১৭ বছরেও শেষ হয়নি সিরিজ বোমা হামলার মামলা
১৭ বছরেও নিষ্পত্তি হয়নি ১৭ আগস্টের সিরিজ বোমা হামলার মামলা। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা বলছেন, সাক্ষী হাজির করতে না পারার কারণে সিরিজ বোমা হামলার মামলাগুলো বিচারের অপেক্ষায় আদালতে ঝুলে আছে। মামলা দায়েরের সময় দেওয়া ঠিকানা পরিবর্তন হয়েছে অনেক সাক্ষীর। আর বিচারের দীর্ঘসূত্রীতার কারণে অনেক মামলায় সাক্ষী খুঁজে পাওয়া চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট সারাদেশে ৬৩ জেলার ৪৫০টি স্থানে একযোগে পাঁচ শতাধিক বোমা হামলা চালিয়েছিল নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি)। দেশের প্রধান বিচারালয় সুপ্রিম কোর্ট থেকে শুরু করে বিমানবন্দর, মার্কিন দূতাবাস এবং ঢাকা ট্রেড সেন্টার, কারওয়ানবাজারসহ দেশের বিভিন্ন জেলা আদালত, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়, প্রেস ক্লাব ও সরকারি-আধা সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা লক্ষ্য করে বোমার বিস্ফোরণ ঘটায় জেএমবি। সিরিজ বোমা হামলায় নিহত হয়েছিলেন দুই জন। আর আহত হন দুই শতাধিক মানুষ।
আদালত ও পুলিশ সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, জেএমবির সিরিজ বোমা হামলার ঘটনায় সারাদেশে মোট ১৫৯টি মামলা হয়। যার মধ্যে ১৬টি মামলার অভিযোগ সত্য হলেও আসামি খুঁজে না পাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় পুলিশ। আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয় ১৪৩টি মামলার।
মামলাগুলোর এজাহারে নাম উল্লেখ করে আসামি করা হয় ২৪২ জনকে। আর অভিযোগপত্রে আসামি করা হয় ১ হাজার ১২১ জনকে। তাদের মধ্যে গ্রেপ্তার করা হয় ৯৮৮ জনকে।
এসব মামলার মধ্যে বিচারিক আদালতে ৯৭টি মামলার বিচারকাজ সম্পন্ন হয়েছে। বিচারাধীন আছে আরও ৪৬টি মামলা।
নিষ্পন্ন হওয়ার মামলাগুলোর রায়ে ২৭ জনের বিরুদ্ধে ফাঁসির রায় প্রদানসহ ৩৩৪ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে। অব্যাহতি দেওয়া হয় ৩৪৯ জনকে। সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যে যাদের নয় জনের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। আর খালাস পেয়েছে ৩৫৮ জন। মামলাগুলোতে জামিনে মুক্ত আছেন ১৩৩ জন।
এ ছাড়া ঢাকায় বিচারাধীন ৫টি মামলা শেষ পর্যায়ে রয়েছে। ২০২১ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি সিরিজ বোমা হামলায় সর্বশেষ রায় দেন সাতক্ষীরা অতিরিক্ত দায়রা জজ প্রথম আদালতের বিচারক মো. শরিফুল ইসলাম। ওই রায়ে ১২ আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
পুলিশ ও আদালত সূত্রে জানা গেছে, ১৭ আগস্টের ওই সিরিজ বোমা হামলার ঘটনায় ঢাকা মহানগরে সবচেয়ে বেশি ১৮টি মামলা হয়। যার ৯টিতে চার্জশিট দিয়েছে পুলিশ।
তা ছাড়া দেশের বিভিন্ন বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধেও শতাধিক জঙ্গির করা আবেদন বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন রয়েছে।
সিরিজ বোমা হামলা মামলার সর্বশেষ অবস্থা জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী (পিপি) আবদুল্লাহ আবু ঢাকাপ্রকাশ’কে বলেন, মামলার বিচারিক প্রক্রিয়া যে এগুচ্ছে না, তা নয়। অনেক মামলার নিষ্পত্তি হয়ে গেছে। সাক্ষীর জন্য বাকিগুলো হচ্ছে না। সাক্ষীরা যদি আদালতে সাক্ষ্য দিতে না আসেন, তাহলে কী করার আছে! সাক্ষীরা যদি সাক্ষ্য দিতে আদালতে না আসেন, তাহলে যেন অ্যারেস্ট করা হয়, আদালত সে নির্দেশও দিয়ে রেখেছে, তাতেও কিছু হচ্ছে না।
উল্লেখ্য, ২০০৫ সালের সিরিজ বোমা হামলার ওই স্থানগুলোতে জেএমবির লিফলেট পাওয়া গিয়েছিল। লিফলেটগুলোতে বাংলাদেশে আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠা করার বিষয়ে বক্তব্য লেখা ছিল। লেখা ছিল, দেশের কর্মরত বিচারকদের প্রতি একটি বিশেষ বার্তা পাঠালাম। দ্রুত দেশে ইসলামি হুকুমত কায়েম করতে হবে। নতুবা কঠিন পথ বেছে নিতে বাধ্য হবে জেএমবি। ইসলামি হুকুমত কায়েমের বিষয়ে তাদের সঙ্গে দেশ-বিদেশের অনেক শক্তিশালী দেশ ও শীর্ষ রাজনৈতিক দল একমত পোষণ করেছে। অতএব যারা বিচারক আছেন তারা তাগুতি (মানবসৃষ্ট) আইন বাদ দিয়ে ইসলামি আইনে বিচার করবেন। নতুবা আরও ভয়াবহ বিপদ আপনাদের জন্য অপেক্ষা করছে। এ সর্তকবাণীর (সিরিজ বোমা হামলা) পর আমরা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করব। তারপর আবার হামলা শুরু হবে।
এমএ/এনএইচবি/আরএ/