মৌসুমি সর্দি-জ্বর নাকি অমিক্রন!
ছবি- সংগৃহীত
করোনাভাইরাসের তৃতীয় ধাপ শুরু হয়েছে বাংলাদেশে। এদিকে দেশে চলছে শীতকাল। গ্রামাঞ্চলে বেড়েছে ঠান্ডাজনিত রোগ। এটি সাধারণ মৌসুমি ঠান্ডা-জ্বর-কাশি নাকি কোভিড-১৯! কীভাবে বুঝবেন? লক্ষণগুলোতো প্রায় এক।
গলা ব্যথা বা অস্বস্তি, নাক দিয়ে পানি আসা, পেশি বা শরীরব্যথা এই উপসর্গগুলো দুবছর আগেও আজকের মতো আতঙ্কের ছিল না।কারণ ২০১৯ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত এগুলো ছিল মৌসুমি সর্দিজ্বরের সাধারণ উপসর্গ, যা সারতে ওষুধ খাওয়ারও প্রয়োজন পড়ত না।তবে আজ এগুলোই প্রাণঘাতি মহামারি কোভিড-১৯ এর উপসর্গ।
তাই বলে মৌসুমি সর্দিজ্বর কিন্তু বিলুপ্ত হয়ে যায়নি। তাই এই সমস্যাগুলোতে যখন কেউ ভুগছে, তখন তা ‘কোভিড-১৯’ নাকি মৌসুমি সর্দিজ্বর তা নিয়ে দোটানা রয়েই যায়।
সিএনএনের এক প্রতিবেদনে ‘এপিডিমিওলজিস্ট’ ও ‘ডেট্রয়েট হেল্থ ডিপার্টমেন্ট’ এর সাবেক কার্যনির্বাহী পরিচালক ডা. আব্দুল আল-সাইদ বলেন, 'করোনাভাইরাসের নয়া ধরন অমিক্রনের তাণ্ডব বৃদ্ধির প্রভাবে কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা আবারও বাড়ছে দ্রুত গতিতে। যারা টিকা নিয়েছেন তাদের ক্ষেত্রে ভাইরাসের এই নয়া ধরনের তীব্রতা কম। তবে মনে রাখতে হবে, টিকা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে এই ভাইরাস সম্পর্কে সচেতন করে।'
টিকার ‘বুস্টার ডোজ’ নিলে তার করোনাভাইরাসকে শনাক্ত করে তাকে কার্যকরভাবে ধ্বংস করার ক্ষমতা বাড়বে প্রতিবার। তাই বলে সংক্রমণকে হেলাফেলা করার অবকাশ নেই কখনই।
তিনি আরও বলেন, 'একক ব্যক্তির ওপর অমিক্রনের প্রভাব হয়ত মৃদু, তবে পুরো জনগোষ্ঠী আক্রান্ত হলে এই মৃদু ধরনই গুরুতর আকার ধারণ করতে পারে।'
যুক্তরাষ্ট্রের চিল্ড্রেনস ন্যাশনাল হসপিটালের ফিজিশিয়ান ডা. সারাহ অ্যাশ কম্বস বলেন, 'কোভিড-১৯ সংক্রমণের অনেকগুলো লক্ষণ মৌসুমি সর্দিজ্বরের মতোই। তাই উপসর্গ কী ইঙ্গিত করছে তা জানার জন্য পরীক্ষা করাতে হবে।'
যে লক্ষণগুলো দেখা যাচ্ছে
যুক্তরাষ্ট্রের সিডিসির তথ্যানুসারে ডা. আল-সাইদ জানান- জ্বর, অবসাদ, শরীরব্যথা, গলাব্যথা, দম বন্ধ হয়ে আসা, বমি, ডায়রিয়া এই সবগুলোই কোভিড-১৯ ও ফ্লু বা মৌসুমি সর্দিজ্বরের লক্ষণ।
এর সঙ্গে মাথাব্যথা ও ড্রাই কফ থাকলে সন্দেহ কোভিড-১৯ এর দিকে মোড় নিতে শুরু করে।
স্বাদ ও গন্ধের অনুভূতি হারানো এখনও সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ উপসর্গ যা কোভিডের ইঙ্গিত দেয়।
পরামর্শ দিতে গিয়ে এই চিকিৎসক বলেন, 'তবে এই দুই উপসর্গ করোনাভাইরাসের অন্যান্য ধরনের তুলনায় ওমিক্রনের সংক্রমণে কম দেখা যাচ্ছে। যারা প্রচণ্ড বুক ব্যথা অনুভব করছেন, সঙ্গে আছে ড্রাই কফ যা ক্রমেই খারাপের দিকে যাচ্ছেন, তাদের দ্রুত চিকিৎকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।'
তিনি আরও বলেন, 'প্রধান বিষয় হলো- একজন মানুষ কতটুকু করোনাভাইরাসের সংস্পর্শে এসেছে তার মাত্রা। তাই উপরের উপসর্গগুলো দেখা দিলেই চিন্তা করা উচিত, করোনাইভাইরাসে আক্রান্ত কারও সংস্পর্শে আসা হয়েছে কি না। সামাজিক দূরত্ব বজায় না রাখলে, স্বাস্থ্যবিধি না মেনে থাকলে এমনটা হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। তাই দ্রুত পরীক্ষা করাতে হবে।'
বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে সকল উপসর্গকেই ‘কোভিড’ মনে করা নিরাপদ।
পরীক্ষা করানোর সঠিক সময়
ডা. আল-সাইদ বলেন, 'সন্দেহ হলে পরীক্ষা করানো উচিত। তবে পরীক্ষা কখন করছেন সেটা গুরুত্বপূর্ণ। যখন কেউ উপসর্গ অনুভব করছে তখনই পরীক্ষা করাতে হবে। আগে না, পরেও না।'
'যারা ভাইরাসের সংস্পর্শে আসার পরও উপসর্গ টের পাচ্ছেন না, সেক্ষেত্রে সম্ভাব্য হলো, শরীরে ভাইরাসের মাত্রা এখনও কম, যা পরীক্ষায় ধরা পড়ার মতো নয়। সংক্রমণের শিকার হয়েছেন এমন সন্দেহ থাকলে পাঁচ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করুন, দেখুন কোনো উপসর্গ দেখা দেয় কি না। তারপর পরীক্ষা করান।'
'আর পরীক্ষা নেগেটিভ আসা মানেই যে আপনার কোভিড হয়নি তা ভেবে নিশ্চিন্ত হওয়াটা ভুল হবে। প্রথমবার নেগেটিভ আসার ১২ থেকে ২৪ ঘণ্টা পর আবার পরীক্ষা করানো উচিত। দুবার নেগেটিভ আসলে এবার আপনি চিন্তা মুক্ত হতে পারেন। তবে কোভিড হোক আর না হোক, নিজেকে সবার থেকে দূরে রাখুন।'
শিশুদের কী হবে?
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো চালু হয়েছে বহুদিন পর। সব বয়সের শিক্ষার্থীরাই এখন কমবেশি স্কুল, কলেজ, কোচিংয়ে যাচ্ছে। আবার শীতের এই আবহাওয়ায় ঠান্ডা লেগে যাওয়ার সম্ভাবনা যথেষ্ট প্রবল।
'এমন পরিস্থিতিতে শিশুদের মাঝে কোনো উপসর্গ দেখা দিলে তাকে কোভিড-১৯ মনে করে সর্বোচ্চ সুরক্ষা ব্যবস্থা নিতে হবে' ,বলেন ডা. সারাহ অ্যাশ কম্বস।
তিনি আরও বলেন, 'ওমিক্রনের সংক্রমণ শিশুদের মাঝেও দেখা যাচ্ছে প্রাপ্তবয়স্কদের মতো করেই। শিশুদের জন্য এখনও টিকার অনুমোদন হয়নি। তাই সর্বোচ্চ সচেতনতাই তাদের জন্য একমাত্র উপায়।'
'টেস্ট করানোর ক্ষেত্রে বিন্দুমাত্র দেরি করা চলবে না। এখন আমরা ভাইরাসকে রুখতে জানি। তাই করোনাভাইরাস সংক্রমণ হলে শিশুকে মাস্ক পরাতে হবে, স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। আর করোনাভাইরাসের নিয়ত পরিবর্তনশীল ধরন ও তার বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানতে হবে।'
টিটি/