গরুর মাংসে স্বাস্থ্যঝুঁকি কমানোর টিপস
কোরবানির ঈদ মানেই আনন্দ-উৎসব। আর উৎসবের অন্যতম অনুষঙ্গ বাহারি খাবারের আয়োজন। আর কোনবানির ঈদ মানেই খাবারের তালিকায় নানা পদের মাংসের উপস্থিতি। গরু আর খাসির মাংস এ ঈদের কয়েক দিনের জন্য সাধারণ খাবারে পরিণত হবে। উৎসবে অনেকেই খাওয়ার লাগাম ছেড়ে দেন। তবে যা-ই খান না কেন স্বাস্থ্যের দিকে নজর এড়ালে চলবে না।
পুষ্টিবিদরা জানিয়েছেন, গরুর মাংসের ক্ষতিকর দিক যেমন আছে, তেমনি এ মাংস অনেক উপকারও করে থাকে। গরুর মাংসে যত পুষ্টিগুণ আছে, সেগুলো অন্য কোনো খাবার থেকে পাওয়া কঠিন। গরুর মাংসে রয়েছে আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেল বা খনিজ উপাদান যেমন- জিংক, সেলেনিয়াম, ফসফরাস, আয়রন। আবার ভিটামিনের মধ্যে রয়েছে- ভিটামিন বি-২, বি-৩, বি-৬ ও বি-১২।
এ মাংস আপনার জন্য ক্ষতিকর হবে না উপকারী, সেটা নির্ভর করবে আপনি সেটা কতটা নিয়ম মেনে, কী পরিমাণে খাচ্ছেন এবং গরুর মাংস কীভাবে কাটছেন ও রান্না করছেন তার উপরও।
* যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্যবিষয়ক একটি জার্নাল থেকে জানা গেছে, গরুর শরীরের দুটি অংশে চর্বির পরিমাণ অনেক কম থাকে। একটি হলো গরুর পেছনের রানের উপরে ফোলা অংশের মাংস। এটাকে ‘রাউন্ড’ বলা হয় এবং পেছনের দিকের উপরের অংশের মাংস যেটাকে, সেরলয়েন বলা হয়।
* মাংসের বাইরে যে চর্বি লেগে থাকে, সেটা রান্নার আগে কেটে ফেলে দিলে কোলেস্টেরলের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়ে আনা যায়। তাই গরুর মাংস রান্নার আগে মাংসের গায়ে লেগে থাকা সব চর্বি কেটে ছাড়িয়ে নিতে হবে।
* চেষ্টা করুন ছোট ছোট টুকরো করে কাটার। কারণ মাংসের টুকরো যত ছোট হবে, ততই এর চর্বির পরিমাণ কমে যাবে। এ কারণে গরুর মাংস কিমা অথবা মাংস বাটায় চর্বি সবচেয়ে কম থাকে।
* মাংস কাটা শেষে সেটা ভালোভাবে ধুয়ে নিয়ে কিছুক্ষণ পানিতে সিদ্ধ করতে হবে। এরপর পানিতে দেখবেন চর্বির স্তর উঠে আসছে। মাংস কিছুক্ষণ ফুটে ওঠার পর এ পুরো পানিটা ফেলে দেবেন। যদিও এতে মাংসে থাকা চর্বির পাশাপাশি ভিটামিন ও মিনারেলও বেরিয়ে যায়।
* সিদ্ধ মাংস কম তেল দিয়ে রান্না করুন, যতটুকু না দিলেই না। ঘি, মাখন, ডালডা এ সব না দেওয়াই ভালো হবে। মাংসে থাকা চর্বি আরও কমাতে ভিনেগার, লেবুর রস বা টক দই দিয়ে রান্না করতে পারেন।
* গরুর মাংস বেশি তেল-মসলা দিয়ে কষিয়ে ভুনা করে রান্না না করাই ভালো। এর চেয়ে বেশি পরিমাণে ঝোল রেখে মাংস রান্না করা এবং খাবার সময় সেই ঝোল এড়িয়ে যাওয়া উচিত।
* ছাড়া গরুর মাংস আগুনে ঝলসে গেলে চর্বি অনেকটাই চলে যায়। গ্রিল বা শিক জালি কাবাব পুড়িয়ে খাওয়ার কারণে ক্ষতির আশঙ্কা অনেকটাই কমে যায়।
আবার গরুর মাংস যেন কম খাওয়া হয়, সে জন্য মাংসের সঙ্গে বিভিন্ন সবজি যেমন- মিষ্টি কুমড়া, লাউ, ফুলকপি, বাঁধাকপি, পেঁপে ইত্যাদি মেশাতে পারেন।
* গরুর মাংসের কাবাব বানানোর সময় কিমার সঙ্গে ডাল বা অন্যান্য খাদ্য উপাদান ব্যবহার করা গেলে, এ মাংস কম খাওয়া যায়।
* গরুর মাংস ফ্রিজে রাখার পর বা কিছুক্ষণ ঠান্ডা পরিবেশে রাখলে এর উপর তেলের একটি আস্তর পড়ে। সেটা ফেলে দিয়েও ফ্যাট অনেকটাই কমানো সম্ভব।
* দৈনিক ৩ আউন্স বা ৮৫ গ্রামের বেশি মাংস খাবেন না। খাওয়ার জন্য বেছে নিন ‘রাউন্ড’ এবং ‘লোইন’ বা ‘সিরলোইন’ অঞ্চলের মাংস। এখানে চর্বির পরিমাণ চামড়া ছাড়ানো মুরগির রানের মাংসের চেয়েও কম।
এসএন