শীতকালে ত্বকের সুস্থতায় যা খাবেন
ফাইল ছবি
শীতকালে ত্বক হয়ে পড়ে বিবর্ণ, শুষ্ক ও রুক্ষ। শীতে ত্বক সুস্থ ও সতেজ রাখতে খাদ্যাভ্যাসে আনতে হবে ইতিবাচক পরিবর্তন। জেনে নিন শীতে ত্বকের সুস্থতায় যা খাবেন:
পানি
প্রতিদিনের খাবারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান পানি। পানি আমাদের শরীর এবং ত্বকের হাইড্রেশনের প্রধান উৎস। পর্যাপ্ত পানি পান করলে ত্বক নরম, মসৃণ এবং কোমল থাকে। পানির অভাবে ত্বকে শুষ্কতা, বলিরেখা এবং দাগের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। এমনকি কম পানি পান শরীর ও ত্বককে ডিহাইড্রেটেড (জলশূন্য) করে তোলে। যার ফলে ক্লান্তি বাড়ে, অনেককে বয়স্কও দেখাতে পারে। শীতে ঘাম হয় না বলে পিপাসাও তেমন পায় না, তাই অনেকে পানি পান কমিয়ে দেন। কিন্তু শীতকালেও যথেষ্ট পানি পান করতে হবে, এতে আপনার ত্বককে সতেজ থাকবে।
ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড
আখরোট, স্যামন মাছ, ম্যাকরেল মাছে পাওয়া যায় ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, যা ত্বককে পুষ্ট রাখতে সহায়তা করে। এর পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট ত্বকের প্রাকৃতিক তেল উৎপাদনে সহায়তা করে, যা ত্বক হাইড্রেটেড রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
গাজর
গাজর বিটা-ক্যারোটিন এবং লাইকোপেনসমৃদ্ধ, যা ত্বককে অতিবেগুনি রশ্মির ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। যদিও শীতকালে সূর্যের আলো খুব প্রখর থাকে না, তবু পরিবেশে অতিবেগুনি রশ্মির বিভিন্ন উৎস থাকে। গাজরের ভিটামিন এ, পটাসিয়াম এবং অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট শুষ্ক ত্বক এবং অমসৃণ ত্বকের টোন সমস্যা (ত্বকের রংয়ের অসামঞ্জস্যতা) দূর করে।
সাইট্রাস ফল
শীতকালে প্রচুর পরিমাণে তাজা রসালো এবং সতেজ সাইট্রাস বা টক ফল (যেমন কমলা, মাল্টা, আঙ্গুর) পাওয়া যায়। ভিটামিন সি–সমৃদ্ধ এসব ফল শীতের জন্য সুপারফুড হতে পারে। এগুলোর কিছু সাধারণ সুবিধা হলো রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায় এবং এর ফাইবার হজম শক্তি বৃদ্ধি করে।
মিষ্টি আলু
শীত মৌসুমে বাজারে মিষ্টি আলু পাওয়া যায়। মিষ্টি আলুতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে। এতে থাকা উচ্চ বিটা-ক্যারোটিন শুধু ত্বককে পুষ্টিই দেয় না বরং ত্বককে ভেতর থেকে উজ্জ্বল করে তোলে। মিষ্টি আলু রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে। এ ছাড়া কিছু কিছু অসুস্থতা থেকে শরীরকে রক্ষা করতে মিষ্টি আলু অপরিহার্য।
প্রকৃতিতে আবহাওয়ার পরিবর্তনের সঙ্গে আমাদের খাদ্যাভ্যাসেও কিছু পরিবর্তন দরকারি। শীতের সময় শুষ্ক ত্বক এবং চুল পড়াও উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই এ সময়ে পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার খেয়ে এসব সমস্যা মোকাবিলা করতে হবে।
যা পরিহার করবেন
১. অতিরিক্ত চিনি দেওয়া খাবার বা মিষ্টি খাবার শরীরের মেদ বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ত্বক শুষ্ক করে তোলে। এর ফলে কপালে, চোখের কোনায় বলিরেখা দেখা দিতে পারে।
২. অতিরিক্ত মাত্রায় লবণ খেলে মুখ ফোলা দেখাতে পারে, থুতনির নিচে মেদ বাড়তে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের দ্য ন্যাশনাল হার্ট, লাং অ্যান্ড ব্লাড অ্যাসোসিয়েশনের গবেষকদের মতে, প্রতিদিন ৫০০ মিলিগ্রামের বেশি লবণ খেলে ফুলে যেতে পারে চোখের কোল। ফলে মুখ ফোলা দেখাতে পারে।
৩. দুগ্ধজাত খাবার অতিরিক্ত মাত্রায় খেলে চোখের কোণ ফুলে উঠতে পারে, বাড়তে পারে থুতনির নিচে মেদ। এ ছাড়া ব্ল্যাকহেডসের সমস্যা বাড়তে পারে যা ত্বকের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
৪. গ্লুটেন সমৃদ্ধ খাবারদাবার (যেমন পাউরুটি) অতিরিক্ত মাত্রায় খেলে ত্বকের প্রকৃতি বদলে যেতে পারে। গালে, কপালে ব্রণ, ফুসকুড়ি দেখা দিতে পারে। গ্লুটেন অ্যালার্জির ফলে ত্বকে ফুসকুড়ি দেখা দিতে পারে।
৫. অ্যালকোহল বা মদ্যপানের ফলে ত্বকে বলিরেখা দেখা দিতে পারে। চোখ আর মুখের ফোলা ভাব বেড়ে যেতে পারে। ডবল চিন বা থুতনির নিচে অতিরিক্ত মেদও জমতে পারে।
*ডা. আরিফ যোবায়ের: সিনিয়র কনসালটেন্ট, ক্রীড়া সংগঠক পরিষদ ফিজিওথেরাপি অ্যান্ড হেলথকেয়ার সেন্টার