‘সুইস অ্যাম্বাসির ভুল স্বীকারের প্রতিবেদন পাইনি’
সুইস ব্যাংকের তথ্য চাওয়া নিয়ে বক্তব্য ভুল ছিল বলে স্বীকার করেছে সুইস অ্যাম্বাসি এমন প্রতিবেদন অ্যাটর্নি জেনারেলের দপ্তরে আসেনি।
শনিবার (২৭ আগস্ট) হাইকোর্টে এমন প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে বলে সংবাদ মাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে জানতে চাইলে, সংশ্লিষ্ট আদালতে দায়িত্বরত রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল (ডিএজি) এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, শনিবার সংবাদ মাধ্যমে এ নিয়ে খবর প্রকাশ হওয়ার বিষয়টি আমার নজরেও এসেছে। তবে সুইস অ্যাম্বাসির বক্তব্যে ভুল ছিল বলে স্বীকার করা হয়েছে— এমন কোনো প্রতিবেদন আমার হাতে আসেনি।
তিনি বলেন, আমি ভাবলাম এমন কিনা যে, হয়ত অ্যাটর্নি জেনারেলের কাছে তেমন কোনো প্রতিবেদন এসেছে। নিশ্চিত হওয়ার জন্য আমি অ্যাটর্নি জেনারেল স্যারকে ফোন করে জানতে চেয়েছি। তিনিও এমন কোনো প্রতিবেদন পাননি বলে জানিয়েছেন।
ডিএজি বলেন, সুইচ ব্যাংকের কাছে বাংলাদেশের ৬৭ জনের তথ্য চাওয়া হয়েছে ২০১৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত। সেখানে এ যাবত মাত্র ১ জনের তথ্য পাওয়া গেছে। এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন আমাদের হাতে এসেছিল। আপনারা (গণমাধ্যম) এই নিয়ে নিউজও করেছিলেন। তখন আমরা আদালতকে প্রতিবেদনের বিষয়টি অবহিত করেছিলাম। আদালত বলেছিলেন, প্রতিবেদনটি এভিডেভিড করে জমা দিতে। সেজন্যে আগামীকাল রবিবার মামলাটি (সুয়োমটো রুল ৯/২০২২) আদালতের কার্যতালিকায় (২৩ নম্বর) আছে। এদিন আমরা প্রতিবেদনটি আনুষ্ঠানিকভাবে আদালতে পেশ করব।
বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াত সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে এই প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, গত ১৪ আগস্ট হাইকোর্টের এই বেঞ্চে প্রতিবেদনের বিষয়টি অবহিত করা হয়েছিল এবং তা আনুষ্ঠানিক ভবে উপস্থাপনের জন্য আগামীকাল রবিবার দিন ধার্য আছে।
গত ১৪ আগস্ট অ্যাটর্নি জেনারেলের দপ্তর থেকে হাইকোর্টে বিএফআইউর ওই প্রতিবেদনের তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে বাংলাদেশিদের অর্থ জমা সংক্রান্ত তথ্য বিভিন্ন সময়ে দেশটির আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা এফআইইউয়ের কাছে চাওয়া হয়েছিল। সর্বশেষ গত ১৭ জুন এফআইউয়ের কাছে এ সংক্রান্ত তথ্য চেয়েছিল বাংলাদেশের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বিএফআইইউ।
অর্থপাচার ও সন্ত্রাসীকাজে অর্থায়ন প্রতিরোধ, অনুসন্ধান ও তদন্তের জন্য বিএফআইইউ বিদেশি এফআইইউদের সঙ্গে তথ্য আদান-প্রদান করে থাকে। তবে বিশ্বব্যাপী এ সব তথ্য আদান-প্রদানের মাধ্যম হলো এগমন্ড সিকিউর ওয়েব (ইএসডব্লিউ)। ২০১৩ সালের জুলাইতে ইএসডব্লিউ’র সদস্য হওয়ার পর চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত ৬৭ জন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে তথ্য চায় বাংলাদেশ। ইএসডব্লিউ’র মাধ্যমে সুইজারল্যান্ডের এফআইইউকে এ তথ্য দিতে অনুরোধ করা হয়। কিন্তু একজন ছাড়া অন্যদের বিষয়ে কোনো তথ্য নেই বলে জানায় সুইজারল্যান্ড। আর এ একজনের তথ্য দুদককে দিয়েছে বিএফআইইউ।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সুইস ব্যাংক চলতি বছরের ১৬ জুন বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। পরদিন এগমন্ড সিকিউর ওয়েবের (ইএসডব্লিউ) মাধ্যমে সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে বাংলাদেশি ব্যাংক ও ব্যক্তির জমানো অর্থের বিষয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহের জন্য সুইজারল্যান্ডের এফআইইউকে (ফিনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট) অনুরোধ করা হয়। তবে এ বিষয়ে এখনো কোনো তথ্য পায়নি বাংলাদেশ।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশি ব্যক্তিদের অর্থ রাখার বিষয়ে তথ্য জানাতে সর্বশেষ গত ১৭ জুনও চিঠি দিয়েছিল বাংলাদেশ ফিনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।
গত ১১ আগস্ট সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে অর্থ জমা নিয়ে নির্দিষ্ট করে দেশটির সরকারের কাছে বাংলাদেশ সরকার কোনো তথ্য কেন চায়নি, তা জানতে চান হাইকোর্ট। আদালত বলেন, আমরা সুইস রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে পড়েছি। বিষয়টি সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পেতে প্রকাশিত সংবাদ কপি জমা দিতে বলা হয়েছে। এই সময় দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষের বক্তব্য শোনেন আদালত।
ওইদিন আদালতে দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশিদ আলম খান। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক।
এর আগে গত ১০ আগস্ট সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে বাংলাদেশিদের টাকার বিষয়ে বাংলাদেশ নির্দিষ্ট কোনো তথ্য চায়নি বলে জানান ঢাকায় নিযুক্ত সুইস রাষ্ট্রদূত নাথালি চুয়ার্ড।
রাষ্ট্রদূত বলেন, সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক বা এসএনবির ২০২২ সালের জুন মাসে প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী গত বছরে বাংলাদেশিরা প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ অর্থ সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে জমা করেছেন। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে সুইজারল্যান্ডে বাংলাদেশিদের আমানত দাঁড়িয়েছে ৮৭ কোটি ১১ লাখ সুইস ফ্রাঁ। প্রতি ফ্রাঁ বাংলাদেশি ৯৫.৭০ টাকা হিসাবে মোট টাকার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৩৩৩ কোটি, যা এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ।
এমএ/আরএ/