৩২ সাংবাদিকসহ ৫২ জনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ছবি: সংগৃহীত
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে ঘিরে গণহত্যার ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৫২ জনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে (আইসিটি) মামলা হয়েছে। এই গণহত্যাকাণ্ডে উস্কানির দায়ে ৩২ জন সাংবাদিককেও অভিযুক্ত করা হয়েছে।
রাজধানীর ধানমণ্ডিতে আইসিটি’র তদন্ত সংস্থার কার্যালয়ে আন্দোলনে নিহত নাসিফ হাসান রিয়াদের বাবা মো. গোলাম রাজ্জাকের পক্ষে বৃহস্পতিবার অভিযোগটি দায়ের করেন আইনজীবী গাজী এইচ তামিম।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ৩ আগস্ট যেসব সাংবাদিক দেখা করে গণহত্যা চালিয়ে যাওয়ার উস্কানি দিয়েছেন তাদেরকে এই মামলায় আসামি করা হয়েছে বলে জানান এই আইনজীবী।
আসামির তালিকায় শেখ হাসিনা ছাড়াও অন্যদের মধ্যে রয়েছেন- সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাতসহ তৎকালীন সরকারের কতিপয় মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও এমপি।
অন্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন- সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, সাবেক ডিএমপি ডিবি প্রধান হারুন আর রশীদ, সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান এবং কতিপয় অসাধু পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্য।
এছাড়াও রয়েছেন- র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক মো. হারুন আর রাশীদসহ র্যাবের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা ও সদস্য, ডিএমপির সাবেক যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার, এনটিএমসির সাবেক মহাপরিচালক জিয়াউল আহসান, আদাবর থানার ওসি মো. মাহাবুব রহমান, ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান এবং আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলীয় কতিপয় অজ্ঞাতনামা নেতাকর্মী।
আসামির তালিকায় অন্যদের মধ্যে রয়েছেন- সাবেক বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, অধ্যাপক মুহাম্মদ জাফর ইকবাল, আইনজীবী ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট নিঝুম মজুমদার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মেজবাহ কামাল ও সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব নাঈমুল ইসলাম খান।
মামলায় যেসব সাংবাদিককে আসামি করা হয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছেন- সাবেক প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, সাবেক এমপি ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, একাত্তর টিভির প্রধান সম্পাদক ও সিইও মোজাম্মেল বাবু, যুগান্তর সম্পাদক সাইফুল আলম, টিভি সঞ্চালক নবনীতা চৌধুরী, এবি নিউজ ২৪ ডটকম সম্পাদক সুভাষ সিংহ রায়, সময় টিভির সাবেক এমডি আহমেদ যোবায়ের, এখন টিভির বার্তাপ্রধান প্রধান তুষার আব্দুল্লাহ, ডিবিসি নিউজের সিইও সাইফুল আলম, বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম, দৈনিক সমকালের সাবেক সম্পাদক আবেদ খান।
আরও রয়েছেন- এটিএন নিউজের বার্তা প্রধান প্রভাষ আমিন, একাত্তর টিভির সাবেক প্রধান প্রতিবেদক ফারজানা রূপা, বার্তা প্রধান শাকিল আহমেদ ও হেড অফ কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স মিথিলা ফারজানা, ডিবিসি সম্পাদক জাহেদুল হাসান পিন্টু, ডিবিসির প্রধান সম্পাদক মঞ্জুরুল ইসলাম, ইন্ডিপেনডেন্ট টিভির প্রধান বার্তা সম্পাদক আশীষ সৈকত, এশিয়ান টিভির হেড অফ নিউজ মানস ঘোষ, ডিবিসির প্রণব সাহা, সাবেক তথ্য কমিশনার মাসুদা ভাট্টি, এটিএন নিউজের সাবেক প্রধান নির্বাহী সম্পাদক মুন্নী সাহা, এটিএন বাংলার সাবেক প্রধান নির্বাহী সম্পাদক জ ই মামুন (জহিরুল ইসলাম মামুন), দৈনিক জনকণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক স্বদেশ রায়, চ্যানেল আই’র সোমা ইসলাম ইত্তেফাকের শ্যামল সরকার, সমকালের অজয় দাশ এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব আশরাফুল আলম খোকন।
আসামিদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন, ১৯৭৩-এর ৩(২) ও ৪(১)/৪(২) ধারা অনুযায়ী গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে।
তাদের বিরুদ্ধে প্ররোচনা ও উস্কানি, পরিকল্পনা ও নির্দেশে অন্যান্য আসামি কর্তৃক বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের সমূলে বা আংশিক নির্মূল করার উদ্দেশ্যে দেশীয় ও আগ্নেয়াস্ত্র দ্বারা নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে সাধারণ নিরীহ নিরস্ত্র ছাত্র-জনতাকে হত্যা, নির্যাতন, আটক, গুম করার মাধ্যমে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের অভিযোগ আনা হয়েছে।