'বালুখেকো' সেলিমকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ
৩৪ কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় চাঁদপুরের বিতর্কিত চেয়ারম্যান 'বালুখেকো' সেলিম খানকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। তাকে আগাম জামিন না দিয়ে তিন সপ্তাহের মধ্যে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
রবিবার (১৪ আগস্ট) বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. সেলিমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ফৌজিয়া আক্তার। আর সেলিম খানের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী খোরশেদ আলম।
আদালতের আদেশের পর ফৌজিয়া আক্তার বলেন, সেলিম খান আগাম জামিন আবেদন করেছিলেন। আদালত তাকে জামিন না দিয়ে তিন সপ্তাহের মধ্যে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করতে বলেছেন।
উল্লেখ্য, ৩৪ কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে গত ১ আগস্ট চাঁদপুর সদরের ১০ নম্বর লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান সেলিম খানের বিরুদ্ধে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুর্নীতি দমন কমিশনের সচিব জানান, প্রাথমিক অনুসন্ধানে সেলিম খানের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সম্পদ বিবরণী চায় কমিশন। সেলিম খান ৬৬ লাখ টাকার সম্পদের হিসাব জমা দেন। তবে দুদকের অনুসন্ধানে তার ৩৪ কোটি ৫৩ লাখ ৮১ হাজার ১১৯ টাকার সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। দুদকের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে কমিশন সভায় সেলিম খানের বিরুদ্ধে মামলার সিদ্ধান্ত হয়।
চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তাবিত ভূমি অধিগ্রহণের জন্য সেলিম খানের ইউনিয়নে মেঘনা পাড়ে একটি এলাকা নির্ধারণ করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ৬২ একর ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু করতে গিয়ে দেখা যায়, চেয়ারম্যান সেলিম খান, তার ছেলেমেয়েসহ অন্যান্য জমির মালিকরা অস্বাভাবিক মূল্যে দলিল তৈরি করেছেন। ফলে ওই জমি অধিগ্রহণে সরকারের ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৫৫৩ কোটি টাকা।
অস্বাভাবিক মূল্য নিয়ে জেলা প্রশাসকের তদন্তে সরকারের বিপুল পরিমাণ অর্থ লোপাট করার পরিকল্পনা ধরা পড়ে। পরে ভূমি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো প্রতিবেদনে বিষয়গুলো উল্লেখ করেন জেলা প্রশাসক।
গত ১০ ফেব্রুয়ারি চাঁদপুর ভূমি অধিগ্রহণ সম্পর্কে অসত্য ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্য উপস্থাপন করায় চেয়ারম্যান সেলিম খানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় জেলা প্রশাসন। এদিকে কয়েক বছর ধরে চাঁদপুরের নদী অঞ্চল থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগ রয়েছে চেয়ারম্যানসহ একটি মহলের বিরুদ্ধে। এমনকি অনুমতি ছাড়াই চেয়ারম্যান বছরের পর বছর বালু বিক্রি করেছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
গত ৬ এপ্রিল সেলিম খানের অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ যাচাইয়ে কমিশনের সমন্বিত জেলা কার্যালয় কুমিল্লার সহকারী পরিচালক রাফী মো. নাজমুস সা’দাতের নেতৃত্বে দুদক অ্যানফোর্সমেন্ট টিম অভিযান পরিচালনা করে। এতে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে অ্যানফোর্সমেন্ট টিম।
এমএ/এসজি/