দুদকের চাকরিচ্যুত শরীফ উদ্দিনের নিরাপত্তা চাইলেন ১০ আইনজীবী
সুপ্রিম কোর্টের ১০ আইনজীবী দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) থেকে চাকরিচ্যুত শরীফ উদ্দিনের জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে হাইকোর্টে চিঠি পাঠিয়েছেন। বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চে এবং সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল বরাবর এই চিঠি পাঠানো হয়েছে। হাইকোর্ট রুলসের ১১ক এর বিধি ১০ অনুযায়ী এই চিঠি পাঠান আইনজীবীরা।
চিঠিতে শরীফ উদ্দিনের ঘটনা নিয়ে পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কারণ দর্শাতে এবং শরীফ উদ্দীনের জীবনের নিরাপত্তা বিধানের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।
চিঠি পাঠানো আইনজীবীরা হলেন–মোহাম্মদ শিশির মনির, রেজওয়ানা ফেরদৌস, জামিলুর রহমান খান, উত্তম কুমার বণিক, মুস্তাফিজুর রহমান, মো. তারেকুল ইসলাম, আহমেদ আবদুল্লাহ খান, সৈয়দ মোহাম্মদ রায়হান, মো. সাইফুল ইসলাম ও মোহাম্মদ নোয়াব আলী।
শরীফ উদ্দিন দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় পটুয়াখালীতে উপ-সহকারী পরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। গত বুধবার দুদক কর্মচারী চাকুরী বিধিমালা ২০০৮ এর ৫৪(২) বিধি অনুযায়ী উপ সহকারী পরিচালক শরিফ উদ্দিনকে চাকরি থেকে অপসারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
এর আগে সাড়ে তিন বছর তিনি ছিলেন চট্টগ্রামে। সেখানে থাকাকালে কক্সবাজারে ভূমি অধিগ্রহণের সাড়ে তিন লাখ কোটি টাকা দুর্নীতির ঘটনায় ১৫৫ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়ার সুপারিশ করেছিলেন তিনি, যেখানে অ্যাডমিন ক্যাডার ও পুলিশ কর্মকর্তা এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিরাও ছিলেন। এ ছাড়া রোহিঙ্গাদের জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান ও ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তির ঘটনায় নির্বাচন কমিশনের কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বিরুদ্ধে মামলা করেছিল দুদক, সেসব মামলার বাদী ছিলেন শরীফ। এ ছাড়া রোহিঙ্গাদের জাতীয়তা সনদ দেওয়ার ঘটনায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলর, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, সদস্য, পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা করে আলোচিত হন শরীফ উদ্দিন।
তা ছাড়া অবৈধভাবে গ্যাস সংযোগ স্থানান্তর ও নতুন সংযোগ প্রদানসহ বিভিন্ন অভিযোগে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (কেজিডিসিএল) বিভিন্ন অভিযোগ নিয়েও তদন্ত করেন শরীফ। পরে অভিযোগের ‘সত্যতা পেয়ে’ কেজিডিসিএল এর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ সাবেক বৈদেশিক ও কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসির ছেলে মুজিবুর রহমানসহ কয়েকজনকে আসামি করে গত বছরের ১০ জুন মামলা করেন শরীফ।
পরে আলোচিত মামলা দায়েরের পর চট্টগ্রাম থেকে শরিফ উদ্দিনকে পটুয়াখালীতে বদলি করা হয়। সবশেষে জীবননাশের হুমকি পাওয়ার ১৬ দিনের মাথায় শরীফ উদ্দিনকে চাকরিচ্যুত করা হলো বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।
এদিকে শরীফ উদ্দিনকে চাকরিচ্যুত করার পর দুদকের সচিব মো. মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘একটি প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করার জন্য যত রকমের কাজ করা যায়, একটাও বাকি রাখেননি শরীফ উদ্দিন।’ তিনি আরও বলেন, ‘দুর্নীতি দমন কমিশনের যে আইন রয়েছে এবং দুর্নীতি দমন কর্মচারী চাকরিবিধি ২০০৮ রয়েছে। সে অনুযায়ী দুর্নীতি দমন কমিশনের সব কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে থাকে। দুর্নীতি দমন কমিশন কর্মচারী বিধি অনুযায়ী যে বিধিবিধানাবলি মানা প্রয়োজন, শরীফ উদ্দিন সেগুলো না মেনে অব্যাহতভাবে বিধি পরিপন্থী কাজ করে যাচ্ছিলেন। যার কারণে কমিশন মনে করেছে, কমিশনের ভাবমূর্তি রক্ষার স্বার্থে তাকে চাকরি থেকে অপসারণ করেছেন। তার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ ছিল। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা চালু ছিল। এর আগে তদন্তকালে টাকা উদ্ধার বিষয়ে উনি যে কার্যক্রম করেছিলেন, সে বিষয়ে মহামান্য হাইকোর্ট থেকেও অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন। মানে সবকিছু মিলিয়ে চাকরিবিধি পরিপন্থীর কারণে তার বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থাটা নেওয়া হয়েছে।’
এদিকে শরীফ উদ্দিনকে চাকরিচ্যুত করার পর ঢাকায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে এবং কয়েকটি সমন্বিত জেলা ও বিভাগীয় কার্যালয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মানববন্ধন করে তাকে অপসারণের প্রতিবাদ জানান।
এমএ/এসএ/