পুলিশ হেফাজতে দুদক কর্মকর্তার মৃত্যুর মামলার আসামি গ্রেফতার
ছবি: সংগৃহীত
চট্টগ্রামে পুলিশ হেফাজতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক কর্মকর্তার মৃত্যুর ঘটনায় আরও এক আসামিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) রাতে নগরীর চকবাজার এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে পিবিআইয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। গ্রেফতার মো. লিটন (৪৮) নগরীর বাকলিয়ার বাসিন্দা।
পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো ইউনিটের পরিদর্শ ইলিয়াস খাঁন গণমাধ্যমকে জানান, অবসরপ্রাপ্ত দুদক কর্মকর্তা ছৈয়দ মোহাম্মদ শহীদুল্লাহর মৃত্যুর ঘটনায় নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনের মামলার আসামি লিটনকে চকবাজার এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
‘অনেকদিন ধরেই তাকে শনাক্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছিল। পরে গোপন সূত্রে জানা যায়, তিনি চকবাজারের একটি হোটেলে দুপুরের ভাত খেতে ঢুকেছেন। হোটেল থেকে বের হওয়ার সময় তাকে গ্রেফতার করা হয়। তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। এ মামলায় মোট ছয়জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে,’- বলেন ইলিয়াস খাঁন।
গত ৩ অক্টোবর রাতে নগরীর চান্দগাঁও থানা পুলিশ দুদকের অবসরপ্রাপ্ত উপপরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ শহীদুল্লাহকে (৬৪) গ্রেফতার করে। তার বাসা নগরীর চান্দগাঁও থানার এক কিলোমিটার এলাকায়।
পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, হুমকিধমকি ও মানহানির অভিযোগে গত ২৯ আগস্ট শহীদুল্লাহসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলাটি দায়ের করেছিলেন রণি আক্তার তানিয়া। পরোয়ানামূলে গ্রেফতারের পর তাকে চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) কক্ষে বসানো হয়। কিছুক্ষণ পর পর তিনি অসুস্থবোধ করতে থাকেন।
হৃদরোগে আক্রান্ত শহীদুল্লাহর মুখে এ সময় ইনহেলার স্প্রে করেন তার সঙ্গে যাওয়া ছোট ভাই। কিন্তু অবস্থার দ্রুত অবনতি হতে শুরু করলে ছোট ভাইয়ের চাহিদা অনুযায়ী পুলিশ শহীদুল্লাহকে বেসরকারি পার্কভিউ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এরপর গত ১৬ অক্টোবর দুদকের সাবেক এ কর্মকর্তার মৃত্যুর ঘটনায় চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ ড. বেগম জেবুননেছার আদালতে তার স্ত্রী ফৌজিয়া আনোয়ার চান্দগাঁও থানার ওসিসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
পরে মামলাটি চান্দগাঁও থানাকে এফআইআর হিসেবে রেকর্ড করতে নির্দেশ দেন আদালত। পাশাপাশি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) চট্টগ্রাম মেট্রো ইউনিটকে তদন্তের নির্দেশ দেন।
মামলার আসামিরা হলেন- চান্দগাঁও থানার তৎকালীন ওসি খাইরুল ইসলাম, একই থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মো. ইউসুফ ও সোহেল রানা, থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মবিনুল হক, চান্দগাঁও থানা এলাকার বাসিন্দা এস এম আসাদুজ্জামান (৫২), মো. জসীম উদ্দীন (৩৭), মো. লিটন (৪৮), রনি আক্তার তানিয়া (২৬) ও কলি আক্তার (১৯)।
শহীদুল্লাহর স্ত্রী মামলার আরজিতে অভিযোগ করেন, জায়গা-জমি দখলের জন্য আসাদুজ্জামান, জসিম, লিটন, তানিয়া ও কলি মিলে তার স্বামীকে মিথ্যা মামলার আসামি করেন। এতে তাদের প্রত্যক্ষ সহায়তা দেন চান্দগাঁও থানার অভিযুক্ত চার পুলিশ কর্মকর্তা। এ ছাড়া যে আদালতে মামলা হয়, সেই আদালতের বেঞ্চ সহকারী হারুন উর রশিদ ষড়যন্ত্র করে নিয়ম বহির্ভূতভাবে শহীদুল্লাহর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করান।
অভিযোগে আরও বলা হয়, শহীদুল্লাহ হৃদরোগে আক্রান্ত ছিলেন। তার বাইপাস সার্জারি হয়েছিল। এ ছাড়া তিনি উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও শ্বাসকষ্টের রোগী ছিলেন। গ্রেফতারের সময় এএসআই ইউসুফ ও সোহেল রানা তাকে গালাগাল করেন। টেনেহিঁচড়ে তাকে থানায় নিয়ে গিয়ে জায়গা-সম্পত্তি নিয়ে বিবাদীদের সঙ্গে আপসের জন্য চাপ দেন। গ্রেফতারের সময় পরিবারের সদস্যরা প্রয়োজনীয় ওষুধ ও নাইট্রোমিন স্প্রে দিতে চাইলে সেগুলোও নিতে দেননি দুই এএসআই। মানসিক নির্যাতনের মাধ্যমে তার মৃত্যু ঘটানো হয়েছে।