বাসচাপায় মৃত্যু: কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের নির্দেশ
বাসচাপায় পিন্টু শেখ (২৮) নামের একজনের মৃত্যুর ঘটনায় নিহতের পরিবারকে এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। ঢাকার সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক এএইচএম হাবিবুর রহমান ভূঁইয়া এই রয় দেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি বিমল সমদ্দার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, রাজধানীতে চলাচলরত সু-প্রভাত (আকাশ পরিবহন) বাসের মালিক মো. নুরুল ইসলাম ও চালক মো. সোহাগ মিয়াকে এ ক্ষতিপূরণের টাকা দিতে হবে।
রায়ে আদালত বলা হয়েছে, এ কথা সত্য মানুষ মরণশীল। মানুষ যে কোনো সময় মৃত্যুবরণ করতে পারে। তবে প্রতিটি মানুষ তার স্বাভাবিক মৃত্যু কামনা করে। এ দেশের মানুষের স্বাভাবিক মৃত্যুসহ গড় আয়ু অনেক বেড়েছে। এক্ষেত্রে ৬৫ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকার দাবি কোনোভাবেই অস্বীকার করা যায় না। বরং এটি স্বাভাবিক ও সাধারণ হিসেবে বিবেচিত হয়। নিহত পিন্টু শেখ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। সে ক্ষেত্রে তার ৬৫ বছর পর্যন্ত চাকরি করার সম্ভাবনাকে যথাযথ ও স্বাভাবিক ছিল বলে বিবেচিত হয়। ফলে তার আরও ৩৭ বছর পর্যন্ত চাকরি করার সুযোগ ছিল। কিন্তু মামলার চালক সোহাগ দ্রুত ও বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালিয়ে তাকে চাপা দিয়ে তার অকাল মৃত্যু ঘটান।
এ ক্ষেত্রে মোটরযান অধ্যাদেশ ১৯৮৩ এর ১২৮, ১২৯ এবং ১৩০ ধারার বিধানমতে পিন্টু শেখের ওয়ারিশরা ক্ষতিপূরণ পাবেন। এ আদালতের বিবেচনায় নিহত পিন্টু আরও ৩৭ বছর তথা ৪৪৪ মাস চাকরি করলে মাসিক গড়ে ২০ হাজার টাকা বেতন প্রাপ্তির মাধ্যমে সর্বমোট ৮৮ লাখ ৮০ হাজার টাকা প্রাপ্ত হতেন।
এ ছাড়া তিনি এবং তার আত্মীয়-স্বজন পরস্পর তাদের ভালোবাসা ও আদর সোহাগ হতে বঞ্চিত হওয়ায় এ বাবদ তারা ক্ষতিপূরণ পাবেন। এ আদালত এই বিষয়টি বিবেচনায় তারা ১১ লাখ ২০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ পাবেন। এভাবে পিন্টু শেখের ওয়ারিশরা ৮৮ লাখ ৮০ হাজার ও ১১ লাখ ২০ হাজার মিলে মোট এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ পাবেন।
মামলাসূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর দুপুরে রাজধানীর মালিবাগ চৌধুরীপাড়ায় সু-প্রভাত বাসের চালক সোহাগ মিয়া বেপরোয়া গতিতে পিন্টু শেখের মোটরসাইকেলের পেছনে ধাক্কা দেয়। এতে মোটরসাইকেলসহ বাসের নিচে পড়ে গুরুতর আহত হন পিন্টু। স্থানীয় লোকজন তাকে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
পিন্টু শেখ এশিয়ান ইলেক্ট্রনিক্সের দোকানে চাকরি করতেন এবং তিনি তার পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন। তিনি স্ত্রী, এক কন্যা ও বোন রেখে যান।
পিন্টু শেখ মাসিক ১৬ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করতেন। প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে বেতন বৃদ্ধি হলে সে ক্ষেত্রে তার বয়স ৬৫ বছর না হওয়া পর্যন্ত এই বেতন বৃদ্ধি হয়ে সর্বশেষ মাসিক এক লাখ ২৩ হাজার ৬০ টাকা নির্ধারণ হিসাবে ৩৮ বছরে সম্ভাব্য চাকরির মেয়াদকালে তিনি সর্বমোট দুই কোটি ২৭ লাখ ৪৮ হাজার ২৫৬ টাকা টাকা বেতন পেতেন। তার আত্মীয়স্বজন তার স্নেহ মায়া মমতা ও ভালোবাসা হতে বঞ্চিত হওয়ায় উপহার ক্ষতিপূরণ বাবদ ৫০ লাখ টাকাসহ মোট দুই কোটি ৭৭ লাখ ৪৮ হাজার ২৫৬ টাকার দাবিতে ২০১৭ সালে ক্ষতিপূরণের এই মামলা করা হয়।
মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) ঢাকার সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ এএইচএম হাবিবুর রহমান ভূঁইয়া এই রায় দেন।
এমএ/এমএমএ/