প্রাক্তনকে ভুলতে সহায়তা করার সূত্র আবিষ্কার
প্রতীকী ছবি। ছবি: সংগৃহীত
প্রেমের সম্পর্ক ভেঙে যেতেই পারে। সব সম্পর্ক যে সব সময় একইভাবে গতিশীল থাকে, তা কিন্তু নয়। তাই কোনো কারণে প্রেমের সম্পর্ক ভেঙে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়। অস্বাভাবিক নয় প্রাক্তনের কথা ভেবে মন খারাপ করাও। বিচ্ছেদের পর ক্ষণে ক্ষণেই মনে পড়ে প্রাক্তনের কথা, তার সঙ্গে কাটানো সুন্দর মুহূর্তগুলোর কথা। মনে হয়, তাকে ছাড়া জীবন নীরস, অর্থহীন। যেন হারিয়ে গেছে জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান কিছু।
বিচ্ছেদ কখনো কখনো মানুষকে অপ্রকৃতিস্থ করে ফেলে। আত্মহত্যার মতো চরম সিদ্ধান্তও নিয়ে ফেলে অনেকে। তাহলে এমন পরিস্থিতি থেকে মুক্তির উপায় কী? প্রাক্তনকে একেবারে ভুল যাওয়ার পেছনে মস্তিষ্কের কী বিশেষ কোনো ক্রিয়া–বিক্রিয়া রয়েছে?
সম্প্রতি ইঁদুরের ওপর চালানো এক গবেষণায় দেখা গেছে, মস্তিষ্কের বিশেষ অংশের উদ্দীপনা এখানে ভূমিকা রাখে। গবেষণার ফলাফল মানুষের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
একগামী (এক স্ত্রীতে আসক্ত) ইঁদুরজাতীয় প্রাণী ‘প্রাইরি ভোলস’ নিয়ে কাজ করা গবেষকেরা বলছেন, একগামী ইঁদুরেরা সঙ্গী খোঁজার সময় এবং পুনরায় মিলিত হওয়ার সময় মস্তিষ্কে আনন্দের হরমোন ডোপামিনের সঞ্চারণ অনুভব করে। তবে দীর্ঘকাল বিচ্ছিন্ন থাকার সময় তারা এই ধরনের আনন্দ অনুভব করে না।
ইউনিভার্সিটি অব কলোরাডো বোল্ডারের আচরণগত স্নায়ুবিজ্ঞানী এবং গবেষণা প্রতিবেদনের সিনিয়র লেখক ড. জো ডোনাল্ডসন বলেছেন, ‘আমরা এটিকে বিচ্ছেদ কালের উত্তরণ হিসেবে ধরেছি। কারণ ইঁদুরগুলো আসলে ডোপামিন নিঃসরণের এই পরিবর্তনের পরে একটি নতুন সম্পর্ক তৈরি করতে পারে; যা তারা আগের বন্ধনে অটুট থাকাকালে করতে পারে না।’
গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে কারেন্ট বায়োলজি সাময়িকীতে। গবেষক দলটি বলেছেন, গবেষণার জন্য তারা একাধিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েছেন। যেখানে ইঁদুরকে নিজের সঙ্গী বা দরজার অপর পাশে থাকা অপরিচিত ইঁদুরকে পেতে হলে লিভার চাপতে হতো।
গবেষক দলটি আবিষ্কার করেন, অপরিচিত সঙ্গীর চেয়ে নিজের সঙ্গীর সঙ্গে দেখা করতে লিভার চাপার সময় ইঁদুরের মস্তিষ্কে বেশি ডোপামিনের নিঃসরণ ঘটে। সাক্ষাতের সময় ইঁদুরগুলো নিজের সঙ্গীর সঙ্গে আরও বেশি সময় আড্ডা দেয় এবং এ সময় অধিক ডোপামিনের নিঃসরণ অনুভব করে।
ডোনাল্ডসন বলেন, ‘আমরা মনে করি, নিজের সঙ্গীর সঙ্গে মিলিত হওয়া আর অপরিচিত সঙ্গীর সঙ্গে মিলিত হওয়ার মধ্য পার্থক্য রয়েছে। প্রথমটি পরেরটির চেয়ে বেশি আনন্দদায়ক।’
তবে চার সপ্তাহের জন্য জোড়া ইঁদুরগুলোকে আলাদা করার পরে ডোপামিনের এই পার্থক্যগুলো আর দেখা যায়নি। আদর করার আচরণের মধ্যেও পার্থক্য কমেছে। ইঁদুরের জীবনকাল বিবেচনায় এটি অনেক বড় সময়।
গবেষকেরা বলছেন, ফলাফলগুলো একে অপরকে ভুলে যাওয়ার চেয়ে ইঁদুরের জুটির মধ্যে বন্ধনের অবমূল্যায়নকেই নির্দেশ করে। ডোনাল্ডসন বলেছেন, গবেষণার অনেকগুলো প্রভাব থাকতে পারে, ফলাফলগুলো মানুষের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
তিনি বলেন, প্রথমত, ডোপামিনের নিঃসরণ মানুষের বন্ধন গড়তে এবং বজায় রাখতে যদি সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ হয়, তাহলে এর মানে হলো—সম্পর্কের সন্তুষ্টির জন্য এমন কিছু করা, যা ডোপামিনের নিঃসরণকে অটুট রাখতে সাহায্য করে।
এটি শোক কাটিয়ে বাস্তব জীবনে ফেরার পথে অসুবিধায় পড়া লোকদের বেলাতেও প্রাসঙ্গিক হতে পারে বলে জানান ডোনাল্ডসন। তিনি বলেন, এটি সম্ভব যে, সঙ্গী হারানোর পর অনেকের ডোপামিন সংকেত অভিযোজিত হয় না, মূলত বিচ্ছেদের ধাক্কা সামলানোর প্রক্রিয়া স্থবির হয়ে পড়ে। এখন আমার গবেষণার একটি বৃহত্তর লক্ষ্য হলো—জৈবিক পরিবর্তনগুলো শনাক্ত করে দীর্ঘস্থায়ী শোকের ব্যাধিতে আক্রান্তদের সাহায্য করার উপায়গুলো চিহ্নিত করা, যা তাদের কাউকে হারানোর কষ্ট কাটিয়ে উঠতে এবং বাস্তব জীবনে পুনরায় ফিরে আসতে সহায়তা করে।