শোলক বলে ঘুম পড়াইয়ে দিতো, তারপর দিদি একদিন মইরা গেল। তার মা ছোটো মেয়ের কাছে বললেন না কাজলা দিদি নাই, আর ফিরা আসবে না।’

আমাদের মন খারাপ হয়। কাজলা দিদি কেন মরে গেল!
আহা, মেয়েটার দুঃখে আমাদের চোখে পানি চলে আসে।
‘এই, আজকে এইটুকই, কালকে আলি বাবা আর চল্লিশ চোরের গল্প শোনাব। দুপুরে আইসো।’

আমরা বাসায় ফিরে যাই। সকাল হতেই তাড়াহুড়ো করে চলে আসি সোনাআপুর বাসায়। সোনা আপু সবে প্লেটে আলুভর্তা ভাত নিয়েছে, আমাদের দেখে বিরক্ত হয় না।
হেসে বলে, ‘আইসা পড়ছো? ভালো হইছে, বাড়ি থিকা চাইলতা আসছে। খাবানি সবাই মিলে। বসো।’

সোনা আপুর মা বিরক্ত হয়ে বলেন, ‘এই সোনা, তোর পড়াশোনা নাই, এই পোলাপানদের নিয়া এত সময় বইসা থাকিস।’
সোনা আপু হাসে। ভাত খাওয়া শেষ করে একটা দাঁ নিয়ে বসে চালতা কাটতে বসে।
‘এ্যাই, একটু লবন আর মরিচ গুড়া নিয়ে আয় তো!’
লবন মরিচ গুড়া চলে আসে, সর্ষে তেল দিয়ে মসলা মাখিয়ে আমরা চালতা চাবাই, দাত টক করে ফেলি।
দুপুরে কোনোরকমে নাকে মুখে ভাত দিয়েই এক দৌড়ে সোনা আপুর বাসায়। আজকে আলিবাবা আর চল্লিশ চোরের গল্প হবে।
সোনা আপু দীর্ঘ সময় নিয়ে হীরা-জহরত বোঝাই গুহার মন্ত্র শোনায়, চিচিং ফাঁক!
আমাদের চোখের সামনে যেন সোনা-রূপায় ঝলমল করে ওঠে সেই ডাকাতের আস্তানা।
মর্জিনার বুদ্ধিতে আমরা চমৎকৃত হই।
বেলা শেষ হয়, সাথে গল্পও শেষ হয়।
সেই সব রাতগুলোতে লোডশেডিং হতো। কোয়ার্টারের সবাই বাসার বাইরে নেমে আসত, নিম গাছের মাথায় জোনাকি পোকা থোকা বেঁধে থাকত।

আমরা আবার গুটিশুটি হয়ে সোনা আপুর আসেপাশে।
তখন জমে ভূতের হল্প। ছাড়া বাড়ির ভূত, বাঁশ ঝাড়ের ভূত, কবরখানার ভূত সবাই আমাদের ঘিরে ধরে। গা ঘেঁষাঘেষি করে আমরা গল্প শুনি। ভয়ে শিরদাঁড়া কেঁপে ওঠে, রাতে ঘুমাই কাঁথা মুড়ি দিয়ে।

দুদিন পরে শুরু হয় আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপের গল্প।
আহা, এমন চেরাগ যদি আমরা পেতাম! তখনো আলিফ লায়লায় এসব দেখায়নি। আমরা গল্প জেনে গিয়েছি বা শুনে ফেলেছি।
সিনবাদের গল্প শুরু হওয়ার কথা যেদিন, সোনা আপুর জ্বর আসে। আমরা গেলাম পরে আপু বলল, ‘আজ গল্প শোনাতে পারব না রে, শরীরটা ভালো নেই। সুস্থ হয়ে গল্প শোনাব।’

একদিন যায়, দু দিন যায়, সোনা আপুর জ্বর কমে না। সেই সাথে গায়ের ভেতর ব্যাথা, যা খায় সব বমি হয়ে যাচ্ছে।
বাগেরহাট খুলনায় ডাক্তার দেখিয়ে ফেরত আসে কিন্তু অসুখ আর কমে না। আমরা যাই, সোনা আপু শুকিয়ে অর্ধেক হয়ে গেছে। আমাদের মুখও কালো থাকে।

‘এই, তোমরা খেলতে যাও, সোনা অসুস্থ।’
সোনা আপুর বড় ভাই আমাদের খেলতে যেতে বলে, ‘খেলতে ভালো লাগে না। সোনা আপু কবে সুস্থ হবে, কবে আমরা গল্প শুনব!’

কিছুদিন পরে সোনা আপুকে ঢাকায় নিয়ে ডাক্তার দেখানো হলো। ফিরে আসার পরে আমাদের মায়েরা নিজেরা বলাবলি করে, আর বাঁচবে না, মাসখানেক আয়ু বেঁধে দিয়েছে নাকি ডাক্তার। ধুর, আয়ু বাঁধা যায় নাকি, আমরা বিশ্বাস করি না। তবে ওই বাসায় আমাদের যাওয়া বারণ হয়ে যায়। ওখানে অসুখ, জীবাণু। আমাদের দূরে থাকাই ভালো!

সব কিছু কেমন অন্ধকার লাগে, কারও মুখে হাসি নেই। সোনা আপুর একটা কঠিন অসুখ হয়েছে, নাম ক্যান্সার। যার হয়, সে আর বাঁচে না। বড়দের বলাবলিতে আমরাও জেনে যাই, তবে কাউকে বলা যাবে না। নিজেরাও বলি না। চুপচাপ থাকি।

এক মাস শেষ হতে অল্প কিছু দিন বাকি আছে, সোনা আপুকে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হবে। আমরা গেলাম কারও নিষেধ না শুনেই। সোনা আপুদের বাসার সামনে একটা লাল রঙের সোফা ছিল। আমরা সেখানে বসে গল্প শুনতাম। তার একটা সিঙ্গেল চেয়ারে আপুকে বসিয়ে তিন চারজন মিলে ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, আমরা ভীড় ঠেলে পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। আপু প্যাকাটির মত হয়ে গেছে, চোখের পাশে ময়লা জমে আছে, মুখেও কিছু লেগে আছে, ওষুধ বোধহয়।

আমাদের দেখে হাসার চেষ্টা করে বলল, ‘আমি সুস্থ হয়ে এসে সিনবাদের গল্প শোনাব। দোয়া কইরো।’
আমরা ঘাড় নেড়ে সায় দিই।

সোনা আপু কথা রাখতে পারেনি। এক মাস শেষ হওয়ার আগেই একদিন কলেজের প্রিন্সিপাল কাকার বাড়িতে ল্যান্ডফোনে খবর এলো, সোনা আপু আর নেই।

সে কাজলা দিদি হয়ে গেছে। আমাদের কাজলা দিদি, যে আরব্য রজনী অসমাপ্ত রেখেই অনন্ত মহাশূন্যে পাড়ি জমিয়েছে।
সেই সাতাশ বছর আগের কথা, আজও চোখ ঝপসা হয়ে আসে।

 

Header Ad
Header Ad

‘টাকা-পয়সা-গয়না কেড়ে নেওয়াতে দুঃখ পাইনি, কিন্তু ধর্ষণের মিথ্যা খবর প্রচারে আমি ভেঙে পড়েছি’

ছবি: সংগৃহীত

টাঙ্গাইলের বড়াইগ্রামে চলন্ত বাসে ডাকাতির ঘটনায় গণমাধ্যমে প্রকাশিত ধর্ষণের সংবাদ সম্পূর্ণ মিথ্যা দাবি করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগী নারী। তিনি বলেছেন, তাঁর সঙ্গে এ ব্যাপারে কেউ কথা বলেননি, অথচ তার নামে ভিত্তিহীন খবর ছড়ানো হয়েছে। এই গুজব তাঁকে সামাজিকভাবে হেয় করেছে এবং মানসিকভাবে ভেঙে দিয়েছে।

গতকাল বুধবার ভুক্তভোগী নারী বলেন, ‘আমার টাকা-পয়সা–গয়না কেড়ে নেওয়াতে দুঃখ পাইনি, কিন্তু ধর্ষণের মিথ্যা খবর প্রচারে আমি ভেঙে পড়েছি। আমার সমাজের কাছে মুখ দেখানো কঠিন হয়ে গেছে। আমার শ্বশুরবাড়ির লোকজন আমাকে সন্দেহের চোখে দেখছে। এমন পরিস্থিতিতে আমি কীভাবে সমাজে টিকে থাকব?’

ওই নারী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তাঁর স্বামী দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। তিনি সড়ক দুর্ঘটনায় পা ভেঙে শয্যাশায়ী, অথচ মিডিয়ায় বলা হয়েছে, বাস ডাকাতির সময় তাঁর স্বামী সঙ্গে ছিলেন এবং তাঁকে মারধর করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘বাস্তবে আমার স্বামী এক বছর ধরে বিছানায় পড়ে আছে। অথচ মিডিয়ায় মিথ্যা তথ্য প্রচার করা হচ্ছে। এটা কি ন্যায়সঙ্গত?’

নিজের জীবনসংগ্রামের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, স্বামী অসুস্থ থাকায় সংসারের খরচ চালাতে গান করেন ও কীর্তন করেন। বড় বোনের স্বামীও লিভার ক্যানসারে মারা গেছেন, তাই পরিবার চালানোর জন্য তাঁর গানই একমাত্র সম্বল। তিনি বলেন, ‘আমরা গরিব হতে পারি, কিন্তু আমাদের সম্মানটাই সবচেয়ে বড়। এখন যদি সেটাই না থাকে, তাহলে বেঁচে থাকার আর কী মানে থাকে?’

১৭ ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইলের বড়াইগ্রামে চলন্ত বাসে ডাকাতির ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ওই নারী জানান, ডাকাতেরা বাসে উঠে সকল যাত্রীর টাকা-পয়সা ও গয়না ছিনিয়ে নেয়। তাঁর হাতে থাকা সিটি গোল্ডের চুড়ি ছিনিয়ে নেওয়ার সময় তিনি চিৎকার করেন ও কান্নাকাটি করেন। কিন্তু গণমাধ্যম এই ঘটনাকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

তিনি স্পষ্ট করে বলেন, ‘আমার জানা মতে, কেউ ধর্ষণের শিকার হয়নি। মেয়েদের ওপর নির্যাতন হয়েছে, তল্লাশি করা হয়েছে, কিন্তু ধর্ষণ হয়নি। অথচ মিডিয়ায় মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এখন সবাই বলছে, মিডিয়ায় এসেছে মানে কিছু তো ঘটেছে! কিন্তু আমার কথার কি কোনো মূল্য নেই? যারা আমার সঙ্গে বাসে ছিল, তারা তো জানে আসল ঘটনা। তবুও সবাই মিডিয়ার মিথ্যা খবরকেই সত্য বলে ধরে নিচ্ছে!’

সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘একজন নারীর সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটেছে কি না, তা যাচাই না করে বিভ্রান্তিকর সংবাদ প্রচার করবেন না। আগে সত্যিটা জেনে নিন। মিডিয়ার উচিত নারীর সম্মানহানিকর ভুল তথ্য প্রচার না করা।’

এই বিভ্রান্তিকর সংবাদের কারণে ওই নারী চরম মানসিক বিপর্যয়ের মধ্যে রয়েছেন। তিনি চান, সমাজ তাঁকে ভুল না বোঝে এবং সবাই তাঁর পাশে দাঁড়ায়।

Header Ad
Header Ad

বৈষম্যবিরোধীদের নতুন দল ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি’, নেতৃত্বে যারা

বৈষম্যবিরোধীদের নতুন দল ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি’। ছবি কোলাজ: ঢাকাপ্রকাশ

জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্র ও নাগরিকদের নতুন রাজনৈতিক দল ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি’ আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে। দলটির নেতৃত্বে থাকবেন নাহিদ ইসলাম, যিনি তথ্য উপদেষ্টার পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। তিনি একদফা আন্দোলনের ঘোষক এবং জুলাই আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ সমন্বয়ক হিসেবে পরিচিত।

দলের সদস্য সচিব পদে দায়িত্ব পালন করবেন আখতার হোসেন, যিনি ঢাকসুর সাবেক নেতা এবং গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির সাবেক আহ্বায়ক। উল্লেখ্য, এই ছাত্র সংগঠনের মহাসচিব ছিলেন নাহিদ ইসলামও।

জাতীয় নাগরিক পার্টির মূখ্য সংগঠক হিসেবে থাকবেন নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, যিনি বর্তমানে জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক। এছাড়া, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহকে দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক এবং সারজিস আলমকে উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে।

দলটির আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) জুমার নামাজের পর সংসদ ভবনের সামনে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে একটি জমায়েতের মাধ্যমে হবে। প্রথমে ১৫১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হবে, যেখানে অন্তত ১১০ জন সদস্য আসবেন জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে। কমিটিতে যোগ দেবেন কয়েকজন পেশাজীবীও।

Header Ad
Header Ad

নিরাপদ পানি পাওয়া নাগরিকের মৌলিক অধিকার: হাইকোর্টের ঐতিহাসিক রায়

ছবি: সংগৃহীত

নিরাপদ খাবার ও ব্যবহারযোগ্য পানি প্রত্যেক নাগরিকের মৌলিক অধিকার—এমন ঘোষণা দিয়ে ঐতিহাসিক রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। আদালত বলেছেন, বাংলাদেশ সংবিধানের ৩২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, বিশুদ্ধ পানির নিশ্চয়তা দেওয়া রাষ্ট্রের দায়িত্ব।

বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি কাজী ওয়ালিউল ইসলামের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রায় দেন। এর আগে ২০২০ সালে বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি মো. রাশেদ জাহাঙ্গীরের বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এই বিষয়ে রুল জারি করেছিলেন।

আইনজীবী মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব জানান, ২০২০ সালে হাইকোর্ট স্বপ্রণোদিত হয়ে একটি রুল জারি করে জানতে চেয়েছিল—বাংলাদেশের সকল নাগরিকের জন্য নিরাপদ পানীয় পানি সরবরাহ করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব কি না এবং এটি মৌলিক অধিকার হিসেবে ঘোষণা করা হবে কি না। সেই রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে আজ আদালত ঐতিহাসিক এই রায় ঘোষণা করেন।

হাইকোর্ট এই রায়ে নিরাপদ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে সরকারের জন্য কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিয়েছেন—

১. এক বছরের মধ্যে দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থান, যেমন—আদালত, ধর্মীয় উপাসনালয়, হাসপাতাল, রেল স্টেশন, হাট-বাজার ও বিমানবন্দরে সকল নাগরিকের জন্য নিরাপদ পানীয় পানি নিশ্চিত করতে হবে।

২. আগামী ১০ বছরের মধ্যে দেশের প্রতিটি নাগরিকের জন্য নিরাপদ ও সাশ্রয়ী মূল্যের পানীয় জল সরবরাহ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।

৩. ২০২৬ সালের মধ্যে পাবলিক প্লেসে বিনামূল্যে নিরাপদ পানি সরবরাহের পরিকল্পনা কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে, সে বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে।

আইনজীবী পল্লব আরও জানান, হাইকোর্টের এই রায় একটি চলমান আদেশ হিসেবে কার্যকর থাকবে। আদালত ইতোমধ্যে তুরাগ নদী, সোনারগাঁ এবং হাতিরঝিল সংক্রান্ত রায়ের নির্দেশনাগুলোকেও এই রায়ের অংশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। এছাড়া, দেশের সব পানির উৎস যাতে ক্ষয়িষ্ণু না হয়, দূষিত না হয় এবং অবৈধ দখলদারদের হাত থেকে রক্ষা পায়—তা নিশ্চিত করতে সরকারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

এই রায়ের মাধ্যমে নাগরিকদের মৌলিক অধিকার হিসেবে নিরাপদ পানির বিষয়টি নতুন মাত্রা পেল এবং সরকারকে এ বিষয়ে দ্রুত কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

‘টাকা-পয়সা-গয়না কেড়ে নেওয়াতে দুঃখ পাইনি, কিন্তু ধর্ষণের মিথ্যা খবর প্রচারে আমি ভেঙে পড়েছি’
বৈষম্যবিরোধীদের নতুন দল ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি’, নেতৃত্বে যারা
নিরাপদ পানি পাওয়া নাগরিকের মৌলিক অধিকার: হাইকোর্টের ঐতিহাসিক রায়
সারাদেশে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’: বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার ৭৪৩ জন
বৃষ্টির কারণে বাংলাদেশ-পাকিস্তান ম্যাচ পরিত্যক্ত
বেক্সিমকোর শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ শুরু ৯ মার্চ, সরকারের ব্যয় ৫২৫ কোটি টাকা
চা দোকানির ছেলে হলেন বিচারক
টাঙ্গাইলে ট্রাক-অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে ঝরে গেল চালকের প্রাণ
বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীতে ২৭১ পদে বিশাল নিয়োগ
বাংলাদেশ-জার্মানি সম্পর্ক জোরদারে আগ্রহী ঢাকা: প্রধান উপদেষ্টা
কোন বয়সী পুরুষদের প্রতি বেশি আকৃষ্ট হন নারীরা?
এসএসসি পাসে পুলিশে চাকরি, আবেদন ফি ৪০ টাকা
সেনাবাহিনীর সব সদস্যকে সর্বোচ্চ দায়িত্বপালনে প্রস্তুত থাকতে হবে: সেনাপ্রধান
দেশ ও জাতির স্বার্থে সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে: খালেদা জিয়া
নির্বাচন নিয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা পাচ্ছি না: মির্জা ফখরুল  
প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড পেতে লাগবে ৫ বছরের অভিজ্ঞতা
অবশেষে ৬ শতাধিক ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দিলো ইসরাইল  
চবি ছাত্রলীগ নেত্রীকে পুলিশে দিল স্থানীয় জনতা
তারেক রহমানের নাম উচ্চারণে ওজু করা নিয়ে বক্তব্যে বুলুর দুঃখ প্রকাশ  
ইউরোপীয় ইউনিয়নের ওপর ২৫ শতাংশ ট্যারিফ আরোপের প্রতিশ্রুতি ট্রাম্পের