সুগার ফ্রি মিষ্টি ও একজন কাজলের এগিয়ে চলা
Photo: collected
সত্যি কথা বলতে ক্রাফট অ্যান্ড কিচেনের স্বপ্নের শুরু আমার মায়ের ডায়বেটিসের সময় থেকে, তখন আমি ছোটো, খুব কাছ থেকে দেখতাম আম্মুর মিষ্টি খাবারের প্রতি আকুলতা। বড় হয়ে কঠিন বাস্তবতার মাঝে যখন ক্রাফট অ্যান্ড কিচেনের যাত্রা শুরু হয় তখনই সিদ্ধান্ত নেই রিফাইন্ড সুগার ফ্রি মিষ্টি দিয়েই শুরু করবো। যদি খেজুরের মিষ্টিকে পরিমিত পরিমাণে গ্রহণ করে সাদা চিনিকে (সাদা বিষ) বর্জন করে সুস্থ থাকা এবং সুগার ক্রেভিং নিয়ন্ত্রণ করে মানুষিকভাবে সন্তুষ্ট থাকা যায় তাহলে কেন সাদা বিষকে গ্রহণ করে অসুস্থতা বাড়াবো? এই চিন্তা থেকে ছোট্ট পরিসরে গড়া এই প্রতিষ্ঠান- কথাগুলো বলছিলেন ক্রাফট অ্যান্ড কিচেনের কর্ণধার মোহাম্মদী খানম কাজল।
মায়ের প্রতি ভালোবাসা থেকে কাজ শুরু করলেও এখন অনেক ডায়বেটিস রোগী এমনকি যারা ডায়েট করছেন কিংবা খুব মিষ্টি পছন্দ কিন্তু ওজন বেড়ে যাবে বলে খেতে পারছেন না তাদের জন্য ভরসার জায়গা কাজলের সুগার ফ্রি মিষ্টি বিপণী কেন্দ্র ক্রাফট অ্যান্ড কিচেন।
ফেসবুকে তার সম্পূর্ণ চিনিবিহীন ‘মিষ্টি’র পেজ ‘ক্রাফট অ্যান্ড কিচেন’ স্বাস্থ্যসচেতন ক্রেতাদের মাঝে বিপুল জনপ্রিয়তা পেয়েছে, সম্প্রতি তার পেজটির প্রশংসা করেছেন নামীদামী তারকারাও।
দেশের জনপ্রিয় টেলিভিষণ উপস্থাপক ড. আবদুন নুর তুষার কাজলের ক্রাফট এন কিচেনের একজন নিয়মিত ক্রেতা। তিনি কাজলের সুগার ফ্রি মিষ্টির উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে তার ভেরিফাইড ফেজবুক পেজে লিখেন-
তিন বোনের মাঝের জন। মা হারিয়েছেন। বাবাকে দেখে রাখেন। বাড়ি নেই ঢাকায়। বোনেদের সংসার আছে। তারা তাদের মতো করে বাবার যত্ন নেন। বাবা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগে ছিলেন। সৎ হলে যা হয় আর কি!
সিলভা নামের এক ঔষধ কোম্পানিতে স্বল্পবেতনে কাজ করতেন কাজল। করোনার সময় অকারণ অজুহাতে তাকে চাকুরিচ্যুত করে কোম্পানি। ঔষধ কোম্পানিগুলির অধিকাংশই এরকম। বাংলাদেশের অধিকাংশ কোম্পানিগুলিও।
অফিস আওয়ারের পরে অন্য কলিগরা অফিসে বসে অতিরিক্ত কাজ করে। বাবার দেখাশোনা করার তাগিদে মেয়েটি ঠিক সময়ে অফিস থেকে বের হতো। এটাই তার প্রধান অপরাধ। অফিস সবাইকে ক্রিতদাস মনে করে।
চাকুরি হারানোর পর টিকে থাকার জন্য তিনি চিনি ছাড়া মিষ্টি বানাতে শুরু করেন। এটার সাথে খানিকটা আবেগও আছে। মা ডায়াবেটিসের জটিলতায় মারা গিয়েছিলেন। মা অনেক মিষ্টি খেতে চাইতেন। মিষ্টি দেয়া যায়নি মৃত্যুর আগের অনেকটা সময়। মিষ্টিগুলো খেজুর বাদাম ডার্ক চকলেট দিয়ে তৈরি। চিনি নাই। সুগার ফ্রি বললে লোকে বেশি বোঝে। তার নাম কাজল। তার প্রতিষ্ঠানের নাম Kraft n' Kitchen অর্ডার দিলে সে মিষ্টি বানায়। আটচল্লিশ ঘন্টার মধ্যে বাড়ীতে পৌঁছে দেয়।
তার বাবার পছন্দের মানুষ আমি। যদিও তাকে চিনি না। কাজলকেও চিনতাম না। আমার প্রিয় এক মানুষ তার সাথে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিলো। মিষ্টিগুলো বিদেশি মিষ্টি মনে হয়। দেশি উপাদান বা ইনগ্রেডিয়েন্ট না থাকায়। চিনি না থাকা মানে জিরো ক্যালরি না। তবে এটা হিসেব করে খেলে ঝুঁকি কম।
মানুষের জীবনের গল্প আলাদা আলাদা। কিন্তু সব সংগ্রামেই প্রিয়জনরা থাকে। তাদের জন্যই জীবন। তার জীবনের ইচ্ছা একটা গাড়ি কিনে বাবাকে নিয়ে এখানে সেখানে ঘুরবে।- কথাগুলো বলছিলেন ড. আবদুন নুর তুষার।
দেশের জনপ্রিয় অভিনেত্রী ও মডেল সোহানা সোহানা সাবা "ক্রাফট অ্যান্ড কিচেন" এর একজন নিয়মিত ক্রেতা। তিনি অনেক সময় প্রিয়জনদের গিফট দেয়ার জন্য ক্রাফট অ্যান্ড কিচেন থেকে সুগার ফ্রি মিষ্টির অর্ডার দেন বলে জানা গেছে।
সুগার ফ্রি মিষ্টির বিষয়ে কাজল বলেন, আমি মিষ্টিগুলো তৈরি করার ক্ষেত্রে প্রাচীন পদ্ধতি অনুসরণ করে থাকি। খুব ভালো মানের খেজুর এবং কিসমিস থেকে মিষ্টি সংগ্রহ করি। আর বাদামেও একটা মিষ্টর ভাব আছে। ডায়বেটিক রোগিরা একটা নির্দষ্ট পরিমাণ মিষ্টি খেতে পারেন। তো সেই পরিমাণ মিষ্টি বাদাম, কিসমিস আর খেজুর থেকে পাওয়া যায়। আমার তৈরি মিষ্টির বেশি ভাগ ক্রেতা ডায়বেটিক রোগি। এখন পর্যন্ত এই মিষ্টি খেয়ে কোন অভিযোগ আসেনি।
কাজলের জনপ্রিয় মিষ্টিগুলো হলো- সুগার ফ্রি পিনাট লাড্ডু, সুগার ফ্রি পিনাট ক্লসটার, সুগার ফ্রি ড্রাই নাট বরফি, সুগার ফ্রি ডেটস লাড্ডু, ডার্ক চকলেট ডেটস এন্ড নাট লাড্ডু, ককোনাট সিসেমি লাড্ডু ইত্যাদি।
এমএস