আদালতে বিচারপ্রার্থীদের স্বস্তি দেবে ‘ন্যায়কুঞ্জ’
অবশেষে দুঃখ লাঘব হচ্ছে আদালতে আসা বিচারপ্রার্থীদের। আর তাদেরকে গাছ তলায় কিংবা ফুটপাতে বসে, দাঁড়িয়ে, ঘণ্টার পর ঘণ্টা হাঁটাচলার মাধ্যমে কষ্ট করতে হবে না। দেশের সর্বোচ্চ আদালত প্রাঙ্গণেই তাদের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে ‘ন্যায়কুঞ্জ’ নামে অপেক্ষাগার।
যেখানে বসে বিচারপ্রার্থীরা সময় পার করতে পারবেন নিশ্চিন্তে। ব্যবহার করতে পারবেন বাথরুম। হাতের কাছেই পাবেন খাবার পানি সে রকম একটি ব্যবস্থাই গড়ে তোলা হয়েছে ‘ন্যায়কুঞ্জে’। শুধু তাই নয়, মায়েদের জন্য থাকছে ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার। সব মিলিয়ে বিচারপ্রার্থীরা এখন আদালত প্রাঙ্গণেই স্বাচ্ছন্দ্যে সময় পার কর করতে পারবেন।
এখন আর বৃষ্টিতে যেমন ভিজতে হবে না, তেমনি রোদেও পুড়তে হবে না।
আপিল বিভাগের রেজিস্ট্রার ও সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র মুহাম্মদ সাইফুর রহমান জানিয়েছেন, সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে গড়ে তোলা ‘ন্যায়কুঞ্জ’ নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। বৃহস্পতিবারই এটি উদ্বোধনের কথা।
ন্যায়কুঞ্জ নির্মাণে প্রধান বিচারপতির কথার প্রতিফলন ঘটেছে বলে মনে করছেন হাইকোর্ট বিভাগের আইনজীবীরা। প্রধান বিচারপতি হিসেবে গত গত জানুয়ারিতে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই আদালতে আসা হাজার হাজার বিচারপ্রার্থীর ভোগান্তি লাঘবের কথা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বলে আসছিলেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। শেষ পর্যন্ত তার নির্দেশেই সুপ্রিম কের্টের সড়ক ভবন চত্বরে ‘ন্যায়কুঞ্জ’ নামে বিশ্রামাগারে নির্মাণ কাজ শুরু হয়।
জানা গেছে, শুধু সুপ্রিম কোর্টই নয়, সারাদেশের জেলা ও দায়রা জজ আদালতেও বিচারপ্রার্থীদের জন্য ‘ন্যায়কুঞ্জ’ গড়ে তোলার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। এ বিষয়ে গত জুন মাসে হাই কোর্ট থেকে সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও বিভাগে চিঠি পাঠানো হয়।
হাই কোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রার মো. গোলাম রব্বানী স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়, ‘দেশের প্রায় সকল অধস্তন আদালতের এজলাস কক্ষ/বিচার কক্ষের আসন সীমিত হওয়ায় আইনজীবী ব্যতীত বিচারপ্রার্থীদের বসার তেমন কোনো সুযোগ হয় না। ফলে বিচার কার্যক্রম শুরুর আগে ও পরে বিচারপ্রার্থীদের আদালতের বারান্দায় বা যেখানে-সেখানে দাঁড়িয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয় ‘
‘এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সমস্যার মুখোমুখি হন নারী, অসুস্থ ব্যক্তি এবং শিশুদের মায়েরা। এই সমস্যা সমধানে প্রত্যেক জেলায় পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত বিচারপ্রার্থী-বিশ্রামাগার স্থাপন করা আবশ্যক।’
চিঠিতে প্রধান বিচারপতির নির্দেশনার কথা উল্লেখ করে লা হয়, ‘প্রতিটি জেলা ও দায়রা জজ আদালত প্রাঙ্গণে কমপক্ষে ১০০ জনের এবং চৌকি আদালতে ৪০ থেকে ৫০ জনের বসার উপযোগী বিশ্রামাগার স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা প্রধান বিচারপতি অনুধাবন করেছেন।’
জেলা আদালত প্রাঙ্গণে যে ন্যায়কুঞ্জ নির্মাণ করা হবে তাতে নারী ও পুরুষের জন্য আলাদা ইউনিট; ব্রেস্ট ফিডিংয়ের করাতে মায়েদের জন্য আলাদা কক্ষ; প্রত্যেক ইউনিটে দুটি টয়লেট; সুপেয় পানির ব্যবস্থা; একটি ছোট স্টেশনারি দোকান থাকবে।
এসব ‘ন্যায়কুঞ্জ’ নির্মাণে ব্যবস্থা নিতে আইন সচিব, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সচিব, গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী, সকল জেলা ও দায়রা জজ, স্থাপত্য অধিদপ্তরের প্রধান স্থপতি, গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীকে ওই চিঠির অনুলিপি দেওয়া হয়।
এনএইচবি/এমএমএ/