সেই জাহালমকে ৫ লাখ টাকা দিতে ব্র্যাক ব্যাংককে নির্দেশ

ঋণ জালিয়াতির ২৬ মামলায় জড়ানো শ্রমিক জাহালমকে পাঁচ লাখ টাকা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। ব্র্যাক ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে এই নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত।
আগামী সাত দিনের মধ্যে এই টাকা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম সোমবার (২৯ আগস্ট) এ আদেশ দেন।
আদেশে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে শুনানির জন্য আগামী ৩১ অক্টোবর দিন ধার্য করেছেন চেম্বার আদালত।
আদালতে ব্র্যাক ব্যাংকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. আসাদুজ্জামান। আর দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশিদ আলম খান।
পাটকল শ্রমিক জাহালমকে আসামি করে ঋণ জালিয়াতির ২৬ মামলায় জড়ানোর ঘটনায় তাকে ১৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ ও দুর্নীতি দমন কমিশনকে সতর্ক করে গত ৭ আগস্ট রায় প্রকাশ করেন হাইকোর্ট। আদালত রায়ে বলে, কমিশনের তদন্ত কর্মকর্তা যথাযথভাবে তার দায়িত্ব পালন করেননি। তদন্ত রিপোর্টেও এটা উঠে এসেছে। কিন্তু সব দেখে মনে হয়েছে তার কোনো খারাপ উদ্দেশ্য ছিল না। এখানে কমিশনের ৩১ ধারা (সরল বিশ্বাসের ভুল) প্রযোজ্য। যদিও তারা অদক্ষ ও অযোগ্য। কিন্তু আমরা ওই অফিসারদের প্রতি ক্ষতিপূরণ আরোপ করছি না। এখানে সালেকের জায়গায় জাহালমকে জড়ানোর কোনো উদ্দেশ্য দেখছি না।
রায়ে আদালত বলেন, দুদক একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান এবং দুর্নীতি প্রতিরোধে গঠিত স্বাধীন কর্তৃপক্ষ। আইন ও বিধি অনুসারে তাদের তদন্ত কার্যক্রম চালাবে এবং ভবিষ্যতে কোনো মামলায় কোনো ব্যক্তিকে এ ধরনের ভুলভাবে যেন না জড়ানো হয় সে ব্যাপারে খুব সতর্ক থাকতে হবে।
পরে এ রায় স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করে ব্র্যাক ব্যাংক।
একটি জাতীয় দৈনিকে ৩৩ মামলায় ‘ভুল’ আসামি জেলে ‘স্যার, আমি জাহালম, সালেক না...’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদন আদালতের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অমিত দাশ গুপ্ত।
এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মকর্তা, মামলার বাদীসহ চারজনকে তলব করেন উচ্চ আদালত। তখন রুলও জারি করেন আদালত।
ওই বছর ৩ ফেব্রুয়ারি সংশ্লিষ্টরা হাজিরের পর হাইকোর্ট জাহালমকে মুক্তির নির্দেশ দেন এবং দুদকের কাছে ঘটনার বিষয়ে হলফনামা আকারে জানতে চান। সে আদেশ অনুসারে দুদক হলফনামা আকারে তা উপস্থাপন করে।
পরবর্তীতে জাহালম প্রশ্নে ব্যাংক ঋণ জালিয়াতির ৩৩ মামলার এফআইআর, চার্জশিট, সম্পূরক চার্জশিট এবং সব ব্যাংকের এ সংক্রান্ত নথিপত্র দাখিল করতে কমিশনকে নির্দেশ দেন আদালত।
২০২০ সালের ১৭ এপ্রিল হাইকোর্ট জাহালমকাণ্ডে কে বা কারা দায়ী তা দেখার জন্য এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রতিবেদন চেয়েছিল। পরে এ সব মামলায় দুদক, ব্র্যাক ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংকের প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হয়। ওই বছর ১২ ফেব্রুয়ারি রুলের উপর শুনানি সম্পন্ন হয় এবং ৩০ সেপ্টেম্বর রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। রায়ে ব্র্যাক ব্যাংককে রায়ের অনুলিপি পাওয়ার এক মাসের মধ্যে ১৫ লাখ টাকা দেওয়ার নির্দেশ দেন। টাকা পরিশোধ করে এক সপ্তাহ পর রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়।
কমিশনের পদক্ষেপ নিয়ে হাইকোর্ট বলেন, দুদকের আইনজীবী প্রতিবেদন দিয়ে জানিয়েছেন- এ বিষয়ে অভ্যন্তরীণ তদন্ত করে ১১ জনের বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
আদালত ব্যাংক কর্মকর্তাদের সম্পর্কে বলেন, তদন্ত রিপোর্টে দেখা যায়, বিশেষত ব্যাংকের দুই কর্মকর্তা সালেকের জায়গায় জাহালমকে এনেছে। তাদের এ কার্যক্রম তদন্ত কর্মকর্তাকে ভুলপথে পরিচালিত (মিসগাইড) করেছে। আর তারা ইচ্ছা করে এ কাজ করেছেন।
এমএ/আরএ/
