বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার পাঁচ মৃত্যু দণ্ডপ্রাপ্তরা কে কোথায়?
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যায় অংশগ্রহণের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পাঁচ খুনি এখনো পলাতক। তাদের মৃত্যুদণ্ড কবে কার্যকর করা যাবে এই নিয়ে কোনো নিশ্চয়তা দিতে পারছেন না সরকার সংশ্লিষ্টরাও। তবে তাদের আটক করে দণ্ড কার্যকর করার বিষয়ে অগ্রগতি আছে এবং সরকার আশাবাদী বলে জানান পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে শনিবার (১৩ আগস্ট) ঢাকাপ্রকাশ-কে প্রতিমন্ত্রী বলেন, পলাতক খুনীদের দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে আমাদের চেষ্টায় অগ্রগতি আছে। তবে অগ্রগতির বিষয়ে খুব বেশি কিছু বলব না। অন্যান্য বিষয়ে আমরা অগ্রগতির কথা যেভাবে বিস্তারিত বলি, সেভাবে বলব না।
এর পরিপ্রেক্ষিতে তিনি সর্বশেষ আবদুল মাজেদকে আটক করে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার উদাহরণ দিয়ে বলেন, এটা বলব যে আমরা আশাবাদী।
শাহরিয়ার আলম বলেন, খুনিদের কে কোথায় আছে, এই প্রশ্ন করলে বলব যে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এক বা একাধিক পলাতক আসামি পাকিস্তানে আছে। তাদের নাম বলব না। তবে এটা বলব যে, তারা হাইপ্রোফাইল। তাদের ব্যাপারে আমরা পাকিস্তানকে জানিয়ে আসছি কিন্তু পাকিস্তান রিফিউজ করে আসছে।
পলাতকদের মধ্যে নূর চৌধুরী কানাডায় এবং রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে আছে বলে বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে খবর এসেছে। বিষয়টি নজরে দিলে তারা সেখানেই আছে বলে নিশ্চিত করেন প্রতিমন্ত্রী।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পাঁচ খুনি হচ্ছেন লে. কর্নেল এস এইচ এম বি নূর চৌধুরী (অব্যাহতি), লে. কর্নেল এ এম রাশেদ চৌধুরী (অব্যাহতি), লে. কর্নেল শরিফুল হক ডালিম (অব্যাহতি), লে. কর্নেল আবদুর রশীদ (বরখাস্ত), রিসালদার মোসলেহ উদ্দিন (অব.)। তাদের মধ্যে নূর চৌধুরী কানাডায় ও রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে থাকলেও বাকি তিনজনের মধ্যে শরিফুল হক ডালিমের সম্ভাব্য অবস্থান পাকিস্তান অথবা লিবিয়ায়, আবদুর রশীদের সম্ভাব্য অবস্থান লিবিয়া অথবা জিম্বাবুয়েতে এবং মোসলেহ উদ্দিনের সম্ভাব্য অবস্থান পাকিস্তানে বলে বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে খবর আসে।
প্রসঙ্গত, ঢাকার তৎকালীন দায়রা জজ কাজী গোলাম রসুল ১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর ১৫ জনকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায় দেন। বিচারিক আদালতের ওই রায়ের বিরুদ্ধে আসামিদের আপিল ও মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার অনুমতি চাওয়া (ডেথ রেফারেন্স) শুনানি শেষে ২০০০ সালের ১৪ ডিসেম্বর উচ্চ আদালত বিভক্ত রায় দেন।
পরের বছর ২০০১ সালের ৩০ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের তৃতীয় বেঞ্চ ১২ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন এবং তিনজনকে খালাস দেন।
সর্বোচ্চ আদালত আপিল বিভাগ ২০০৯ সালের ১৯ নভেম্বর ১২ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে রায় দেন। এরপর ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি এই ১২ আসামির মধ্যে পাঁচজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়। এই আসামিরা হচ্ছেন-সৈয়দ ফারুক রহমান, বজলুল হুদা, এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান ও মুহিউদ্দিন আহমেদ।
২৫ বছর ভারতে আত্মগোপনে থাকার পর ২০২০ সালের ৬ এপ্রিল ঢাকার গাবতলী থেকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) আবদুল মাজেদকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই বছরের ১১ এপ্রিল রাত ১২টা ১ মিনিটে তার ফাঁসি কার্যকর হয়।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আরেক পলাতক আসামি আজিজ পাশা ২০০২ সালে পলাতক অবস্থায় জিম্বাবুয়েতে মারা যায়। জানা যায়, ২০০৯ সালের ৩১ আগস্ট নূর চৌধুরীর বিরুদ্ধে রেড নোটিস (এ-২৬৯১/৮-২০০৯) জারি করে ইন্টারপোল। রাশেদ চৌধুরীর বিষয়ে রেড নোটিস (এ-২৫/১-২০০৯) জারি করা হয় ২০০৯ সালের ৭ জানুয়ারি।
শরিফুল হক ডালিমের বিরুদ্ধে রেড নোটিস (এ-১৮১১/৬-২০০৯) জারি হয় ২০০৯ সালের ২৮ জুন। খন্দকার আবদুর রশীদের বিষয়ে রেড নোটিশ (এ-২৬২০/৮-২০০৯) জারি করা হয় ২০০৯ সালের ৩১ আগস্ট। রিসালদার মোসলেহ উদ্দিনের বিষয়ে রেড নোটিশ (এ-১৮৩৬/৬-২০০৯) জারি করা হয় ২০০৯ সালের জুনে।
উল্লেখ্য, ৭৫’র ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। ১৯৯৬ সালের ১২ নভেম্বর দায়মুক্তি আইন বাতিল হলে ওই বছরের ২ অক্টোবর রাজধানীর ধানমন্ডি থানায় বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত সহকারী মহিতুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলা করেন। ওই মামলায় যথাক্রমে নিম্ন আদালত, উচ্চ আদালত এবং সর্বোচ্চ আদালতের রায় হওয়ার পর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের দণ্ড কার্যকরের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
এমএ/এসআইএইচ/