সেলিম জনপ্রতিনিধি হিসেবে ঘৃণিত কাজ করেছেন: হাইকোর্ট

চাঁদপুরের বিতর্কিত ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম খান ও অপর দুই রিটকারীকে অর্থদণ্ড দেওয়া পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। ভুয়া কাগজপত্র ব্যবহারের মাধ্যমে ভিত্তিহীন রিট করে আদালতের সময় নষ্ট করায় এই দণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত।
রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছে, সেলিম চেয়ারম্যান জনপ্রতিনিধি হিসেবে ঘৃণিত কাজ করেছেন। তিনি ইউনিয়ন পরিষদের কার্যালয় ব্যবহার করে অবৈধ, অনৈতিক ও জনস্বার্থবিরোধী কাজ করেছেন।
বিচারপতি আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবির সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ বৃহস্পতিবার (২৫ আগস্ট) ২১ পৃষ্ঠার এ রায় দেন। বেঞ্চে দায়িত্বরত ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মাঈনুল হাসান বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন।
রায়ে সেলিম খানকে ৫০ লাখ এবং দুই রিটকারীকে ২৫ লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়। তাদের জরিমানার টাকা দুই মাসের মধ্যে সরকারি কোষাগারে জমা দিতে বলা হয়েছে। আর তা না হলে তাদের থেকে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসককে টাকা আদায় করতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
গত ৯ জুন এই রায় দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। রায়ে চেয়ারম্যানসহ আর যে দুজনকে জরিমানা করা হয় তারা হলেন স্থানীয় বাসিন্দা জুয়েল ও আবদুল কাদের মিয়া।
মামলার শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মাঈনুল হাসান ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল নাসিম ইসলাম রাজু।
প্রসঙ্গত প্রস্তাবিত চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণে অধিগ্রহণের জন্য জমির মূল্যহার পরীক্ষায় কমিটি গঠন এবং ভূমি অধিগ্রহণে ক্ষতিপূরণ হিসেবে প্রায় ১৯৪ কোটি টাকার প্রাক্কলনের বৈধতা নিয়ে করা রিটের শুনানি শেষ হয়। জেলা প্রশাসনের ১৯৪ কোটি টাকার প্রাক্কলন প্রস্তুত নিয়ে আপত্তি জানিয়ে তা সংশোধন চেয়ে গত বছরের (২০২১ সালে) নভেম্বরে ভূমি মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন চাঁদপুর সদর উপজেলার ১০ নম্বর লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সেলিম খান ও অন্যরা। পরে মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে জেলা প্রশাসনের কাছে ব্যাখ্যা জানতে চায়। চাঁদপুর জেলা প্রশাসন ব্যাখ্যা দিয়ে প্রতিবেদন পাঠায়।
ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, মৌজা দর ধরে জমি অধিগ্রহণের দাম নির্ধারণ করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাড়ে ৬২ একর জমির জন্য (মূল দামের তিন গুণ ধরে) সরকারের ব্যয় হবে প্রায় ১৯৪ কোটি টাকা। কিন্তু হঠাৎ উচ্চমূল্য দেখিয়ে যেসব দলিল করা হয়েছে, সেটা আমলে নিলে সরকারকে ৫৫৩ কোটি টাকা দিতে হবে। অর্থাৎ সরকারকে অতিরিক্ত দিতে হবে ৩৫৯ কোটি টাকা।
এ অবস্থায় চাঁদপুর জেলা প্রশাসনের মূল্যহার পরীক্ষায় কমিটি গঠন এবং ১৯৪ কোটা টাকা প্রাক্কলনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সেলিম খান ও তার ঘনিষ্ঠ দুই ব্যক্তি হাইকোর্টে পৃথক রিট আবেদন করেন। রিটে স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও হুকুম দখল আইনের ৯(১) (ক) ধারা অনুযায়ী প্রাক্কলন নির্ধারণের নির্দেশনাও চাওয়া হয়। সেলিম খানের করা রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ওই বছরের ৬ ডিসেম্বর হাইকোর্ট রুল জারি করে।
এদিকে আরও একটি রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০২১ সালের ৩০ নভেম্বর হাইকোর্ট পৃথক রুল জারি করে। এর পর পৃথক রিটের ওপর একসঙ্গে শুনানি শেষে রায় ঘোষণা করেন আদালত।
এমএ/এমএমএ/
