গ্রাহকের ৪২২ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে আলেশা মার্ট
ঢাকাপ্রকাশ ফাইল ।
গ্রাহকের শত শত কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচার করে অনেক দিন ধরেই আলোচনায় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আলেশা মার্টের কর্নধার মঞ্জুর আলম শিকদার।গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণা, অর্থ পাচারের অভিযোগে মঞ্জুরের বিরুদ্ধে ১২৬টি মামলা রয়েছে। তার মধ্যে ৯৩টি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।
গত শনিবার রাতে রাজধানীর বনানী এলাকা থেকে মঞ্জুরকে গ্রেপ্তার করে গুলশান থানা-পুলিশ।
গত বছরের ১ জুন বনানী থানায় মঞ্জুরের বিরুদ্ধে ৪২১ কোটি ৯১ লাখ টাকা পাচারের অভিযোগে মানি লন্ডারিং আইনে মামলা করেছিল সিআইডি। অবশেষে রোববার বনানী থানা পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে। এর পর তাঁকে আদালতে তোলা হলে কারাগারে পাঠানো হয়।
সিআইডির মানি লন্ডারিং মামলায় মঞ্জুরের পাশাপাশি তাঁর স্ত্রী সাদিয়া চৌধুরী, প্রস্তাবিত পিপলস ব্যাংকের চেয়ারম্যান আবুল কাশেম, এস কে ট্রেডার্সের মালিক আল মামুনও আসামি। এ ছাড়া অজ্ঞাত ১৫-২০ জন এবং মঞ্জুর আলম মোর্শেদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
ডিএমপির গুলশান বিভাগের উপকমিশনার রিফাত রহমান শামীম বলেন, মঞ্জুরের বিরুদ্ধে প্রায় ১০০ মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে।
মানি লন্ডারিং মামলার তদন্তের সঙ্গে যুক্ত সিআইডির একজন কর্মকর্তা বলেন, মঞ্জুর উচ্চ আদালত থেকে চার সপ্তাহের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন নিয়েছেন। তবে তাঁর বিরুদ্ধে আরও অনেক মামলা রয়েছে। অর্থ পাচারের মামলার বিশদ তদন্ত চলছে। গ্রাহকের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে অন্যত্র সরিয়েছেন তিনি। নিজে সম্পদ কিনেছেন।
সিআইডির তথ্যমতে, ২০২০ সালে আলেশা মার্ট যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মগুলোর পরিদপ্তর থেকে নিবন্ধন পায়। আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের যাত্রা শুরু হয় ২০২১ সালের শুরুতে। কম মূল্যে মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন ইলেকট্রনিক পণ্য সরবরাহের নামে গ্রাহকের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নেয় প্রতিষ্ঠানটি। এর মধ্যে অসংখ্য গ্রাহককে পণ্য ও তাদের থেকে নেওয়া অগ্রিম টাকা ফেরত না দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে টাকা পাচার করে প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার।
সিআইডির তথ্য বলছে, চারটি বেসরকারি ব্যাংকের হিসাব নম্বর থেকে ৪২১ কোটি টাকা সরিয়ে নিয়েছে আলেশা মার্ট। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মঞ্জুর ও তাঁর স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে ৩১ কোটি টাকার স্থাবর সম্পদ কেনা হয়েছে। ২০২১ সালের ৩১ জানুয়ারি থেকে ২৫ আগস্টের মধ্যে এসব সম্পদ কেনা হয়। মঞ্জুরের ২০২০-২১ অর্থবছরের আয়কর বিবরণীর তথ্য বলছে, সে বছর বেতন ও আনুষঙ্গিক মিলে তাঁর আয় ছিল মাত্র ১৩ লাখ ৯০ হাজার টাকা। তবে সাত মাসের ব্যবধানে তিনি ৩১ কোটি টাকার সম্পদ কেনেন।
গ্রাহকের টাকায় মঞ্জুর গাজীপুরের কালিয়াকৈর এলাকায় প্রায় দুই হাজার শতক জমি কিনেছেন। এর আনুমানিক মূল্য দেখানো হয়েছে ২১ কোটি টাকা। গ্রাহকের কাছ থেকে নেওয়া বিপুল অর্থ আলেশা মার্টের সহযোগী প্রতিষ্ঠান আলেশা হোল্ডিংস, আলেশা টেক, আলেশা এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট, আলেশা কার্ড, আলেশা রাইড, আলেশা ফার্মেসি, আলেশা ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড সার্ভিস, আলেশা ফুড অ্যান্ড বেভারেজ এবং আলেশা অ্যাগ্রো লিমিটেডের ব্যাংক হিসাবে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
গত বছর সংবাদ সম্মেলনে আলেশা মার্টের কাস্টমার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, প্রতিষ্ঠানটির কাছে ২৫৮ কোটি টাকা পাবেন গ্রাহকরা।